পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেড় লক্ষাধিক কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশু বিক্রয়ের শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খামারিরা৷ প্রতিবছরই কোরবানির ঈদের অন্তত ১৫দিন আগে পশুর বাজারগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি থাকলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে পশু বিক্রয় নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলার খামারিরা।
জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবার ১২ হাজার ৩৭০টি পশুর খামার করা হয়েছে। এসব খামারে কোরবানির জন্য এক লাখ ৭৭ হাজার পশু লালন পালন করা হচ্ছে।
জেলা শহরের দাতিয়ারায় ‘রূপচান্দ বিবি ডেইরি’ নামে একটি খামার রয়েছে। খামারটিতে দেশীয় শতাধিক গরু লালন-পালনে ১২জন শ্রমিক পর্যায়ক্রমে কাজ করেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে গরু পাচারকারীদের তৎপরতায় করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক
এই খামারের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, 'খামারটিতে অনেক টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি কারণে আমরা চিন্তিত কিভাবে গরুগুলো বিক্রয় করবো। যদি এইবার হাট না বসে তাহলে অনেকটা লোকসান গুণতে হবে আমাদের।’
দক্ষিণ পৈরতলার তিন রাস্তার মোড়ে আলী আযম ডেইরি খামার। খামারটিতে বড় ছোট মিলিয়ে প্রায় ৪০টির মতো গরু রয়েছে। রয়েছে অসংখ্য মহিষ ও গাড়ল। এই খামারে সর্বোচ্চ গরুর মূল্য প্রায় ৬ লাখ টাকা। প্রতি বেলায় পাঁচ জন শ্রমিক খামারটিতে কাজ করেন। এই খামারের প্রায় ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন তাজু মিয়া
তিনি বলেন, ‘গরুগুলোকে তিন বেলায় খাবারে খড়, ঘাস, চিটা, গুড়, খৈল, ভুষি পর্যায়ক্রমে দেয়া হয়। অনেক শ্রম দেয়া হচ্ছে গরু-মহিষগুলোর প্রতি। গত বছর করোনার মাঝেও পশুর হাট বসেছিল। কিন্তু এবার ঈদের আগে যে পরিস্থিতি তাতে হাট না বসলে মালিকের অনেক টাকা লোকসান হবে।’
খামারটির মালিক আলী আযম বলেন, ‘ঈদের ছয় মাস আগে থেকেই পশুগুলোকে অধিক যত্ন সহকারে লালন পালন করা হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এইবার গরু কম তুলেছি। দেশের যে অবস্থা করোনার মহামারিতে সব খামারিরা একটা চাপা আতঙ্কের মাঝে রয়েছেন। সরকারকে আমাদের দিক বিবেচনা করে একটা পরিকল্পনা নিতে হবে।’
জেলা শহরের উত্তর পৈরতলার কাউসার এগ্রো ফার্মের মালিক শিল্পপতি কাউসার আহমেদ। খামারটির দায়িত্বে আছেন হাজী জালাল উদ্দীন। এই খামারে জেলার বড় বড় গরু রয়েছে৷ এখানে সর্বোচ্চ ১০ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকার গরু রয়েছে। রয়েছে ফাইটার, খাসা, শাহিওয়াল, হারিয়ানা, নেপালী প্রজাতির ষাড় ও বলদ।
খামারে দায়িত্বে থাকা হাজী জালাল উদ্দীন জানান, খামারে এইবার তারা কম গরু তুলেছেন। তবে সবগুলো গরুই আকর্ষণীয়। খামারের বড় দু’টি বলদ রয়েছে, যা জেলার মধ্যে উচ্চতায় সবচেয়ে বড় গরু বলে দাবি তার।
তিনি বলেন, ‘আমরা অনলাইনে গরুগুলো বিক্রয়ের প্রচারণা চালাচ্ছি। কিন্তু বাজারে দরদাম করে বিক্রয়ে আরও সুবিধা হয়। অন্যান্য বছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা গরু কিনতে আসতেন খামারে। এই বছরের করোনা পরিস্থিতিতে তারা আসতে পারছেন না। যদি হাট নাও বসে, আমরা যেন গরুগুলো যেকোনও উপায়ে বিক্রয় করতে পারি সরকার সেরকম ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আশা করছি।’
আরও পড়ুন: গরু ছিনতাই করতে না পেরে কৃষকের গলায় ছুরিকাঘাত !
এই বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুজ্জান জানান, এই বছর কোরবানি ঈদকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু প্রস্তুত রয়েছে। গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলার চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত আরও ১৩/১৪ হাজার পশু থাকবে।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও আমরা খামারিদের অনলাইনে পশু বিক্রয় করতে উৎসাহিত করছি। আমাদের ফেসবুক পেইজ রয়েছে। সেখানে খামারীরা পশুর ছবি দিচ্ছেন। আমরা এই পেইজ বুস্টিং করছি। গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ৬০ শতাংশ পশু অনলাইনে বিক্রয় হয়।’
৩ বছর আগে