টিন
অনলাইনে শূন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার উপায়
প্রত্যেক টিন (টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) ধারীর জন্য আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। বিষয়টি কেবল করযোগ্যতার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। যে টিনধারী ব্যক্তি কোনো ধরনের উপার্জনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত নন, তারও রিটার্ন দেওয়া আবশ্যিক। এর মূল উদ্দেশ্য হলো নাগরিকের আয়-ব্যয়ের বৈধতা এবং হিসাবের ব্যাপারে সরকারকে অবগত রাখা। যাদের আয় করমুক্ত সীমার মধ্যে রয়েছে তারা কোনো রূপ কর না দিয়েই এই তথ্যাবলি সরকারের কাছে পেশ করতে পারেন। আর এটি এখন খুব সহজেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা যায়। চলুন, অনলাইনে শূন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক।
শূন্য রিটার্ন কি
যে পরিপ্রেক্ষিতে কোনো রূপ ট্যাক্স বা কর প্রদান ছাড়াই রিটার্ন জমা দেওয়া হয়, তখন তা শূন্য বা জিরো রিটার্ন হিসেবে অভিহিত হয়। মূলত করমুক্ত সীমার মধ্যে থাকা আয়ের বিপরীতে প্রদানকৃত রিটার্নকেই শূন্য রিটার্ন বলা হয়। ট্যাক্স গ্রহণ বা কর অব্যহতি, রিবেট বা কর রেয়াত বা অগ্রিম প্রদানকৃত কর কিংবা এই সব শর্ত অনুসারে সামগ্রিক আয়ের ওপর আরোপিত কর কমে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাবতীয় হিসাব-নিকাষের পর চূড়ান্ত প্রদেয় কর শূন্য চলে আসে। এমতাবস্থায় আয়, ব্যয়, সম্পত্তি ও ঋণের সমুদয় তথ্যাদি পেশ করে জিরো রিটার্ন জমা করা আবশ্যিক।
জিরো রিটার্ন জমা প্রদান কাদের জন্য প্রযোজ্য
.
টিনধারী নাগরিকদের করমুক্ত আয়ের সীমা নিম্নরূপ:
- নারী ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বার্ষিক আয় অনুর্ধ্ব ৪ লাখ টাকা- তৃতীয় লিঙ্গ এবং প্রতিবন্ধিদের জন্য ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কম- ৫ লাখ টাকার কম আয় সম্পন্ন গেজেটভূক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা
উপরোক্ত ক্যাটাগরি ছাড়া বাকি সব স্বাভাবিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে
আরো পড়ুন: টিন সার্টিফিকেট বাতিল করবেন কিভাবে: শর্তসমূহ ও আবেদন পদ্ধতি
শূন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার অনলাইন পদ্ধতি
সাধারণ পদ্ধতি
প্রথমেই যথারীতি লগইন করতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর ই-রিটার্ন প্ল্যাটফর্মে (https://etaxnbr.gov.bd/#/auth/sign-in)। প্রক্রিয়া শুরুর আগে আয়-ব্যয়, ঋণ ও সম্পত্তির সমর্থনে যাবতীয় প্রাসঙ্গিক নথিপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। এতে প্রতিটি তথ্য প্রদান যেমন নির্ভুল হবে তেমনি দ্রুততর হবে পুরো প্রক্রিয়াটি।
ডিজিটাল পরিসেবার সনাতন নিয়মানুযায়ী সিঙ্গেল বা এক পেজ এবং মাল্টিপল পেজ বা ডিটেইল দুই মাধ্যমেই শূন্য রিটার্ন জমা করা যায়।
এক পেজের রিটার্নের ক্ষেত্রে আয়, ব্যায় ও সম্পত্তি সবকিছু সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করতে হয়। এখানে তথ্য প্রদানের ভিত্তিতে হিসাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয় না। প্রতিটি তথ্য সরবরাহ করতে হয় টাইপ করে। করযোগ্য আয়ের ক্ষেত্রে ধার্য করা নির্দিষ্ট করের পরিমাণটিও একইভাবে উল্লেখ করে দিতে হয়।
সাধারণত আরোপযোগ্য করটি নির্ধারিত হয় মোট আয়ের ওপর ভিত্তি করে। অতপর এই অংশ থেকে কর রেয়াত বাদ দিয়ে হিসেব হয় প্রদেয় কর। জিরো রিটার্নের ক্ষেত্রে যেহেতু আরোপযোগ্য কর শূন্য, তাই পরবর্তী হিসেব ব্যতিরেকে প্রদেয় করও শূন্য রেখে দিতে হয়।
ডিটেইল রিটার্নের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রদান করা তথ্যানুযায়ী হিসাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়।
প্রথম প্রশ্নটির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে করযোগ্য আয় আছে কিনা তা নিরূপণ করা হয়। এর ওপর নির্ভর করে পরবর্তীতে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহের জন্য প্রাসঙ্গিক অপশনগুলোর কমবেশি হয়ে থাকে। কোনো আয় না থাকলে এই প্রশ্নের ঊত্তরে 'নো'তে টিক চিহ্ন দিতে হবে। এতে ডানপাশে থাকা আয়ের যাবতীয় সেকশন নিস্ক্রিয় হয়ে যাবে। তবে আয় থাকার পরেও তা করযোগ্য না হলে অথবা অব্যহতি বা রেয়াতের মাধ্যমে তার বিপরীতে শূন্য রিটার্ন প্রযোজ্য হয়। সেক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে ‘ইয়েস’ ঊত্তরটি।
অ্যাসেস্মেন্ট শিরোনামের এই পেজটির অন্যান্য অপশনগুলো যেকোনো রিটার্ন প্রদানের নিয়মেই পূরণ করে দিতে হবে। ‘সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ’তে ক্লিক করার পর পরের পেজে আসবে ‘অ্যাডিশনাল ইনফরমেশন’। পূর্বের পেজে করযোগ্য আয়ের প্রশ্নের ঊত্তরে 'নো' বলা হলে এখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিবেটে 'নো' অপশনটি নির্দিষ্ট হয়ে থাকবে। একই কারণে এই পেজে ন্যূনতম কর হিসাবের বেশ কিছু অপশন দেখাবে না। শুধু থাকবে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার এবং আইটি১০বি ক্যাটাগরি। এগুলোর প্রত্যেকটির জন্য যথাযথ তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
যাদের সম্পত্তি ও ঋণ রয়েছে তাদের জন্য আইটি১০বি সাবমিট করা উচিত। তারপর সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউতে ক্লিক করার পর আসবে ব্যয়ের হিসাবের পেজ। সেই সঙ্গে ডানপাশে আরও কিছু ট্যাব যুক্ত হয়ে যাবে। সেগুলো হলো- ট্যাক্স অ্যান্ড পেমেন্ট এবং রিটার্ন রিভিউ। পূর্ব পেজে আইটি১০বি অ্যাক্টিভ রাখা হলে এই পেজে নতুন ট্যাব হিসেবে অ্যাসেট অ্যান্ড লায়াবিলিটিস থাকবে।
সম্পূর্ণ ফর্ম পূরণের পর ‘প্রসিড টু অনলাইন রিটার্ন’ এবং তারপর পরের রিভিউ পেজে ‘সাবমিট রিটার্ন’-এ ক্লিক করলে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন: অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট করার পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সঞ্চয়পত্রে শূন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম
এক্ষেত্রে ডিটেইল রিটার্ন নির্বাচন দিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। করযোগ্য আয় আছে কিনা- প্রশ্নের ঊত্তরে ‘ইয়েস’ অপশনে টিক দিতে হবে। এর ফলে ডানপাশে সক্রিয় হয়ে ওঠা ‘হেড্স অফ ইনকাম’ থেকে ‘ইনকাম ফ্রম ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেট্স’-এর পাশে টিক দিয়ে রাখতে হবে।
একই কারণে পরের ‘অ্যাডিশনাল ইনফরমেশন’ পেজে রেয়াতের অপশনটি সক্রিয় থাকবে। রেয়াত ক্লেইম করার জন্য এখানে ‘ইয়েস’ অপশন বেছে নিতে হবে। একই সঙ্গে আইটি১০বি ক্যাটাগরিকেও সচল রাখতে হবে।
‘ইনকাম’ পেজ-এ দেখা যাবে ‘এক্সপেন্ডিচার’ ও ‘রিবেটসহ’ অন্যান্য সাধারণ ট্যাবগুলো। এই পেজে প্রধান কাজ হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রদান করা।
‘কর রেয়াত’-এর পেজে ইনভেস্টমেন্ট ক্যাটাগরির অধীনে ‘অ্যাপ্রুভ্ড সঞ্চয়পত্র’-এ টিক দিয়ে আবারও সঞ্চয়পত্রের তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হবে। এখানে সঞ্চয়পত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত রেয়াতটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদর্শিত হবে।
সঞ্চয়পত্রে রেয়াতের সর্বোচ্চ সীমা হলো ৫ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এর থেকে বেশি হলেও রেয়াত এই ৫ লাখই আসবে।
পরের পেজে ব্যয় হিসাবের পালা। এখানে স্থান পাবে সঞ্চয়পত্র থেকে মুনাফা লাভের সময় প্রদানকৃত উৎসে করের পরিমাণটি। ‘পেমেন্ড অফ ট্যাক্স অ্যাট সোর্স’-এর ঘরে মোট উৎসে কর দেখাতে হবে। এর মধ্যেই পূর্বে ‘ইনকাম’ পেজে উল্লেখ করা সঞ্চয়পত্রের উৎসে করও থাকবে।
পূর্বে যেহেতু আইটি১০বি সক্রিয় রেখে আসা হয়েছে তাই এবার যথারীতি আসবে ‘অ্যাসেট্স অ্যান্ড লায়াবিলিটিস’। এখানেও পাওয়া যাবে ‘ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেট্স’-এর অপশন, আর এখানেও সঞ্চয়পত্রের তথ্যাদি পূর্বের অনুরূপ হতে হবে। পরবর্তী কাজ হচ্ছে সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য যাবতীয় সম্পদ ক্রয়ের তহবিলের উৎস পরিমাণসহ টাইপ করা।
সবশেষে সমন্বয়করণের সময় নির্ভুল হিসাবের নিমিত্ত্বে ‘ফান্ড আউটফ্লো’ এবং ‘সোর্স অফ ফান্ড’-এর পরিমাণের মধ্যে সমতা রাখতে হবে। তারপর ‘সেভ এ্যান্ড কন্টিনিউ’ দিয়ে সামনে এগোলে আসবে ‘ট্যাক্স অ্যান্ড পেমেন্ট’-এর পেজ, যেখানে পরিশোধের জন্য চূড়ান্ত করটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উল্লেখ থাকবে।
প্রথমেই কর্তনকৃত উৎসে কর নিশ্চিত করতে চলতি অর্থ বছরে উৎসে কর দেওয়া হয়েছে কিনা-এই প্রশ্নের ঊত্তরে ‘ইয়েস’ দিতে হবে। অতঃপর ‘ট্যাক্স পেমেন্ট আপডেট স্ট্যাটাস’-এর অপশনে ‘ইয়েস’ ক্লিক করলে একটি লেজার পেজ-এ নিয়ে যাওয়া হবে।
এবার বামপাশের মেন্যু থেকে ‘ক্লেইম সোর্স ট্যাক্স’-এর অধীনে ‘সঞ্চয়পত্র’-এ যেতে হবে। এই পেজে কর্তন করা উৎসে করসহ সঞ্চয়পত্রের অন্যান্য তথ্যাবলি পুনরায় উল্লেখ করতে হবে। তারপর ‘সেভ’ করার পরে নিচে সঞ্চয়পত্র টিডিএস লিস্টে তথ্যগুলো এক সারিতে প্রদর্শিত হবে।
এরপর বামপাশের মেন্যুতে একদম নিচে ‘ট্যাক্স পেমেন্ট স্ট্যাটাস’-এ যেতে হবে। ফলে স্ট্যাটাস পেজ-এ উৎসে করের আপডেটটি এক নজরে দেখানো হবে।
এখন নিচে ডানদিকে ‘গো টু ই-রিটার্ন’-এ ক্লিক করে আগের সেই ‘ট্যাক্স অ্যান্ড পেমেন্ট’ পেজে ফিরে যেতে হবে। এ সময় দেখা যাবে চূড়ান্ত প্রদেয় করের সেকশনে শূন্য হয়ে গেছে। অতঃপর ‘প্রসিড টু অনলাইন রিটার্ন’-এ ক্লিক করলে পরের পেজে এতক্ষণ ধরে প্রদান করা প্রতিটি তথ্য একসঙ্গে দেখাবে। পুরো রিটার্নে কোনো ভুল আছে কিনা তা একবার দেখে নিয়ে ‘সাবমিট রিটার্ন’-এ প্রেস করলেই কাজ শেষ।
আরো পড়ুন: ই-রিটার্ন: অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন যেভাবে
শেষাংশ
অনলাইনে শূন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রধান শর্ত হলো টিনধারী ব্যক্তির মোট আয় করমুক্ত সীমার মধ্যে থাকা। এক পেজের রিটার্নের মাধ্যমে খুব কম সময়েই এই কার্যক্রমটি সম্পন্ন করে ফেলা যায়। এখানে প্রদেয় কর শূন্য করার জন্য কোনো সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাষের বিড়ম্বনা নেই। আর ডিটেইল রিটার্নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেকশনে সরবরাহ করা তথ্যগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্যতা ও সঙ্গতি রাখা বাঞ্ছনীয়। বিশেষত কর রেয়াত, অগ্রিম পরিশোধ করা কর এবং কর অব্যহতির তথ্যাবলি ই-রিটার্ন লেজারে আপডেট করে নেওয়া উচিত।
৮ ঘণ্টা আগে
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করবেন কিভাবে: শর্তসমূহ ও আবেদন পদ্ধতি
বাংলাদেশের নাগরিকরা আয়কর প্রদান এবং বিভিন্ন কারণে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) বা টিন সনদ নিবন্ধন করে থাকেন। ন্যূনতম করযোগ্য আয়সীমার নিচে থাকলে বা টিন সনদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেলে কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে টিন নাম্বার বাতিল করা যেতে পারে। আসুন জেনে নেই টিন সার্টিফিকেট বাতিল করবেন কিভাবে।
টিন সার্টিফিকেট কি?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্বারা ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত একটি অনন্য আলফানিউমেরিক কোড হল টিআইএন। এটি সেই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে কর আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি অপরিহার্য সনাক্তকরণ ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করে। এই কোডসহ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম, তাদের কাজের ধরণ সম্বলিত নথিটিই টিন সার্টিফিকেট।
এই সনদ সরকারকে সঠিক রেকর্ড বজায় রাখতে, করদাতার সম্মতি নিরীক্ষণ করতে এবং কর সংগ্রহকে সহজতর করতে সহায়তা করে। কর্মচারী, স্ব-নিযুক্ত পেশাদার বা ব্যবসার মালিক; আপনি যেই হোন না কেন, ট্যাক্সের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য একটি টিন সনদধারী হওয়া আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন: সঞ্চয়পত্রে নয়, সুদ কমেছে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের: অর্থ মন্ত্রণালয়
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের পূর্বশর্ত
সরকার ঘোষিত টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদনের শর্তাবলি
এসকল দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি টিন নিবন্ধন বাতিলের আবেদনের জন্য ছয়টি শর্ত নির্ধারণ করেছে। সেগুলো হলো-
১. যে করদাতাদের কর রিটার্ন দাখিলের কোন বাধ্যবাধকতা নেই
২. মৃত্যু, অবসায়ন, অবলুপ্তি বা অনুরূপ কোনো কারণে করদাতা অস্তিত্বহীন হয়ে গেলে
৩. করদাতা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করলে এবং বাংলাদেশে তার আয় করার মতো কোনও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকলে
৪. ডুপ্লিকেট বা একাধিক নিবন্ধন অথবা ভুল তথ্য সম্বলিত নিবন্ধন পেলে
৫. কোন কারণে আইনি মর্যাদা পরিবর্তন হলে
৬. অন্য কোনও আইনানুগ কারণে টিন নিবন্ধন বাতিলের প্রয়োজন হলে |
আরো পড়ুন: প্রবাস স্কিম: প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন করবেন
কারা টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন
করদাতার আয় আয়কর আরোপ যোগ্য সীমার নিচে থাকলে টিন বাতিলের আবেদন করতে পারেন। ২০২৩-২৪ অর্থ-বছরে নূন্যতম আয়করযোগ্য আয় হচ্ছে-
সাধারণ করদাতার জন্য বছরে করযোগ্য আয় ৩৫০,০০০ (তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার) টাকার ঊর্ধ্বে
মহিলা করদাতা, এবং ৬৫ বছর বা তদুর্ধ বয়সী করদাতার ক্ষেত্রে বছরে করযোগ্য আয় ৪০০,০০০ (চার লাখ) টাকার ঊর্ধ্বে।
প্রতিবন্ধি করদাতা এবং তৃতীয় লিঙ্গ করদাতার ক্ষেত্রে বছরে করযোগ্য আয় ৪৭৫,০০০ (চার লাখ পঁচাত্তর হাজার) টাকার ঊর্ধ্বে।
গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার বেলায় বছরে করযোগ্য আয় ৫০০,০০০ (পাঁচ লাখ) টাকার ঊর্ধ্বে।
অনেক সময়ই কারো এই পরিমাণের কম বাৎসরিক আয় থাকা সত্ত্বেও অন্য কোনো প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে সার্টিফিকেটটির প্রয়োজন না হলে সেটি বাতিলের আবেদন করতে পারেন।
এছাড়াও কারও পূর্ববর্তী আয় অনুযায়ী কর দেওয়ার প্রয়োজন থাকায় তিনি টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারেন। কিন্তু পরবর্তীতে আয় কমে কর সীমার বাইরে চলে আসায় আর টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নাও হতে পারে। এসময় টিন সার্টিফিকেটটি বাতিল করতে পারেন।
এছাড়া কোন করদাতা ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার টিন সার্টিফিকেটটির আর প্রয়োজন থাকে না। তাই তার টিন সার্টিফিকেটটিও বাতিল করা যেতে পারে। পিতার মৃত্যুর পর টিআইএন বাতিল করার দায়িত্ব বর্তায় তার উত্তরাধিকারীদের উপর। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে বাবার এমন কোন ব্যবসা আছে কিনা যার টিআইএন বাতিল করলে ব্যবসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র বাতিল করে নতুন করে করতে হয়। এধরনের বড় জটিলতা তৈরি হলে, উত্তরাধিকারগণ মৃত বাবার টিআইএন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন না।
কোন বাংলাদেশি যদি কাজের জন্য দেশের বাইরে থাকেন এবং তার যদি বাংলাদেশে করযোগ্য কোন আয় না থাকে তাহলে তিনি বাংলাদেশে ট্যাক্স দিতে বাধ্য নন। সেক্ষেত্রে তার বাংলাদেশে থাকাকালীন নিবন্ধিত টিআইএন সনদ বাতিলের আবেদন করতে পারেন।
একজন ব্যক্তি মাত্র একবারই টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন। কোনোভাবেই ডুপ্লিকেট বা একাধিক টিআইএন করা যাবে না। নিবন্ধনকারী বা কর কর্মকর্তা কর্তৃক ভুলের কারণে নিবন্ধিত টিনটির তথ্য ভুল হলে তা সংশোধনের জন্য টিন বাতিলের দরকার পড়ে।
আরো পড়ুন: প্রগতি স্কিম: বেসরকারি চাকরীজীবীরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম-এ রেজিস্ট্রেশন করবেন
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- আবেদনকারীর বর্তমান টিন সার্টিফিকেটের একটি প্রিন্ট কপি
- জাতীয় পরিচয়পত্র ও তার একটি ফটোকপি
- পর পর কমপক্ষে তিন অর্থ-বছরের শূন্য কর রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার পত্রের ফটোকপি
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন পদ্ধতি
টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল
যেহেতু পর পর কমপক্ষে তিন অর্থ বছরের শূন্য রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দেখাতে হবে, তাই আপনাকে আগামী তিন বছরের প্রস্তুতি নিতে হবে। অতঃপর টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করে যাবেন। প্রতি কর রিটার্ন দাখিলের পর একটি কর রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দেয়া হবে। এগুলো পরবর্তীতে সংযুক্তির জন্য সংরক্ষণ করে রাখবেন।
কর সার্কেল অফিসে আবেদন
তৃতীয় বছরের শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়েই সম্পন্ন করতে হবে আবেদনের কাজটি। এসময় বিগত দুই বছরের রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দুটি সঙ্গে নিয়ে আপনার কর সার্কেলের অফিসে চলে যাবেন। অতঃপর সেখানকার উপকর কমিশনার বরাবর একটি আবেদনপত্র লিখবেন। এখানে টিন সনদ বাতিলের জন্য যাবতীয় কারণ সুষ্পষ্টভাবে ব্যাখা করবেন। লেখা শেষ হলে বিগত তিন বছরের রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকার পত্র সহ প্রয়োজনীয় কাগজগুলো সংযুক্ত করে আবেদনপত্র জমা দিয়ে দিবেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, আয়কর অফিসে আবেদন জমা দেয়ার জন্য টিন সনদের মালিকের যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তিনি যেতে অপারগ হলে, তার পরিবর্তে তার প্রতিনিধি হিসেবে যে কেউই আয়কর অফিসে উপস্থিত হয়ে দরখাস্ত জমা দিতে পারবেন।
আরো পড়ুন: সুরক্ষা স্কিম: স্ব-নিযুক্ত বা অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীরা যেভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন করবেন
টিন সার্টিফিকেট বাতিলে প্রয়োজনীয় খরচ
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদনের সমুদয় পদ্ধতিতে সরকার ঘোষিত কোন রকম খরচ নেই। অর্থাৎ করদাতাগণ বিনামূল্যেই তাদের টিন সার্টিফিকেটটি বাতিল করতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন পরবর্তী কার্যক্রম
আবেদন জমা হওয়ার পর আপনার কর সার্কেলের উপকর কমিশনের কর্মকর্তারা আপনার আয়কর ফাইলটি নথিভুক্ত করবেন। এ সময় আবেদনে উল্লেখিত কারণসমূহ ভালোভাবে যাচাই করে দেখা হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনার টিন সার্টিফিকেটটি চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এরপর নতুন করে টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন।
শেষাংশ
বাংলাদেশের নাগরিকরা যেমন প্রয়োজনে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) বা টিন নিবন্ধন করতে পারেন তেমনি এই সনদ বাতিল করতে পারবেন। টিন সনদ বাতিলের আবেদনের শর্তাবলি খেয়াল রেখে সহজেই আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন। উপরোক্ত আলোচনায় টিন সার্টিফিকেট বাতিল করবেন কিভাবে সে ব্যাপারে একটা স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট করার পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১ বছর আগে
অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট করার পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
টি-আই-এন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারসহ একজন আয়কর যোগ্য নাগরিক কোন কর অঞ্চলের আওতাভুক্ত তার যাবতীয় তথ্য সম্বলিত নথিপত্রটিকে সংক্ষেপে টিন সার্টিফিকেট বলা হয়। প্রাথমিকভাবে নাগরিকটি কর দেয়ার জন্য উপযুক্ত হয়েছেন কিনা তা যাচাইয়ের জন্য সরকারের নিকট ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এই রিটার্ন জমা দানের সময় টিন সংখ্যাটির প্রয়োজন হয়। রিটার্নে প্রদানকৃত তথ্যের ভিত্তিতে নাগরিকের উপর কর ধার্য হয়। প্রতি অর্থ বছরে তিনি সেই পরিমাণ কর দিতে বাধ্য থাকেন। অর্থাৎ সামগ্রিক কর ব্যবস্থার মূলে আছে টিন সনদপত্র। বর্তমানে ইন্টারনেট থেকে এর ইলেকট্রনিক সংস্করণও সংগ্রহ করা যায়, যা ই-টিন নামে পরিচিত। এই নিবন্ধটিতে অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
কাদের জন্য ই-টিন করা জরুরি
যেহেতু আয়করযোগ্য প্রতিটি ব্যক্তিকেই রিটার্ন জমাদানের জন্য টিন করতে হয়, তাই প্রথমেই জেনে নেয়া জরুরি কাদের জন্য আয়কর দেয়া আবশ্যক।
আয়করযোগ্য ব্যক্তি
অনিবাসী বাংলাদেশীদের যাদের স্থায়ী ভিত্তি আছে, হিন্দু যৌথ পরিবার, ব্যক্তি সংঘ, অংশীদারী ফার্ম এবং আইনত সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তি, যাদের আয়কৃত টাকার পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজারের উপরে। তবে এদের মধ্যে
· মহিলা এবং ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের আয়ের পরিমাণ ৩ লাখ টাকার উপরে হতে হবে
· প্রতিবন্ধিদের আয়ের পরিমাণ ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার উপরে হতে হবে
· গেজেট ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আয়কৃত টাকার পরিমাণ ৪ লাখ ২৫ হাজারের উপরে হতে হবে|
পড়ুন: বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
ই-টিন সনদ যাদের জন্য আবশ্যক
· মোটরযানের মালিকানা লাভ করলে
· মূল্য সংযোজন করের অধীনে নিবন্ধিত ক্লাবের সদস্য পদ থাকলে
· ব্যবসা বা পেশা পরিচালনার নিমিত্তে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্ত হলে
· ডাক্তার, দন্ত বিশেষজ্ঞ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি বা সার্ভেয়ার বা অন্য কোন অনুরূপ পেশাদার সংস্থার সাথে নিবন্ধিত হলে
· আয়কর অনুশীলনকারী বোর্ডের সাথে নিবন্ধিত হলে
· চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বা ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন বা সংস্থার সদস্যপদের অধিকারি হলে
· পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন বা সংসদ সদস্যবৃন্দ হলে
· স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সরকারী বা আধা-সরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত দরপত্রে অংশগ্রহণকারি হলে
· কোম্পানি বা কোম্পানির একটি গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা হলে
· ব্যাংক থেকে প্রাইজ বন্ড বা সেভিং সার্টিফিকেট কিংবা ক্রেডিট কার্ডধারী হলে|
পড়ুন: শিশুদের ই-পাসপোর্টের নিয়ম
ই-টিন সার্টিফিকেট থাকার সুবিধা
· এই শংসাপত্রটি থাকলে যে কেউ ব্যাংক থেকে ২ লাখ বা তার বেশী অঙ্কের টাকার সঞ্চয়পত্র তৈরি করতে পারবে
· ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করতে পারবে
· কমার্শিয়াল ব্যাংক অথবা লিজিং কোম্পানি থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারবে
· সাধারণ বীমার সার্ভেয়ারের লাইসেন্স নিতে পারবে
· কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর আওতায় কোম্পানীর স্পন্সর পরিচালক এবং যে কোন শেয়ারহোল্ডারের সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর পরিচালক হতে পারবে
· আমদানি সংক্রান্ত ব্যবসা ক্ষেত্রে আমদানিপত্র নিবন্ধন করতে পারবে
· আবশ্যিক না হলেও ব্যাংকে সেভিংস ও কারেন্ট একাউন্ট পরিচালনা করতে টিনের প্রয়োজন হয়। তবে এই একাউন্টগুলোতে টিন থাকার সুবিধা হলো- অধিক পরিমাণ লেনদেন করা যায়, সুদের উপর কম ট্যাক্স ধার্য হয় প্রভৃতি।
· ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের উপর অর্জিত সুদ বা লাভ থেকে বর্তমানে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স ধার্য করা হয়। এখানে টিন থাকলে সেই সুদ বা লাভের উপর ধার্যকৃত ট্যাক্স কমে ১০ শতাংশ হয়।
পড়ুন: জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করার ডিজিটাল পদ্ধতি
অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট করার উপায়
ই-টিন করতে যা যা প্রয়োজন
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করার জন্য শুধু এনআইডি (ন্যাশনাল আইডেন্টিটি) কার্ড সাথে থাকলেই হয়। তবে ব্যবসা বা কোম্পানির ক্ষেত্রে আরো কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে। যেমন-
· ম্যামোর্যান্ডাম অফ আর্টিকেল (এমওএ)
· আর্টিকেল অফ অ্যাসোসিয়েশন (এওএ)
· ট্রেড লাইসেন্স
· ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট|
ধাপে ধাপে ই-টিন সার্টিফিকেট করার ডিজিটাল পদ্ধতি
প্রথম ধাপ:
ই-টিন করার জন্য প্রথমে যেতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর ওয়েবসাইটে। এই সাইটের অধীনে নিজের একটি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আগে নিবন্ধন করতে হবে। তার জন্য ক্লিক করতে হবে রেজিস্টার বাটনে। এবার একটি নিবন্ধন ফর্ম পাওয়া যাবে, যেখানে মাঝে কোন স্পেস ছাড়াই ইংরেজি ছোট হাতের অক্ষরে একটি আইডি, পাসওয়ার্ড, নিরাপত্তা প্রশ্নোত্তর, দেশ এবং মোবাইল নাম্বার দিতে হবে।
পড়ুন: বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করার নিয়ম
সবশেষে ক্যাপচা ছবি দেখে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে ভেরিফিকেশন লেটার লিখার পর রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফর্মে প্রদানকৃত মোবাইল নাম্বারে একটি যাচাইকরণ কোড আসবে। এই কোডটি নির্ভুলভাবে ফর্মের নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে সক্রিয় বাটনে চাপ দিতে হবে। আর এর মাধ্যমেই নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে এবং সেই সাথে প্রার্থীর অ্যাকাউন্টও সক্রিয়ও হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় ধাপ:
এখন সেই আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্টে লগইন করতে হবে। তারপর যে ইন্টারফেসটি আসবে তাতে উল্লেখিত এখানে ক্লিক করুন বোতামে ক্লিক করতে হবে। এরপর যে পেজটি আসবে সেখানে
করদাতার অবস্থা, রেজিস্ট্রেশনের ধরন, আয়ের প্রধান উৎস, আয়ের প্রধান উৎসের অবস্থান, প্রার্থীর অবস্থান নির্বাচন করতে হবে। সব তথ্য সঠিক ভাবে প্রদান করে শেষে গো টু নেক্সট বাটনে ক্লিক করতে হবে।
এবার প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য দেয়ার পালা। এখানে এনআইডি অনুসারে প্রার্থীর নাম, লিঙ্গ, এনআইডি কার্ড নাম্বার, জন্ম তারিখ, পিতা-মাতার নাম, স্ত্রীর নাম, মোবাইল নাম্বার, ইমেল এবং বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা প্রতিটি তথ্য নির্ভুল ভাবে প্রদান করতে হবে। এরপর আবার গো টু নেক্সট-এ যেতে হবে।
এখন এতক্ষণ ধরে প্রদানকৃত যাবতীয় তথ্য এনআইডি কার্ডে প্রার্থীর ছবি সহ একবারে দেখানো হবে। সবকিছু ভালো করে যাচাই করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। আর এর মাধ্যমে তৈরি হয়ে যাবে ই-টিন সার্টিফিকেট।
পড়ুন: স্মার্ট আইডি কার্ড: জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে যেভাবে সংশোধন করবেন
ই-টিন সার্টিফিকেট সংগ্রহ
টিন সার্টিফিকেট দেখুন-এ ক্লিক করে ইলেকট্রনিক টিন সার্টিফিকেটটি দেখা যাবে। এটি এখন বা পরবর্তীতে যে কোন সময় ডাউনলোড করে ফোন বা কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা যাবে। এছাড়াও বিভিন্ন কাজে লাগানোর জন্য এটি মুদ্রণ করেও ব্যবহার করা যাবে৷ এমনকি এখান থেকে নিজের বা প্রয়োজনে অন্য কোন ইমেইলেও ই-টিন সনদটি পাঠানো যাবে।
ই-টিন নাম্বার পুনরুদ্ধার করার উপায়
টিন শংসাপত্র হারিয়ে গেলে সাহায্যের জন্য এনবিআর হেল্পলাইন হচ্ছে- ০৯৬১১৭৭৭১১১ বা ৩৩৩। এছাড়া প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ১টি অনুলিপি সহ ট্যাক্স অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনকৃত অ্যাকাউন্টের আইডি/ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে, প্রথমে ইউজার আইডি তারপর পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করতে হবে। এর জন্য ই-টিন সার্টিফিকেট করার সাইটে এ আবার যেতে হবে।
পড়ুন: ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ ও সময়
সেখানে সরাসরি চলে যেতে হবে ফরগেট পাসওয়ার্ড মেন্যুতে। সেখানে ফরগেট মাই ইউজার নেম বাছাই করে নেক্সট-এ ক্লিক করতে হবে। তারপরের পেজে অ্যাকাউন্ট নিবন্ধনের মুহুর্তে প্রদানকৃত মোবাইল নাম্বারটি দিয়ে ক্যাপচা পূরনের করে নেক্সট-এ ক্লিক করতে হবে। মোবাইল নাম্বার মনে না থাকলে সাম্প্রতিক সময়ে নিজের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারগুলো দিয়ে চেষ্ঠা করা যেতে পারে।
যে মোবাইল নাম্বারটি টিনের জন্য আগে ব্যবহার করা হয়নি সে নাম্বারের ক্ষেত্রে ইউজার আইডি ইনঅ্যাক্টিভ মেসেজ দেখাবে। কাঙ্ক্ষিত মোবাইল নাম্বারটি পাওয়া গেলে তা প্রদানের পর নিরাপত্তা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পেজ আসবে। এই অংশটি সাধারণত সবারই মনে থাকে, কারণ নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সাথে সম্পর্কিত খুব সহজে মনে থাকে এমন তথ্যই সবাই এখানে দিয়ে রাখে।
প্রশ্নের উত্তর সঠিক দেয়ার পর এবার মোবাইল নাম্বার যাচাই করার জন্য প্রার্থীর মোবাইলে ৪ অঙ্কের একটি যাচাইকরণ কোড যাবে। এই কোডটি লিখে মোবাইল নাম্বারটি পুনরায় টাইপ করে সাবমিটে ক্লিক করতে হবে। এর সাথে সাথেই দেখা যাবে টিন অ্যাকাউন্টের ইউজার আইডিটি।
পড়ুন: মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পদ্ধতি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ
এবার পাসওয়ার্ড বের করার জন্য আবার ফরগেট পাসওয়ার্ড মেন্যুতে যেতে হবে। তারপরের পেজে ফরগেট মাই পাসওয়ার্ড অপশনটি বাছাই করে নেক্সটে যেতে হবে। এবারে সবেমাত্র বের করা ইউজার আইডি দিয়ে ভেরিফিকেশন অক্ষরগুলো লিখে নেক্সটে যাওয়ার সাথে সাথে প্রার্থীর মোবাইলে ৪ অঙ্কের ভেরিফিকেশন কোড যাবে। কোডটি লিখে রিকভার মাই অ্যাকাউন্ট-এ ক্লিক করার পর যে পেজটি আসবে সেখানে কমপক্ষে ৪টি অক্ষর বা সংখ্যা দিয়ে বানিয়ে নেয়া যাবে একটি নতুন পাসওয়ার্ড।
শেষাংশ
অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট করার উপায় একদম সহজ এবং ঝামেলামুক্ত, যা ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি দারুণ প্রয়াস। টিন গ্রহণকারীদের যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো- টিন থাকলেই যে আয়কর রিটার্ন দিতে হবে এমনটি নয়। বাংলাদেশে স্থায়ী কোন ভিত্তি নেই এমন অনিবাসি, শুধুমাত্র জমি বিক্রি বা ক্রেডিট কার্ড নেয়ার জন্য টিন নিয়েছেন অথচ করযোগ্য আয় নেই এমন নাগরিকদের টিন থাকা সত্ত্বেও আয়কর রিটার্ন দাখিলের দরকার নেই।
২ বছর আগে
নদীর তীরে থাকা আছিয়ার পাশে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক
মেঘনা নদীর পাড়ের বাসিন্দা অসহায় বৃদ্বা আছিয়া বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন।
সোমবার বিকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আছিয়া বেগমকে(৬০) ৬ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা এবং একইসাথে তার ঘর মেরামতের জন্য ২ বান্ডেল টিন প্রদান করেন মানবিক জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
আরও পড়ুন: খুলনায় বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের নারী শ্রমিকদের মানবেতর জীবন
চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার পূর্বচরকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আছিয়া বেগম। স্বামী মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। থাকা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। নদীর পাড়ে ছোট জরাজীর্ণ ঘরে খুব কষ্টে বাস করেন তিনি। একমাত্র নাতিনকে নিয়ে কোনমতে দিনযাপন করেন। তার দু:খ কষ্ট জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের নজরে এলে তিনি এ সহায়তা প্রদান করেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান
অসহায় বৃদ্ধা আছিয়া বেগম বলেন, আল্লাহ ছাড়া সাহায্য করার কেউ ছিল না। অনেক কষ্টে দিন পার করছি।ডিসি আপা আমাকে যে সাহায্য করেছে, আমি অনেক খুশি হইছি।
আরও পড়ুন: শিক্ষকের মানবেতর জীবন: বিচারের জন্য নিরলস লড়াই
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ইউএনবি কে বলেন, ঘটনাটি জানতে পারার সাথে সাথে আছিয়া বেগমকে সহায়তা করেছি। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে একটি মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন না থাকে। আমাদের সরকারি নিয়মানুসারে আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। এটা মুজিব বর্ষের উপহার।
৩ বছর আগে