রেঞ্জ কর্মকর্তা
জুম ফসল কেটে ফেলায় রেঞ্জ কর্মকর্তার অপসারণ দাবি
শেরপুরের শ্রীবরদীর বালিজুড়ি খ্রীস্টানপাড়া এলাকায় জুম ফসল কেটে ফেলায় রেঞ্জ কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেছে পাহাড়ি জনপদে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা। এর পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও দাবি করেছে তারা।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস)-এর উদ্যোগে শুক্রবার দুপুরে শ্রীবরদীর বালিজুড়ি রেঞ্জ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এই দাবি করে। বেলা ১১থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও বকশীগঞ্জ উপজেলার ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর নেতারা সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন।
১২ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রীবরদীর বন বিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জ (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে বালিজুড়ি খ্রীস্টানপাড়া এলাকায় ভারতী মৃ, সভানী সিমসাং, সবিতা মৃ, কমলা রেমা, পয়মনি চিরানের সবজির আবাদ ও সুপারি বাগানের গাছ কেটে ফেলেন। এতে ৫টি পরিবারের কয়েক লাখ টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) শ্রীবরদী শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কাঞ্চন ম্রং, বাগাছাস কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রনু নকরেক, বাগাছাস ঝিনাইগাতী শাখার সভাপতি অনিক চিরান, সহ-সভাপতি সৌহার্দ্য চিরান, বাগাছাস বকশিগঞ্জ শাখার সভাপতি রাহুল রাকসামসহ স্থানীয় নেতারা। এছাড়া সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি নবেশ খকসী, সাধারণ সম্পাদক অসীম ম্রং, আদিবাসী নেতা ব্রত্যিন মারাক প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আদিবাসীদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রেই এই ন্যাক্কারজনক কাজ করা হয়েছে। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেইসাথে এহেন কাজের সাথে যুক্ত বন বিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের অপসারণসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বাগাছাস শ্রীবরদী শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কাঞ্চন ম্রং বলেন, যুগ যুগ ধরে আদিবাসীদের দখলে থাকা ঐতিহ্যগত ভূমিতে চাস করা ফলজ ও সবজি বাগান ধ্বংসকারী বনবিভাগের অসৎ দুষ্কৃতিকারী ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলামকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ তিনি যে কাজ করেছে, তা খুবই গর্হিত এবং অন্যায়। যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বন থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া কখনও সফল হবে না। প্রয়োজনে এজন্য বৃহত্তর আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা হবে।
আরও পড়ুন: ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি নবেশ খকসী বলেন, আমরা আদিবাসীরা যুগ যুগ ধরে বনাঞ্চলে বসবাস করে আসছি। আমরা এ জঙ্গলের মানুষ। এ জঙ্গলেই থাকবো। আমরা যে যেখানে আছি, সেখানেই থাকবো। কিন্তু বনবিভাগের কিছু কর্মকর্তা নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য বনাঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের হয়রানি করছে। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। বনবিভাগের হয়রানি থেকে বাঁচতে চাই। যারা এ ধরনের অপচেষ্টা করছে, এরপর থেকে তাদের প্রতিহত করা হবে। প্রয়োজনে আমরা সকল জাতিগোষ্ঠী মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের আবাস ভূমিকে রক্ষা করবো।
শ্রীবরদীর সীমান্ত এলাকা রানীশিমুল ও সিংগাবরনা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকাজুড়ে গারো পাহাড়। এখানে ব্রিটিশ আমল থেকে বসবাস করে আসছে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর গারো, কোচ, হাজং, বানাইসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন। আগে তারা পহাড়ি টিলায় জুম চাষ করত। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে জুম চাষ। এখন একমাত্র আয়ের উৎস কৃষি আবাদ।
আরও পড়ুন: শেরপুরে বন্যহাতির আক্রমণে গারো অধিবাসী নিহত
৩ বছর আগে