প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক জীবনে দম্পতি
পঞ্চগড়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে এক দম্পতি
রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক দেয়ার পর হিল্লা বিয়ে না দিয়ে আবার বিয়ে করায় সমাজচ্যুত হয়ে এক ঘরে হয়ে থাকা আয়নাল হক ও জমিরন বেগম দম্পতি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিত জীবনে ফিরেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে আয়নাল হকের বাড়িতে এই দম্পতি একসাথে বসবাস শুরু করেছে। তাদের বাড়িতে পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা আসতে শুরু করেছেন।
দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিকালে ছলিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানীয় সমাজের সদস্যদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ওই দম্পত্তির ওপর সকল প্রকার বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
ভুক্তভোগী আয়নাল হক জানান, কয়েক মাস আগে নিজেদের মধ্যে রাগারাগি হয়ে দুইজনই মৌখিকভাবে তিন তালাক দেন। পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তারা এক মাওলানার মাধ্যমে আবার বিয়ে করেন।
কিন্তু স্থানীয় মুফতি হাফেজদের কথায় এলাকার প্রভাবশালীরা তার স্ত্রীকে হিল্লে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। হিল্লার জন্য পাত্রও ঠিক করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ওসি প্রদীপ দম্পতির সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে নিতে নির্দেশ
হিল্লে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় গত দুই থেকে তিন মাস ধরে তাদেরকে একঘরে করে রাখা হয়। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া এই দম্পতিকে। এমনকি নিজের সন্তানদেরকেও বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি।
আয়নাল বলেন, আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। ঈদে এক টুকরো কোরবানির মাংসও মিলেনি। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশী আমির চাঁন আমার বাড়ির চলাচলের রাস্তাও কেটে দিয়েছে। সামাজের ভয়ে কেউ আয়নালকে কাজেও নেয়নি। দুইতিন মাস তাদের বেকার হয়ে খেয়ে না খেয়ে বাড়িতেই কাটাতে হয়েছে।
বিষয়টি মিমাংসার জন্য সামাজপতিদের দ্বারে দ্বারে সহানুভূতি চেয়ে অনুরোধ করলেও কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টি সমাধান করতে ব্যর্থ হন।
তিনি জানান, অবশেষে চেয়ারম্যানের পরামর্শে জরিমন বেগম- হাফেজ মোস্তফা কামাল, ব্যবসায়ী শাহজাহান আলী, নাসিরউদ্দিন, আমির চাঁন, জুলহাস, সহিদ আলী, রাসেল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম, মুফতি আনোয়ার হোসাইন, সুরমান আলীর নামে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সুন্দরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র রায় বলেন, আমি মুসলিম ধর্ম সম্পর্কে তেমন জানি না। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি সমাধান করে দিতে বলেছিলাম। কেউ আমার কথা শোনেনি। পরিবারটি আমার কাছে গেলে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেই।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জামাল হোসেন জানান, ওই এলাকায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ধর্মান্ধ কিছু মানুষ রয়েছে। তারা একটি হিল্লে বিয়েকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। এ ঘটনায় ইন্ধনদাতা ও ফতোয়াদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কেউ যদি অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায় তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: আউয়াল দম্পতির ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ নিয়ে হাইকোর্টের রুল
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজপতিদের নিয়ে ছলিমনগর স্কুলে বৈঠকে বসেছিলাম। কোরআন হাদিসের আলোকে তালাক কিভাবে হয় বা হয় না এ বিষয়টি উপস্থিত সকলকে বুঝাতে পেরেছি। বৈঠকে উপস্থিত সকলেই তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। এরপর আমরা ওই দম্পত্তিকে সমাজে ফিরিয়ে দিয়েছি
৩ বছর আগে