ড্রাগন ফল
লালমনিরহাটে ড্রাগন ফল চাষে ‘আবু তালেবের’ সাফল্য
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি বটতলা এলাকার আবু তালেব ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিকভাবে আমেরিকার জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। শখের বাগানে ফুল ও ফল আসায় উৎসুক জনতা ভিড়ছেন ড্রাগন বাগান দেখতে।
জানা গেছে, আবু তালেব ফরিদপুরের একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করেন। ফার্মটি পরিদর্শনে আসা বিদেশি মেহমানদের জন্য ফার্মের মালিক ড্রাগন ফল দিয়ে আপ্যায়ন করেন। সেখানে ড্রাগনের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ হয় তার। সেই থেকে এ পুষ্টিকর ফলের বাগান করার আগ্রহ দেখা দেয় তার মধ্যে। ব্যয়বহুল হলেও নিজের পরিবার ও প্রতিবেশিদের জন্য ড্রাগন কিনে নিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন আবু তালেব।
আরও পড়ুন: মাশরুমের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
এরপর পরিবারের দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় ড্রাগন বাগান করার উদ্যোগ নেন। পুষ্টিগুণের কারণে আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ড্রাগন ফল। কাণ্ড থেকে পাতাহীন ড্রাগন গাছ জন্মায়।
কমলাবাড়ি বটতলা এলাকায় গত বছর নিজেদের ৬৫ শতাংশ জমিতে পাঁচ শতাধিক পিলারে ২০ হাজার চারা রোপণ করে তৈরি করেন ড্রাগন বাগান। নাটোর জেলা থেকে ড্রাগন ফলের চারা ক্রয় করেন। দেড় বছর বয়সে ফল দেওয়ার কথা থাকলেও তা ১০ থেকে ১১ মাসেই ফল দেওয়া শুরু করেছে। বিদেশি এ ফল ও বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ভিড় জমায় আবু তালেবের ড্রাগন বাগানে। আবু তালেব তার ড্রাগন বাগানে ফলের পাশাপাশি চারাও উৎপাদন করছেন। ইতোমধ্যে দুই হাজার চারা উৎপাদন করেছেন এবং প্রতিটি চার ৫০ টাকা দরে বিক্রিও করেছেন। আরও ১০ হাজার ড্রাগনের চারা উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
আরও পড়ুন: অপ্রচলিত ফসল চাষে পাহাড়ের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে: কৃষিমন্ত্রী
আবু তালেব বলেন, ‘আমি আশা করছি এ বছর আমার বাগানে ৮-১০ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করতে পারব। বাগান থেকেই প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। তবে বাগানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেও লাভবান হওয়া যায়। একটি গাছ থেকে ১২-১৫ কেজি ড্রাগন ফল পাওয়া যায়।’
স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (৪৫) জানান, জানুয়ারিতে আবু তালেবের কাছ থেকে ড্রাগনের ১০০টি চারা কিনে রোপণ করেছি। তার কাছ থেকেই ড্রাগনের চাষ পদ্ধতি জেনেছেন। আবু তালেবের মতো সফল হলে বড় পরিসরে ড্রাগনের চাষ শুরু করবেন।
আরও পড়ুন: নতুন করে কৃষি বিপ্লব ঘটবে: মন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘ড্রাগন ফল চাষে দীর্ঘমেয়াদী মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। এটাই আমাদের প্রধান সমস্যা।’
কমলাবাড়ি এলাকার রেজাউল করিম রাজ্জাক বলেন, সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণ থাকায় এ ফলের চাহিদা দেশে অনেক বেড়েছে। তাই জেলার সৌখিন কৃষকেরা এ বাগান দেখতে আসছেন এবং নিজেরাও ড্রাগন বাগান করার কৌশল জেনে নিচ্ছেন। আগুন্তুকদের অনেকেই বাগান করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সে অনুযায়ী আগামীতে জেলায় ড্রাগন চাষ বাড়তে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, শখের করা ড্রাগন বাগানটি এখন ওই পরিবারের একটি আয়ের মাধ্যম হতে চলেছে। এখন অনেক আগ্রহী কৃষক ড্রাগন চাষ করার কৌশল জানতে ওই বাগানে আসেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, ‘এখন অনেক কৃষক ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ইতোমধ্যেই অনেকে এ ফলের চাষ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকেও তাদের অনুপ্রেরণা ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ড্রাগন ফল চাষে শুধু দরকার উঁচু জমি যেখানে কখনোই পানি জমাট বাঁধে না। আর দরকার সময় মতো সঠিক পরিচর্যা। ড্রাগন ফল চাষে বেশি বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। এ কারণে অনেক কৃষকের আগ্রহ থাকলেও চাষ করতে পারছেন না।’
৩ বছর আগে