স্থাপত্যশৈলী
স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন ইবির কেন্দ্রীয় মসজিদ
স্থাপত্যশৈলীর অনেক নিদর্শনের মধ্যে মসজিদ অন্যতম। এরকমই এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিদ্যালয়ের (ইবি) নির্মাণাধীন কেন্দ্রীয় মসজিদ। বৃহৎ জায়গা জুড়ে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটির দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যাবে যে কারোরই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দশমিক ২৫ হেক্টর জায়গা জুড়ে নির্মিত হচ্ছে এ মসজিদটি। চারতলা বিশিষ্ট বর্গাকৃতির মসজিদটি সিরামিক ও শ্বেতপাথরে নির্মিত। সূর্যের আলোয় দিনের বেলায় মসজিদটির গা থেকে যেন উজ্জ্বল আভা ছড়ায়। সুউচ্চ গম্বুজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এর মহিমা জানান দিয়ে যাচ্ছে।
মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরের আয়তন ৫১ হাজার বর্গফুট। চারতলার মূল মসজিদে মোট সাত হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে। এছাড়া মসজিদের সামনের পেডমেন্টে নামাজ পড়তে পারবে আরও ১০ হাজার মুসল্লি। মসজিদের সামনের অংশের উপরে রয়েছে ৯০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বৃহৎ গম্বুজ। নিচতলা থেকেও ভেতর দিয়ে গম্বুজটির একদম উপরের অংশ দেখা যায়। বিশাল এ গম্বুজটি মসজিদের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া মসজিদের বাউন্ডারির চারপাশে চারটি মিনার স্থাপিত হবে। যার প্রতিটির উচ্চতা হবে ১৫০ ফুট।
পড়ুন: মডেল মসজিদ মানুষকে ইসলামের মাহাত্ম্যে উৎসাহিত করবে: প্রধানমন্ত্রী
মসজিদের তিন পাশ দিয়ে থাকবে প্রবেশ পথ। প্রতিটি প্রবেশপথে থাকবে একটি করে গম্বুজ। মসজিদ ভিত্তিক ক্যাম্পাস গড়ার জন্য প্রতিটি অনুষদীয় ভবন থেকে মসজিদে আসার জন্য রয়েছে প্রশস্ত পথ। মসজিদের নিচতলায় একটি লাইব্রেরি ও গবেষণা সেন্টারের প্রস্তাবনা রয়েছে। যেখানে দেশ ও বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্লভ বইগুলো স্থান পাবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধর্মীয়সহ নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন এখানে।
নিমার্ণকাজ শেষ হলে মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন ১৭ হাজার মুসল্লি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, অনন্য স্থাপত্যকর্ম মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। সরকারি অর্থায়নে কাজ শুরু হলেও পরে সহায়তা আসে বিদেশ থেকেও। তবে মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ভিন্ন খাতে ব্যয় করায় ও সঠিকভাবে কাজে না লাগানোয় অর্থ ফেরতও নেয় বিদেশি প্রতিষ্ঠান। ফলে দীর্ঘ ২৬ বছরে মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পর ২০০৪ সালে ৩৬ শতাংশ কাজ শেষ হলে তৎকালীন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসাইন শাহজাহান উদ্বোধনের মাধ্যমে নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেন মসজিদটি। এরপর দীর্ঘ ১৩ বছর নির্মাণ কাজ থেমে থাকে। ফলে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি হারাতে বসে তার শৈল্পিক সৌন্দর্য। পরে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী সময় দুই দফায় নির্মাণ কাজ সম্প্রসারণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।
প্রকৌশল অফিস জানায়, মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে এখনো ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। তবে বরাদ্দ না থাকায় নির্মাণ কাজ চলছে না। অর্থ পেলে এক বছরের মধ্যে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। নকশা অনুযায়ী নির্মাণ শেষ হলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা মসজিদগুলোর একটি হবে এই মসজিদ। সেই সাথে পরিণত হবে ধর্মীয় দর্শনীয় স্থানে।
পড়ুন: মডেল মসজিদ: মুজিববর্ষের অনন্য এক উপহার
করোনায় ইবির আরেক অধ্যাপকের মৃত্যু
এদিকে, অনন্য সাধারণ স্থাপত্য মডেলের কেন্দ্রীয় মসজিদটির নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার দাবি সকলের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল বলেন, এই মসজিদটি সম্পূর্ণ নির্মিত হলে দেশের অন্যতম ধর্মীয় দর্শনীয় স্থাপনায় পরিণত হবে। মসজিদটির নির্মাণকাজ ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে, সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন হতে আরও ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। টাকার ব্যবস্থা হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।
প্রয়োজনীয় টাকা প্রাপ্তির জন্য গত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
৩ বছর আগে