এফআইভিডিবি
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারি নীতির সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা নেই: সংলাপে বক্তারা
কেবলমাত্র সরকারের উদ্যোগে বিদ্যমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে সরকারের নীতির সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে তার অভাব রয়েছে। রবিবার এক ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা এই মন্তব্য করেন।
‘করোনা মোকাবেলায় স্থানীয় জনসম্পৃক্ত উদ্যোগ’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এমপি এবং শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। জনসম্পৃক্ত উদ্যোগ ছাড়া করোনা মোকাবেলা করা যাবে না বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
ফজলে হোসেন বাদশা জনসম্পৃক্ত ও সরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ের অভাবের কথা তুলে ধরেন।
মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনা সম্পর্কে এখনও অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি অনেক উদ্যোগ রয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর আরও জোর দিতে হবে।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রেখে বলেন, করোনা মোকাবিলায় জনসম্পৃক্ত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। জনসম্পৃক্ত ও সরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনার অভাব রয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান এবং এক্সেস টু ইনফরমেশন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী সংলাপে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক রওনক জাহান করোনা সচেতনতা বৃদ্ধিতে সমন্বয়ের অভাবের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব দেন।
করোনা মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্য অধ্যাপক রেহমান সোবহান নাগরিক সমাজের সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের একটি উদাহরণ সৃষ্টি করার কথা বলেন। এরকম উদাহরণ তৈরি করতে পারলে অন্যান্য সকল স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে তিনি মনে করেন।
আনির চৌধুরী বলেন, করোনা মোকাবেলায় শুধু সচেতনতা বৃদ্ধি যথেষ্ট নয়। তিনি পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের উপরে জোর দেন। তিনি বলেন, স্বেচ্ছাসেবকমূলক উদ্যোগ যারা নিচ্ছেন তাঁদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে হবে। তাহলেই সমন্বিতভাবে কাজ করা সম্ভব হবে।
সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বদিউল আলম মজুমদার । তিনি বলেন, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে প্রায় ১২০০টি গ্রামে করোনভাইরাস প্রতিরোধ সক্ষম গ্রাম (সিআরভি) উদ্যোগ গ্রহণ করে। ভাইরাসের বিস্তার রোধে ডব্লিউএইচও’র প্রযুক্তিগত নির্দেশিকা অনুসরণ করে এই মডেল গ্রামগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা পরিচালিত এবং স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে আশাব্যঞ্জক উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সংলাপে বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাটের বেতাগা, ফকিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাস এবং সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী। তাঁরা বলেন, গ্রাম পর্যায়ে নানা ধরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং এখনো সচেতনতা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।
আরও পড়ুন: দেশে একদিনে আরও ২৩১ মৃত্যু, শনাক্ত ১৪, ৮৪৪
সংলাপে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আবু জামিল ফয়সাল, জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা দলের (সিলেট বিভাগ) সদস্য, অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সে; ডা. লেলিন চৌধুরী, পরিচালক, হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ; সেলিমা সারওয়ার, নির্বাহী পরিচালক, এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি); জনাব স্বপন কুমার গুহ, নির্বাহী পরিচালক, রুপান্তর এবং জনাব বজলে মোস্তফা রাজী, নির্বাহী পরিচালক, ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপম্যান্ট অব বাংলাদেশ (এফআইভিডিবি)। তারা সকলেই জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন এবং করোনা সম্পর্কিত অসচেতনতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ হেলথ্ ওয়াচের সমন্বয়ক ও ব্র্যাকের সাবেক ভাইস চেয়ারপারসন ড. মোস্তাক রাজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তারা আরও বলেন, লকডাউনের মূল লক্ষ্য চলমান সংক্রমণের শৃঙ্খলকে ভেঙে ফেলা। এই শৃঙ্খলকে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যকারভাবে ভেঙে ফেলা সম্ভব, যেমন মানুষের আচরণের পরিবর্তনসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা; সংক্রমিত রোগীদের বিচ্ছিন্ন করা; সংক্রমিত হওয়ার সন্দেহ রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরকে পৃথকীকরণের ব্যবস্থা করা এবং টিকার আওতা বৃদ্ধি। প্রকৃতপক্ষে, করোনা মোকাবেলায় এগুলোই বর্তমানে প্রকৃত উপায়।
আরও পড়ুন: করোনা পরীক্ষায় অনিহা দেখাবেন না: প্রধানমন্ত্রী
এই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে এখনো মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে অনীহা এই সংক্রমণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ডেল্টা (ভারতীয়) রূপটি অতিমাত্রায় সংক্রামক একইসঙ্গে উপসর্গহীন রোগীর আধিক্য পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। এ অবস্থায় আচরণগত পরিবর্তন প্রয়োজন। সচেতনতা সৃষ্টিমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্তকরণের উদ্যোগের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশমালা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পর্যায়ে বহুপক্ষীয় প্রয়াস থাকলেও এগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব প্রবল।
আরও পড়ুন: সবাই টিকা পাবে: প্রধানমন্ত্রী
৩ বছর আগে