লকবডাউন
করোনা: খুলনা বিভাগে রেকর্ড ৩৫ জনের মৃত্যু, ১২৪৫ শনাক্ত
খুলনায় করোনাভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে রেকর্ড ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন করে ১ হাজার ২৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগে খুলনা বিভাগে মঙ্গলবার ২৯ জুন সর্বোচ্চ ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এদিকে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছি। সংকট দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের। ফলে রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসক ও সেবিকাদের সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে কুষ্টিয়ায় সাত জন, যশোরে সাতজন, খুলনায় চারজন, ঝিনাইদহে চারজন, সাতক্ষীরায় চারজন, মেহেরপুরে তিনজন, নড়াইলে তিনজন, চুয়াডাঙ্গায় দুজন ও বাগেরহাটে একজন মারা গেছেন।
খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৫৭ হাজার ৫২০ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ১০৫ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৮ হাজার ৯৩০ জন।
আরও পড়ুন:করোনা: খুলনার তিন হাসপাতালে ১০ মৃত্যু
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘন্টায় তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা ও উপসর্গে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে করোনায় ৭ জন ও উপসর্গে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে ৮ জন, জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একজন ও বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, খুলনা করোনা ডেডিকেট হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া করোনা উপসর্গে নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯৮ জন। যার মধ্যে রেড জোনে ১০৫ জন, ইয়ালো জোনে ৪৫ জন, আইসিইউতে ২০ জন ও এইচডিসিতে ২০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৪ জন।
গাজী মেডিকেল হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোংলার চিলা বাজার কালীকাবাড়ীর বিপ্লব মন্ডল (৩৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৯৩ জন। এরমধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ৯ জন ও এইচডিইউতে আছেন ১০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮ জন।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে রামপালের তিমির ঘোষ (৫০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন, তার মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ ও ৩৭ জন নারী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬ জন।
এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) আরটি পিসিআর ল্যাব ‘দূষিত’ হওয়ায় বন্ধ রয়েছে করোনার নমুনা পরীক্ষা। চালু হওয়ার ১৫ মাসের মাথায় প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে তিনদিনের জন্য বন্ধ থাকছে এই ল্যাব। তবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে থাকা রোগীদের মধ্যে যাদের নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন হবে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুন) নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ার পর কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার থেকে ল্যাবটির কার্যক্রম বন্ধ করে দূষণমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটির সভাপতি এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ল্যাবটি বন্ধ থাকলেও আগে থেকেই মজুত থাকা প্রায় ২ হাজার নমুনা ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। বৃহস্পতিবার থেকে যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হবে সেগুলোও এ ল্যাবে এই তিনদিনে পরীক্ষার সুযোগ থাকছে না।
তবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে অবস্থান করা রোগীদের মধ্যে যাদের পরীক্ষার প্রয়োজন হবে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) পিসিআর ল্যাব থেকে পরীক্ষা করা হবে।
আরও পড়ুন: রামেকে রেকর্ড ২২ জনের মৃত্যু
এদিকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন ছিল বৃহস্পতিবার। সকাল থেকে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে প্রশাসনের সদস্যদের। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশি চেকপোস্ট। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হলেই তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নগরীর সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলো মোড়ে কয়েকটি ফলের দোকান ছাড়া বাকি সব বন্ধ ছিল। রোগী ও বয়স্ক মানুষ ছাড়া কাউকে বের হতে দিচ্ছে না প্রশাসনের সদস্যরা। নগরীর শিববাড়ি মোড়েও একই অবস্থা। অপ্রয়োজনে রাস্তায় মোটর সাইকেল বের করার অপরাধে কয়েকটি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা ও থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে বিগত লকডাউনের সময় রাস্তায় গণপরিবহন দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রিকশা ছাড়া যান্ত্রিক পরিবহন বন্ধ ছিল।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম জানান, দেশে অস্বাভাবিক আকারে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে লকডাউন চলমান রয়েছে। খুলনার অবস্থা খুব ভয়াবহ। রোগী ও বয়স্ক মানুষের প্রয়োজন ছাড়া সকলকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমাদের চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত শহরের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করছে। তাদের সাথে রয়েছে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা।
এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি আভিযানিক দল বড় বাজারে দু জনকে ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম জানান, মহামারি করোনার সময় সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বিয়ে সরঞ্জাম বিক্রেতা অসীম কুমারকে ১ হাজার টাকা জরিমানা ও অপ্রয়োজনে মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হওয়ায় একজনকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
৩ বছর আগে