বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্ক
নতুন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ‘রোহিঙ্গা ইস্যু’ এজেন্ডায় থাকবে: ইইউ
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি রেনসে তিরিঙ্ক বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং আফগানিস্তান সঙ্কটের মতো নতুন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এটি এজেন্ডা থেকে হারিয়ে যাবে না।
বিদায়ী ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমার কাছে ম্যাজিক রেসিপি বা ক্রিস্টাল বল নেই যে কীভাবে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে এটি (রোহিঙ্গা ইস্যু) এজেন্ডা থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে না।’
বর্তমানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতিও খুব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে রোহিঙ্গা ইস্যু অদৃশ্য হয়ে যাবে। আমি এটি অনুসরণ করতে থাকব।’
‘বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্ক: ভবিষ্যত সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় (ওয়েবিনার) মূল বক্তা হিসেবে ইইউ দূত এসব কথা বলেন।
কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন অ্যাম্বাসডর লেকচার সিরিজের অংশ হিসেবে এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।
আলোচনায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
এছাড়াও আলোচক প্যানেলে সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. জিয়াদি সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ফাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এবং কসমস ফাউন্ডেশনের ইমেরিটাস উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কসমস সংলাপ: ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
এনায়েতুল্লাহ খান ক্রমবর্ধমান মার্কিন-চীন দ্বন্দ্ব, কোভিড -১৯ মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আফগানিস্তানে সঙ্কটের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুটি মানুষের মন থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে অত্যন্ত জটিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত, চীন ও জাপান এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সহযোগিতা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা যাবে বলে আমি মনে করি না।
খান ইইউ রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, মিয়ানমারের সৃষ্ট এই সমস্যা সমাধানে ইইউ বাংলাদেশকে কী সহায়তা করতে পারে।
জবাবে রাষ্ট্রদূত তিরিঙ্ক বলেন, ‘মিয়ানমারকে অবশ্যই প্রথমে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, কিন্তু এটা খুবই দুঃখজনক যে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে যা সত্যিই এই অলোচনার ক্ষেত্রে এক বিরাট ধাক্কা।’
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তৎপরতা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুর্ভাগ্যবশত তারা সেখানকার পরিস্থিতি দেখেছে এবং এটি খুব ইতিবাচক নয়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ, ভারত, চীন এবং জাপানের সাথে অংশীদার হিসেবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা যোগাযোগ করছি। এটি আমাদের সব সময় এজেন্ডায় থাকে।’
আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে ইইউ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকার সহায়তায় উল্লেখযোগ্য তহবিল প্রদান করে আসছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বড় ধরনের সহিংসতার পর দেশটি থেকে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বতর্মানে কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এছাড়া এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুকে অর্থনৈতিক স্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মহামারি এবং রোহিঙ্গা- দুটি বিষয় এখন বাংলাদেশের জন্য বড় উদ্বেগ এবং এই দুটি বিষয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির সাথে জড়িত।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা ইস্যু এবং টিকা কূটনীতিতে ইইউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ইউরোপের মূল্যবোধ-আইনের শাসন, সরকার পদ্ধতি এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে মিয়ানমারের সাথে ইইউর সম্পর্কের বিষয়টি আসলে তা মিলানো যায় না।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের আরও সক্রিয় ভূমিকা আশা করে ইইউ
তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারছি না ইইউ পার্লামেন্ট কেন বর্তমান মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ভট গণতন্ত্রকে সহায়তা করে। ইইউ মিয়ানমারের নির্বাচনেও সহায়তা করেছে। সামরিক কর্মকর্তারা যখন সংসদে বসেন তখন এটা গণতন্ত্র থাকে না। ইইউকে আরও কঠিন হওয়া উচিত ছিল এবং এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেত।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা ইস্যু এবং টিকা কূটনীতিতে ইইউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।
তিনি বলেন, কিন্তু যখন মিয়ানমারের কথা আসে ৯০০ এর বেশি মানুষ হত্যার পরও ইইউ এখনও মিয়ানমারের সাথে প্রায় একই ধরনের সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে। আপনারা কেবল কিছু সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন যারা কখনও ইইউ দেশগুলোতে যায় না এবং তাদের কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। আপনারা খুব সম্প্রতি মিয়ানমারকে ঋণ পরিশোধেও সহায়তা করেছেন।
৩ বছর আগে