ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে: মন্ত্রী তাজুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে শিগগরই দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সোমবার এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। মানুষকে বার বার এসব বিষয়ে সচেতন করার পরও অনেকে আমলে নিচ্ছেন না। তাই উভয় সিটি করপোরেশন ১০ জন করে ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করা হয়েছে এবং তারা অভিযান পরিচালনা করবে।’
তাজুল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকারি বা বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানই হোক নির্মাণাধীন বা পরিত্যক্ত অথবা ব্যবহার করা ভবন যেখানেই হোক পানি জমিয়ে রেখে এডিস মশা প্রজননে ভূমিকা রাখলে আইন আনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনগণের জান-মাল ক্ষতিগ্রস্ত করার কোন অধিকার আমার, আপনার কারোরই নেই।
মন্ত্রী বলেন, নির্মাণাধীন ও পরিত্যক্ত ভবন অথবা বাসার ছাদ, আঙিনা, ফুলের টব, ফ্রিজ-এয়ারকন্ডিশনে কোন অবস্থাতেই যেন জমা পানি না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ তিন দিনের বেশি জমানে পানিতে মশা প্রজনন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
‘নির্মাণাধীন এবং পরিত্যক্ত ভবনই হচ্ছে এডিস মশার প্রধান ঊর্বর জায়গা । এসব জায়গায় জমানো পানিতে লার্ভিসাইড অথবা দশ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গায় আড়াই শো গ্রাম কেরোসিন ঢেলে দিয়ে মশার প্রজনন ধ্বংস করা সম্ভব,’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
তাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালের ডেঙ্গুর মারাত্মক ভয়াবতার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ায় ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল। এ বছরও মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত লোকবল, কীটনাশক, ফগিং মেশিন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করা হবে।
তিনি বলেন , সবাই মিলে এক সাথে কাজ করলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন করার জন্য ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
উভয় সিটি করপোরেশনের মেয়র অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী বলেন, এখন দরকার মানুষের সচেতনতা। সচেতন না হলে প্রতিরোধ করা কঠিন হবে। শুধু অভিযান চালিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটিতে সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং মৃত্যুও ঘটছে । নগরীর বাসীর মধ্যে ডেঙ্গু রোগ আতঙ্ক কাজ করছে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু: একদিনে ৪৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি
দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ মাসের ৭ জুলাইয়ের পর্যন্ত সর্বমোট ৫৩৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। উত্তর সিটি করপোরেশনের তুলনায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এডিস মশার প্রকোপ একটু বেশি বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরবাসীকে সচেতন এবং এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করার লক্ষ্যে ১ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত শুক্রবার ব্যতীত ১০ দিনব্যাপী মশক নিধন চিরুনী অভিযান পরিচলনা করা হয়।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘এডিস মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। নিজেদের বাসাবাড়িতে ফুলের টব, ছাদ কিংবা অন্য কিছুতে যাতে তিন দিনের বেশি পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিজেদের ঘরবাড়ি ও আশেপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে এডিস মশার বংশ বিস্তারকে রোধ করতে হবে।’
এ দিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস ইউএনবিকে বলেন, ‘মশক নিয়ন্ত্রণ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরও গতিশীল করা হবে । কারণ বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা দেখছি, হাসপাতালগুলোতে কিছু রোগী ভর্তি হচ্ছে। সুতরাং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমাদের তদারকি আরও বৃদ্ধি করা হবে । আপনাদের নেতৃত্বে গতবারের ন্যায় ইনশাআল্লাহ আমরা এবারও সফল হব।’
আরও পড়ুন: জেনে নিন ডেঙ্গু জ্বর থেকে সুরক্ষার উপায় ও করণীয়
তাপস বলেন, দু'টো বাসার মাঝখানে অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে দেখা যায় ,এসব জায়গায় বিভিন্ন পাত্র-সামগ্রীর মধ্যে পানি জমে থাকে। সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমাদের কাছে একটি ডাটা বেজ আছে কাদের বাড়িতে গত বছর লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল। এসব বাড়ির মালিককে আমরা এসএমএস দিয়ে সতর্ক করেছি।
এদিকে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন ৪৮ ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য জানিয়েছে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে ১৭৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ১৭৮ এবং ঢাকার বাইরে একজন ভর্তি আছেন বলে কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে।
৩ বছর আগে