বাল্যবিয়
পুলিশের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী
চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের হস্তক্ষেপে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছে। প্রাপবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে দেবেন না বলে পুলিশের কাছে এই অঙ্গীকারও করেছেন ওই ছাত্রীর বাবা-মা।
শনিবার (০৯ অক্টোবর) রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনাধীন নেহালপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর-বোয়ালমারী গ্রামে এই বিয়ে বন্ধের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে এক বিদ্যালয়ে ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে!
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর বলেন, ‘আমার থানাধীন কৃষ্ণপুর-বোয়ালমারী গ্রামে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীর, আগামী সোমবার (১১ অক্টোবর) বাল্যবিবাহের দিনক্ষণ ধার্য করা হয়েছে বিশ্বস্তসূত্রে এমন খবর পাই। এরপর আমি নিজেই সঙ্গের ফোর্স নিয়ে ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে উপস্থিত হই। এরপর ওই স্কুলছাত্রীর বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের বাল্যবিবাহের কুফল ও আইনের বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা দেই। এছাড়াও গোপনে কিংবা অন্য কোনোভাবে ওই স্কুলছাত্রীকে তার পরিবারের সদস্যরা বিয়ে দিতে না পারে, সেজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ফাঁড়ি পুলিশকে সর্তক থাকতেও নির্দেশ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে সংবর্ধনা পেলো মোনালিসা
ওসি জানান, ওই স্কুলছাত্রী প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পযর্ন্ত মেয়ের বিয়ে দেবে না মর্মে তার বাবা-মা একটি অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেছেন।
ওই স্কুলছাত্রী আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না দিলেও পরিবার ঠিক করা এই বাল্যবিবাহে সে রাজী ছিল না বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
৩ বছর আগে
করোনা: কুড়িগ্রামে ঝরে পড়েছে ৫০ হাজার শিশু, বাল্যবিয়ের শিকার বালিকারা
করোনাভাইরাসের কারণে ১৮ মাস মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজগুলো বন্ধ থাকায় কুড়িগ্রামে শিশুশ্রম, দারিদ্রতা, নদীভাঙন ও স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে প্রায় ৫০ হাজার শিশু ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়া শিশুদের একটি বড় অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। রবিবার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও কন্যাশিশুর অনুপস্থিতির কারণ খুঁজতে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শতকারা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ শিশু স্কুলে এসেছে। ২০ থেকে ২৫ ভাগ শিশু প্রতিষ্ঠানে আসেনি। এদের মধ্যে অর্থনৈতিক কারণে ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি। এছাড়াও বাল্যবিয়ের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ শিক্ষার্থী, ঘোগাদহ মালেকা বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৬ জন, কাঁঠালবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৪ জন এবং বারউল্লাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ জনসহ পাঁচটি বিদ্যালয়ে মোট ৯১ জন কন্যা শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু দশম শ্রেণিতে ১২ জনসহ প্রায় ৩০ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যারয়ে গিয়ে দেখা যায়, এই বিদ্যালয়ে লকডাউনের আগে সপ্তম শ্রেণিতে উপস্থিতি ছিল ৫০ জন, রবিবার উপস্থিত হয়েছে ৪৩ জন, নবম শ্রেণিতে আগে ছিল ৩১ জন আজ ২২ জন, দশম শ্রেণিতে আগে ২৫ জন আজ ১৭ জন, এসএসসিতে আগে ২৪ জন আজ ১৯ জন।
এসএসসি পরীক্ষার্থী জান্নাতুন জানান, তার ক্লাসের পাঁচজন বন্ধু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
দশম শ্রেণির সোহানা জানান, তার দুজন বান্ধবী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
এসএসসি পরীক্ষার্থী আইরিন জানান, লকডাউনে আমরা পরিবারের কাছে যেন বোঝা হয়ে ছিলাম। কোথাও বাইরে যেতে দেয়া হতো না। প্রাইভেট পড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেক বান্ধবীকে তাদের বাবা-মা বোঝা মনে করে বিয়ে দিয়েছে। তারা পড়াশুনা করতে চেয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়েছে তারা।
এই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করলে জানতে পারব কতজন শিশু ঝরে পড়েছে। এর কারণগুলোও আমরা খুঁজে বের করব। যাতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা কোন সমস্যায় পড়ে না যায়।’
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনিয়ম দেখলে কঠোর ব্যবস্থা: শিক্ষামন্ত্রী
৩ বছর আগে