বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে
বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
কাতারের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি উপসাগরীয় দেশ থেকে এলএনজি ও সার আমদানিতে কাতারের আরও সহযোগিতা কামনা করেন।
সোমবার গণভবনে সফররত কাতারের শ্রমমন্ত্রী ড. আলী বিন সাঈদ বিন স্মাইখ আল মারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি সহযোগিতা কামনা করেন।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাতার সেখানে শিল্প স্থাপনে চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো জমি নিতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠ ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের ১১ লাখ নাগরিক এখন দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, তার সরকার উন্নত জীবনযাপনের জন্য প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তর করেছে।
তিনি আরও বলেন, ওআইসি এই বিষয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে চীন: ওয়াং ই
কোভিড-১৯ মহামারি বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সরকার এ বিষয়ে এখনও খুবই সতর্ক।
বৈঠকে কাতারের মন্ত্রী বলেন, জনশক্তি বিষয়ে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে তার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
কাতারের মন্ত্রী বাংলাদেশকে জ্বালানি ও চিকিৎসা খাতে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
কাতারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভূয়সী প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সেখানে চার লাখ বাংলাদেশি কাজ করছে এবং তারা দেশটিতে কর্মরত দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাসী সম্প্রদায়।
মন্ত্রী বলেন, কাতার এখন আগামী ২০ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য প্রস্তুত এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে ড. আলী বিন সাদ শেখ হাসিনাকে কাতারের আমির ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ইমরান আহমদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুস সালেহীন, কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিন ও বাংলাদেশে কাতারের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স সাইদ আল সামিখ এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বেইজিং
এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র: সিসন
২ বছর আগে
বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় জাপান
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো বলেছেন, বাংলাদেশের তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) মাধ্যমে জাপান তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। তবে তিনটি এসইজেডের মধ্যে আড়াইহাজার এসইজেডের সফলতার ওপর জাপানের বিনিয়োগ নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।
নাওকি বলেন, ‘আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে সর্বোচ্চ বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।’ তার মতে, বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো।
আরও পড়ুন: ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ৫ চ্যালেঞ্জ দেখছেন রাষ্ট্রদূত ইতো
জাপানিজ রাষ্ট্রদূত জানান, তিনি অনেক দিন ধরেই আড়াইহাজারকে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি মনে করেন, আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চল এশিয়ার ভিয়েতনাম, মিয়ানমার এবং ফিলিপাইনের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকেও পিছনে ফেলতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, আড়াইহাজারে সফলতা পেলে মীরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর এবং মহেশখালী-মাতারবাড়ি অর্থনৈতিক অঞ্চলেও বিনিয়োগের ব্যাপারে কাজ করবে জাপান।
কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন কর্তৃক রবিবার ‘বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক: ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে মূলবক্তা হিসেবে অংশগ্রহণ করে এসব কথা বলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজছে জাপান
ওয়েবিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিখ্যাত কূটনীতিক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
অনলাইন আলোচনায় অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে যুক্ত ছিলেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বিশেষ দূত মো. আবুল কালাম আজাদ, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রধান কর্মকর্তা হায়াকাওয়া ইউহো, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, জাপানের স্যাক্রেড হার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসাকা ওহাশি, সাংবাদিক ও লেখক মনজুরুল হক, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব পাবলিক পলিসির ডিন অধ্যাপক তাকাহারা আকিও এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম।
আলোচনায় জাপানি রাষ্ট্রদূত জানানা, আগামী বছরের শেষ নাগাদ আড়াইহাজার এসইজেডের কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রস্তুত হবে। তবে করোনার কারণে, এখানে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, প্রাথমিকভাবে জাপানের অন্তত ১০০ টি কোম্পানি আড়াইহাজারে বিনিয়োগ করবে।
আরও পড়ুন: ইকিগাই: জাপানিদের সুস্থ জীবনের রহস্য!
রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, জাইকা ইতোমধ্যেই মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করছে এবং খুব শিগগিরই মাতারবাড়ি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে কাজ শুরু করবে।
আলোচনায় জাইকার বাংলাদেশ প্রধান হায়াকাওয়া ইউহো উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বড় বাজেটের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ঢাকার তিনটি মেট্রোরেল লাইন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা বিমান বন্দরের টার্মিনাল-৩, বঙ্গবন্ধু যমুনা রেল সেতু এবং আড়াইহাজার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
আলোচনায় এসইজেডগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, খুব দ্রুতই বিনিয়োগকারীরা আড়াইহাজারে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। এছাড়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের অংশ হিসেবে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলেও দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করে চলেছে। এখানে নিজস্ব পাওয়ার প্ল্যান্টসহ বন্দর সুবিধা থাকবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: জাপানে কাদার স্রোতে ২ মৃত্যু, নিখোঁজ ২০
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সম্ভাব্য গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে আড়াইহাজার খুবই ভাল জায়গা। পাশাপশি মাতাড়বাড়িকেও বেশ সম্ভাবনার চোখে দেখছেন তিনি। তবে মীরসরাইকে বেশ জনবহুল উল্লেখ করে এই প্রকল্প নিয়ে তার শঙ্কার কথা জানান এই অর্থনীতিবীদ।
পাবলিক প্রাইভেট বিনিয়োগ আলোচনা সম্পর্কে আশাবাদী জাপানি রাষ্ট্রদূত নাওকি দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্ভাবনার পাশাপাশি বিদ্যমান কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তার মতে, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনটি বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এগুলো হল, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে দীর্ঘ সময় নষ্ট হওয়া, লেটার অফ ক্রেডিটের ধীর গতি এবং টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের সুযোগ না থাকা।
আরও পড়ুন: দেশে ফুড ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে জাইকা
তবে জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো বাংলাদেশের চলমান বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি নিয়ে বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তার মতে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বিনিয়োগ বান্ধব প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবিদার।
আলোচনায় সমাপনী বক্তব্যে ড. ইফতেখার চৌধুরী বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে জাপানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ।
৩ বছর আগে