ট্রাফিক জ্যাম
দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামে সময় কাজে লাগানোর উপায়
প্রাণের শহর ঢাকার সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত যে বিষয়টি তা হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনসাধারণের জীবনের মতই মূল্যবান সময়কে উপেক্ষা করে মুহুর্মুহু বেড়ে চলেছে ট্রাফিক জ্যাম। বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার দরূণ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যখন মানুষের জীবন-জীবিকা কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে, তখন ছোট্ট দেশটির ছোট্ট রাজধানীবাসীদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে অমূল্য সময়গুলোকে অর্থপূর্ণ করতে না পারার আফসোস নিয়ে। কিন্তু চরম এই মুহূর্তে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আরও সময় নষ্ট করার চেয়ে অবস্থার সঙ্গে জীবনধারণকে মানিয়ে নেয়াটা উত্তম। জেনে নিন ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার সময়গুলোকে কী করে ফলপ্রসূ করা যায়।
ট্রাফিক জামে দীর্ঘক্ষণ আটকে পড়লে সময় পার করবেন কিভাবে?
আসন্ন কাজের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া
শিক্ষার্থী বা কর্মজীবী সকলেই নির্দিষ্ট কাজ নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার সময়টিতে সেই কাজের নিমিত্তে শেষবারের জন্য নিজেকে একবার ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে। শিক্ষার্থীদের হরহামেশা পরীক্ষার জন্য রিকশায় বসেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিড়বিড় করতে দেখা যায়। কর্মজীবীরা অফিসের মিটিংয়ের এজেন্ডা, প্রেজেন্টেশন বা ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিংয়ের বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি এ সময় ভালো করে একবার দেখে নিতে পারেন। এছাড়াও কোন বন্ধু-বান্ধব এমনকি আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। যে কোনো নিক্ষুত যোগাযোগ বা কথোপকথোনের জন্য এরকম পূর্বপ্রস্তুতি অনেকটা সময় বাঁচিয়ে দেয়।
আগামীকালের পরিকল্পনা করা
জীবন সংসারের কাজগুলোর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী তার অনুকূলে কর্মপরিকল্পনাগুলো মানুষের অভ্যস্ততার সঙ্গে মিশে যায়। আর এর জন্যেই বেশি রাত করে ঘুমানোর পরেও সকাল ৭টার ট্রেন ধরতে কেউ মিস করে না। তবে আগের রাতে কাপড়-চোপড়গুলো ঠিকঠাক ব্যাগে গুছিয়ে রাখতে হয়। ঠিক তেমনি আগামী দিন কার কার সঙ্গে দেখা করতে হবে, কোথায় কোথায় যেতে হবে, লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়গুলো ট্রাফিক জ্যামে বসেই ঠিক করে ফেলা যায়। যেহেতু আগামীকালও ট্রাফিক জ্যাম থাকবে, সেহেতু সেই কাজগুলোর জন্য সময়ের সঠিক হিসাব করে রাখা জরুরি। আর তার জন্য আজকের ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা মুহুর্তগুলোই সেরা সময়।
আরও পড়ুন: জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে কি করবেন?
অনলাইনে খবর পড়া
রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে স্থানীয় খবর থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ব্যাপারে সর্বশেষ খবরটি জানা থাকা উচিত। নিদেনপক্ষে, আগামীকাল নির্দিষ্ট কোনো কারণে শহরের অধিকাংশ রাস্তায় অধিক জ্যাম থাকবে কিনা তার জন্যও খবরের পোর্টালগুলোতে চোখ বুলানো দরকার। পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোতে প্রায়ই অনেককে খবরের কাগজ পড়তে দেখা যায়। তাছাড়া মোবাইলের মাধ্যমে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও হালনাগাদকৃত খবরগুলো পাওয়া যায়।
ডিআইওয়াই (ডু ইট ইয়োরসেল্ফ) ভিডিও দেখা বা আর্টিকেল পড়া
ইউটিউবের কল্যাণে এখন এই ধরনের ভিডিওগুলো পাওয়া খুব সহজ হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক ছোট-খাট কাজ থাকে, যেগুলোর জন্য অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যায় যে কাজগুলো আসলে অতটা কঠিন নয়। একবার দেখে নিলেই যে কেউ নিমেষেই কাজগুলো করতে পারে। বাসা থেকে বেরনোর সময় হয়ত কোনো ফার্নিচারের ছোট একটি অংশ বেকায়দায় আলাদা হয়ে গেছে, দরজার নব খুলে গেছে, বেসিনের সিঙ্কের পাইপে লিক হয়েছে ইত্যাদি। এগুলোর কীভাবে ঠিক করতে হয় তা জ্যামে বসে নিজেই শিখে ফেলা যায়। এতে খরচও বাঁচবে আর সাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রেও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: যেভাবে পাসপোর্টের ভুল তথ্য সংশোধন করবেন
২ বছর আগে
কেমন হবে আমাদের মেট্রোরেল?
দেশ আজ উন্নতির হাইওয়েতে। অনেক স্বপ্নিল প্রকল্পের মাঝে মেট্রো রেলও একটি। কাজ শুরু হয়ে গেছে। ধুলাবালি, কাদা, রাস্তা কাটাকাটির দুঃসহ ট্রাফিক জ্যামের মাঝে ও আশায় বুক বেঁধে আছি কবে এক নিমেষে ফার্মগেট,মতিঝিল চলে যাবো। পরিপাটি পরিচ্ছন, ধুমপান ও খাওয়া দাওয়া বিহীন ট্রেনের কামরায় বসে গন্তব্যে যাচ্ছি। মিষ্টি সুরে বলবে “পরবর্তী ষ্টেশন আগারগাঁও, দরজা বাম দিকে খুলবে, দরজা বন্ধ হচ্ছে ইত্যাদি”। স্মার্ট কার্ড, স্মার্ট টিকেট সিস্টেম কত কিছুই না দেখবে এদেশের জনগন। আহ সেদিন আসিবে কবে?
সুদিন আসছে। রেল গাড়ির ট্রায়াল রান শুরু হয়ে গেছে। পূর্ণাঙ্গ চালু হতে বছর দুয়েক সময় লাগবে।
দুই দশকের ও কম সময়ের আগে যখন দিল্লি যাই তখন দেখি মেট্রো রেলের কাজ চলছে। দিল্লির লোকদের স্বপ্ন পর্ব চলছিলো। কিন্তু কলকাতা এদিকে এক ধাপ এগিয়ে ছিল। কলকাতায় পুরোদমে মেট্রো রেল চালু ছিল। লক্ষ্য করলাম কলকাতার কোচ গুলো চেন্নাই এর তৈরি আর দিল্লির জন্য জাপানি কোচের অর্ডার দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় রাজধানী ও প্রাদেশিক রাজধানীর একটা পার্থক্য থাকবেনা? যাক তা দেখা আমার বিষয় নয়।
২০১৭ সালে দিল্লি গিয়েছিলাম। বিমান বন্দর থেকে নিউ দিল্লি ষ্টেশন পর্যন্ত যথাযথ সুন্দর পরিপাটি মেট্রো রেলের দেখা পেলাম। পরবর্তী গন্তব্য গুলোতে যেতে টের পেলাম এটা কোন রেল। লোকজনের ভিড়, ধাক্কা ধাক্কি, মাথায় মালপত্র নিয়ে গায়ের উপর পড়ে যাওয়া কি এক বিচ্ছিরি কারবার। নাভিশ্বাস উঠার অবস্থা। যাত্রীদের পোশাক আশাক, ঘামের গন্ধ, পান ও জর্দার সুবাস সব মিলিয়ে মেট্রো রেলের স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। এতো লোক সংখ্যার শহরে আদর্শ মেট্রো রেল কিভাবে কাজ করবে। কোচ গুলির অনেক সিস্টেম কাজ করে না। মিষ্টি গলায় যাত্রীদের জন্য ঘোষণা আসে না।
কর্তৃপক্ষকে দোষ দেবার সুযোগ কই? মেট্রো রেলের সব কিছুই তারা ঠিক মত করেছে। কিন্তু পরিকল্পনাবিদরা ভাবেননি যে ভবিষ্যতে লোক সংখ্যা কি দাড়াবে? অশিক্ষিত জনগনের জন্য আধুনিক সিস্টেম নির্ভর মেট্রো রেল কতটুকু সুবিধাজনক ভাবে কাজ করবে। দিল্লি পৃথিবীর এক নম্বর নোংরা শহর। পরিচ্ছন্ন মেট্রো রেল এর সাথে সাথে এর আরোহীদের সাফ সুতরা করার কোন পরিকল্পনা ছিল কি? নিরাপত্তার নামে ষ্টেশন গুলোতে চেকিং ও মালপত্র স্ক্যানিং এর দীর্ঘ লাইন বিরক্তিকর ও বিব্রতকর। অনেক লাগেজের সাইজ এতো বড় যে স্ক্যানিং মেশিনে ঢোকে না। কলকাতা যাওয়া হয়নি। সেখানকার মেট্রো রেল দিল্লির মত কিনা জানি না।
আমরা সব কিছুতেই বিশ্বের এক নম্বর। আমাদের পরিকল্পনাবিদরা নিশ্চয় এসব দিক বিবেচনায় রেখেছেন যে আগামী দিনের জনসংখা ও আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে আমাদের কি রকম মেট্রো রেল হওয়া উচিৎ। এটা কি সিঙ্গাপুর জাপানের আদলে আদর্শিক কিছু নাকি মস্কোর মেট্রো রেলের ন্যায় শক্তিশালী ও কার্যকর একটা মেট্রো রেল হবে তা দেখার অপেক্ষায় আছি। তবে নির্মাণকালীন সময়ের দুর্ভোগ (যা শুরু হয়ে গেছে) কাটিয়ে যদি বেঁচে থাকি তাহলেই মেট্রো রেল দেখতে পাবো। অপেক্ষায় থাকলাম।
লেখক: কলামিস্ট ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ
নয়া তালেবান, পুরান তালেবান: তফাৎ কী?
৩ বছর আগে