নিজেদের নামে মিল
নামে মিল, বিনাদোষে ছয়মাস কারাভোগের পর জামিন
তাদের বাবার নামে মিল নেই, শুধু নিজেদের নামে মিল থাকায় বিনাদোষে ছয়মাস কারাভোগের পর জামিন পেলেন মানিক হাওলাদার। সোমবার হাইকোর্ট তাকে ছয়মাসের জামিন দিয়েছেন।
স্বামীকে নির্দোষ দাবি করে মানিক হাওলাদারের স্ত্রীর আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি মানিক মিয়ার পরিবর্তে কারাবন্দি হন শরিয়তপুরের মাছ ব্যবসায়ী মানিক হাওলাদার।
আরও পড়ুন: সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন, ওসি প্রদীপসহ ৬ জনের জামিন নামঞ্জুর
জামিনের পাশাপাশি এই মামলার নথি (সিডি) হাইকোর্টে দাখিল করতে সিরাজগঞ্জের জেলা জজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার প্রকৃত আসামি মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা কেন জারি করা হবে না তা জানতে রুল জারি করা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী পার্থ সারথী রায়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আরও পড়ুন: মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট
প্রকৃত আসামি মানিক মিয়ার পরিবর্তে নিরপরাধ মানিককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গত ৭ মার্চ বিচার বিভাগীয় নির্দেশ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন শরিয়তপুরের প্রধান বিচারিক হাকিম মো. শামসুল আলম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার আসামি মানিক মিয়া ও গ্রেপ্তার মানিক হাওলাদার এক ব্যক্তি নন। তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি। প্রকৃত আসামি মানিক মিয়া শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের মালতকান্দি গ্রামের ইব্রাহিম মৃধার ছেলে। আর কারাবন্দি মানিক হাওলাদার একই ইউনিয়নের আলমচান বেপারীকান্দির নজরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে। সোমবার এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপিত হয়। এরপর এটা দেখে আদেশ দেন আদালত।
জানা যায়, ৬৬৮ বোতল ফেনসিডিল রাখার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২ জুন সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলার আসামি মো. মানিক মিয়া, বাবা অজ্ঞাত-কে ২০০৯ সালের ৩ জুন গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বছরই হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান মানিক। ওই মামলায় বিচার শেষে মানিক মিয়াসহ চারজনকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ আদালত রায় দেয়। এ রায়ের পর মাছ ব্যবসায়ী মানিক হাওলাদারকে গত বছর ২৮ নভেম্বর ভেদরগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এর পরই প্রকৃত আসামি মানিক মিয়ার প্রতারনার বিষয়টি সামনে আসে।
আরও পড়ুন: ওসি প্রদীপের জামিন না মঞ্জুর: সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন
এ পর্যায়ে দেখা যায়, হাইকোর্টে মানিক মিয়ার দাখিল করা জামিন আবেদনে মানিক হাওলাদারের পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে। সিরাজগঞ্জ আদালতেও একই প্রতারনা করে মানিক মিয়া।
এ অবস্থায় মানিক হাওলাদারের মুক্তি ও তাকে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন নির্দোষ মানিক হাওলাদারের স্ত্রী। এই আবেদনের সঙ্গে দুই মানিকের পরিচয় তুলে ধরে সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মানিক সরদারের দেওয়া একটি সনদ দাখিল করা হয়। তাতে প্রকৃত আসামির বাবার নাম ইব্রাহিম মৃধা ও নির্দোষ মানিকের বাবার নাম নজরুল ইসলাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এ অবস্থায় প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন ও শরিয়তপুরের প্রধান বিচারিক হাকিমকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপরাধ মানিককে জামিনের আদেশ দেন হাইকোর্ট।
৩ বছর আগে