নবান্ন
ঠাকুরগাঁওয়ে নবান্ন: বাঙালির জীবনের সচ্ছলতার উৎসব
আবহমানকাল থেকেই প্রকৃতির প্রাণধারা বহমান রেখেছে বাঙালির জীবনধারাকে। তাই প্রকৃতির উদার আনুকূল্যে সে যেমন বাঁচে, তেমনি এর রুদ্ররোষেও হয়ে পড়ে বিপন্ন। প্রকৃতি তাকে অপার দাক্ষিণ্যে পূর্ণ করে, আবার আঘাতে আঘাতে করে নিঃস্ব-সর্বশান্ত। তারপরেও মনে হয়, বাঙালির স্বপ্ন-প্রেম, তার বাঁচার ইচ্ছা, তার জীবনধারণ ও জীবনযাপনের সবকিছুই ওই প্রকৃতির দানে প্রাপ্ত। প্রকৃতি ঘনিষ্ঠ যে জীবন ও জীবনের কলরব, তাতেই বাঙালির উৎসব।
অন্যভাবে বলা যায়, প্রকৃতির উৎসবই বাঙালির উৎসব। ঋতুর আনুকুল্যে তার আশ্চর্য প্রণোদনায় এই উৎসব বর্ধিত ও পল্লবিত হয়। প্রকৃতির পালাবদলে তার ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যে চারদিক অপরূপ হয়ে ওঠে। ঋতুভিত্তিক কিংবা প্রকৃতিকেন্দ্রিক উৎসব পার্বনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘নবান্ন’।
আর এই নবান্ন হলো হেমন্তের উৎসব। তাই সমৃদ্ধির ঋতু হেমন্ত যখন আসে বাংলায়, তখন তা নিয়ে আসে ফসলের প্রাচুর্য। গ্রাম বাংলার কুটির থেকে প্রান্তর, পাকা ধানের গন্ধে আমোদিত হয়ে ওঠে। ফসল তোলার আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে সকলে। হেমন্তে আয়োজন করা হয় প্রাণের উৎসব, জীবনের সচ্ছলতার উৎসব ‘নবান্ন’।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে নবান্ন উৎসব শুরু
১ বছর আগে
দ্রুত চালের উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
চালের চাহিদার অনুপাতে দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।তিনি বলেন, দেশে এই আমনের মৌসুমে নবান্নের সময়ও চালের দাম বাড়ছে। এবছর আউশ, বোরো ও আমনে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। সরকারি মজুদও সর্বকালের সর্বোচ্চ, তারপরও চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায়, চালের মূল্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে দ্রুত চালের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এটি করতে হলে অতি উচ্চফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের আবাদ বাড়াতে হবে। সেলক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে যাতে করে ১-২ বছরের মধ্যে উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি করা যায়।
আরও পড়ুন: বিশ্বমানের প্যাকিং হাউজ ও ল্যাব স্থাপনে কাজ চলছে: কৃষিমন্ত্রীবৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ধানের উৎপাদন বাড়াতে অতি উচ্চফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের আবাদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি জমি ক্রমশ কমছে। চালের উৎপাদন বাড়াতে গেলে নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ উৎপাদনশীল জাতগুলোকে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে হবে এবং সুপার হাইব্রিডের চাষ বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া, পাহাড়, হাওর, উপকূলসহ প্রতিকূল এলাকায় ধানের চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে। সেজন্য, আগামী বোরো, আউশ, আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদন বাড়াতে সময়াবদ্ধ সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। নতুন উদ্ভাবিত অতি উচ্চ ফলনশীল ব্রি ৮৯ ও ব্রি ৯২ বোরো জাতের ধানের উৎপাদন প্রতি শতাংশে প্রায় এক মণ। এটিকে দ্রুত মাঠে নিতে এবার বোরোতে ব্রিধান ৮৯ ও ৯২ যেসব কৃষকেরা চাষ করবে, তাদের লিস্ট করে উৎপাদিত ধানের সবটুকু বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ হিসেবে কিনে নেয়া হবে। যাতে বীজ সংকট না হয়। চাষিদের নিকট জনপ্রিয় করতে বিনামূল্যে বীজ দেয়া হবে, সারের দাম আরও কমিয়ে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: যে কোনো মূল্যে আমাদেরকে চালের উৎপাদন বাড়াতে হবে: কৃষিমন্ত্রীচালের চাহিদার সঠিক পরিসংখ্যানের উপর গুরু্ত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দেশে চালের চাহিদা, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা নিয়ে পরিসংখ্যানগত অসঙ্গতি দূর করতে হবে। তিনি বিবিএস ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে আরও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানের আহ্বান জানান।চালের দাম বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি দেশে চালের দাম কিছুটা অস্থিতিশীল ও ঊর্ধ্বমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারেও খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে গমের দাম টনপ্রতি ২৩০-২৮০ ডলারের মধ্যে ছিল, তা বেড়ে এখন ৪৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে গম আমদানি হয়েছিল ৪৮ লাখ টন, আর এ অর্থবছরে জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে মাত্র ১৬ লাখ টন। দাম বাড়ার কারণে গম আমদানি কম হচ্ছে। ফলে আটা,ময়দার দাম চালের চেয়ে বেশি, অথচ সবসময়ই আটার দাম চালের চেয়ে কম থাকে। এছাড়া, দেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রতিবছর ২২-২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। প্রাণি-মৎস্যের খাদ্য হিসেবেও চালের কিছু ব্যবহার হচ্ছে। মানুষের আয় এবং জীবনযাত্রার মানও বেড়েছে। এসব মিলে চালের চাহিদা ও ভোগ দিন দিন বাড়ছে। ফলে, চালের দাম কিছুটা বেশি, তবে এই মুহুর্তে দেশে খাদ্যের কোন সংকট নেই।সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থাপ্রধান ও বেসরকারি সীড এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি সীড এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিবৃন্দ হাইব্রিড বীজের ক্ষেত্রে তাদের মজুদ ও সক্ষমতা তুলে ধরেন।
২ বছর আগে
ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
পুরোপুরি শীত শুরু নাহলেও বেশ কয়েকদিন থেকে খুলনা মহানগরীতে সন্ধ্যার পর থেকে শীতের পিঠা বিক্রি ধুম পড়েছে। মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীরা মোড়ে মোড়ে পিঠার দোকান নিয়ে বসে পড়েছেন। আর সাধারণ মানুষও খাচ্ছেন এসব ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পিঠা তৈরির ছাঁচে চালের গুঁড়ি নিয়ে তার ওপর গুড়, নারকেল ছিটিয়ে ভাপে দিচ্ছেন দোকানি। খোলায় বানানো হচ্ছে চিতই পিঠা। সন্ধ্যার পরেই পিঠার দোকানে ভিড় করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পিঠার দোকান সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। অনেকে আবার পিঠা বিক্রির দোকান দিয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
শান্তিধাম মোড়স্থ জাতিসংঘ শিশু পার্কের পশ্চিম পাশে, মহানগরীর রূপসা ঘাট, পিটিআই মোড়, দোলখোলা মোড়, গফফারের মোড়, শিশু হাসপাতাল রোড, তারের পুকুর পাড়, পিকচার প্যালেস মোড়, ক্লে রোড, মহারাজ চত্বর রোড, স্টেশন রোড, কদমতলা রোড, খান জাহান আলী রোড, সোনাডাঙা বাস স্ট্যান্ড, মোল্লা বাড়ির মোড়, নিউ মার্কেট, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মোড় আর ফুটপাতে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক অস্থায়ী পিঠার দোকান।
পিঠা বিক্রেতা নুরুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই পিঠা বিক্রি করি। এবার প্রায় ১৫-২০ দিন হয়েছে চিতই পিঠা বিক্রি শুরু করেছি। ৫ টাকা করে প্রতি পিস, বিক্রিও খুব ভালো।
নুরুর দোকান থেকে পিঠা কিনে প্রশংসা করে বেসরকারি চাকরিজীবী মামুন বলেন, ‘এখানকার পিঠার মান ভালো। তাই প্রতিবছরই কিনে থাকি। এবারও কিনেছি।
আরও পড়ুন: কুবিতে নবান্ন উৎসব
দোকানিরা জানান, খুব বেশি পুঁজি লাগে না বলে সহজে এ ব্যবসা শুরু করা যায়। জ্বালানি হিসেবে খড়ি, অকেজো কাঠের টুকরা, কিংবা গাছের শুকনা ডাল ব্যবহার করছেন তারা। তবে কেউ কেউ আবার পিঠা তৈরি করতে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। কিছু গুড়, আটা, নারকেল নিয়ে এ ব্যবসা খুলে বসা যায়।
সোনাডাঙা মোল্লা বাড়ির মোড়ের পিঠা বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, পাটিসাপ্টা, কুলি, চিতই, খিজানো পিঠা ও তেলের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। দামে কম ও মান ভালো হওয়ায় দোকানে প্রায় ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে।
এদিকে দিনের আদ্রতা কমে যাওয়ার দরুন কার্তিক মাসের শেষ দিকের সকালে একটু একটু সূর্যের কিরণের দেখা মেলে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে রাতের শেষাংশে বেশ শীতে কাঁপন ধরছে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে নবান্ন উৎসব শুরু
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গত ১২ নভেম্বর (শুক্রবার) ভারতের তামিল নাড়ুর উপরদিয়ে অতিক্রম করেছে। তারই প্রভাবে গভীর সঞ্চালন মেঘমালা বাংলাদেশের উপরে অবস্থান করছিল। এরই প্রভাবে সূর্যের কিরণ দেখা যায় এবং কোথাও কোথাও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার কারণে সন্ধ্যার পর ঠান্ডা অনুভূত হয়েছে।
তিনি জানান, এই লঘুচাপের পরেই শীতের আরও তীব্রতা বাড়বে বলে মনে করেছে আবহাওয়া অফিস।
২ বছর আগে
পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
রাঙ্গামাটিতে জুমের সোনালী পাকা ধানে ছেয়ে গেছে পাহাড়। শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব। জুম চাষিদের চোখে মুখে এখন আনন্দ। জুমিয়ারা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে জুমের পাকা ধান কেটে বাড়িতে তোলা নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করছেন। নতুন ধানের গন্ধে পাহাড়ি জনপদগুলোতে তৈরি হয়েছে উৎসবের আমেজ। জুমের ফসল বাড়িতে তোলার পর পর পাহাড়ীদের ঘরে ঘরে শুরু হবে নবান্ন উৎসব।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সনাতনী কৃষিরা পাহাড়ের ঢালে জুম চাষ করে। জুম চাষের প্রস্তুতিকালে প্রথমে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম চাষের জন্য জমিকে উপযুক্ত করে তোলা হয়। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রস্তুতকৃত পোড়া জুমের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ ইত্যাদি বীজ বপন করে জুমিয়ারা। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই জুমের ধান পাকা শুরু হয়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ঘরে তোলা হয় জুমের ফসল।
আরও পড়ুন: আবাদ মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধি, ফরিদপুরে আমন উৎপাদনে শঙ্কিত চাষিরা
জুম চাষিরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর জুমের ফসল ভালো হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক মাস পরিশ্রম করে তারা এবার ভালো ফসল পেয়েছে এবং জুম ধানের পাশাপশি মিষ্টি কুমড়া, তিল, আদা, হলুদ, ভুট্টা, শিম, মারফা, কাকন, মরিচ, তুলাসহ নানা প্রকার শাক-সবজি চাষ করা হয়ে থাকে। সময় মতো ফসল ঘরে তুলতে পারলে পুরো বছর অনায়াসে কেটে যাবে এমনটাই আশা চাষিদের। আর খাদ্য সংকটে ভুগতে হবে না তাদের।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারনের উপ-পরিচালক শষ্য আপ্রু মার্মা জানান, চলতি বছর শুধু রাঙ্গামাটি জেলায় জুম চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৩০ টন। আর বর্তমানে যে উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে তা লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি। দীর্ঘ কয়েক মাস পরিশ্রমের ফলে এবং জুম চাষিরা জুমে সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। আর পাহাড়ে জুমিয়ারা স্থানীয় জাতের ধানের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল ধান ও সবজির আবাদ করতে চাষিদের পরামর্শসহ যাবতীয় সুবিধা দিচ্ছে রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: রূপসা পাড়ে অফ সিজনাল তরমুজের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি
৩ বছর আগে