নিরাপদ পানি
সবার জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে জোরালো পদক্ষেপের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ৭৮ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পানি পরিষেবা এবং ৫১ শতাংশে স্বাস্থ্যবিধি পরিষেবা বিদ্যমান ছিল। একই বছরে ৭৮০ মিলিয়ন লোকের কোনও স্যানিটেশন পরিষেবা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, এ প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহে সকলের জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে হাঙ্গেরি ও ফিলিপাইন কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন ইন হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিস: লেসন লার্ন্ড অ্যান্ড দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বক্তব্য প্রদানকালে এমন মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিনকে ‘গ্লোবাল পাবলিক গুডস’ ঘোষণার ব্যাপারে জোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
তার বক্তব্যে তিনি দেশের সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো তুলে ধরেন।
জাতীয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কৌশলপত্র-২০২১ এর কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা পায়, ৮০ শতাংশের বেশি মানুষকে উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা এবং প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষকে হাইজিন সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজ স্যানিটেশন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতি অনেক উন্নয়নশীল দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে।
সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশের সফল অভিজ্ঞতার আলোকে ড. মোমেন বিশ্বব্যাপী পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি পরিষেবার অগ্রগতির অভাব দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী পিটার সিজার্তো, ফিলিপাইন প্রজাতন্ত্রের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের সচিব মারিয়া অ্যান্তোনিয়া ইউলো-লয়জাগা এবং জর্জিয়ার আঞ্চলিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো মন্ত্রী ইরাকলি কারসেলাদজেও বক্তব্য রাখেন।
এ অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কূটনীতিক, জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, পানি খাতে কর্মরত আন্তর্জাতিক এনজিও এবং বেসরকারি অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সোশ্যাল সায়েন্টিস্ট ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, এওএসইডি, বিডব্লিউওটি, জাগো নারী, গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন এবং এসডিএ-কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘রিভাইটালাইজিং সোশ্যাল প্রোটেকশন পলিসিস ফর ক্রিয়েটিং মোর অ্যাকসেসিবিলিটি টু ড্রিংকিং ওয়াটার’ শীর্ষক একটি উচ্চ-পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বিকালে তিনি মালয়েশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী নিক নাজমি নিক আহমেদের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন এবং সেখানে দুই দেশের মধ্যকার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ পানি সম্মেলনের প্লেনারি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় অধিকতর আন্তর্জাতিক অর্থায়নের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
১ বছর আগে
জলবায়ু পরিবর্তন: মোংলায় ৮৫ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মোংলায় পানিতে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে পানিতে ৯ গুন বেশি লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। খাল-বিল, নদী-নালা, ডোবা ও ভূ-গর্ভস্থসহ সর্বত্রই পানিতে লবণ আর লবণ। লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির চরম সংকট চলছে মোংলায়। উপজেলার ৮৫ শতাংশ মানুষ খাবারের নিরাপদ পানির জন্য হাহাকার করছে। জীবন বাঁচাতে খাবার পানির জন্য নারী-পুরুষকে কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিতে হচ্ছে। লবণাক্ত পানি পান করে অনেকে পেটের পীড়া এবং পাতলা পায়খানাসহ নানা রোগে ভুগছেন। অধিকাংশ মানুষের খবারের জন্য বৃষ্টি পানি একমাত্র ভরসা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মোংলা উপজেলা চারদিক থেকে নদী-খাল দ্বারা বেষ্টিত। গ্রামগুলোতে ডোবা-নালা আর মৎস্যঘেরে ভরা। যেদিকে চোখ যায় সবদিকেই পানি থৈ থৈ করছে। কিন্তু সব পানিই অতিমাত্রায় লবণাক্ত। ওই সব পানি খাবার তো দুরের কথা ব্যবহার যোগ্য নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মোংলা উপজেলার সর্বত্রই পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। কোন কোন পরিবারে ব্রাকের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি দেখা মিলেছে। পানির কথা বলতেই বিভিন্ন গ্রামের নারী-পুরুষরা এক বাক্যে তাদের সুপেয় পানির তীব্র সংকটের কথা জানালেন।
উপজেলার উত্তর চাঁদপাই গ্রামে মধ্য বয়সী রোজিনা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, টিনসেডের বাড়িটির এক পাশ দিয়ে খাল বয়ে গেছে। অপর দুই পাশে পুকুর আর মৎস্যঘের। বাড়ির তিন পাশেই পানি। কিন্তু সব পানিই লবণাক্ত। পাশে ফুলজান বিবির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির এক পাশে পুকুর আর অপর পাশ দিয়ে খাল বয়ে গেছে। ওই দুই বাড়িতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য দুই হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংক এবং জীবানুমুক্ত করার জন্য পানি ফিল্টারের ব্যবস্থা দেখা গেছে। ব্রাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির আওতায় তাদেরকে ওই পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি দেয়া হয়েছে বলে তারা জানান।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর প্রভাবে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা এবং তীব্রতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদী ও ভূ-গর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। যা এই অঞ্চলের কৃষি, স্বাস্থ্য ও জীবিকার ক্ষতি করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের ১৯ জেলার ৭০ উপজেলায় চার কোটি মানুষ বাস্তচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চার দশকে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। পশুর নদীর মোংলা পয়েন্টে ১৯৬২ সালে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল দুই পিপিটি। ২০০৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ পিপিটিতে। বর্তমানে দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার ১৫৩ উপজেলায় প্রায় ৫ কোটি মানুষের বসবাস। যার মধ্যে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ অতিদরিদ্র।
তথ্য মতে, লবণাক্ততা বাড়ার কারণে উপকূলের তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষ তীব্র খাবার পানি সংকটে ভুগছেন। এখানে একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে মাত্র দুই লিটার খাবার পানির মাধ্যমে ১৬ গ্রাম লবণ গ্রহণ করেন। যে খানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ দিনে পাঁচ গ্রাম। লবণাক্ততা ছাড়াও আয়রন, আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডও পাওয়া যায় এসব এলাকার পানিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, লবণাক্ততার প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ ৩০ থেকে ৫০ লাখ দরিদ্র ও ২০ থেকে ৩০ লাখ অতিদরিদ্র মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ প্রস্তাব
৩ বছর আগে