কেবল টিভি
হৈচৈ বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম: বিশ্বজুড়ে বাঙালির কোটি প্রাণের স্পন্দন
প্রযুক্তির উৎকর্ষে স্যাটেলাইট ও কেবল টিভির প্রভাবকে অতিক্রম করে ক্রমেই বিশ্ববাসীর মনে জায়গা করে নিচ্ছে ওভার দ্যা টপ বা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। ওটিটি মুলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে দর্শকদেরকে মিডিয়া সেবা সরবরাহ করে। বিশ্বায়নের এই স্পন্দন ইতোমধ্যে বাংলা ভাষাভাষি লোকদের মাঝেও ছড়িয়ে গেছে। ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিশ্বের প্রথম বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভারতে এর অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু করে হৈচৈ। নিরবচ্ছিন্ন অনলাইন বাংলা বিনোদন স্লোগান নিয়ে হৈচৈ সর্বশেষ বাংলা সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, মিউজিক ভিডিও পৌছে দিচ্ছে বিশ্ব বাঙালির কাছে। হৈচৈ-এর ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটটি নিয়েই সাজানো হয়েছে এবারের বিনোদনধর্মী ফিচারটি।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হৈচৈ: বিনোদনের নতুন দিগন্তে বাংলার সূর্যোদয়
নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ও হুলুর মহরতে বাঙালিরা বেশ ভালো ভাবেই বিনোদনের নতুন পরিভাষাগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। সেই সূত্রে, ঘরের টিভিতে আর হাতের মুঠোয় স্মার্টফোনটিতে সবাই পরিচিত ভাষায় কথোপকথোন দেখার চাহিদা অনুভব করছিলো। ২০১৬ এর শরতে ঠিক এই সম্ভাবনাটি আবিষ্কার করে পূর্ব ভারতের বৃহত্তম বিনোদন উৎপাদন ও বিতরণ স্টুডিও শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রাইভেট লিমিটেড (এসভিএফ)-এর সৃজনশীল টীম। সে সময় থ্রিজি থেকে ফোরজিতে উত্তরণের তোড়োজাড় চলছিলো।
আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা ৪৬৮ মিলিয়ন যা সে সময় থেকে বিগত পাঁচ বছর পূর্বের তুলনায় ৩১২.৮৪ মিলিয়ন বেশি। তাই ফোরজি সহজলভ্যতার যুগপৎ অগ্রযাত্রায় এসভিএফ সামাজিক মাধ্যমগুলোর গন্ডি পেরিয়ে বাঙালি কম্যুনিটির সামনে বাংলার নেটফ্লিক্স উপস্থাপন করতে চাচ্ছিলো।
আর এই চিন্তাপ্রসূত ফলাফল অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস- হৈচৈ। অবশেষে, ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ২০টি অরিজিনাল শো, এসভিএফের নিজস্ব ২০টি সহ ৪০০ টির বেশি বাংলা সিনেমা এবং ১০০০এরও বেশি গান নিয়ে যাত্রা শুরু করে হৈচৈ। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪০০ ঘন্টার কন্টেন্ট গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত ছিলো এই শুভ মহরতে।
আরও পড়ুন: মানসপটে সালমান শাহ ও কিছু বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি বনে যাওয়া
অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস হৈচৈ এর নেপথ্যের মানুষেরা
হৈচৈ-এর থিঙ্কট্যাঙ্ক শ্রীকান্ত মোহতা, মাহেন্দ্র সোনি এবং বিষ্ণু মোহতা। চেয়ারপার্সন হিসেবে কর্তব্যরত আছেন বিষ্ণু মোহতা। এসভিএফ-এর এই পরিচালকত্রয়ই হৈচৈ এর মাধ্যমে বাংলা কন্টেন্টের প্রচার ও প্রসার সম্ভব করছেন।
হৈচৈ-এর জন্ম লগ্নেই এসভিএফ ছিলো প্রায় দুই দশক ধরে পূর্ব ভারতে হলিউড ও বলিউড চলচ্চিত্র বন্টনের প্রোফাইল সমৃদ্ধ প্রযোজনা সংস্থা। পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা সদর দপ্তর থেকে বিশ্বব্যাপী ২৫০ মিলিয়ন বাঙালির জন্য ৩৬০-ডিগ্রি বিনোদন সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে হৈচৈ।
২০১৬ এর অক্টোবর থেকে অংশীদার হিসেবে ওটিটি সার্ভিসটির টেকনিক্যাল বিষয়গুলো তদারক করে আসছে ভিউলিফ্ট কোম্পানি। ভিউলিফট-এর দায়িত্বের মধ্যে হৈচৈ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ বানানো ও পরিচালনা সহ বিনোদন ও মিডিয়া খরচ, বিতরণ, এবং নগদীকরণও অন্তর্ভূক্ত।
হৈচৈ-এর কন্টেন্টের দৃশ্যায়ন ও বিজ্ঞাপন প্রচারণার নেপথ্যে সৃষ্টিশীল কাজগুলোর দায়িত্বে নিয়োজিত রেডিফিউশন ওয়াই এ্যান্ড আর। এমনকি, হৈচৈ নামটিও এই সৃজনশীল এজেন্সিটির দেয়া।
আরও পড়ুন: ওয়েব সিরিজ ‘বলি’: অভিনব চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী
বর্তমানে হৈচৈ-এর সাথে অংশীদারিত্বে থাকা টেলিকম পরিষেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে ভারতের জিওফাইবার, এয়ারটেল এক্সস্ট্রীম, অ্যালায়েন্স, উইশনেট ও মেঘবেলা, বাংলাদেশের লিঙ্ক-থ্রি ও গ্রামীণফোণ এবং মালয়েশিয়ার সহজ।
হৈচৈ ভিডিও স্ট্রিমিং: বাংলা বিনোদনের ভবিষ্যতে পদার্পণ
নিয়ত বিনোদনের নতুনত্ব চর্চার ফলে এক সময় যা সম্ভাবনা ছিলো এখন তার ভেতরেই বসবাস করছে বিশ্ববাসী। এই পরশপাথরের স্পর্শের বাইরে নেই বাঙালিরাও। নেটফ্লিক্সের মত হৈচৈও শোভা পাচ্ছে হাতের মুঠোফোন ও টেবলেটের পাশাপাশি অ্যাপল টিভি, অ্যামাজন ফায়ার টিভি, রোকু টিভি, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, এবং ক্রোমকাস্ট থাকা ডিভাইসগুলোতে।
৫০০এর বেশি বাংলা সিনেমা, এক্সক্লুসিভ অরিজিনাল শো, শর্টফিল্ম, মিউজিক ভিডিওর পাশাপাশি গ্রাহকরা উপভোগ করতে পারছে প্রতি মাসে নতুন কন্টেন্ট। অর্থাৎ পুরো বিশ্বটা ছোট্ট একটি গ্রামের ভাবনাটা এখন রীতিমত চাক্ষুষ করা যাচ্ছে। যে কোন জায়গা ইচ্ছে ঘুরে বেড়িয়ে অথবা ঘরে বসে কম খরচে বিপুল পরিমাণের কন্টেন্টের মাধ্যমে আপ-টু-ডেট থাকা যাচ্ছে নিমেষেই।
সর্বসাকুল্যে, টিভি চ্যানেলগুলোর করুণায় থেকে প্রতি সপ্তাহের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভর করার দিন শেষ। ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট হৈচৈ গ্রাহকদেরকে অভ্যস্ত করে তুলছে খুঁজুন এবং উপভোগ করুন তত্ত্বে। এছাড়া ফ্রিমিয়াম, অফলাইন ডাউনলোড প্রভৃতি আকর্ষণীয় সুযোগগুলোর কারণে ওটিটি প্ল্যাটফর্মটিতে গ্রাহকদের আনাগোনা থাকছে দীর্ঘক্ষণ ধরে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছে কাশফুলের খোঁজে: গন্তব্য যখন শরতের শ্বেতশুভ্র স্বর্গ
৩ বছর আগে