ম্যালেরিয়া
ম্যালেরিয়ার টিকা অনুমোদন দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বুধবার বিশ্বে প্রথম ম্যালেরিয়া টিকার অনুমোদন দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস আধানম গেব্রিয়েসাস জেনেভায় এক সংবাদ সম্মলনে বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’ এর আগে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি এই টিকাকে ছাড়পত্র দেয়ার সুপারিশ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক ডা. মাতশিদিসো মোয়েতিও বলেন, ‘আজকের এই ঘোষণা আফ্রিকা মহাদেশের জন্য আশোর অলো। আমরা আশা করি এই টিকার মাধ্যমে আরও অনেক আফ্রিকান শিশু ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষা পাবে এবং সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক হবে।’
পড়ুন: ব্যাপক ভ্যাকসিনেশনের হার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকি কমাতে পারে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ডব্লিউএইচও জানায়, ২০১৯ সাল থেকে ঘানা, কেনিয়া ও মালাউয়েতে প্রায় আট লাখ শিশুর উপর এই টিকা পরীক্ষা কা হয়েছে।
মস্কিরিক্স নামে পরিচিত ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) ১৯৮৭ সালে টিকা তৈরি করে।
ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতার হার ৩০ শতাংশের মতো। এর জন্য চারটি ডোজ নিতে হবে। তারপরও বিজ্ঞানীরা বলছেন টিকাটি আফ্রিকায় ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে বিশ্বের ২০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং প্রতি বছর চার লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
পড়ুন: বাঘাইছড়িতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৭৮, সাজেক রেড জোন
বাংলাদেশকে ২ লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উপহার দিচ্ছে মালদ্বীপ
বাঘাইছড়িতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৭৮, সাজেক রেড জোন
বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা সাজেকে করোনার পাশাপাশি হঠাৎ করে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৭৮ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আর সাজেক ইউনিয়নকে ম্যালেরিয়ার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি সেবা সংস্থা ব্রাকের হিসাব মতে, সাজেকের ৯নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়া, বড়ইতলী পাড়া, শিব পাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১নং ওয়ার্ডের মন্দির ছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই, বেটলিং, অরুন কার্বারী পাড়াসহ আশপাশের সব এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
সাজেকের ৭নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়ায় একই পরিবারের তিনজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা (নয়ন)।
আরও পড়ুন: সাজেকে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস খাদে, আহত ৮
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইশতেখার আহমদ জানান, গত বছরের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর লকডাউনের কারণে বাঁশ কর্তন ও জুম চাষ বন্ধ ছিল। এ বছর তা বন্ধ না থাকায় ও বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গল সৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রুব বেড়ে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে।
এনজিও সেবা সংস্থা ব্রাকের হিসাব মতে, এই বছর জুন মাস পর্যন্ত দশ হাজার সন্দেহজনক রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে ৬৭ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই ৪৯ জনের রক্তে ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক মাসে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২৯ জন।
ডা. ইশতেখার আহম্মেদ জানান, হিসাব মতে উপজেলায় মোট ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৭৮ জন। দুর্গম সাজেক ইউনিয়নকে আমরা ম্যালেরিয়ার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছি। যেখানে ২০১৯ সালে ২৮ হাজার মানুষের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ১,৩০৬ জনের শরীরে ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। এছাড়া গত বছর ২৮, ৬৬৭ জন মানুষের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮৯ জনই ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে। তবে এটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা ব্রাকের হিসাব মতে।
তিনি জানান, সাজেকে আমাদের কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক করার পরিকল্পনা আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে সাজেকসহ আশপাশের জনগণকে খুব সহজে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে। তবে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজারের রামুসহ ম্যালেরিয়া প্রবণ জেলাগুলোতে ‘মাইক্রো প্ল্যান’ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারের ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্রাকের রাঙ্গামাটির কো-অরডিনেটর হাবিউর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: সাজেক সড়কে পর্যটকদের গাড়িতে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের হামলা, আটক ৩
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর একটানা বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মশার প্রজনন বেড়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে পাহাড়ের বিভিন্ন ঝিরি ও ছড়ায় পানি জমে মশার প্রজননে সুবিধা হয়। এ ছাড়া ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে সেখান থেকেও ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি সন্ধ্যা থেকে মশারি ব্যবহার, আশপাশের ঝোপঝাড় ও নর্দমা পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেন এবং তিনি আরো আশঙ্কা করছেন, পর্যটন এলাকা হওয়ায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকলে এক সময় পর্যটকদের মাধ্যমে সারা দেশে ম্যারেরিয়ার জীবানু ছড়াতে পারে। তাই ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য সকলে সচেতন হয়ে আশপাশের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।