পুষ্টিগুণ
ফরিদপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল চাষ
সূর্যমুখীর তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় ফরিদপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী ফুল চাষ। অন্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় সূর্যমুখী আবাদে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এছাড়া বৈচিত্র্যময় কৃষির জেলা ফরিদপুরে প্রায় সবধরণের ফসলই উৎপন্ন হয়ে থাকে।
এদিকে গত কয়েক বছর ধরে এখানে বাড়ছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। এছাড়া ফরিদপুরের ৯টি উপজেলায় হচ্ছে এর আবাদ। আর স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষবাদ।
ফরিদপুর বিএডিসির উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ফরিদপুর বিএডিসির উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
আরও পড়ুন: সূর্যমুখীর হাসিতে স্বপ্ন দেখছেন খুলনার কৃষকরা
এদিকে সূর্যমুখী ফুল চাষে সবধরনের সহযোগিতা করার কথা জানালেন বিএডিসি’র কর্মকর্তা।
ফরিদপুরের গঙ্গাবদ্দি এলাকার চাষী হারিজুর রহমান বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম, অধিক লাভ হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ করেছি।
আর ফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীরা আগামীতে সূর্যমুখী ফুল চাষের আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।
এছাড়া সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
ফরিদপুর ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন খামার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মাহমুদুল ইসলাম খান জিয়া জানান, দিন দিন চাষীরা সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদের দিকে ঝুকছে। এই তেলে কোনো কোলেস্টোরেল নেই, যে কারণে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, এটা অন্য ফসলের চেয়ে স্বল্প জীবনকাল ও লাভজনক। সে কারণেই সূর্যমুখী ফুল চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।
বৈচিত্র্যময় কৃষির জেলা ফরিদপুর। এ জেলায় প্রায় সবধরণের ফসল উৎপন্ন হয়ে থাকে। সে কারণেই ফরিদপুরে শুরু হয়েছে অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের চাষ।
সূর্যমুখীর তেল কোলেস্টেরলমুক্ত ও প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের দুর্বলতা কমিয়ে কার্যক্ষমতা বাড়াতে অনন্য ভূমিকা রাখে।
যে কোনো তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশী পুষ্টি সমৃদ্ধ। আর সে কারণেই ফরিদপুরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথে বাড়ছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ
মাগুরায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের মুখে হাসি
১ বছর আগে
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা: সারাদিন রোযা রেখে ইফতারে কেন খেজুর খাবেন?
রোযার মাসে সারা দিন রোযা রাখার পর সন্ধ্যাবেলায় ইফতারে খেজুর খাবার উপকারিতার দরুণ রোযাদারগণ তাদের খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখেন। বহু বছর আগেই থেকেই সুপরিচিত ও সুমিষ্ট এই ফলটির চাষাবাদ হয়ে আসছে। মরুপ্রধান অঞ্চলের এই ফল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্য একটি সহজলভ্য খাবার। ইফতারের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন রীতিমত নিয়ম করে রাখা হয় খেজুর। অনেক রোযাদাররা খেজুর খেয়েই তাদের রোযা ভেঙে থাকেন। চলুন, পবিত্র এই রমজান মাসে এই ছোট্ট ফলটির পুষ্টিগুণাগুণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেজুরের উপকারিতাগুলো জেনে নেয়া যাক।
খেজুরের পুষ্টিগুণ
ফ্যাটহীন উচ্চ ক্যালোরি সম্পন্ন খেজুরের বেশির ভাগ ক্যালরি আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। খুবই অল্প পরিমাণ আসে প্রোটিন থেকে। ৮ গ্রামের একটি খেজুর প্রায় ২৩ ক্যালোরি সরবরাহ করে। ২৪ গ্রামের বড় মেডজুল খেজুরগুলোতে থাকে ৬৬.৫ ক্যালোরি। এছাড়াও খেজুর যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার সহ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সম্পন্ন।
ইউএসডিএ (ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার) অনুসারে, খেজুরে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের মধ্যে সোডিয়ামের পরিমাণ ০.২ মিলি গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৬ গ্রাম, ফাইবার ০.৬ গ্রাম, শর্করা ৫ গ্রাম, প্রোটিন ০.২ গ্রাম, পটাসিয়াম ৫৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৩.৪ মিলিগ্রাম, এবং আয়রন ০.১ মিলিগ্রাম।
পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
একটি খেজুরে ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যার বেশিরভাগই আসে চিনি থেকে। খেজুরের মিষ্টি স্বাদের পেছনে দায়ী এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফ্রুক্টোজ, যা গ্লুকোজের চেয়েও দ্বিগুণ মিষ্টি। ফল পাকার সাথে সাথে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ফাইবার হ্রাস পায়।
খেজুরের গ্লাইসেমিক সূচক ৪৩ থেকে ৫৫ এর মধ্যে। আর এই পরিসরটি নির্ভর করে খেজুরে পরিপক্কতার ভিন্নতা এবং স্তরের উপর। সাধারণত মিষ্টি ফলগুলো উচ্চ গ্লাইসেমিকের হয়। কিন্তু খেজুরের বেলায় তা ভিন্ন। এগুলো আশ্চর্যজনকভাবে বেশ কম গ্লাইসেমিক ফল।
খেজুর পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের বেশ ভালো একটি উৎস। খেজুর ফোলেট এবং প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড সহ ছয়টি প্রয়োজনীয় ভিটামিন-বি সরবরাহ করে। খেজুরে রয়েছে উচ্চমাত্রার পলিফেনল, যা এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি সেলুলার ক্ষতি থেকে দেহকে রক্ষা করে।
পড়ুন: দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামে সময় কাজে লাগানোর উপায়
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেজুরের উপকারিতা
হজমে ভারসাম্য আনে
ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে হজমে উপকার করতে পারে। এটি পরিপাক ক্রিয়া ঝামেলামুক্ত রাখার মাধ্যমে নিয়মিত মলত্যাগে ভারসাম্য বজায় রাখে।
উপরন্তু, খেজুরের ফাইবার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য উপকারী হতে পারে। ফাইবার হজমের গতিকে ধীর করে দেয় এবং খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি হওয়া রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
খেজুরে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো মূলত দেহের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। এই র্যাডিক্যাল গুলো হচ্ছে এক ধরনের অস্থির অণু, যা শরীরে ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি এবং রোগের কারণ হতে পারে।
পড়ুন: গোল্ডেন মিল্কের জাদুকরি উপকারিতা
খেজুরে বিদ্যমান সবচেয়ে শক্তিশালী তিনটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হচ্ছে-
- ফ্ল্যাভোনয়েড, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- ক্যারোটিনয়েডস, যা হৃদরোগ এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বা এরকম চোখের ব্যাধিগুলোর ঝুঁকি কমাতে পারে।
- ফেনোলিক অ্যাসিড, যা প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
হাড়কে শক্তিশালী করে
ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে অস্টিওপরোসিসের মত হাড়ের ভয়ানক রোগ হতে পারে। খেজুরে সেই ম্যাগনেসিয়ামের যোগান দাতা। সাপ্লিমেন্ট-এর মাধ্যমে ম্যাগনেসিয়াম নেয়া অপেক্ষা খেজুর খাওয়া উত্তম। এতে বিষাক্ততার ঝুঁকি কমে। অধিকন্তু, খেজুর থেকে পাওয়া আয়রন অস্থিমজ্জার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
পড়ুন: জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে কি করবেন?
গর্ভাবস্থায় সুবিধা
শুকনো খেজুর গর্ভাবস্থার পরবর্তী পর্যায়ে মহিলাদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা দেয়। খেজুরের উচ্চ ফাইবার বৈশিষ্ট্য কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যায় সাহায্য করতে পারে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত শুকনো খেজুর খাওয়া গর্ভধারণে চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে এনে স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণের দিকে ধাবিত করতে সহায়তা করে।
দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিয়মিত খেজুর খাওয়া দাঁতের এনামেলের সুরক্ষা ও উন্নতির জন্য বেশ উপকারী। খেজুর দাঁতের ক্ষয়ের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে কারণ এতে আছে ফ্লোরাইড।
পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
খেজুর খাওয়ার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়
খেজুরের যাবতীয় প্রয়োজনীয় পুষ্টি লাভের জন্য প্রতিদিন ১০০ গ্রাম তথা ৪ থেকে ৬টি খেজুরই যথেষ্ট। যদিও খাওয়ার পরিমাণ ক্যালোরির চাহিদা এবং অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
খেজুর নূন্যতম পরিমাণ প্রোটিন সরবরাহ করে। তাই দৈনন্দিন প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে অন্যান্য প্রোটিন উৎসগুলো অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যেমন চর্বিহীন মাংস, মাছ, বাদাম, এবং বীজ জাতীয় খাবার।
ইফতারিতে ২ থেকে ৩টি খেজুর খাওয়া সারাদিনের ক্লান্তিকে নিমেষেই দূর করে দিবে। এছাড়াও দেহের যাবতীয় প্রক্রিয়াসমূহকে দ্রুত কর্মক্ষম করে তুলতেও সাহায্য করতে পারে। ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনের একটি সমন্বিত খাদ্য তৈরির জন্য কিছু চিনাবাদাম ও মাখনের সাথে খেজুর মিশিয়ে ইফতারির আইটেমগুলোতে রাখা যেতে পারে।
পড়ুন: ওজন কমাতে ১০ কার্যকরী পানীয়
তবে খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
দুপুর বা রাতের ভরপেট খাবার পর খেজুর খাওয়া ঠিক নয়। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফলস্বরূপ, ভরপেট খাবারের পরে প্রচুর পরিমাণে খেজুর গ্রহণ সারা শরীরে অস্বস্তিকর বোধ তৈরি করতে পারে।
খেজুরে অ্যালার্জি থাকা যদিও বিরল, কিন্তু এ যদি অ্যালার্জি থেকেই থাকে তবে খেজুর এড়িয়ে চলতে হবে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে একজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নেয়া উচিত।
ইতোমধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে খেজুর খাওয়া পরিহার করা উচিত। খেজুরে থাকা সরবিটল নামের চিনির অ্যালকোহলটি কিছু কিছু লোকের ক্ষেত্রে মলত্যাগের অবস্থার আরো অবনতি ঘটাতে পারে। তাই অন্ত্রের গতিবিধি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খেজুর এড়ানো ভাল।
পড়ুন: ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের খেজুর
বাংলাদেশের বাজারে আজওয়া, মরিয়ম, আদম, আম্বার, ছড়া, শুককারি, ছক্কা, সুগাই, গাওয়া, মেডজুল, কালমি, তিনপল, মাবরুম, জিহাদি, সায়ের, ফরিদা, বাটি, মাসরুক, ম্যাকজুয়েল, মাবরুল, কিমি, খালাস দাবাস, ও কাউন দাবাস সহ মোট ত্রিশ জাতের খেজুর পাওয়া যায়।
দেশে ফি বছর খেজুরের চাহিদা প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন, যেখানে শুধু রমজান মাসেই চাহিদা থাকে প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন।
দেশের পায়কারি ও খুচরা বিক্রেতাদের মতে, কম দামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত খেজুর হচ্ছে ইরাক থেকে আগত জাহেদি খেজুর। এছাড়া বেশ ভালো বিক্রি আছে ইরান ও জর্ডানের মরিয়ম, সৌদি আরবের আজওয়া, মাবরুম, আম্বার, সাফাওয়ি বা কালমি, মাশরুক, আমিরাতের নাগাল, লুলু বা বরই, ও দাব্বাস খেজুরের।
পড়ুন: রন্ধন পাঠশালা: ঢাকায় কোথায় রান্না শেখার কোর্স করতে পারবেন?
জাহেদির পাইকারি দাম পড়ে কেজি প্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা আর খুচরা দাম ১০০ টাকা। আম্বারের পাইকারি দাম ৪০০ টাকা, ৩৫০ টাকা দাম আলজেরিয়ার ডাল খেজুরের, বাদামি রংয়ের কালমি ও ফরিদা ২৫০ টাকা কেজি আর মেডজুলের দাম কেজি প্রতি ৮০০ টাকা। এছাড়া ১০ থেকে ১৫ ধরনের আজওয়ার মধ্যে মানভেদে প্রতি ৫ কেজির দাম পড়ে ১২০০ থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা।
মান অনুযায়ী চার থেকে পাঁচ ধরনের মাশরুক খেজুরের পাইকারি দর ২০০ থেকে ২৭৫ টাকা। মরিয়ম খেজুরের পাইকারি দাম ৫০০ টাকা আর সেটাই খুচরা বাজারে হয়ে যায় কেজিতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। মিশর থেকে আগত বড় আকারের ও কোমল মেডজুল খেজুর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। খুচরা বাজারে এগুলোর দাম বেড়ে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বর্তমানে এই খেজুরগুলোই দামের দিক থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে।
শেষাংশ
ইফতারে খেজুর খাবার উপকারিতাগুলো রোযার মাসে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য সহায়ক। দিনের একটি বিরাট অংশ না খেয়ে থাকার কারণে শরীরে ক্লান্তি ভাব হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এ সময় তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো মুখরোচক হলেও দুর্বল শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাছাড়া রোযার সময় খাবার গ্রহণের ধারা পরিবর্তিত হওয়ার কারণে শরীরের স্বাভাবিক শক্তি যোগানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইফতারের সুষম খাদ্য তালিকায় একটি সেরা সংযোজন হতে পারে এই আরব্য ফলটি।
পড়ুন: যেভাবে পাসপোর্টের ভুল তথ্য সংশোধন করবেন
২ বছর আগে
বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরা শীতের সবজি
ঠান্ডা আবহাওয়া এবং দীর্ঘ রাতের শুষ্কতার দরূণ মানবদেহ অনবরত মস্তিষ্ক থেকে অধিক শক্তি-ঘন খাবারের জন্য সংকেত পেতে থাকে। মানুষের পাকস্থলি এবং মস্তিষ্কের মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র হচ্ছে এই যে, আরামদায়ক খাবার খাওয়া 'সুখী হরমোন' বা সেরোটোনিন এবং ডোপামিন নিঃসরণ করে যা মানুষকে আরামপ্রদ অনুভূতি দেয়। এই সুখী হরমোন নিঃসরণের জন্য মুল ভূমিকা পালন করে সূর্যালোক এবং ব্যায়াম। শীতের মাসগুলোতে এই দুটিই হ্রাস পায়। তবে এই অভাবটা পুষিয়ে নেয়া যায় শীতের সবজির মাধ্যমে। এই ফিচারটিতে শীতের সবজিগুলো ও তাদের পুষ্টিগুণ নিয়েই আলোচনা করা হবে।
পুষ্টিগুণে ভরা কয়েকটি শীতের সবজি
বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বক, পেশী, হাড় এবং রক্তনালীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অদ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ বাঁধাকপি মানবদেহের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাকটেরিয়ার জ্বালানি সরবরাহ করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। বাঁধাকপির অ্যান্থোসায়ানিন নামক শক্তিশালী পিগমেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। বাঁধাকপির মতো পটাসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়ালে তা উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বাঁধাকপি ভিটামিন কে-এর একটি চমৎকার উৎস যা রক্ত জমাট বাঁধার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: লবঙ্গের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও ঝুঁকি
ফুলকপি
ফুলকপি প্রচুর পরিমাণে ফাইবারে ভরপুর। আর এই ফাইবার হজমের সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের মতো বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহকারী ফুলকপি প্রদাহ কমাতে পারে। এটি উদ্ভিদ যৌগ সালফোরাফেন সমৃদ্ধ সবজি যা হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিস সহ বেশ কয়েকটি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ফুলকপিতে ক্যালোরি কম কিন্তু ফাইবার এবং পানির পরিমাণ বেশি। ফলে ওজন কমাতে পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে ফুলকপি।
লাউ
লাউ সবচেয়ে কম-ক্যালরির সবজি হওয়ায় ওজন-নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাজা লাউতে অল্প পরিমাণে ফোলেট থাকে। এটি নবজাতকের নিউরাল টিউব ত্রুটির ঘটনা কমাতে সাহায্য করে। তাজা লাউ ভিটামিন সি-এর পরিমিত উৎস। লাউ হজমে এবং শরীর থেকে নির্গত না হওয়া পর্যন্ত অন্ত্রের মধ্যে খাবারের চলাচলের সুবিধা দেয়। এভাবে এটি বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এটি উদ্ভিজ্জ থিয়ামিন, নিয়াসিন (ভিটামিন বি-৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি-৫), পাইরিডক্সিন (ভিটামিন বি-৬) এবং ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজে ভরপুর।
পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
গাঁজর
গাঁজরে প্রায় শতকরা ১০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, স্টার্চ, ফাইবার এবং সাধারণ শর্করা থাকে। এতে ফ্যাট এবং প্রোটিন অত্যন্ত কম। গাঁজর বিটা ক্যারোটিন আকারে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে এবং পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। এছাড়া গাঁজরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্ভিদ যৌগ, বিশেষ করে ক্যারোটিনয়েড, যেমন বিটা ক্যারোটিন এবং লুটেইন থাকে।
গাঁজর খাওয়া ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করার পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বেশ উপকারি। উপরন্তু, এই সবজি কার্যকরভাবে ওজন কমানোর জন্য খাদ্যের একটি মূল্যবান উপাদান হতে পারে।
শালগম
শালগম এবং শালগম শাক দুটোতেই ভিটামিন সি রয়েছে। শালগম ফোলেট, ভিটামিন কে, এবং প্রোভিটামিন এ-এর একটি বড় উৎস। শালগমের ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ বিরোধী, ক্যানসার প্রতিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়ারোধী প্রভাব প্রদান করতে পারে। শালগমের একটি বড় সুবিধা হল এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে যা হৃদরোগের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মাত্র এক কাপ রান্না করা শালগম শাক প্রতিদিনের ভিটামিন কে-এর চাহিদার ৬০০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং হাড় ভাঙা প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শালগম শাকে ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চোখের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
পড়ুন: বুক ব্যথার নানা ধরন: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
শেষাংশ
সুস্থ জীবন যাপনের একমাত্র উপায় হল স্বাস্থ্যের প্রতি সামগ্রিক দৃষ্টি রাখা। নিয়মিত ব্যায়ামের সাথে পুষ্টিকর খাবারকে অন্তর্ভুক্ত রাখা জরুরি। উপরোল্লিখিত শীতের সবজি দিয়ে ঠান্ডা দিনগুলোর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা গঠন করা যেতে পারে। তাছাড়া এভাবে সময়ের সাথে সুষম খাদ্যের তালিকা পরিবর্তন করা মৌসুমি সবজিগুলো খাওয়ার সর্বোত্তম উপায়।
৩ বছর আগে
কিভাবে বাড়িতেই ভেজাল দুধ শনাক্ত করবেন
সব ধরনের পুষ্টিগুণ থাকায় দুধ একটি আদর্শ খাবার হলেও ভেজাল দুধ কিন্তু আপনার শরীরের জন্য হতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। শুধু মাত্রাতিরিক্ত পানিই নয়, দুধের সাথে মেশানো হচ্ছে ওয়াশিং পাউডার, কার্বোহাইড্রেট, ফরমালিন, ইউরিয়া এবং নানাবিধ রাসায়নিক পদার্থ।
এ ধরনের বিষাক্ত বস্তুর কারণে চোখ থেকে পানি পড়া, নাকে ও গলায় জ্বালা করা, কাশি, মাথা ঘোরা, ত্বকে প্রচন্ড জ্বালা ভাব প্রভৃতি দেখা দেয়। চূড়ান্ত অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক, বুক ও অন্ত্রে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি ভেজাল দুধ খাওয়ার কারণে নারীদের গর্ভপাতের আশঙ্কাও থাকে।
তাই এই ভয়াবহ ক্ষতি থেকে বাঁচতে চলুন জেনে নেই, কিভাবে আপনি ভেজাল দুধ শনাক্ত করবেন।
ঘরোয়াভাবে ভেজাল দুধ শনাক্তকরণ
দাগ পর্যবেক্ষণ
দুধে পানি মেশানো আছে কিনা বুঝতে উজ্জ্বল ও পরিষ্কার ঢালু জায়গায় এক ফোঁটা দুধ ফেলে দেখুন। যদি দুধের ফোঁটাটি গড়ানোর সময় পেছনে একটি সাদা রেখা তৈরি করে, তাহলে বুঝবেন দুধে পানি মেশানো নেই। অন্যদিকে যদি দুধের ফোঁটাটি কোনো রেখা ছাড়াই ঢালু জায়গা দিয়ে দ্রুত গড়াতে শুরু করে, তাহলে বুঝবেন দুধে পানি মেশানো আছে।
আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব দুগ্ধ দিবস
আঠালো ভাব যাচাই
আঙুলে অথবা হাতের তালুতে এক ফোটা পানি নিন। অতঃপর তাতে এক ফোটা দুধ দিয়ে ক্রিমের মতো করে ঘষতে থাকুন। যদি দেখেন একটু আঠালো লাগছে, তাহলে বুঝবেন দুধটা খাঁটি। ভেজাল দুধ হাতে ঘষলে সাবানের মত অনুভূতি হবে।
গন্ধ এবং স্বাদ যাচাই
কাঁচা দুধ ভালো করে শুঁকলে যদি দেখেন তাতে সাবান বা সোডার গন্ধ বের হচ্ছে, তাহলে সেই দুধ কখনও ভেজালমুক্ত নয়। এভাবে গন্ধ শুঁকে আপনি সিনথেটিক দুধও সহজে চিনতে পারবেন। কারণ সিনথেটিক দুধে নানারকম রাসায়নিক জিনিস মেশানো থাকে বিধায় খাঁটি দুধের গন্ধ থেকে তা একদম আলাদা হয়।
তাছাড়া খাঁটি দুধ খেতেও বেশ মিষ্টি হয়। অন্যদিকে ভেজাল দুধ না ফোটানো অবস্থায় খেলে আপনি সামান্য তেঁতো স্বাদ পাবেন।
দুধে কার্বোহাইড্রেটের উপস্থিতি
খাঁটি দুধ ফোটালে রঙের খুব বেশি তারতম্য হয় না। দুধ গরম করতে গেলেই যদি হলদেটে হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন এতে মেশানো হয়েছে কার্বোহাইড্রেট।
এছাড়া ৫ মিলিলিটার দুধ নিয়ে তাতে ২ চা-চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। যদি লবণের সংস্পর্শে এসে দুধ নীলচে রঙের হয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে দুধে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের ক্ষতিকর দিকগুলো!
দুধের খোয়া ক্ষীর পর্যবেক্ষণ
একটা বাটিতে পরিমাণ মতো দুধ নিয়ে অল্প আঁচে কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা ধীরে ধীরে ফোটাতে থাকুন। নিদির্ষ্ট সময়ের পর দুধটা তরল আকার হারিয়ে খোয়া ক্ষীরে পরিণত হবে। এই ক্ষীরটা যদি খুব শক্ত হয়ে থাকে, তখন বুঝবেন দুধটা ভেজাল।
ইউরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষা
দুধে ইউরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করা বেশ মুশকিল কারণ ইউরিয়া মেশানো দুধের সাথে খাঁটি দুধের কোন পার্থক্যই চোখে পড়ে না। এক্ষেত্রে আপনি যেটা করতে পারেন তা হলো-
এক চা-চামচ দুধের সঙ্গে এক চা-চামচ সোয়াবিন বা অরহর ডালের গুঁড়ো মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। অতঃপর মিশ্রণটিকে ৫ মিনিট ধরে ভাল ভাবে নাড়তে থাকুন। তারপর তাতে একটি লিটমাস কাগজ চুবিয়ে রাখুন। ৩০ সেকেন্ড পর যদি মিশ্রনটি লাল থেকে নীল হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন ঐ দুধে ইউরিয়া আছে।
ওয়াশিং পাউডারের উপস্থিতি নিরীক্ষা
আজকাল দুধে ডিটারজেন্ট, সাবান গুঁড়া ও শ্যাম্পু মেশানোর খবর আপনি প্রায় টিভি ও সংবাদপত্রে দেখে থাকবেন। দুধে এ ধরনের ওয়াশিং পাউডার আছে কি না তা বুঝতে একটি শিশিতে ৫-১০ মিলিলিটার দুধ ও সমপরিমাণ জল নিয়ে ভালো করে ঝাঁকান। এর ফলে যদি দীর্ঘস্থায়ী ফেনা তৈরি হয়, তাহলে বুঝবেন দুধে ওয়াশিং পাউডার মেশানো।
শেষাংশ
প্রতিদিন আহারে দুধের গুরুত্বের পাশাপাশি ভেজাল দুধ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি এবং আইনী ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করাটাও বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরী। আপনার ও আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্যের জন্য দুধ কেনার সময় অবশ্যই আপনার সতর্ক হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: ইকিগাই: জাপানিদের সুস্থ জীবনের রহস্য!
৩ বছর আগে