অন্ধ বাউলের
তিন দশক গান গেয়েই চলছে অন্ধ বাউলের সংসার
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পথে পথে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন অন্ধ বাউল। গান গেয়ে পথচারীদের মন জয় করেই বেঁচে আছে পরিবারের তিন অন্ধ ভাইসহ আট সদস্যের একটি বড় পরিবার।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের পরিমল দাসের ছেলে অন্ধ বাউল শিল্পী শংকর দাস জন্ম সূত্রে অন্ধ। সংসারের ঘানি টানতে টানতে পার হয়ে গেছে জীবনের ৪০ বছর।
জানা গেছে, শংকর দাসের ছোট দুই ভাই দিপংঙ্কর দাস (২০) ও শুভংঙ্কর দাসও (১৪) জন্ম সূত্রে অন্ধ। তিন অন্ধ ভাইয়ের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তাদের বৃদ্ধ বাবা। বাবার উপার্জনে তাদের সংসার চলে না। অন্য কোন কাজ করার সক্ষমতা না থাকায় ১০ বছর বয়স থেকে গান গেয়ে টাকা উপার্জনের পথ বেছে নেন শংকর দাস।
আরও পড়ুন: দু’হাত হারিয়ে জীবন যুদ্ধে লড়ছে ফরিদগঞ্জের জাহাঙ্গীর
এদিকে, ২১ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন। পল্লব দাস (৬) ও পার্থ দাস (৪) নামে তার দুই ছেলে রয়েছে।
জানা গেছে, ৩০ বছর ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে উপজেলার চুকনগর, আঁঠারোমাইল, কাঁঠালতলা ও খর্ণিয়া বাজারসহ কয়েকটি বাজারের রাস্তার উপর বসে গান গেয়ে পথচারীদের মন জয় করার চেষ্টা করেন শংকর। গান শুনে অনেকে খুশি হয়ে তাকে দুই, এক টাকা করে দেয়। তাতে প্রতিদিন প্রায় দুইশ টাকার মতো উপার্জন হয়।
সেই টাকা দিয়ে স্ত্রী, দুই ছেলে, বাবা-মা ও অন্ধ দুই ভাই নিয়ে মোট আট সদেস্যের সংসার কোনভাবে চলে যায়। কিন্ত বর্তমানে তিনি গান গাইতে গাইতে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে গেছেন। তারপরও অভাবের এই সংসারে একদিন পথে বসে গান না গাইলে পুরো পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হয়। তাই নিরূপায় প্রায় প্রতিদিনই পথচারীদের মনোরঞ্জনের জন্য গান গেয়ে চলেছেন।
আরও পড়ুন: রমাকান্তরা আবার স্কুলে যেতে চায়
অন্ধ গায়ক শংকর দাস জানান, আজ তিনি বড়ই ক্লান্ত। অসুস্থতাসহ নানা কারণে আর হয়তো বেশিদিন তিনি গান গাইতে পারবেন না। তখন তার পরিবারের কী অবস্থা হবে, কে নেবে তাদের দায়িত্ব। কথাগুলো বলতে বলতেই এক সময় তিনি কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন।
আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট প্রতাপ কুমার রায় বলেন, ‘অন্ধ বাউল শিল্পী শংকর দাসের ঘর বাড়িরও বেহাল দশা। তাই আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেষ্টায় কাঁঠালতলা আশ্রয়ন প্রকল্পে তার পরিবার নিয়ে থাকার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তবে তার জন্য আরও কিছু আমাদের করা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: সৌদি খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুবেল
৩ বছর আগে