ব্যস্ততা নেই কুমিল্লার কামার পাড়াতে
টুং টাং শব্দ, ব্যস্ততা নেই কুমিল্লার কামার পাড়াতে
প্রতিবছর ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাড়তি আয়ের আশায় দিন-রাত পরিশ্রম করে থাকেন কামাররা। কোরবানির পশুর মাংস কাটার সরঞ্জাম তৈরির কাজে কামার পল্লীতে সবসময় ব্যস্ততা থাকলেও, এবছর দেখা গেছে ভিন্নতা।
এই বছর পল্লী জুড়ে ক্রেতা শূনত্যা দেখে গেছে। জেলার বৃহত্তর চকবাজারের কামারপাড়া এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৩২ পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। একমাত্র কামারের কাজ করে তারা পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কামার পল্লীতে তারা লোহা পুড়িয়ে লাল করে হাতুড়ি পিটিয়ে ছুরি, দা, বটি ও চাপাতি তৈরি করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঈদের জন্য প্রস্তুত দেড় লক্ষাধিক পশু
বৃহস্পতিবার কুমিল্লা নগরীর চকবাজার, শাসনগাছা, আমতলী, কামারপট্টি এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সুজন কর্মকার, বেনু কর্মকার, বাবুচন্দ্র, কৃষ্ণপালরা অবসর সময় পার করছেন।
কর্মকাররা এক মাস আগে থেকে কোরবানির পশুর মাংস কাটতে শতশত ছোট-বড় ছুরি, চাপাতি, গরু জবাই ও মাংস কাটার জন্য মজুদ করে রাখত। প্রতিটি বড় ছুরি ৭০০ টাকা, ছোট ছুরি ২০০ টাকা ও চাপাতি ৩০০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করা হত। তাদের তৈরি করা এসব সরঞ্জাম কিনতে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসতো। কিন্তু এই বছর করোনায় লকডাউনের কারণে পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় পাইকাররা না আসায় বিক্রি একেবারেই কম হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের।
চকবাজারের শ্যামল কর্মকার বলেন, ‘ঈদের আর কয়েকদিন বাকি, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সব কামাররা পুঁজি বিনিয়োগ করে। গত বছর করোনা ও কঠোর লকডাউন থাকার বিক্রি করতে পারিনি। সারা বছর আমরা কষ্টে দিন যাপন করছি। এ বছর তিনিও ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। বৃহস্পতিবার সারাদিনে মাত্র তিন জন ক্রেতা এসেছে। গত বছরে মতো যদি এমন অবস্থা চলমান থাকে তাহলে আমাদেরকে বাপ-দাদার এই পেশা পরিবর্তন করে অন্য কাজ খুঁজতে হবে। আমরা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি।’
একই এলাকার পিন্টু কর্মকার বলেন, ‘দু-এক বেলা না খেয়ে থাকলেও পেটকে বোঝানো যায়, কিন্তু সপ্তাহে কিস্তিওলারা তো মানবেন না। যেভাবেই হোক তাদের টাকা জোগাড় করে দিতে হবে। করোনায় সরকার লকডাউন দেয়ার পর থেকে বেচাকেনা নেই। কয়েকদিন পর ঈদ, টানা একমাস পর মঙ্গলবার দোকানটা খুললাম,পুলিশ একটু পরপর দৌড়ানি দেয়। তাই টুকটাক কাজ করে কিস্তির টাকা জোগাড় করি। এর মাঝেও দোকান খোলার অপরাধে জরিমানা দিতে হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটকে। আমরা কই যামু, এভাবে চলতে থাকলে তো না খেয়ে মরবো।’
আরও পড়ুন: মাংস সমিতি: সীমিত আয়ের মানুষের ঈদ আনন্দ
চকবাজার কর্মকার সমিতির সভাপতি মধুসূদন কর্মকার বলেন দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ পশু কোরবানি ও গোশত কাটার জন্য যে সব ধারালো সরঞ্জাম আমরা তৈরি করি। গত কয়েক বছর কামার পল্লীর ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। মানুষ এখন বিদেশি আধুনিক জিনিসপত্র দিকে ঝুঁকছে, এর মাঝে গত বছরের মতো এ বছর করোনা নিয়ে পার করতে হচ্ছে কোরবানির ঈদ। বাজার অবস্থা তো আপনারও নিজ চোখে দেখলেন।’
এ বিষয় কুমিল্লা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক এ.এস.এম. জোবায়েদ বলেন, সমগ্র জেলা কামার জনগোষ্ঠীদের আমরা বিভিন্ন সময় একাধিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সম্প্রতি এই জনগোষ্ঠীদের জন্য সরকারে একটি প্রকল্প আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই প্রকল্পটি কাজ শুরু করবো। এছাড়া কিছুদিন আগেও আমরা প্রতিজন কামারদের ছয়মাসের প্রশিক্ষণসহ ১৮ হাজার টাকার দিয়েছি।
৩ বছর আগে