ট্রাম্প
কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘টাইট’দেওয়া যায়, তা বের করতেই ভিয়েতনামে শি: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলে ‘টাইট’ দিতেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সফরের শুরুতে স্থানীয় সময় সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় পৌঁছান শি। হ্যানয়ের বৈঠক শেষেই এ সম্পর্কে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রতিবেশী ৩টি দেশে সফর শুরু করেন চীনের প্রেসিডেন্ট।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার তথ্যমতে, শি তার সফরে ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিল ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় যাবেন এবং ১৫ থেকে ১৮ এপ্রিল কম্বোডিয়ায় যাবেন।
এমন একটি সময় শি এই সফর শুরু করেছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কারোপ নিয়ে উত্তেজনা চলছে। এছাড়া ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়াও ট্রাম্পের শুল্কারোপে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সফরের প্রথমদিনে ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতা তো লামের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এ সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণসহ দেশ দুটির মধ্যে সরবরাহ শৃঙ্খল মজবুত করতে বেশকিছু সমঝোতা স্মারক সই করেন শি ও লাম।
আরও পড়ুন: চীন বাদে সব দেশের ওপর মার্কিন পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত
এর পরপরই হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এই বৈঠক নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতির উদ্দেশেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘এখানে আমি চীনেরও দোষ দেখছি না, ভিয়েতনামেরও না। খুবই ভালো একটি বৈঠক হয়েছে, যেখানে আলোচনার বিষয় হলো—কীভাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে টাইট দিতে পারি!’
বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে, চীনের মাথার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক। অন্যদিকে, ভিয়েতনামের ওপর রয়েছে ওয়াশিংটনের ৪৬ শতাংশ শুল্ক। যদিও সেটি ৯০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। তাই শঙ্কা এখনো কাটেনি। এককভাবে ভিয়েতনামের পণ্য রপ্তানির সবথেকে বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন: মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ চীনের, গুগলের বিরুদ্ধে তদন্তের ঘোষণা
এ কারণে শুল্ক কার্যকর হলে সেটি ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে নিশ্চিতভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আবার চীনের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে চীনেরও একটি বিকল্প বাজার দরকার। সে কারণে চীন এবার দক্ষিণ এশিয়ায় মনোযোগ দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের প্রেডিডেন্ট আগেই তার এই সফরের পরিকল্পনা করলেও কাকতালীয়ভাবে ট্রাম্পের শুল্কারোপের পর এই সফর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গণে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন অনেকে।
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব কমাতে দেশটির সঙ্গে আলোচনায় জোর দিয়েছে কোনো কোনো দেশ। চীন কিংবা কানাডার মতো কিছু দেশ আবার পাল্টা শুল্কও আরোপ করেছে।
এছাড়া, চীন নিজেদের একটি বিশ্বস্ত বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রতি জোর দিয়েছেন শি জিনপিং।
ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক দলের পত্রিকা নিহানদানের একটি প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ‘এই বাণিজ্যযুদ্ধে আসলে কেউই জয়ী হবে না। এই সুরক্ষাবাদ (শুল্কারোপসহ নানাভাবে বিভিন্নদেশ থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করা) কোনোভাবেই সুফল বয়ে আনবে না।’
ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিনের সঙ্গে বৈঠকের পর শি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্যায় শুল্কারোপের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। এ সময় রেলসহ বিভিন্ন খাতে মোট ৪৫টি চুক্তি সই করা হয়েছে বলে চিন ও ভিয়েতনামের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। তবে চুক্তিগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।’
শুধু ভিয়েতনামই নয়; দক্ষিণ এশিয়ার আরও অনেক দেশও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি না করতে পেরে নিজেদের পণ্যগুলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারে চীন। এই আশঙ্কা থেকেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তাল মিলিয়ে আবার চীনকেও অখুশি না করে চলতে চাইছে দেশগুলো।
আরও পড়ুন: মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে শুল্কারোপ করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্বের বৃহৎ দুটির অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক পুরোপুরি নষ্ট করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, ‘দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। আবার সম্পর্ক টিকেও যেতে পারে। এছাড়া এক পর্যায়ে গিয়ে একটি বড় চুক্তি হতে পারে।’
কোনো চুক্তি হবে কিনা বা এই শুল্কারোপ আসলে কি ধরনের অবস্থা সৃষ্টি করবে; তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা আগেই নিশ্চিত করেছেন, ৯০ দিনের জন্য শুল্কের স্থগিতাদেশ সাময়িক।
নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘কোনো দেশই এখনো এই শুল্কের আওতাধীন না, চীন তো একদমই না। তারা আমাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খারাপ করেছে।’
২ দিন আগে
ট্রাম্পের ‘দাওয়াইয়ে’ এশিয়ার শেয়ার বাজারে ধস
বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি। এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাদ যায়নি এশিয়াও। ধস নেমেছে এই মহাদেশটির শেয়ারবাজারে। তবে এই শুল্কনীতিকে ‘দাওয়াই’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই সাতচল্লিশতম প্রেসিডেন্ট।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এশিয়ার কয়েকটি দেশের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে এসব নিম্নমুখিতার চিত্র উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, জাপানের নিক্কেই ২২৫ -এর সূচক কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাং সেং-এর সূচক কমেছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং হংকংয়ে তালিকাভুক্ত যুক্তরাজ্যের ব্যাংক এইচএসবিসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের শেয়ারের দরও কমেছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কারোপ: জরুরি বৈঠক ডাকলেন প্রধান উপদেষ্টা
এর আগে, মার্কিন ফিউচাররের ব্যাপকভাবে দর পতন ইঙ্গিত দিয়েছিল যে দেশটির বাজারগুলো খুললে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারের পতন হবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শুল্কনীতির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, ‘কখনো-কখনো কোনো কিছু ঠিক করার জন্য ওষুধ খেতে হয়।’
গত সপ্তাহে ট্রাম্পের শুল্কনীতি ঘোষণার পর সারা বিশ্বের অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। চীন থেকেও পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ ও মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে ট্রাম্পের শুল্কনীতিটি এখানে স্থির থাকবে কিনা, নাকি একটি স্থায়ী নতুন শাসনব্যবস্থার অংশ, কিংবা অন্যান্য দেশের কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার জন্য আলোচনার কৌশল—তা নির্ধারণের চেষ্টা করছেন বিনিয়োগকারী এবং রাজনৈতিক নেতারা।
রবিবার (৬ এপ্রিল) সকালের একটি টকশোতে শুল্কনীতিকে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিমান পরিবর্তন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্পের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গত বুধবারের ঘোষণার পর থেকে ৫০টিরও বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বেসেন্ট বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) নিজের দেশের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা তৈরি করেছেন। আগামী দিনগুলোতেও এই শুল্ক বহাল থাকবে।’
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক সিবিএস নিউজের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘কয়েক দিন ও সপ্তাহ ধরে’ নতুন এই শুল্ক বহাল থাকবে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কারোপ: বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে কী ভাবছে দেশগুলো?
তবে শুল্কারোপের কারণে বিশ্বজুড়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা কমিয়ে আনতে চেষ্টা করেছেন হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট। তিনি বলেন, ‘সুদের হার কমিয়ে আনতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবেই এই শুল্কারোপ করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না।
১০ দিন আগে
ট্রাম্পের শুল্কারোপ: জরুরি বৈঠক ডাকলেন প্রধান উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যে প্রবেশে অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের ঘটনায় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শীর্ষপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ, উপদেষ্টা এবং কর্মকর্তারা বৈঠকে যোগ দেবেন।
আরও পড়ুন: অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করব: প্রধান উপদেষ্টা
গেল ৩ এপ্রিল আকস্মিক এই শুল্কারোপে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত। এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা কিছুটা কমে আসবে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা। এতে ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যাবে বলেও মনে করেন তারা।
তাদের ভাষ্যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে, পাশাপাশি টিকফা চুক্তির আলোকে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বসতে হবে।
আরও পড়ুন: সেভেন সিস্টার্স নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথাই বলেছেন: হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ
দুদেশের স্বার্থের ব্যাপারে সমঝোতা করলে বাংলাদেশের ওপর যে শুল্কারোপ করা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন তা তুলে নিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তারা। বাংলাদেশ যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তৈরি পোশাক খাতের অর্ডার ভারত, তুরস্ক, মিসর ও হন্ডুরাসের মতো দেশগুলোতে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
১২ দিন আগে
ট্রাম্পের শুল্কারোপ: বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে কী ভাবছে দেশগুলো?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর বহুল আলোচিত পাল্টা শুল্কারোপ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে যেকোনো ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ এড়িয়ে চলতে চান বলে অভিমত দিয়েছেন শুল্কের আওতাধীন কয়েকটি দেশের নেতারা। ভিন্নমতও রয়েছে অনেক দেশের। স্থানীয় সময় বুধবার (২ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে শুল্কারোপের ঘোষণা করেন ট্রাম্প। শত্রু-মিত্র পরোয়া না করেই তিনি শুল্কারোপ করেছেন।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘যেসব দেশ তাদের পণ্যে শুল্কারোপ করে থাকে, সেসব দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্কারোপ করবেন তিনি, কথা রেখেছেনও।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধ পরিকল্পনার চ্যাটগ্রুপে ভুলে সাংবাদিককে যুক্ত করলেন ট্রাম্প কর্মকর্তারা
আবার সমপরিমাণ না করে অর্ধেক শুল্কারোপ করে নিজের উদারতার পরিচয় দিয়েছেন—এমন দাবি তিনি নিজেই করেছেন। যেমন: বাংলাদেশ আমেরিকান পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্কারোপ করে, জবাবে এবার তিনি বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক বেঁধে দিয়েছেন।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিতে সব আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্কের একটি ভিত্তিরেখা দেওয়া হয়েছে।
পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে কী ভাবছে দেশগুলো
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প। জবাবে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস বলেন, ‘ওয়াশিংটন এখনো তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র। দেশটির আরোপিত শুল্কের প্রভাব কমাতে যুক্তরাজ্য একটি বাণিজ্যচুক্তি করতে আগ্রহী।’
রেনল্ডস বলেন, ‘কেউই বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না, আমাদের উদ্দেশ্য একটি চুক্তি নিশ্চিত করা।’ তবে বিকল্প পদক্ষেপ নিয়েও প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে যুক্তরাজ্য প্রশাসন।’
অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র জাপান। শুল্কারোপের বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার কথা জানিয়েছেন জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি।
তিনি জানান, ‘প্রতিশোধমূলক কোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
এ কারণে টোকিও এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার থেকে বিরত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই উদ্যোগ না যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ফলপ্রসূ হবে, না যেসব দেশের ওপর শুল্কারোপ করা হয়েছে তাদের কোনো কাজে আসবে।’
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, ‘বাণিজ্যযুদ্ধ ঠেকাতে শুল্কারোপের বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তার প্রশাসন।’
এ সময়, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ পশ্চিমাদের দুর্বল করে অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তিকে সুবিধা দেবে বলে মত দেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের আরোপিত ১০ শতাংশ শুল্কের জবাবে পাল্টা শুল্কারোপের কথা জানিয়েছে ব্রাজিল প্রশাসন। দেশটির পার্লামেন্টে এ সম্পর্কিত একটি বিলও পাশ করা হয়েছে বলে এপির খবরে বলা হয়েছে।
একই পথে হাঁটতে চলেছেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী ম্যাক কার্নি। তিনিও পাল্টা শুল্কারোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এছাড়া পাল্টা পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে তা সুষ্পষ্ট করে জানাননি তিনি।
বিশ্ব বাণিজ্যে বড় আঘাত
ট্রাম্পের আকস্মিক এই শুল্কারোপে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। এরইমধ্যে এই আশঙ্কা বাস্তবে ফলতেও শুরু করেছে। বুধবারের ঘোষণার পরেই বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের শেয়ারবাজারে পতন দেখা গেছে। তেলের দাম বেড়েছে ২ ডলারের বেশি।
এই শুল্কারোপ দীর্ঘায়িত হলে কয়েক দশক ধরে গড়ে ওঠা সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ ব্যবস্থা) ভেঙে যেতে পারে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শিগগিরই যেসব সমস্যা তৈরি হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দার ঝুঁকি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিচ রেটিংসের প্রধান ওলু সোনোলা বলেন, চলতি বছরে বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে গড়ে ২২ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প, যা গত বছর ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই নয়; বরং বিশ্ব অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অনেক দেশেই মন্দায় পড়তে যাচ্ছে বলেও মত দেন তিনি।
এই শুল্ক ধার্য করায় অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় জর্জরিত প্রশান্ত-মহাসাগরীয় দেশগুলোতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিজ নিজ দেশে অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই এই অতিরিক্ত শুল্ক যেন ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’। ট্রাম্প প্রশাসন লাওসের ওপর ৪৮ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ ও মিয়ানমারের ওপর ৪৪ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে।
মিয়ানমারের অর্থনীতি এরইমধ্যে চরম সংকটে, গত সপ্তাহে দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজারের বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা করবেন, করেছেন মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ শুল্কারোপ।
ক্ষতি কমাতে কি করতে পারে দেশগুলো
এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ পণ্য আমদানি করে থাকে। ট্রাম্পের শুল্কারোপের কারণে নিজ দেশের অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে গাড়িনির্মাতাসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশগুলো।
দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছেন ট্রাম্প। এতে সেখানকার অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, সে সম্পর্কে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডাক সু নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান দক্ষিণ কোরিয়ার বানিজ্যমন্ত্রী। এর ফলে তারা অতিরিক্ত শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে পারবেন বলে আশা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই চীনা পণ্যে শুল্কারোপ করেই যাচ্ছেন। চুপ হয়ে বসে নেই বেইজিংও। ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে তারাও পাল্টা শুল্কারোপ করেছেন। এবারও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপে ইইউ প্রধানের নিন্দা
পাশাপাশি একতরফাভাবে শুল্কারোপ না করে অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্যিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন।
তবে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ট্রাম্পের আরোপিত নতুন এই শুল্ক মেক্সিকোর ওপর কি ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে, তা পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাম।
তিনি বলেন, ‘কেউ আমাদের ওপর শুল্কারোপ করলেই যে একই কাজ আমাদেরও করতে হবে; এমন কোনো কথা নেই। আমাদের দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তাই করবো। এটিই আমাদের উদ্দেশ্য।’
ট্রাম্পের শুল্কারোপ অযৌক্তিক
হোয়াইট হাউস ঠিকঠাকভাবে হিসেব না করেই শুল্কারোপ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
অষ্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্থনি আলবানিজ বলেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই শুল্কারোপ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, তবে ক্যানবেরা কোনো পাল্টা পদক্ষেপ নেবে না।’
আলবানিজ বলেন, ‘ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি পাল্টা শুল্কারোপ করবেন। অষ্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, তা সত্ত্বেও তিনি ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন, এটি হওয়ার কথা ছিল শূন্য। ট্রাম্প যেটি করেছেন, সেটি কোনো বন্ধু আচরণ হতে পারে না।’
সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের অষ্ট্রেলিয়ার মালিকানাধীন ছোট্ট দ্বীপ নরফকের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন ট্রাম্প। অঞ্চলটিতে মাত্র দুই হাজার মানুষের বসবাস, অর্থনীতি পর্যটননির্ভর।
দ্বীপটির প্রশাসক জর্জ প্লান্ট জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রে তারা কোনো পণ্য রপ্তানি করেন না। তাই শুল্কারোপের প্রশ্নও ওঠে না। অথচ ট্রাম্প তাদের ওপর ২৯ শতাংশ পাল্টা শুল্কারোপ করেছেন।
নিউজল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী টড ম্যাকক্লেও জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে তারা ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেননি। তবে তারা কোনো পাল্টা পদক্ষেপ নেবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের লাভবান হওয়ার আশা ক্ষীণ
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এই পাল্টা শুল্কারোপ করার দাবি করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রশাসনের জন্য শত শত বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনতে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান।
তবে এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান নীতিগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক।
এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেন, ‘ট্রাম্পের এই শুল্কারোপের মাধ্যমে মুক্ত বাণিজ্য নীতির মূলে থাকা নয়া-উদারতাবাদের মৃত্যু ঘটেছে।’
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কারোপ কতটা ভোগাবে বাংলাদেশকে?
ট্রাম্পের এই শুল্কারোপ দেশটির অর্থনীতির জন্য খুব কমই ফলপ্রসূ হবে; বরং বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা তৈরি করবে— এমনটাই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনীতি অধ্যয়ন নামক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ম্যাট্টেও ভিল্লা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু শুল্কারোপ করেছে, ইউরোপকেও অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে। সম্ভবত ব্রাসেলস আশা করছে, তারা যদি কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেন, তাহলে ট্রাম্প বাধ্য হয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন এবং শুল্কারোপ থেকে সরে আসবেন।’
১৩ দিন আগে
ট্রাম্পের শুল্কারোপ কতটা ভোগাবে বাংলাদেশকে?
নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে, পাশাপাশি টিকফা চুক্তির আলোকে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বসতে হবে।
দুদেশের স্বার্থের ব্যাপারে সমঝোতা করলে বাংলাদেশের ওপর যে শুল্কারোপ করা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন তা তুলে নিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তারা। বাংলাদেশ যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তৈরি পোশাক খাতের অর্ডার ভারত, তুরস্ক, মিসর ও হন্ডুরাসের মতো দেশগুলোতে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিস) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর ও নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমে সঙ্গে।
রফতানি বহুমুখী করতে হবে
মার্কিন শুল্কারোপের চাপ কমাতে বাংলাদেশের রফতানিকে বহুমুখীকরণ করতে হবে বলে অভিমত দিয়েছেন ঢাবির সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ। তিনি বলেন, ‘বহু দেশে বহুরকম পণ্য আমদানি করে এটা আমাদের সামলাতে হবে।’
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপে ইইউ প্রধানের নিন্দা
যদিও সেরকম প্রস্তুতি আমাদের কম আছে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের স্ট্র্যাটেজিক ট্রেড (কৌশলগত বাণিজ্য) করতে হবে। আমরা আগে ফ্রি ট্রেডের কথা বলতাম, আরও আগে প্রটেকশনিস্ট ট্রেডের (রক্ষণশীল বাণিজ্য) কথা বলতাম। এখন দুটো কৌশলই অকেজো হয়ে যাবে। আমাদের কৌশলগত বাণিজ্যের দিকে এগোতে হবে।’
‘কোথাও আমাদের রক্ষণশীল হতে হবে, কোথাও ফ্রি ট্রেড করতে হবে, কোথাও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে হবে, কোথাও ভারতের সঙ্গে বাড়াতে হবে। কোথাও ভিয়েতনামের বাজার আমরা দখল করে নেব, কোথাও ভিয়েতনাম আমাদের বাজার দখল করে নেব। আমেরিকান কোনো কোনো পণ্যের ওপর আমরাও শুল্ক বসিয়ে দেব। এই ধরনের নানা রকম কৌশল নিয়ে চলতে হবে।’
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘আমরা অর্থনীতি কতটুকু রক্ষা করতে পারবো, সেটা নির্ভর করছে আমাদের রফতানি কতটা বহুমুখীকরণ করতে পারবো, তার ওপর। দুদিক থেকে বহুমুখীকরণ হয়ে থাকে, একটি পণ্যের ক্ষেত্রে, অন্যটি ডেস্টিনেশনের (গন্তব্য) ক্ষেত্রে।’
তবে এ বিষয়ে দ্বিমত দিয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিস) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর। তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেও হুট করে আমাদের পণ্য রফতানি অন্যদিকে ডাইভার্ট (সরিয়ে নিতে) করতে পারব না। আমাদের রফতানির ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সেটা ইনট্যাক্ট (অক্ষত) রাখতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে হয়ত আমরা ডাইভার্ট পজিশনে যেতে পারি, পণ্য রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে পারি।’
বাণিজ্য যুদ্ধে হারজিত
ট্রাম্পের শুল্কারোপকে বাণিজ্য যুদ্ধ আখ্যায়িত করে এম এম আকাশ বলেন, ‘এটা একটি শুল্ক যুদ্ধ, এই যুদ্ধে আমরা নিশ্চিতভাবে হারবো, সেটা বলা যায় না। ট্রাম্পও হারতে পারেন।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দেশীয় বাজারকে রক্ষা করে নিজ দেশের শিল্প ও কর্মসংস্থান বাড়াতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু এটাতে দুরকম বিপদের শঙ্কা আছে। একটি হচ্ছে—সস্তায় যেসব জিনিস স্থানীয় লোকজন উপভোগ করতেন, সেটা তারা ভোগ করতে পারবেন না।’
‘বিশেষ করে চীনের দিকে থেকে সস্তায় পণ্য আমদানি হতো, সেগুলো আর হবে না। সেগুলোর দাম বেড়ে যাবে। এতে তাদের স্থানীয় লোকজনের জীবনযাত্রার মান বেড়ে যাবে। সুতরাং একদিকে তার দেশের কর্মীদের আয় বাড়বে, কিন্তু ইনকামের রিয়েল ভ্যালু কমে যাবে।’
তার ভাষ্য, ‘এটা মূলত চীনের সঙ্গে তার একটা বোঝাপড়ার বিষয়। কিন্তু পাশাপাশি বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকেও আগে যে রকম শুল্কমুক্ত আমদানি করতো, এখন আর সেটা করতে পারবে না। এতে আমাদের দেশের রফতানি পণ্যের দাম ওদের দেশে বেড়ে যাবে। ফলে এগুলো বিক্রি কমে যাবে। এতে আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যাবে।‘
বাংলাদেশের ওপর কতটা প্রভাব পড়বে?
বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ হওয়ায় এটির একটি বড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন এম এম আকাশ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ৭৬ শতাংশ রফতানি আয় যেখান থেকে হয়, সেটাতো পোশাক শিল্প। কাজেই সেটার যদি ৩৭ শতাংশ দাম বেড়ে যায়। তাহলে বড় প্রভাব তো পড়বেই।’
‘যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের কতটা যায়, ইউরোপে কতটা যায়, অন্যান্য দেশে কতটা যায়, সেই হিসাবের ওপর নির্ভর করবে, আমাদের কত শতাংশ এটির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পোশাক শিল্পের বড় একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়, কাজেই সেখানে বড় একটা ক্ষতি হবে,’ বলেন এম এম আকাশ।
মাহফুজ কবীর বলেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে যে পণ্য রফতানি হচ্ছে, সেটা মূল রফতানির ১৯ শতাংশ। পাঁচ ভাগের একভাগ যেখানে রফতানি হচ্ছে, সেখানে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ বড় ধাক্কা নিয়ে আসবে।’
সুবিধা নেবে ভারত-পাকিস্তান
বাংলাদেশি পণ্যে মার্কিন শুল্কারোপে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেবে ভারত-পাকিস্তান বলে অভিমত দিয়েছেন ড. মাহফুজ কবীর। তিনি বলেন, ‘এটির পুরো সুবিধা নেবে ভারত ও পাকিস্তান। বাংলাদেশের অনেক অর্ডার তাদের কাছে চলে যাবে। এটি বড় দুশ্চিান্তর বিষয়।’
‘ভারতের বিরুদ্ধে ২৬ শতাংশ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৯ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে। আবার ভারত যে পণ্য রফতানি করে, সেগুলো মোটামুটি বাংলাদেশের রেঞ্জের মতোই। এই জায়গায় বাংলাদেশকে বড় অসুবিধায় পড়তে হবে।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, শুল্কারোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম এমনিতেই বাড়বে। এতে তাদের ক্রেতারা বাংলাদেশকে আর প্রাধান্য দেবে না। তারা প্রাধান্য দেবে ভারত ও পাকিস্তানকে। পাশাপাশি, হন্ডুরাসের মতো কাছাকাছি দেশগুলোর কাছে যাবেন মার্কিন ক্রেতারা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ
‘ভিয়েতনামের সঙ্গে যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি আছে, তবুও তাদের ওপর ৪৪ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের চেয়েও বেশি। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে একইরকম। তবুও এ ক্ষেত্রে এসব দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। যার ফলে ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের রফতানি কিছুটা বাড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু আমরা দুই দেশই চাপে পড়বো।’
১৪ দিন আগে
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপে ইইউ প্রধানের নিন্দা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশন প্রধান উরসুলা ভন দের লিয়েন।
এর আগে, স্থানীয় সময় বুধবার (২ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর বহুল আলোচিত পাল্টা শুল্কারোপ ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করেন তিনি।
ট্রাম্পের দাবি, মার্কিন প্রশাসনের জন্য শত শত বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনতে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। ৫০ বছর ধরে করদাতাদের ছাড় দেওয়া হলেও তা এবার বন্ধ হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই উদ্যোগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি ও কারখানাগুলো ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ
তবে তার এই পদক্ষেপকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে অভিহিত করেছেন ইউরোপীয় কমিশন প্রধান। লাখ লাখ মানুষের ওপর এই শুল্কারোপের ভয়াবহ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
উরসুলা বলেন, ‘এই অতিরিক্ত শুল্কের কারণে নিত্যপণ্য, পরিবহন ও ঔষধের দাম বেড়ে যাবে। এতে নিম্ন আয়ের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
তবে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় গুরুতর ত্রুটি রয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। শুল্কারোপের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইইউ প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে প্রয়োজনে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন ইউরোপীয় কমিশন প্রধান।
বুধবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে আরোপিত মার্কিন শুল্ক নিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন আরও অনেকে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৪ দিন আগে
যুদ্ধ পরিকল্পনার চ্যাটগ্রুপে ভুলে সাংবাদিককে যুক্ত করলেন ট্রাম্প কর্মকর্তারা
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ওপর হামলার ঘটনায় গোপনীয় সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে আলাপকালে গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য। যাদের মধ্যে ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেট হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও জাতীয় গোয়েন্দা পরিচারক তুলসি গ্যাবার্ড রয়েছেন।
হামলা পরিকল্পনা নিয়ে বাণিজ্যিক চ্যাটঅ্যাপ সিগনালে কথা বলছিলেন তারা। তখন ভুল করে দেশটির একজন বিখ্যাত সাংবাদিককেও গ্রুপে যুক্ত করা হয়েছিল। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। তদন্তের আহ্বান জানিয়ে সিনেটে সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার বলেন, ‘বহু বছরের মধ্যে—আমি যতদূর জানি—এটা মার্কিন সামরিক গোয়েন্দা তথ্যের সবচেয়ে মারাত্মক লঙ্ঘনের একটি।’
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের কাছে ‘অবাঞ্ছিত’ হলেও আফসোস নেই ইব্রাহিম রসুলের
স্পর্শকাতর তথ্য নিয়ে আলাপের জন্য সিগনাল ব্যবহারে মার্কিন সরকারের অনুমোদন নেই। সেদিনের এই আলোচনায় ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার, চিফ অব স্টাফ সুসি ওয়াইলস ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফ উইটকফও ছিলেন।
গেল সোমবার দ্য আটলান্টিক সাময়িকীতে এক লেখায় সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গ এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি জানতে পারেন যে ‘হুতি পিসি স্মল গ্রুপ’ নামে সিগনাল আলাপে তাকে যুক্ত করা হয়েছে। ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার ১৮ সদস্য এই গ্রুপচ্যাটে ছিলেন।
জেফরি গোল্ডবার্গ বলেন, সিআইয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও বর্তমান আভিযানিক বিস্তারিত তথ্যসহ স্পর্শকাতর উপকরণ প্রতিবেদনে নিজের বিবরণ থেকে বাদ দিয়েছেন তিনি।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রিয়ান হিউগেস এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আটলান্টিক সাময়িকীকে তিনি বলেন, ‘একটি বার্তা প্রবাহ থেকে এমনটি ঘটেছে। কীভাবে অসাবধানতাবশত নম্বরটি যুক্ত হয়েছে, তা আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি।’
তবে এই ঘটনা সম্পর্কে জানতেন না বলে জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আর আমি আটলান্টিক সাময়িকীর খুব একজন বড় ভক্ত না।’
পেট হেগসেথ বলেন, ‘কেউ যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে সেখানে বার্তা দেয়নি। এ বিষয়ে আমি এতটুকুই বলতে পারবো।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সফর শেষে সোমবার হাওয়াইতে অবতরণ করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।
আরও পড়ুন: ভয়েস অফ আমেরিকা বন্ধের ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অবৈধ, মামলা
জবাবে জেফরি গোল্ডবার্গ বলেন, ‘হেগসেথ সত্যিকথা বলেননি। তিনি মিথ্যা বলেছেন। হেগসেথ যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছিলেন।’
পরবর্তীতে হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্ডটসসহ জাতীয় নিরাপত্তা টিমের ওপর সর্বোচ্চ আত্মবিশ্বাস আছে ট্রাম্পের।
২৩ দিন আগে
ভয়েস অফ আমেরিকা বন্ধের ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অবৈধ, মামলা
ভয়েস অফ আমেরিকাসহ কয়েকটি গণমাধ্যম আউটলেট বন্ধ করার ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে অবৈধ দাবি করে ফেডারেল আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ মার্চ) রাতে মামলাটি করা হয়।
এতে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন বেআইনিভাবে ভয়েস অফ আমেরিকা বন্ধ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে এটি আবার চালু করতে আদালতকে নির্দেশনা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব গণমাধ্যম বিশ্বের যে সকল দেশে নিজেদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই সেসব দেশসহ অন্যান্য দেশে কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশন করে আসছে।
নিউ ইয়র্কের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। যেখানে বাদী হয়েছে ভয়েস অফ আমেরিকার সাংবাদিক, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও কয়েকটি ইউনিয়ন। আর এতে বিবাদী করা হয়েছে ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া, কারি লেক ও সেখানে থাকা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যর্থ প্রতিনিধি অ্যারিজোনাকে।
মামলায় বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের অনেক অংশে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হারিয়ে গেছে এবং শূন্যতা পূরণের জন্য কেবল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমই অবশিষ্ট রয়েছে।’
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের সঙ্গে আমার গভীর যোগসূত্র আছে: মোদি
লেক সম্প্রচার সংস্থাটিকে একটি ‘ব্যাপক নষ্ট’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যা ভেঙে দিয়ে পুনর্নির্মাণ করা দরকার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ভয়েস অফ আমেরিকা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের উত্স হিসেবে প্রায়শই কর্তৃত্ববাদী দেশগুলো সংবাদ প্রচার করে আসছে। কংগ্রেসের অর্থায়নে এটি একটি চার্টারে মাধ্যমে সুরক্ষিত, যা সাংবাদিকতার নীতির আলোকে তার বিষয়বস্তু প্রকাশের নিশ্চয়তা দেয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন গত সপ্তাহে অবৈধভাবে এটি বন্ধ করে দিয়েছে। রিপাবলিকানরা অভিযোগ করেছেন যে সংবাদের উত্সটিতে বামপন্থী প্রচারণার প্রভাব রয়েছে। তবে এর পরিচালনকারীরা বলছেন, এটিকে বাস্তবে সমর্থন করা হয় না।
মামলায় বলা হয়, ‘দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে পুরোপুরি বন্ধ করার প্রয়াসে পুরো সংস্থাটির কাছে একটি বিশেষ কৌশল নিয়েছে।’
শুক্রবার এ বিষয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা ও কয়েকটি সহযোগী নেটওয়ার্কের তত্ত্বাবধানে থাকা ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়ার মন্তব্য জানতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এই সপ্তাহের শুরুতে নিউজম্যাক্সের সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কারে, লেক ভয়েস অফ আমেরিকাকে ‘একটি বৃহৎ নষ্ট জিনিস থেকে একটি অংশ খুঁজে বের করার চেষ্টা করার মতো’ বলে বর্ণনা করেন।
এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া ‘আমেরিকান করদাতাদের জন্য একটি বিশাল অপচয় এবং বোঝা - জাতির জন্য একটি জাতীয় সুরক্ষাঝুঁকি এবং অপূরণীয়ভাবে ভেঙে পড়েছে। যদিও এজেন্সির মধ্যে মেধাবী এবং নিবেদিতপ্রাণ সরকারি কর্মচারী রয়েছেন, যা ব্যতিক্রম।’
আরও পড়ুন: গণমাধ্যমকর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের নির্বাহী পরিচালক ক্লেটন ওয়েইমার্স বলেন, ভয়েস অফ আমেরিকা এবং বৃহত্তর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমিউনিটিকে রক্ষায় কাজ করতে তার সংস্থা বাধ্য হয়েছে।
মিডিয়া সম্পর্কিত অন্যান্য পদক্ষেপ
ভয়েস অব আমেরিকার সহযোগী কার্যক্রম রেডিও ফ্রি এশিয়ার মুখপাত্র রোহিত মহাজন জানান, শুক্রবার পদক্ষেপের পর ওয়াশিংটন অফিসের প্রায় ২৪০ জন বা ৭৫ শতাংশ কর্মীর জন্য অবৈতনিক ছুটি কার্যকর হয়েছে। রেডিও ফ্রি এশিয়াও বিদেশে সংবাদ সংগ্রহে সংস্থাটিকে সহায়তা করা ব্যক্তিদের সঙ্গে ফ্রিল্যান্স চুক্তি বাতিল করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
রেডিও ফ্রি এশিয়াও কংগ্রেসের বরাদ্দকৃত তহবিল প্রবাহ অব্যাহত রাখতে মামলা করারও প্রত্যাশা করছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-পুতিন আলোচনা মঙ্গলবার
রেডিও ফ্রি ইউরোপ ও রেডিও লিবার্টি মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়াকে পরবর্তী অর্থ পরিশোধে বাধ্য করতে মামলা করেছে। আরএফই বা আরএল বর্তমানে ইউরোপ এবং এশিয়ার ২৩টি দেশে ২৭টি ভাষায় সম্প্রচার করে।
মামলায় সংস্থাগুলো তহবিল প্রদানের অস্বীকৃতিকে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছে। বলেছে, এটি ইতোমধ্যে কার্যক্রমকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে বাধ্য করেছে। তারা যুক্তি দিয়েছে, ‘তার কংগ্রেসের দেওয়া বরাদ্দ তহবিল ছাড়া আরএফই ও আরএল তার সাংবাদিকতার বেশিরভাগ কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হবে এবং একটি সংস্থা হিসাবে অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।’
২৬ দিন আগে
ট্রাম্পের সঙ্গে আমার গভীর যোগসূত্র আছে: মোদি
দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অনেক বেশি প্রস্তুত’ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই মেয়াদে ট্রাম্প নির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়েও এগোচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোদি বলেন, ‘ট্রাম্পের আমার মধ্যে গভীর যোগসূত্র আছে।’
রবিবার (১৬ মার্চ) প্রকাশিত এক পডকাস্টে তাকে এসব কথা বলতে শোনা গেছে। সম্প্রতি ভারতসহ বেশকিছু দেশের পণ্যে শুল্কারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে এ শুল্ক। এতে কৃষি পণ্য থেকে শুরু করে গাড়ি রপ্তানিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে প্রচারিত এই সাক্ষাৎকার ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে জোরালো সম্পর্কের আভাস দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত মাসে প্রথমবার তার (মোদি) সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন নরেন্দ মোদি।
আরও পড়ুন: বাইডেনের পাওয়া উপহারের তালিকা প্রকাশ, সবচেয়ে দামি মোদির হীরা
বৈঠকে শুল্ক সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনে ২০২৫ সালের শরতকালের মধ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি করতে সম্মত হয় দেশ দুটি। এর মধ্যে দিয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়নে ( ৫০ হাজার কোটি টাকা) উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে দিল্লি ও ওয়াশিংটন।
বৈঠক শেষে দেওয়া ওই সাক্ষাতকারে মোদি বলেন, ‘এ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আগের তুলনায় বেশি প্রস্তুত মনে হয়েছে আমার। এবার তার (ট্রাম্প) একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ রয়েছে। সেটি অনুযায়ীই তিনি প্রতিটি পদক্ষেপ নির্ধারণ করে এগোচ্ছেন।’
এ সময় ট্রাম্পের উদারতা ও বিনয়ের প্রশংসা করেন মোদি। তিনি বলেন, ট্রাম্প যেমন ‘আমেরিকা ফার্স্ট নীতিতে বিশ্বাস করেন, আমিও একই নীতিতে বিশ্বাসী। আমার কাছে সর্বাগ্রে ভারত। এ কারণেই ট্রাম্পের সঙ্গে আমার গভীর যোগসূত্র রয়েছে।’
পডকাস্টে মোদি আলোচকের সঙ্গে তার ব্যক্তিজীবনের শুরুর দিকের ঘটনাপ্রবাহ, কূটনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় প্রতিবেশী দেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
তিনি জানান, চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করছে তার প্রশাসন। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় চীন ও ভারতের সেনাদের সংঘর্ষের পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ: ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শি জিন পিংয়ের
এ পরিস্থিতি নিরসনে গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। ধীরে ধীরে হলেও দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে বিশ্বাস ও আগ্রহ পুনরায় স্থাপিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
৩১ দিন আগে
খলিল মাহমুদকে আটক: ট্রাম্প টাওয়ারে ইহুদিদের বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিল মাহমুদকে আটকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প টাওয়ারে বিক্ষোভ করেছেন এক দল ইহুদি। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ‘জিউস ভয়েস ফর পিস’ নামের একটি সংগঠন এই বিক্ষোভ করেছে।
এ সময়ে তাদের পরনে থাকা লাল টি-শার্টে লেখা ছিল, ‘ইহুদিরা বলছে, ইসরাইলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করুন’। তাদের হাতে ছিল ব্যানার আর ‘এখনই খলির মাহমুদকে মুক্তি দিন’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। গাজা যুদ্ধের সময় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খলিল।-খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।
পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে বলে, এরপরও যারা রয়ে গেছেন, তাদের মধ্য থেকে ৯৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘অনধিকার প্রবেশ, গ্রেফতারে বাধা ও প্রতিরোধের’ অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা খলিল (৩০) বিয়ে করেন এক মার্কিন নাগরিককে। তার বিরুদ্ধে কোনো আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে শনিবার নিউইয়র্কের সিটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাকে আটক করা হয়েছে।
লুইজিয়ানার একটি অভিবাসন আটক কেন্দ্রে তাকে রাখা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, খলিলকে প্রথম আটক করা হয়েছে। আরও অনেককে ধরা হবে। যারা ‘সন্ত্রাসের পক্ষে, ইহুদিবিদ্বেষী ও আমেরিকাবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ জড়িত, সেই সব শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে।
খলিলকে আটকের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ করেছেন, তাদের মধ্যে অভিনেতা ডেবরা উইংগারও আছেন। যদিও তাকে আটক করা হয়নি। অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ইহুদিদের নিরাপত্তায় ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো আগ্রহ নেই। আমি অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছি, আমি খলিলের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।’
আরও পড়ুন: পুতিন কি রাজি হবেন এক মাসের যুদ্ধবিরতিতে?
৩৪ দিন আগে