নিঝুম দ্বীপ
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
শুধুমাত্র কিছু সুন্দর মুহূর্ত কাটানোই নয়, ফেনিল সাগরের মাঝে কোনো দ্বীপ ভ্রমণ করা শরীর ও মন দুটোর জন্যই স্বাস্থ্যকর। দ্বীপের সৈকতে এসে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ যে কোনো মনের অস্থিরতাকে শান্ত করতে সক্ষম। তাছাড়া দ্বীপের সুস্থ কোলাহল অতি বার্ধক্যে পীড়িত মানুষের ভেতর থেকেও বের করে আনতে পারে শিশুসুলভ চঞ্চলতা। দ্বীপদেশ না হলেও নদীমাতৃক বাংলাদেশের আঙ্গিনার চরগুলো এই অভিজ্ঞতার ষোল আনাই পূরণ করতে পারে। আজকের আয়োজনে থাকছে সেরকম একটি অকৃত্রিম জায়গা- নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের নানা দিক।
নিঝুম দ্বীপ: সাগরের মাঝে এক টুকরো স্বর্গ
বাংলাদেশের দক্ষিণের বিভাগ চট্টগ্রামের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলার ছোট একটি দ্বীপ এই নিঝুম দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা এই চরটি হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। চর ওসমান, বাউল্লারচর, কামলার চর, ও মৌলভির চর- এই চার চর নিয়ে পুরো নিঝুম দ্বীপ।
প্রায় ১৪ হাজার ৫০ একরের এই দ্বীপটি সাগরের মাঝখানে জেগে ওঠে ১৯৪০ সালে। তারও প্রায় এক দশক পড় গড়ে ওঠে জনবসতি। দ্বীপটিকে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল। ২০১৩ সালে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র একটি ইউনিয়নের মর্যাদা পায় নিঝুম দ্বীপ।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
নিঝুম দ্বীপের নামকরণ
জনবসতি গড়ে ওঠার একদম শুরুর দিকে এই দ্বীপের নাম ছিল চর ওসমান ও বাউল্লার চর। লোকমুখে শোনা যায়, এখানে বসতি গড়া প্রথম মানুষটির নাম ওসমান। তিনি ছিলেন একজন বাথানিয়া; আর তখন তার নামানুসারেই দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছিল। শুধু সৈকতই নয়, দ্বীপের মাটিও বালুতে চিকচিক করতো। দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেতো বালুর ঢিবি বা টিলার মতো জায়গা। আর এই কারণেই বাইল্যার ডেইল বা বাউল্লার চর শব্দগুলো এই দ্বীপের নামের সঙ্গে জুড়ে যায়। এমনকি এখনও নিঝুম দ্বীপের অবস্থান জানার জন্য স্থানীয়দেরকে বাইল্যার ডেইল বা বাউল্লার চরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে হয়।
প্রথম বসতি গড়ের ওঠার সময় চরে প্রচুর চিংড়ি পাওয়া যেতো। চিংড়ির স্থানীয় নাম ইছা; তাই স্থানীয়দের কেউ কেউ একে ইছামতির চরও বলতো। ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপটি একদম জনমানব শূন্য হয়ে যায়। ঝড় শেষে হাতিয়ার তৎকালীন সংসদ সদস্য আমিরুল ইসলাম কালাম দ্বীপটিতে পরিদর্শনে গিয়ে নাম বদলে দ্বীপের নাম নিঝুম রাখেন।
নিঝুম দ্বীপের দর্শনীয় স্থানসমূহ
নিঝুম দ্বীপের বিশেষত্ব হচ্ছে চিত্রা হরিণ ও শীতকালের অতিথি পাখি। একসঙ্গে এতো চিত্রা হরিণ দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। আর সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালের ডাক শিরদাঁড়া দিয়ে রোমাঞ্চের ঢেউ তোলে।
পাখি, হরিণ দেখতে হলে খুব ভোরে উঠতে হবে। আগে থেকেই কোনো স্থানীয় গাইডকে বলে রাখা যেতে পারে। তাহলে সঠিক জায়গায় যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। স্থানীয় ছোট ছোট ছেলেরাই গাইডের কাজ করে। ওরাই সাধারণত পর্যটকদের ম্যানগ্রোভ বনের হরিণ দেখিয়ে নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণের উপায়
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য এখানকার সেরা জায়গা নামা বাজার সৈকত। নামা বাজার থেকে পায়ে হেটে ১০ মিনিটের মধ্যেই সৈকতে পৌঁছা যায়। বারবিকিউয়ের জন্যও এ জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়।
নিঝুম দ্বীপ ছাড়া পাখিদের মেলা বসে পাশের দ্বীপ কবিরাজের চর ও দমার চরে। পড়ন্ত বিকেলে কবিরাজের চরের কাছে চৌধুরীর খাল দিয়ে নৌকা করে কিছু দূর গেলেই চোখে পড়বে চিত্রা হরিণ। ট্রলার রিজার্ভ করা হলে মাঝিই হরিণ দেখিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। ১০ থেকে ১৫ জনের জন্য ট্রলার ভাড়া পড়তে পারে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
তাজা ইলিশ খাওয়ার জন্য কমলার দ্বীপ সেরা জায়গা। জাতীয় উদ্যান এলাকা থেকে সাগর ঘোরার জন্য ৪০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফাইবার বোট ভাড়া দেয়া হয়।
শীতের অতিথি পাখি দেখার জন্য এখানকার আরো একটি দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে ভার্জিন আইল্যান্ড। দমার চরের দক্ষিণে নতুন সৈকতটিই ভার্জিন আইল্যান্ড। দমার চর ঘুরে আসতে হলে ট্রলার ভাড়া পড়বে প্রায় তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা। নিঝুম দ্বীপ থেকে একটু দূরের পথে দেখা মিলবে ভোলার ঢালচর আর চর কুকরি-মুকরি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময়
নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য্যে আপাদমস্তক অবগাহন করার জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে শীত ও বসন্তকাল। হেমন্তের শেষলগ্নে তথা অক্টোবর থেকে এপ্রিলের ঠিক মাঝামাঝি সময়টাই উপযুক্ত সময়। এ সময় রাস্তাঘাট শুকনো থাকায় আশেপাশের যে কোনো জায়গায় যাওয়া যাবে। এছাড়া হরিণ দেখার জন্য বনের পথে হাটতে সুবিধা হবে।
বর্ষাকালে গেলে হাটু সমান কাদায় পুরো দ্বীপ হেটে ঘুরতে হবে। যানবাহন নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হবে। তবে ভোসন রসিকদের জন্য সুখবর হল যে এ সময়টাতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় সেখানে। এছাড়া বছরের বাকিটা সময় মেঘনা নদী ও সাগর অনেক উত্তাল থাকে।
ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার উপায়
সাগরের মাঝখানে হওয়ায় নিঝুম দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রার শুরুটা সড়ক পথে হলেও শেষব্দি জলপথ ব্যবহার করতেই হবে। বাসে চড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল অথবা ধানমন্ডির জিগাতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাসের ধরণের উপর ভিত্তি করে এসব বাসে ভাড়া পড়তে পারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
আরও পড়ুন: বনভোজনের জন্য ঢাকার কাছেই ১০টি মনোরম জায়গা
১ বছর আগে
শীতকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের জনপ্রিয় ১০ স্থান
শীতকাল মানেই ভ্রমণের মৌসুম। যে সময়ে নেই ভয়াবহ গরমে ক্লান্ত হবার ভয়, নেই বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত সড়কের ঝামেলা। ক্রমাগত উষ্ণ হতে থাকা বাংলাদেশ, শীতকালে তার চিরাচরিত নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ফিরে পায়। সেই সৌন্দর্যের মোহে আবিষ্ট হয়ে দীর্ঘ শিশির ভেজাপথ হেটে গেলেও ভর করবে না কোনো ক্লান্তি। তাই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির সময়টিতে দেশ জুড়ে পড়ে যায় বনভোজনের ধুম। চলুন, শীতকালে নিরাপদে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় স্থান সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
এই শীতে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের ১০টি জনপ্রিয় স্থান
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
কথা যখন পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ নিয়ে, তখন সেখানে কোনো সময়ের বাধাই মানা যায় না। তাই বছরের পুরোটা সময়ই দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ থাকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অখণ্ড সৈকতে শুধু উত্তাল ঢেউয়ের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেয়া যায় সারাটা দিন।
ঢাকা থেকে স্থলপথে বাসযোগে ও আকাশপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে হলে আগে চট্রগ্রাম পর্যন্ত যেয়ে সেখান থেকে বাসে করে কক্সবাজার যেতে হবে। চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ অথবা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে কক্সবাজার যাওয়ার বাস পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন: সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, কক্সবাজার
বাংলাদেশের এই একমাত্র প্রবাল দ্বীপকে স্থানীয়া নারিকেল জিঞ্জিরা বলে ডাকে। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিণের মাত্র ১৭ বর্গ কিলোমিটারের এই ক্ষুদ্র দ্বীপটির অবস্থান কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। একদিকে নিঃসীম নীল দিগন্তের কোণে ফেনিল সমুদ্রের মিশে যাওয়া, অন্যদিকে সারি সারি নারিকেল গাছ ঘেরা সাধারণ জীবন ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে অমোঘ আকর্ষণে কাছে টানে।
সেন্টমার্টিন যেতে হলে ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফ পৌঁছে সেখান থেকে জাহাজে চড়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। জাহাজগুলো সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন চলাচল করে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে জাহাজগুলো। আর ফেরত আসে বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে।
কুয়াকাটা, পটুয়াখালী
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতের অবস্থান পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার অন্তর্গত লতাচাপলি ইউনিয়নে। কক্সবাজারের মত অভিজাত না হলেও, এখানকার নিরিবিলি বেলাভূমি এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কুয়াকাটাকে করেছে অনন্য।
আরো পড়ুন: পাহাড় ভ্রমণে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার উপায় হচ্ছে নদী ও সড়ক পথ। পূর্বে সবাই ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে পটুয়াখালী বা বরিশাল হয়ে বাকি পথ বাসে কুয়াকাটা যেতো। তখন লঞ্চ ও বাস যোগে পুরো অর্ধেক দিন লেগে যেতো। তবে এখন পদ্মা সেতুর কারণে মাত্র ৫ ঘন্টায় বাসে করে সরাসরি পৌছনো যায় কুয়াকাটায়।
সুন্দরবন, খুলনা
বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী এবং ভারতের কিছু অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বন। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃত এই বনাঞ্চলটি বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণের আধার। এখানে জন্মান সুন্দরী বৃক্ষের কারণে সুন্দরবন নামেই বিশ্বখ্যাতি পেয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এই প্রধান বিচরণক্ষেত্রটি।
এখানে ঘুরতে যেতে হলে অবশ্যই বন অধিদপ্তরে নির্ধারিত ফি দিয়ে অনুমতি ও সাথে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে নিতে হয়। এর সবগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার একমাত্র মাধ্যম লঞ্চ ও ছোট জাহাজ।
আরো পড়ুন: নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
সুন্দরবন সাধারণত সবাই খুলনা বা মোংলা হয়ে যেতো। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে এখন সড়কপথেই সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে পারছে দেশের হাজারো মানুষ।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মৌলভীবাজার
এক হাজার ২৫০ হেক্টর আয়তনের এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও আংশিক শ্রীমঙ্গল নিয়ে। দেশের ট্রপিকাল রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত এই জাতীয় উদ্যানটি জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর নান্দনিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ২৪০ প্রজাতির পাখির আশ্রয়স্থল এই লাউয়াছড়া। বিশেষ করে বিলুপ্ত প্রায় উল্লুকের সবচেয়ে বড় বিচরণ এলাকা হিসেবে এর সুখ্যাতি রয়েছে।
বনের ভেতরে আছে তিনটি ট্রেইল; যেগুলো ট্রেকিং করার সময় খুব কাছ থেকে দেখা যায় বনের সৌন্দর্যকে।
আরো পড়ুন: কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে করে শ্রীমঙ্গল পৌছে লাউয়াছড়া ভ্রমণ করা যায়।
কুতুবদিয়া দ্বীপ, কক্সবাজার
বাংলাদেশে বাতিঘর দেখতে হলে চলে যেতে হবে কক্সবাজার জেলার ছোট উপজেলা কুতুবদিয়ার এই দ্বীপটিতে। এখানকার প্রাচীন বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষটি এখনো যেন ভাটার সময় পুরানো ইতিহাসের গল্প বলে। ২১৬ বর্গ কিলোমিটারের ছোট এই দ্বীপে আছে নির্জন সমুদ্র সৈকত এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার।
বাংলাদেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও প্রাকৃতিক ভাবে লবণ চাষের জন্য এ জায়গাটি বেশ প্রসিদ্ধ। এই দ্বীপ ভ্রমণের জন্য কক্সবাজার থেকে প্রথমে চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড আসতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি করে মগনামা ঘাট পৌছে ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে নেমে পড়তে হবে কুতুবদিয়া চ্যানেলে। আর এই কুতুবদিয়া চ্যানেলই পৌছে দিবে কুতুবদিয়া দ্বীপে।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
মনপুরা দ্বীপ, ভোলা
ভোলা জেলার এই বিচ্ছিন্ন ভূমিটি সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত এবং হরিণ দেখার জন্য পর্যটকদের প্রিয় স্থান। মেঘনা নদীর ভেতরে ৫০০ মিটার পর্যন্ত স্থাপন করা মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের ভীড় থাকে। দ্বীপ ভ্রমণে এসে দর্শনার্থীরা চৌধুরী প্রজেক্টের মাছের ঘের আর সারি সারি নারিকেল গাছের বিস্তৃত এলাকাতেও ঘুরতে আসেন। নদীর ধারে সাইক্লিং কিংবা সবুজের মাঝে ক্যাম্পিং-এর জন্য সেরা জায়গা মনপুরা দ্বীপ।
মনপুরা দ্বীপে যাওয়ার জন্য ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকেল ৫টায় লঞ্চে উঠে পড়তে হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে থেকে সড়ক পথে ভোলা হয়ে তজুমদ্দিন ঘাটে এসে সি-ট্রাকে করেও মনপুরা দ্বীপে আসা যায়। সি-ট্রাক ছাড়ার সময় বিকাল ৩টা।
নিঝুম দ্বীপ, নোয়াখালী
নোয়াখালীর হাতিয়া অঞ্চলে বঙ্গপসাগর ঘেরা ছোট্ট এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৪,০৫০ একর। শীতের মৌসুমে পুরা নিঝুম দ্বীপ ভরে যায় অতিথি পাখিতে। এখানকার সবচেয়ে সেরা আকর্ষণ হচ্ছে চিত্রা হরিণ। একসাথে এত চিত্রা হরিণের দেখা দেশের আর কোথাও পাওয়া যায় না। নিঝুম দ্বীপের নামা বাজার সৈকত থেকে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
সড়ক পথে যে যানবাহনই ব্যবহার করা হোক না কেন, নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে প্রথমে পৌছতে হবে চেয়ারম্যান ঘাটে। এখানকার হাতিয়া যাওয়ার সি-ট্রাক বা ট্রলারগুলো নলচিরা ঘাটে নামিয়ে দেবে। এবার মোটর সাইকেল দিয়ে পৌছতে হবে হাতিয়ার অন্য প্রান্ত মোক্তারিয়া ঘাটে। সেখান থেকে ট্রলারে চড়ে নিঝুম দ্বীপ।
তবে সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে ঢাকার সদরঘাট থেকে হাতিয়ার লঞ্চে উঠে পড়া। হাতিয়ায় পৌছার পর তমুরদ্দী ঘাট থেকে পাওয়া যাবে সরাসরি নিঝুম দ্বীপের ট্রলার।
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য, হবিগঞ্জ
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা অবস্থিত সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। প্রায় এক হাজার ৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এই বনভূমিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় ১৯৮২ সালে। এটি প্রায় ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রায় ৬২ প্রজাতির প্রাণী এবং প্রায় ১৬৭ প্রজাতির পাখির আবাস।
আরো পড়ুন: ভারতের টুরিস্ট ভিসা কীভাবে পাবেন: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রসেসিং ফি
এই অভয়ারণ্যে আছে অপরূপ সুন্দর তিনটি ট্রেইল, গোটা বনকে এক নজরে দেখার জন্য আছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌছে টমটমে চড়ে যেতে হবে নতুন ব্রীজ। সেখান থেকে সিএনজিতে চুনারুঘাট মধ্যবাজার পৌছে আরেকটি সিএনজিতে করে কালেঙ্গা বাজার নামতে হবে। তারপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাটলেই অভয়ারণ্যের প্রধান ফটক।
মালনীছড়া চা-বাগান, সিলেট
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা-বাগান এই মালনীছড়া চা-বাগান। এক হাজার ৮৪৯ সালে লর্ড হার্ডসনের তত্ত্বাবধানে এক হাজার ৫০০ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় এই চা-বাগান। বর্তমানে বেসরকারী তত্ত্বাবধানে থাকলেও চা-বাগানপ্রিয় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেশ পছন্দের একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ানো যায় বাগানে।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
বাস, ট্রেন অথবা বিমান; এই তিন রুটের যে কোনটি ব্যবহার করে ঢাকা থেকে প্রথমে আসতে হবে সিলেটে। অতঃপর শহরের যেকোন জায়গা থেকে রিক্সা কিংবা সিএনজি যোগে সহজেই পৌছা যাবে মালনীছড়া চা-বাগানে।
শেষাংশ
শীতকালে বাংলাদেশ ভ্রমণের জনপ্রিয় এই ১০টি স্থান হিম শীতল প্রকৃতিকে দারুণ ভাবে উপভোগ্য করে তোলে বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। তবে এই আনন্দটা ফিকে হয়ে যেতে পারে যদি যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা না হয়। এ সময় যাত্রা শুরুর সময় অবশ্যই সাথে গরম কাপড় নিয়ে নেয়া আবশ্যক। নিয়মিত ওষুধপত্রের সাথে ডেটল, স্যাভলন, ব্যান্ডেজ, তুলার মত কিছু ফার্স্ট এইড সামগ্রি সঙ্গে রাখা উচিত। একটি সুপরিকল্পিত পূর্বপ্রস্তুতিই পারে একটি ভ্রমণকে নিরাপদ নির্ঝঞ্ঝাট করে তুলতে।
২ বছর আগে
নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা নির্ধারণের নির্দেশ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় নিঝুম দ্বীপের ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চলের’ সীমানা আগামী ৬ মাসের মধ্যে নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিবেশ সচিব ও বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষককে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ ও নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রুলে নিঝুম দ্বীপের ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চলের’ সীমানা নির্ধারণে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার সচিব, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নির্বাচন কমিশনের সচিব প্রধান বন সংরক্ষকসহ ১৪ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
ব্যারিস্টার পল্লব বলেন, ‘এখনও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ না করার সুযোগ নিয়ে স্থানীয় ভূমিখেকোরা নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বনের জমি অবৈধভাবে দখল করছে। এমনকি জমি দখলে নিয়ে তারা সেখানে বিভিন্ন কাঠামোও নির্মাণ করছে। এতে নিঝুম দ্বীপের প্রাকৃতি-পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ। সীমানা নির্ধারণ না করা পর্যন্ত এ নির্বাচন স্থগিত চাওয়া হয়েছিল। আদালত সে বিষয়ে আদেশ দেননি।
আরও পড়ুন: বেসরকারি শিক্ষকদের ৬ মাসের বেশি বরখাস্ত রাখা যাবে না: হাইকোর্ট
রিট আবেদনে বলা হয়, ৪০ এর দশকে নোয়াখালীর হাতিয়ায় দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠে নিঝুম দ্বীপ। ১৯৭৪ সালে বন বিভাগ এই দ্বীপটিতে বনায়ন শুরু করে। পরবর্তীতে দ্বীপটির প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য বিবেচনায় সরকার এটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। এর ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে বন আইন, ১৯২৭ এর ২০ ধারায় সরকার পুরো নিঝুম দ্বীপকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করে। আইনানুযায়ী সংরক্ষিত বন নিঝুম দ্বীপে জনসাধারণের অবাধ প্রবেশ, কাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ। কিন্তু ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বন নিয়ে ১১ নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
পরবর্তীতে ২০১২ সালে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় দুটি গেজেটের মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সংরক্ষিত বনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। যে কারণে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদকে আলাদা করে সীমানা নির্ধারণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নোটিস পাঠান স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী রফিক উদ্দিন এনায়েত। কিন্তু বিবাদীরা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় রফিক উদ্দিন বাদী হয়ে গত রবিবার হাইকোর্টে জনস্বার্থে এ রিট আবেদন করেন।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে বাক্সবন্দি ২৮ যন্ত্র: তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
৩ বছর আগে