ডিমওয়ালা মাছ নিধন
ম্যাজিক জালে অবাধে মা মাছ নিধন!
ঠাকুরগাঁও জেলায় চায়না ম্যাজিক কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে নির্বিচারে ছোট-বড় ডিমওয়ালা মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে। ফলে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মৎস্য সম্পদ উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
এ জালের ব্যবহার বন্ধ না হলে স্থানীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চায়নার ম্যাজিক জাল এক ধরনের বিশেষ ফাঁদ। এটি ছোট ছোট কক্ষ বিশিষ্ট খোপের মতো। এ জাল খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ে বাঁশের খুঁটির সাথে জালের দু’মাথা বেঁধে রাখা হয়। ছোট-বড় সব ধরনের ডিমওয়ালা মাছ এ জালে আটকা পড়ে।
আরও পড়ুন: টাঙ্গন নদীতে নির্বিচারে চলছে ‘মা’ মাছ নিধন
বর্ষার পানি পুরোপুরি আসার আগেই জেলার বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট চায়না জালে (রিং জাল) ছেয়ে গেছে। আর এসব জাল দিয়ে প্রাকৃতিক উৎসে ডিম দিতে আসা মা ও পোনা মাছ নিধন করছেন স্থানীয়রা। জেলার সর্বত্র বিশেষ করে বালিয়াডাঙ্গীতে এই জালের ব্যবহার হচ্ছে।
জালের মালিকরা বলছেন, এমন কোনো মাছ নেই যা এই জালে ধরা পড়ে না।
মৎস্য অধিদপ্তরের বলছে, এই জাল সর্বনাশা। এটা বন্ধ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকরী পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।
সরেজমিনে দেখো যায়, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল, ধনতলা, পাড়িয়া, বড়বাড়ী, বড়পলাশবাড়ী, ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার রুহিয়া থানাধীন উত্তর বঠিনা, চুয়ামনি, আসাননগর, টাঙ্গন ব্যারেজ, বড়দেশ্বরী, সেনুয়া গ্রাম ঘুরে অসংখ্য চায়না জাল দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় যেখানেই একটু পানি জমেছে সেখানেই এই জাল পাতা হচ্ছে। আর অবাধে ডিমওয়ালা দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা হচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস মাছের প্রজননকাল। চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার কারণে নতুন পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছে না। যার ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা মাছ ধরলে দেশি মাছের অভাব দেখা দিবে।
উত্তর বঠিনা গ্রামের আব্বাস বলেন, এই জালের দাম একটু বেশি হলেও পোষায়। এত মাছ অন্য কোনো জালে ধরা পড়ে না।
স্থানীয়রা বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানুষ কর্মহীন হওয়ায় এসব মাছ ধরা আরো বেড়েছে। আগে যেসব লোক অন্য কাজকর্ম করে ব্যস্ত সময় পার করতেন, এখন তারা এসব মাছ ধরছেন।
আসাননগর গ্রামের গনি মিয়া দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করেন। গনি মিয়াকে চায়না জাল সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলে তিনি বলেন, যারা প্রকৃতপক্ষে মাছের কারবার করেন কিংবা মাছ ধরা যাদের বংশগত পেশা, তারা কখনো এই জাল দিয়ে মাছ ধরবেন না। শুধু মৌসুমি শিকারিরাই এমন কাজ করতে পারেন।
চায়না জালের বড় ব্যবসায়ী ফারুক জানান, বর্তমানে চায়না জালের খুব চাহিদা। প্রতি ফুট জাল ষাট টাকা দরে বিক্রি হয়। একজন ক্রেতা কমপক্ষে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট জাল ক্রয় করেন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরে বিষ প্রয়োগে ৭০ লাখ টাকার মাছ নিধন
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোছা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘চায়না কারেন্ট জালসহ যে জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরা হয় সে সব জাল আমাদের দেশে নিষিদ্ধ।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই জাল বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
৩ বছর আগে