দাফনে বিলম্ব
বাবার লাশ কবর না দিয়ে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব, অবশেষে মর্গে
পারিবারিক জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বাবার লাশ দাফন না করে রাতভর চলে ভাই-বোনের ঝগড়া। রাত পেরিয়ে গেলেও সমাধান না হওয়ায় পরদিন সকালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের শালিস বৈঠকের মাধ্যমে দাফনের সিন্ধান্ত হয়।স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন অম্বলপুর গ্রামের কৃষক ইয়াছিন মোল্লা (৮৮)। বাবার লাশ দাফন না করে পাঁচ সন্তান সারাদিন জমির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ঝগড়া করে। দিন শেষে সারারাত চলে পরিবারের ঝগড়া। এমন চিত্র দেখে এলাকাবাসী স্থানীয় দেবগ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামকে সংবাদ দেয়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরের মতলবে বাবার লাশ দাফনের পরই বিয়ের পিড়িতে ছেলে
বুধবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সবাইকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেন। বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত বাড়ির উঠানে পরে থাকে লাশ। দীর্ঘ ২২ঘন্টা পর শালিসে ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে আরেক ছেলের অভিযোগে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ বেলা ২টার দিকে লাশ উদ্ধার করে রাজবাড়ী মর্গে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মৃত ইয়াছিন মোল্লার ৫ সন্তানের মধ্যে বাবলু মোল্লা, ফুলবড়, রাবেয়া ও মমতাজের সাথে ছোট ছেলে রহমান মোল্লার দীর্ঘ দিন ধরেই বিরোধ চলছিল। বিরোধের জের ধরে লাশ দাফন না করে জমি ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু, লাশ দাফনে বাধা
ইয়াছিন মোল্লার সন্তান বাবলু মোল্লা, ফুলবড়, রাবেয়া ও মমতাজ অভিযোগে বলেন, দীর্ঘদিন বাবা ছোট ভাই রহমান মোল্লার কাছে থাকতো। এ সুযোগে তার সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেন। এ নিয়ে রাজবাড়ীর আদালতে আমরা একটা মামলাও করেছি। মামলায় গত সোমবার (৫ জুলাই) বাবাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিলেও অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি। অসুস্থতার খবরে আমরা বাবাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে বললেও ছোট ভাই স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা করায়। তাদের ধারণা রহমান মোল্লা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ইয়াছিন মোল্লাকে হত্যা করেছে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস: ১,২১১ লাশ দাফন করল ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অভিযোগ প্রসঙ্গে রহমান মোল্লা বলেন, ‘আমি বাবাকে দেখভাল করতাম। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে বাবা বেশি অসুস্থ হলে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন।’দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারের প্রায় ৬০ শতাংশ জমি নিয়ে সন্তানদের মধ্যে বিরোধ। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ইয়াছিন মোল্লা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যান। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি মারা গেলে তার লাশ বড় ছেলে ও অন্যান্য বোন বাড়িতে ওঠতে দেয়নি বলে রহমান অভিযোগ করে। জমি নিয়ে সন্তানদের বিরোধে প্রায় ২৩ ঘণ্টা দাফন বিলম্বিত হয়। বিষয়টি খুব দুঃখ জনক।’গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং একটি সাধারণ ডায়রি মূলে ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
৩ বছর আগে