এশিয়ান হাতি
হাতি হত্যা: কক্সবাজারে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কক্সবাজারে একটি এশিয়ান হাতিকে বৈদ্যুতিক শকে হত্যার পর টুকরো করে মাটিচাপা দেয়ার সময় এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।মঙ্গলবার জেলার রামু দক্ষিণ খুনিয়াপালং এলাকায় এই হাতি হত্যার ঘটনায় আটক নজির আহমদ (৪৮) ও তার ছেলেসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে মামলা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, আটক নজির আহমদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এই ঘটনায় আরও কারা জড়িত আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে মৃত হাতিটিকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার নজির আহমদ ও তার তিন ছেলে তৈয়ব আলী (৩৪), মো. আলম (২২) ও জাফর আলম (২০) বাড়ির পাশে ধান চাষ করে। পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় পাল বেঁধে হাতি নেমে ধান গাছ নষ্ট করে। তাই তারা জমিতে বৈদ্যুতিক তারের বেড়া দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাকিম ও বাপ্পি বলেন, 'শুধু তাদের ধানের জমিতে নয়, এলাকার অন্যান্য ধান খেতেও হাতি নেমে ধান গাছ নষ্ট করে। নজির আহমদ ও তার ছেলেরা তাদের জমিতে হাতির বিচরণ ঠেকাতে বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে যাতে হাতি আসলে বিদ্যুতের শক খায়।’
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে বন্য হাতির আক্রমণ আতঙ্কে গ্রামবাসী
তারা জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার ভোররাতে পাল বেঁধে হাতি নামলে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে যায়। যার যার ধান গাছ রক্ষা করতে হাতিগুলোকে ধাওয়া করে। আমরা চারটি হাতি দেখতে পাই। তার মধ্যে তিনটি হাতি পালিয়ে গেলেও মা হাতিটি বৈদ্যুতিক তারে আটকা পড়ে। সকালে এর মৃত্যু হয়। কিন্তু হাতিটি বড় হওয়ায় পুঁতে ফেলা সহজ ছিল না। তাই শরীর থেকে মাথা ও পাগুলো কেটে বিচ্ছিন্ন করার সময় পুলিশ ও বনবিভাগের লোকজন এসে নজির আহমদকে আটক করে নিয়ে যায়।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা জানান, এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করতে অভিযান চলছে। তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ২০১৭ সালের হিসেবে কক্সবাজারের দক্ষিণ বনাঞ্চলে ১৬৩টি এশিয়ান হাতি রয়েছে। এর মধ্যে গত ২ বছরে প্রায় ২০ টির মতো হাতি বাচ্চা প্রসব করেছে। যা আশার আলো দেখায়। কিন্তু কিছু দুষ্কৃতিকারী প্রতিবছর নানা কৌশলে হাতি মেরে ফেলার চেষ্টা করে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারের বনাঞ্চলে এক বছরে এশিয়ান হাতির ১৬টি বাচ্চা প্রসব
বান্দরবানে বন্য হাতির আক্রমণে প্রাণ গেল ২ কিশোরের
৩ বছর আগে
কক্সবাজারের বনাঞ্চলে এক বছরে এশিয়ান হাতির ১৬টি বাচ্চা প্রসব
গত এক বছরে প্রায় ১৬টি এশিয়ান বাচ্চা হাতি প্রসব হয়েছে কক্সবাজারের দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন বনাঞ্চলে। সর্বশেষ ২ আগস্ট মা হাতি একটি বাচ্চা হাতি প্রসব করে টেকনাফের হোয়াইক্যং বনে। হাতির আবাস্থল দখল করে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের আগ্রাসনের মধ্যেও হাতিদের বাচ্চা প্রসবের খবরে পরিবেশবাদীদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুর কবির জানান, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন বনাঞ্চলে গত এক বছরে এক বছর বয়সী প্রায় ১৬টি বাচ্চা দেখা গেছে। হিমছড়ি, ধোয়াপালং, পানেরছড়া, ইনানী, হোয়াইক্যং, শীলখালী রেঞ্জের বনাঞ্চলের পকেটে এসব বাচ্চা প্রসব করে মা হাতি।
তিনি জানান, সর্বশেষ ২ আগস্ট কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের হোয়াইক্যং বিটের মংলা জাইন চাকমার ঘোনা এলাকার বনের অভ্যন্তরে একটি হাতি বাচ্চা প্রসব করেছে। মা এবং বাচ্চা হাতিটি সুস্থ আছে। মা ও হাতির চলাচল নির্বিগ্ন রাখতে হোয়াইক্যং রেঞ্জ সিপিজি সদস্যদের নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
হুমায়ুর কবির জানান, ২০১৭ সালের সর্বশেষ জরিপে কক্সবাজারের এই দক্ষিণ বনে মোট এশিয়ান হাতি রয়েছে ৬৩টি। এসব হাতি থেকে প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পড়ুন: কাপ্তাইয়ে বন্যহাতির আক্রমণে বৌদ্ধ ভিক্ষুর মৃত্য
রাঙামাটিতে বন্য হাতির আক্রমণ আতঙ্কে গ্রামবাসী
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শেখ নাজমুল হুদা বলেন, হাতির আবাস্থলের এসব এলাকায় আগের পরিবেশ ফিরে এসেছ। এখনো হাতির নিরাপদ আবাস্থল জোন হিসাবে রয়েছে এসব বনাঞ্চল। খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ এবং সহনীয় পরিবেশ রয়েছে বলে এখনো হাতিরা এসব এলাকায় নির্বিঘ্নে বিচরণ করছে এবং হাতি বাচ্চা প্রসব করছে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৬৩টি এশিয়ান হাতি রয়েছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে এসব হাতির আবাসস্থলে। ফলে এসব হাতির জীবন সংকটে পড়ে। তাদের চলাচলের করিডোর বন্ধ হয়ে যায়।
পড়ুন: মিয়ানমার থেকে এলো ২ বুনো হাতি
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে খাদ্য আবাসস্থল, সংকট নানাভাবে বিপদে পড়ে এসব হাতি। এর মধ্যে হাতি বাচ্চা প্রসব করার খবর অত্যন্ত সুখকর। এই অবস্থায় হাতিদের যে আবাস্থল রয়েছে তা নিরাপদ রাখতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তাসহ নানাভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
৩ বছর আগে