ফার্মেসি বিভাগ
জাবির ফার্মেসি বিভাগে দীর্ঘ সেশন জট, দায় নিতে রাজি নয় কেউ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে দীর্ঘ সেশন জট চলছে কিন্তু এর দায় নিতে চায় না বিভাগ কিংবা সংশ্লিষ্ট কেউ।ভর্তির পর ছয় বছর পার হয়ে গেলেও এখনও তৃতীয়বর্ষ পার হতে পারেননি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফার্মেসি বিভাগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের(৪৬ ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা।
তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। তবে এখনও ফল প্রকাশিত হয়নি। এরমধ্যে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষাও নিয়ে নিয়েছে বিভাগ।
যদিও আগের বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগে পরবর্তী বর্ষের পরীক্ষা নেয়ার কোন নজির বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। তবুও নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না নেয়া ও ফল প্রকাশ করতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকতেই বিভাগের শিক্ষকরা নিয়মের সব বিধি উপেক্ষা করেই ’সেশনজট কমাতে’ চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষও করে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ জাবি ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে
কিন্তু তৃতীয় বর্ষের ফল প্রকাশ না করে কীভাবে শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় বসানো হলো তার কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট কারও কাছে।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন বলছেন, দীর্ঘ সেশনজটের কবল থেকে শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।
পাশাপাশি উঠে এসেছে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিভাগের শিক্ষকদের অবহেলার বিষয়টিও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে থাকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের মাধ্যমে। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখাননি।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, কোনো শিক্ষার্থী যদি তৃতীয় বর্ষে অকৃতকার্য হয় তাহলে সে কী করবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী দুই বিষয়ে কেউ অকৃতকার্য হলে সে একই ব্যাচের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। আর অকৃতকার্য হওয়া ওই দুই বিষয় তাকে পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে হবে। যেটা ‘ইমপ্রুভমেন্ট’ হিসেবে গণ্য হবে এবং তার ‘ইয়ার ড্রপ’ হবে না। আর তিন বা তারও বেশি কোর্সে অকৃতকার্য হলে নীচের কোন ব্যাচের সঙ্গে তাকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। যেটি ‘ইয়ার ড্রপ’ হবে। এছাড়া অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা তো থাকছেই।
ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিভাগের শিক্ষকরা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা নিয়ে নিয়েছেন যে, যাই হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের বিশেষ পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ তো থাকছে।
এরমধ্যে কিন্তু ৪৭ ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেছে। এখন ৪৬ ব্যাচের কেউ যদি তিন বিষয় বা তারও বেশি কোর্সে অকৃতকার্য হয় তাহলে তিনি দুই বছর পিছিয়ে পড়বেন। অর্থাৎ তাকে ৪৮ ব্যাচের সঙ্গে পড়াশোনা চালাতে হবে, অথবা দ্রুত বসতে হবে বিশেষ পরীক্ষায়। এমন অবস্থায় ৪৬ ব্যাচের সব শিক্ষার্থী হতাশা ও অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ফার্মেসি বিভাগের ৪৬ ব্যাচের (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ২০১৯ সালে হওয়ার কথা থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয় আড়াই বছর পর ২০২১ সালে। করোনার কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে ২০২১ সালের ২১ আগস্ট শুরু হয়ে ১০ অক্টোবর (তত্ত্বীয়) শেষ হয়। এর ৭ মাস পর শুরু হয় ব্যবহারিক (ল্যাব) পরীক্ষা। ২০২২ সালের ১৮ মে থেকে শুরু হয়ে ২ জুন পর্যন্ত চলে ল্যাব পরীক্ষা।
পরীক্ষার ৯ মাস পার হয়ে গেলেও ফল প্রকাশ করা হয়নি। এরই মধ্যে চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষাও (তত্ত্বীয় ও ল্যাব) সম্পন্ন হয়ে গেছে। যেটি ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয় নভেম্বরের শেষে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভুগছেন চরম অস্থিরতায়। তারা আদৌ জানেন না তারা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করেছেন কী না। আর যদি উত্তীর্ণ না হন তাহলে তাদের শিক্ষাজীবন আরও অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। এদিকে, ৪৬ ব্যাচের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করছেন।
তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন তানিয়া বিনতে ওয়াহিদ, আর সদস্য হিসেবে আছেন অধ্যাপক সোহেল রানা এবং সহযোগী অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করেই ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাইরে চলে যান সভাপতি তানিয়া। এরপরই পরীক্ষা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। এরপরও পেরিয়ে গেছে ৫ মাস। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ করতে পারেননি কমিটির সদস্যরা। আর চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক ড. সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু।
অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষা শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হবে।
আরও পড়ুন: জাবিতে গাড়ি থামানোয় নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর শিক্ষার্থীর
এদিকে আগের বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করেই পরবর্তী বর্ষের পরীক্ষা নেয়া যায় কী না- জানতে চাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ডিন ও অধ্যাপক পদমর্যার এক শিক্ষকের কাছে। তারা জানান, এমন কোন নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। যদি তা হয়ে থাকে তাহলে উপাচার্যের বিশেষ অনুমতিতে হতে পারে অথবা বিভাগের শিক্ষকদের চাপে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় পরীক্ষা নিয়ে থাকতে পারে। অথবা বিভাগ আবেদন করার পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় খেয়ালই করেননি যে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল আটকে আছে; তাদের চোখের ফাঁক গলে বিষয়টি সংঘটিত হয়ে গেছে।
তবে, উপাচার্যের বিশেষ কোন অনুমতি নেই এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কেউ সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বুঝা গেছে, বিভাগের শিক্ষকদের চাপ থাকলে সেখানে তাদেরও খুব একটা কিছু করার থাকে না। ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেও এই কথার সত্যতা আঁচ করা গেছে।
আর যে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অধীনে ফার্মেসী বিভাগের পরীক্ষা হয়েছে তিনি বর্তমানে শারীরিকভাবে কিছুটা অক্ষম। নিয়মিত অফিস করলেও খুব একটা কথা বলতে পারেন না। ফলে তার কাছ থেকেও ঘটনার বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে তৎকালীন সময়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও বর্তমান গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.ফরিদ আহমেদও এই বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হননি।
তিনি বলেন, ‘এখন দায়িত্বে নেই, ফলে সবকিছু মনেও নেই। তাই এই বিষয়ে মন্তব্য না করাই ভালো মনে করছি।’
এরপর যোগাযোগ করা হয় তৎকালীন উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা মাসুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বর্তমানে অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন। বিষয়টি তার মনে নেই জানিয়ে বলেন, ‘সব ছেড়ে চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে মাথা থেকে সব কাজ ফেলে দিয়েছি, সাত দিনও রাখিনি। ওই সময়ের কথা তেমন কিছুই মনে নেই। তাই কিছু বলতেও পারব না।’
এদিকে তৃতীয় বর্ষের ফল প্রকাশের আগেই চতুর্থ বর্ষের তত্ত্বীয় পরীক্ষা নেয়া হলেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ের বিষয়ে বিভাগের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে চতুর্থ বর্ষের ফলও কবে প্রকাশিত হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের অন্য বিভাগের বন্ধুরা অনার্স শেষ করে এখন মাস্টার্সে ক্লাস করছে। আর আমাদের তৃতীয় বর্ষের ফলাফলই প্রকাশিত হয়নি। ফলে বিসিএসসহ সব ধরনের চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ আমরা পাচ্ছি না, এমনিক আমাদের সেক্টরেও চাকরির বাজারেও আবেদন করতে পারছি না।’
বিভাগের অবহেলাকে পুরোপুরি দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সেশনজটের কবলে পড়েছি। আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ে গেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে বিভাগে কিছু সেশনজট তৈরি হয়েছে। করোনার মধ্যে তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনলাইনে নেয়ার অনুমতি থাকলেও ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে আমরা ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো নিতে পারিনি। এখন আমরা আগে তত্ত্বীয় পরীক্ষা হওয়া সাপেক্ষে বিভিন্ন ব্যাচের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেব।’
‘আর চতুর্থ বর্ষের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ের জন্য আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করছি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের ট্রেনিং করছে। কিছু শিক্ষার্থীর বাকি আছে আশা করছি দ্রুতই এর সমাধান হবে।’
তবে তৃতীয় বর্ষের ফল প্রকাশের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারের সঙ্গে কথা বলতে দুই দিন বিভাগে গিয়েও পাওয়া যায়নি। পরে, মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগের শিক্ষকরা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ায় ব্যস্ত থাকেন। যার কারণে এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: জাবিতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত শিক্ষার্থী লাইফ সাপোর্টে
১ বছর আগে
জাবির সাবেক উপাচার্য মুস্তাহিদুর রহমানের দাফন সম্পন্ন
করোনায় প্রাণ হারানো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক উপাচার্য, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক তাসমিনা রহমান জানান, জাবি ক্যাম্পাসে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে শনিবার দুপুর ২টার দিকে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
শুক্রবার এশার নামাজের পর সাবেক জাবি উপাচার্যের প্রথম নামাজের জানাজা রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার আমিনবাগ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুস্তাহিদুর রহমান মারা যান।
তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
এর আগে ৪ আগস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মুস্তাহিদুর রহমান হাসপাতালে ভর্তি হন।
খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান ‘জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী সংগঠন’এর সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন।
তার মৃত্যুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম শোক জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: জাবির নতুন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. রাশেদা আক্তার
জাবিতে বরাদ্দ বেড়েছে গবেষণায়, কমেছে চিকিৎসায়
৩ বছর আগে