ঘানি
ঘানিই যাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন
আধুনিক আর ডিজিটাল যন্ত্রপাতির অতল গহব্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে আবহমান গ্রাম বাংলার অনেক ঐহিত্যবাহী শিল্প। এই হারিয়ে যাওয়ার ভিড়ে আজও এই ঘানি শিল্পকে আকঁড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার নরনিয়া গ্রামের মৃত ইসমাইল বিশ্বাসের ছেলে আব্দুল গফুর বিশ্বাস ও মৃত বাবর আলী সরদারের ছেলে আব্দুল ওয়াদুদ সরদার।
গ্রাম বাংলার ঐহিত্যবাহী এই শিল্পকে আজও আকঁড়ে ধরে আছে এ দু’টি পরিবার। তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এই ঘানি শিল্প। এই ঘানি শিল্পকে ধরে রাখার জন্য অন্য পেশাকে তারা আজও গুরুত্বহীন মনে করেন। এ শিল্প যেন তাদের রক্তের প্রতিটি কণায় মিশে আছে।
তারা বলেন, গরু দিয়ে ঘানি টেনে খাঁটি সরিষার তেল বানানো তাদের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত একটি পেশা। পূর্বে তাদের দুই পুরুষ এই ঘানির কাজ করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এ কাজে তাদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যারাও সহযোগিতা করেন। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ও পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য আজও তারা ঘানি শিল্পকে আকঁড়ে পড়ে আছেন। তবে ঘানি শিল্পের সে দিন এখন আর নেই। এ কাজ করে বর্তমানে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নরনিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মো. আফসার হোসেন বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি ঘানির খাঁটি সরিষার তেল ক্রয়ের জন্য মানুষ ভোর থেকে এখানে জমায়েত হত। অনেক সময় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তেল ক্রয় করত। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে গ্রামের ঐতিহ্য ঘানি শিল্প বিলুপ্ত হতে চলেছে।
আরও পড়ুন: এক পায়ে দড়ি লাফে জোড়া বিশ্ব রেকর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেলের
ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য এম এ সালাম বলেন, আমার বাবা এক সময় জমিতে সরিষা রোপণ করতেন। সেই সরিষা আমাদের বাজারে বিক্রয় করার কোন সুযোগ ছিল না। তার আগেই ইসমাইল বিশ্বাস ও বাবর আলী বিশ্বাসরা বাড়ি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যেতেন। কারণ তাদের সরিষার তেলের এত চাহিদা ছিল যে তারা সরিষা জোগাড় করে পারতেন না। বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। ইতোমধ্যে ২-৩টি পরিবার এ কাজ ছেড়েও দিয়েছেন।
ঐহিত্যবাহী এ শিল্পকে ধরে রাখার জন্য দু’টি পরিবারকে তিনি ধন্যবাদ জানান এবং সুস্বাস্থ নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সকলকে সরিষার তেল খাওয়ার অনুরোধ করেন।
আরও পড়ুন: প্রধান শিক্ষক এখন চায়ের দোকানদার
১০ বছরে মেঘনায় বিলীন ১৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা
৩ বছর আগে