চাঁদপুর গভর্নমেন্ট টেকনিক্যাল হাইস্কুলের শিক্ষক নাজমুল আবেদীন কান্ত
নাজমুল আবেদীনের ৩৩ বছরের সাধনার ‘জাদুঘর’
৩৩ বছর ধরে বাংলাদেশের নানা প্রান্ত ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘুরে হারিয়ে যেতে থাকা জিনিসপত্র সংগ্রহ করেছেন চাঁদপুর গভর্নমেন্ট টেকনিক্যাল হাইস্কুলের শিক্ষক নাজমুল আবেদীন কান্ত। সেই জিনিসপত্র কুমিল্লা নগরীর মগবাড়ি চৌমুহনীর বাসায় সংরক্ষণ করেছেন তিনি। নাম দিয়েছেন ‘কুমিল্লা জাদুঘর’।
জানা গেছে, ২০২১ সালের শুরুর দিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের তৎকালীন পরিচালক সাত সদস্যের টিম নিয়ে জাদুঘরটি পরিদর্শন করেন। এরপর মন্ত্রণালয় জাদুঘরটিকে লাইসেন্স দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। লাইসেন্স পেলে এটি হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যক্তিগত জাদুঘর। বর্তমানে জাদুঘরটিতে ৩০০ প্রকারের দুই হাজারের বেশি জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে।
আরও পড়ুন: রাস্তার কারণে বিয়ে হচ্ছে না অনেক তরুণ-তরুণীর!
জাদুঘরটিতে আছে- ব্রিটিশ আমলের ৩২ কেজি ওজনের ফ্যান, হ্যাজাক বাতি, সের মাপার বাটখারা, বুনো মহিষের শিং, উটের হাড়, সাপের বীণ, অন্ধদের লিখন পদ্ধতির ব্রেইল, গানের কল, অসুরের হাঁড়, ব্রিটিশ আমলের কুড়াল, গাইতি, খড়ম, বিশালাকৃতির তাম্রপাতিল, পাললিক শিলা, চরকা, আচড়া, পিতলের হুক্কা, তামার কড়াই, এয়ার গান, কয়েক শ বছরের পুরনো রৌপ্য মুদ্রা, ফেরাউন-ক্লিওপ্যাট্রার মমি, সুরা পানপাত্র, ক্যান্ডেল, বাংলা সিনেমার রিল, ধুনট, বন্যবৃক্ষ, ঘোড়ার চামড়া, গ্রামোফোন রেকর্ড, ব্রিটিশ আমলের ঘড়ি, ক্যামেরা, বোতাম, ছিক্কা, জন্ম তিথি কুষ্ঠী, বৌদ্ধ প্রেয়ার হুইল, ৯৩ দেশের নানা সময়ের মুদ্রা, সিঙ্গিং বোল, গৌতম বুদ্ধের সময়কার তালা, কাঁসার পাতিল, নানা রকমের বদ্যযন্ত্র ইত্যাদি।
যেভাবে গড়ে ওঠে জাদুঘরটি
১৯৮৮ সালে নাজমুল আবেদীন তখন কুমিল্লা জিলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ওই সময়ে দাদা-দাদি, নানা-নানি থেকে পুরনো ও হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্রগুলো সংগ্রহ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে দেখেন সংগ্রহশালা বড় হয়ে উঠছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে চিন্তা করেন বিদেশ ভ্রমণ শুরু করবেন। মাঝে সহকারী শিক্ষকের চাকরি নেন কুমিল্লা জিলা স্কুলে। এরপর ছুটির দিনগুলো কাজে লাগান তিনি। ভ্রমণ করতে থাকেন ভারত, ভুটান, নেপাল, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে। পাশাপাশি বাংলাদেশের এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ঘুরে বেড়ান তিনি। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র সংগ্রহে ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে তাকে। কারণ মানুষ নিজেদের হারানো ঐতিহ্য সহজে হাতছাড়া করতে চান না। এতে খুব সম্মোহনী শক্তির অধিকারী হতে হয় নাজমুল আবেদীনকে। নিজের জাদুঘর আছে এবং এসব জিনিসপত্র অদূর ভবিষ্যতে সংরক্ষণেই থাকবে এমন আশ্বাসে এসব জিনিস মানুষ থেকে সংগ্রহ করেন তিনি। এতে দামও দিতে হয় তাকে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ টাকার জিনিসপত্র কিনেছেন তিনি। শ্রম হয়েছে অবর্ণনীয়।