অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার
মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর ছয় পরামর্শ
করোনা মহামারি পরবর্তী বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা প্রণয়ণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয়টি পরামর্শ দিয়েছেন।
কাতার ইকোনমিক ফোরামে দেওয়া এক ভাষণে এই পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। ব্লুমবার্গের সহায়তায় আয়োজিত তিনদিনব্যাপী এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান সোমবার শুরু হয়েছে। তবে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সম্প্রচার করা হয়।
কাতার ইকোনমিক ফোরামে রেকর্ড করা ভাষণে শেখ হাসিনা করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বৈশ্বিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর উপর জোর দেন।
আরও পড়ুন: দেশে আন্তর্জাতিক মানের ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট তৈরি করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
এ সময় মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা প্রণয়ণের ক্ষেত্রে ছয়টি পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছয়টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে আরও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ, ডিজিটাল বিভাজন এড়াতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের উপর জোর দেওয়া এবং বিশ্ব বাণিজ্য ও রপ্তানি আয় আগের অবস্থায় ফেরাতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে সেসব ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়া।
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধাদের শেষ শ্রদ্ধায় নারী কর্মকর্তায় আপত্তি, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আহ্বান
মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী শ্রমিকদের অবস্থা ফেরাতে কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সরকার ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মহামারির পরে টেকসই এবং ন্যায়সঙ্গত শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য এখন বিশ্বজুড়ে একটি পরিপূর্ণ পদ্ধতির প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: আঞ্চলিক প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ: ডেভিড ব্রুস্টার
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারি বিশ্বকে বিভিন্ন দিক থেকে ধাক্কা দিয়েছে। এটি এরই মধ্যে বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাতার অর্থনৈতিক ফোরাম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিচ্ছে, যার মাধ্যমে মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগগুলো চিহ্নিত করা যাবে। পাশপাশি ভবিষ্যতের সঙ্কটগুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা যাবে।
এই কঠিন সময়ে বৈশ্বিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দৃঢভাবে বিশ্বাস করি যে কোভিড-১৯ টিকাগুলোর মালিকানা বিশ্ববাসী সবার হওয়া উচিৎ। উন্নয়নশীল দেশগুলো এবং এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর যাদের সক্ষমতা রয়েছে, তাদের এই টিকা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া উচিৎ।’
৩ বছর আগে
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট: ডিসিসিআই
প্রস্তাবিত ২০২১-২২ জাতীয় বাজেটকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট উল্লেখ করে এটি বাস্তবায়ন, ঘাটতি মোটানো এবং রাজস্ব আদায় ও সম্প্রসারণে আরও বেশি নজর দিতে হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানায় ঢাকা চেম্বার।
এতে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতি যখন কোভিড-১৯ এ বিপর্যস্ত, এই কঠিন সময়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ এ প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৭.২ শতাংশ ও ৫.৩ শতাংশ। এই সময়ে এরূপ অগ্রগতিমূলক ও অর্জনযোগ্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আমাদের মাঝে আশার সঞ্চার করছে। কোভিডকালীন সময়ে বাংলাদেশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.২ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে সারাবিশ্বে জিডিপির প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ। তাই এ ধরনের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে উত্তরণ ঘটাতে হবে যা অনেকাংশে চ্যালেঞ্জিং।
তবে বাজেটে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ দেয়া, বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষি পুনর্বাসন, সামাজিক নিরাপত্তাবলয় বৃদ্ধিকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় ডিসিসিআই।
বিশেষ করে আয়কর ও ভ্যাট হার হ্রাস, গ্রস রিসিট, গবেষণা এবং আমদানি কাঁচামালের উপর অগ্রীম কর হ্রাস করা, স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির সুপারিশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাছাড়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি সময়োপযোগী।
তবে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঘোষিত সরকারি সহায়তা সহজতর উপায়ে ব্যবসায়ীদের প্রদান করা গেলে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘোষিত বাজেট সহায়ক হবে বলে ডিসিসিআই মনে করে। পাশাপাশি, অর্থনৈতিক ক্ষতি যথাযথভাবে নিরূপণ করে প্রণোদনা প্যাকেজের পরিমাণ ও আওতা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি ও অর্থায়ন একটি চ্যালেঞ্জ। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপির এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে করোনা সংক্রমণ রোধ করা এবং সবার জন্য করোনা টিকা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী। যদিও এটি একটি ব্যয়বহুল বাজেট, এর মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের আর্থিক প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় বৃদ্ধি ও জনগণকে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি থেকে রক্ষায় বরাদ্দে উদ্যোগ থাকার কারণে জীবন জীবিকার ভারসাম্য রক্ষায় এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট হয়েছে বলে ডিসিসিআই বিশ্বাস করে। তবে এত বড় বাজেট বাস্তবায়ন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হবে, তাই রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছে ঢাকা চেম্বার।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আয়তন ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা যা বিগত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১১.৯৫ শতাংশবেশি এবং মোট জিডিপির আকার দাড়াবে আনুমানিক ৩৪৫.৬ বিলিয়ন ডলার। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা যা গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৯.৬৩ শতাংশ বেশি। তাই এই অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণের জন্য করের আওতা বাড়ানো, অনাদায়ী কর আদায়, জেলা শহরের রাজস্ব আদায় বাড়ানো, স্বচ্ছতা ও কর প্রদান প্রক্রিয়ায় অটোমেশন প্রয়োজন। বেসরকারি বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান করদাতাদের উপর নতুন করে করের বোঝা আরোপ না করে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। সেভিংস সার্টিফিকেট, সমবায় নিবন্ধন, পোস্টাল সেভিংস এর ক্ষেত্রে ই-টিন বাধ্যতামূলক করায় কর সংগ্রহের আওতা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব
নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৬.২ শতাংশ। সাধারণত ঘাটতি বাজেট ৫ শতাংশ হয়ে থাকে, যা গত বছর ৬.১ শতাংশছিল। তাই করোনাকালীন সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে এই ঘাটতি বাজেট সহনশীল বলে ঢাকা চেম্বার মনে করে, যা জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যয় হতে পারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ঘাটতি বাজেট পূরণে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নিবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা কোটি টাকা যা বিগত অর্থবছরে সংশোধিত ঘাটতি বাজেটের ঋণের তুলনায় ১৪.৮১ শতাংশ কম।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এ অর্থবছরে লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির ২.৫ শতাশ করপোরেট কর হার হ্রাস করা হয়েছে। এই ব্যবসাবান্ধব উদ্যোগের জন্য ডিসিসিআই সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে। তবে করপোরেট কর হার পর্যায়ক্রমে আরও হ্রাস করা প্রয়োজন, যাতে কোভিড পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারেন। পাশাপাশি, বাজেটে নতুন শিল্পে যেমন: হোম অ্যাপলায়েন্স, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোবাইল, তথ্যপ্রযুক্তি কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ওয়ান পার্সন কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার ২৫ শতাংশ র্নিধারণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় ঢাকা চেম্বার।
তবে পর্যায়ক্রমে এই কর হার আরও কমানোর জোর দাবি জানায় সংগঠনটি, তাতে করে ক্ষুদ্র ও ছোট বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবে।
বাজেটে দেশীয় শিল্পের বিকাশে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে হোম অ্যাপ্লায়েন্স সামগ্রী, তথ্যপ্রযুক্তি, সিমেন্ট, স্টিল, ইলেকট্রনিক ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, যা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। করোনাকালীন বিশ্বব্যাপী রপ্তানি চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। তাই রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প, চামড়া, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতপণ্য এবং ওষুধ পণ্যসমূহের কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর অব্যাহতি যৌক্তিককরণের পাশাপাশি আমদানিকৃত ফল ও সবজিতে ৫ শতাংশ হারে কর বাড়ানো হয়েছে।
৩ বছর আগে