আমন আবাদ
আবাদ মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধি, ফরিদপুরে আমন উৎপাদনে শঙ্কিত চাষিরা
ফরিদপুরে চলতি আমন ধান আবাদ মৌসুমে সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ছয় হাজার হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে খুচরা বাজারে ইউরিয়া সারের দর বেড়ে যাওয়ায় কাঙ্খিত উৎপাদন নিয়ে শঙ্কিত জেলার চাষিরা।
জেলার ৯ উপজেলাতে মাসিক ইউরিয়া সারের চাহিদা তুলনায় সরবরাহ হয়েছে অর্ধেক। যে কারণে খুচরা বাজারের এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী জানান, চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর। কিন্তু সেখানে আবাদ হয়েছে ৭০ হাজার ২৯৪ হেক্টর।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে আমন আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা
তিনি জানান, চারা রোপনের সময় সার কিটনাশকের দাম স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু কয়েক দিন হলো হঠাৎ করেই খুচরা বাজারে ইউরিয়ার সারের দর কিছু বেড়েছে। তবে এই দর বেশি দিন থাকবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, আমন মৌসুমে আগস্ট মাসের ইউরিয়া সারের চাহিদা ছিল ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন এবং সেপ্টেম্বর মাসের চাহিদা ৪ হাজার ৫০২ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৫ হাজার ৭০২ মেট্রিক টন।
জেলার আমন চাষিরা জানান, আমরা খেত-খামার করি নিজের ও দেশের উন্নয়নের জন্য। সেখানে যদি চাষাবাদের প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়ে যায় তাহলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
আরও পড়ুন: কয়রায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিনা চাষে আলু আবাদ
চাষিরা বলেন, ‘ধানের উৎপাদন খরচ আগের যে কোন সময়ে চেয়ে এখন বেশি। তার ওপর যদি সারের দাম বাড়ে তাহলে আমরা (চাষিরা) ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের ডোমরাকান্দি এলাকার চাষি নিজাম খলিফা বলেন, ‘আমার আমন খেতে চাহিদা রয়েছে ২৫ কেজি ইউরিয়া। সেখানে আমি কিনেছি এক কেজি। বাজারে সারের ঘাটতি রয়েছে যে কারণে দাম কেজিতে চার টাকা বেশি।’
আরও পড়ুন: ধান ও আম আবাদের পরিবর্তে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষক
সারের দামের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফাটিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের ফরিদপুর শাখার সভাপতি আব্দুর সালাম বাবু বলেন, ‘ডিলার পর্যায়ে সারের দাম কম-বেশি হয়নি। তবে খুচরা বাজারে কিছুটা দাম বেড়েছে।’
তিনি জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের জেলার ইউরিয়ার চাহিদা যা ছিল সে তুলনায় সরবরাহ কম হয়েছে চার হাজার মেট্রিক টন। এই কারণে হয়তো দামের কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
৩ বছর আগে
ঠাকুরগাঁওয়ে আমন আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা
দেশের উত্তরের কৃষি নির্ভর জেলা ঠাকুরগাঁও। করোনার দুর্যোগের মাঝেও আমন আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকেরা। কেউ চারা তুলছেন আবার কেউ সে চারা রোপন করছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন, বেগুনবাড়ি, খোঁচাবাড়ি, দানারহাট, বরুনাগাঁও ও রানিশংকৈল, পীরগঞ্জ, হরিপুররে সরেজমিনে দেখা গেছে, দল বেধে শ্রমিকেরা কোথাও আমনের চারা তুলছেন, আবার কোথাও চারা রোপন করছেন। এদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের চারা তুলে রোপনের দৃশ্য চোখে পড়ে বেশ কয়েক জায়গায়।
আরও পড়ুন: ঝিকরগাছায় আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
বেশ কয়েকটি জাতের ধান আবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।
সদর উপজেলার দানারহাট এলাকার কৃষক মইনুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও তিনি চার একর জমিতে আমন রোপনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে চারা রোপনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। শ্রমিক নিয়োগ করে যে কোন দিন চারা রোপন করবেন তিনি ।
সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ এলাকার কৃষক জলিল জানান, তিনি এ বছর আড়াই একর জমিতে আমন ধান লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা সংগ্রহ করেছেন এবং তা রোপনও শুরু করেছেন। গত বছর শুরুর দিকে দাম কম পাওয়া গেলেও এ বছর ভালো দাম পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে কৃষকেরা জেলায় মোট ২৬০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন করেছেন। জেলার অধিকাংশ জমি উঁচু। তাই আরও বৃষ্টি প্রয়োজন। এই জমিতে একটু বিলম্বেই রোপন করা হয় আমন চারা।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও জেলা অন্যান্য ফসলের ন্যায় ধানের জন্যও বিখ্যাত। প্রচুর পরিমাণে ধান এ জেলায় উৎপাদন হয়। প্রত্যেক বছর আমন মৌসুমে কৃষকদের যাবতীয় পরামর্শ ও সেবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রদান করা হয়। এ বছরও দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় আমন ধান সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কা
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাজারের কিছুটা সমস্যা থাকলেও পরিস্থিতি একটু ভালো হলেই লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে। কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে তিনি আশা করেন।
৩ বছর আগে