বিশ্ব ভ্রমণ
বিশ্ব ভ্রমণে নাজমুনের ১৭৮ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১৭৮টি দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়েছেন নাজমুন নাহার। ১৭৮তম দেশ হিসেবে পাপুয়া নিউগিনি ভ্রমণের মাধ্যমে এ রেকর্ড গড়েন তিনি। এছাড়া বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবেও ১৭৮টি দেশ ভ্রমণের এ কীর্তি এখন তার দখলে।
পাপুয়া নিউগিনির উপপ্রধানমন্ত্রী জন রোসো এক বিশেষ সাক্ষাতে নাজমুন নাহারকে বিশ্ব ভ্রমণের এই বিরল রেকর্ড অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এছাড়া নাজমুন ১৭৭তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেছেন সলোমান আইল্যান্ড। সলোমান আইল্যান্ডের জনপ্রিয় তাভুলী নিউজে বিখ্যাত সাংবাদিক জর্জিনা কেকেয়ার লেখা ফিচারে উঠে আসে নাজমুন নাহারের গৌরবময় বিশ্ব ভ্রমণের সংগ্রাম ও সাফল্যের কথা।
নাজমুন নাহার এভাবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা তুলে ধরছেন এবং বিশ্ব শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন মানুষের মাঝে। নাজমুন তার ভ্রমণের সময় বিশ্ব শান্তি, ঐক্য এবং পরিবেশ রক্ষার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের মাঝে।
এই অভিযাত্রায় গত তিন মাস তিনি ভ্রমণ করেছেন ওশেনিয়া মহাদেশের ফিজি, টোঙ্গা, ভানুয়াতু, সলোমন আইল্যান্ড ও পাপুয়া নিউগিনি।
নাজমুন বলেন, ওশেনিয়ার সামুদ্রিক এসব দেশ ভ্রমণ অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল, তবে ভূস্বর্গের অপরূপ রহস্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আবিষ্কার করেছি সেখানে।
তার বিশ্ব ভ্রমণের মাঝে তিনি বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, তবুও তিনি দুর্গম পথ পেরিয়ে গিয়েছেন তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে।
ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন, সাহস, অধ্যবসায় ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। তার বিশ্ব ভ্রমণের প্রবল ইচ্ছে শক্তির কাছে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
২০০০ সালে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রথম বিশ্ব ভ্রমণ শুরু হয় নাজমুন নাহারের। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ব ভ্রমণ চলছে এবং তিনি ভ্রমণ করবেন বিশ্বের অবশিষ্ট দেশগুলো।
নাজমুন ২০১৮ সালের ১ জুন ১০০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের উপর। ৬ অক্টোবর ২০২১ সালে ১৫০ তম দেশ হিসেবে "সাওটোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপ" ভ্রমণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক মাইলফলক সৃষ্টি করেন। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে ১৭৫ দেশ ভ্রমণের আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেন।
ছোট্টবেলা থেকে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও অদম্য স্বপ্ন আর চেষ্টা তাকে নিয়ে গেছে এতদূর। নাজমুন বেশিরভাগ দেশ ভ্রমণ করেছেন একাকী সড়কপথে।
২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমান সুইডেনে এবং সেখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। নাজমুন তার অসাধারণ অভিযাত্রার মাঝে যেমন পৃথিবীকে দেখেছেন, তেমনি তিনি সব শিশু ও তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছেন সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে বড় করে স্বপ্ন দেখার।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বড় বড় গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে নাজমুন নাহারের বিশ্ব ভ্রমণের অভিযাত্রা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বড় বড় ব্যক্তিত্বরা তাকে সম্মাননা ও সংবর্ধনা দিয়েছে। পৃথিবী ভ্রমণের সময় তিনি বিশ্বের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উৎসাহব্যঞ্জক বক্তব্য দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন নাজমুন নাহার। এছাড়াও তার অর্জনের ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে ৫৫টির মতো পুরস্কার ও সম্মাননা।
বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুরে জন্ম নিয়েছেন এই কৃতি নারী। বিশ্ব ভ্রমণের জন্য নাজমুন নাহারের জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসাহের প্রতীক হলেন বাবা, দাদা ও বই।
তার দাদা আহমদ উল্লাহ একজন ইসলামিক স্কলার ছিলেন। ১৯২৬ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত আরব ভূখণ্ডের অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন ঘোড়ায় চড়ে, পায়ে হেঁটে ও জাহাজে করে। তিনি তার মাকে নিয়েও ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর ১৪টি দেশ।
নাজমুন নাহার লাল–সবুজের পতাকাবাহী তারকা। বিশ্বভ্রমণের ইতিহাসে দেশে দেশে বাংলাদেশের মানচিত্র স্থান পাচ্ছে নাজমুন নাহারের হাত ধরে।
নারীদের বাধা ডিঙিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আলোর পথ দেখিয়েছেন বেগম রোকেয়া, প্রীতিলতার মতো নক্ষত্ররা। নাজমুন আগামী প্রজন্মের জন্য এমন পথ সৃষ্টি করেছেন, যা শিশু-তরুণসহ সব মানুষকে উৎসাহিত করবে যুগে যুগে।
১ সপ্তাহ আগে
নাজমুন নাহার: পৃথিবীর ১৫০তম দেশ ভ্রমণ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশি পরিব্রাজক
২০২১ এর ৬ অক্টোবর মধ্য আফ্রিকার সাওটোমে ও প্রিন্সিপে নামক দ্বীপদেশে পদচিহ্ন রাখার মাধ্যমে নিজের ভ্রমণ তালিকায় ১৫০টি দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করলেন বাংলাদেশের মেয়ে নাজমুন নাহার। এই বিশ্ব রেকর্ডটি করতে তার সময় লেগেছে ২১ বছর। বাংলাদেশের বয়স অর্ধশত বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই এমন একটি অবিস্মরণীয় গৌরব উপহার দিলেন এই পরিব্রাজক। এক কথায় তার ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয়, সেই ছোট্টবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়া বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সংকল্প’ কবিতার জীবন্ত রূপ নাজমুন নাহার।
তার ভ্রমণের গল্পকে কেন্দ্র করেই এই ফিচার।
বাংলাদেশি পরিব্রাজক নাজমুন নাহার-এর ব্যক্তিগত জীবন
চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নাজমুন নাহার। বাবা মোহাম্মদ আমিন পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা তাহেরা আমিন ১৪টি দেশে মেয়ের ভ্রমণসঙ্গী হয়েছেন। আট ভাইবোনদের মধ্যে নাজমুন সর্বকনিষ্ঠ। পরিবারের লোকদের নিকট তিনি সোহাগী নামে পরিচিত।
মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক শেষ করেন লক্ষ্মীপুর জেলা সদরেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পর্ব শেষ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর কিছুদিন একটি বিনোদন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। ২০০৬ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে পাড়ি জমান সুইডেনে। সেখানে লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এশিয়ান স্টাডিজের উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়া তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার ও এশিয়া বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ঢল
কর্মজীবনে তিনি সুইডেনের সুইডওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রকল্পগুলোতে গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া শিক্ষাজীবনে ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ গার্ল্স গাইড এ্যাসোসিয়েশনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিলেন।
অবিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী পরিদর্শনের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে একাই এগিয়ে যাচ্ছেন নিজ গন্তব্যে। এরই সুবাদে সঞ্চিত অভিজ্ঞতার আলোকে বই লেখার মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মকে দীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।
নাজমুন নাহার-এর বিশ্ব পরিব্রাজক হয়ে ওঠা
দাদা ইসলামী পন্ডিত আলহাজ্ব আহমেদ উল্লাহ একজন পরিব্রাজকও ছিলেন। তার মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণের গল্প অবাক হয়ে শুনতেন নাজমুন নাহার। স্কুলে পড়ার সময় সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রমণবিষয়ক লেখাগুলো সহ দেশ-বিদেশের ভ্রমণের বইগুলো থেকে তার মনে বিশ্ব ঘুরে দেখার স্বপ্ন দানা বাধতে শুরু করে।
এর পাশাপাশি অনুপ্রেরণা এসেছে বাবা ও ভাইবোনদের কাছ থেকে। ফলে কৈশোর থেকেই নিজের মেধা বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন তিনি। আর এই মেধাই তাকে সুযোগ করে দিয়েছিল দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘোরার।
আরও পড়ুন: দেশে অবকাশে থাকার শীর্ষ ৩ জায়গা
দেশের বাইরে প্রথম পা রাখার সুযোগটি আসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন। বাংলাদেশ গার্ল্স গাইড এ্যাসোসিয়েশন থেকে তারই নেতৃত্বে একটি টিম পাঠানো হয় ভারতে একটি আন্তর্জাতিক অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে। মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বের ৮০টি গার্ল্স গাইড এ্যাসোসিয়েশন ও স্কাউটদের এই সম্মেলনটি।
পার্ট-টাইম চাকরি থেকে প্রয়োজনীয় খরচ বাদে যা সঞ্চয় হোতো তা নিয়েই বেরিয়ে পড়তেন নতুন কোন দেশ ভ্রমণে। এই সঞ্চয়ের সময়টাতেও তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কোন কোন দিনে ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা টানা কাজ করেছেন। সব সময় নখদর্পণে রাখতেন স্বল্প খরচে বিদেশ যাত্রা ও সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যাপারগুলো।
সুইডেনে উচ্চশিক্ষার সময় এভাবেই কয়েক মাসের জমানো টাকা নিয়ে জাহাজে করে চলে গিয়েছিলেন ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ড। আর এরপর থেকেই শুরু হয়ে যায় তার নিয়মিত দেশ ভ্রমণ।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছে কাশফুলের খোঁজে: গন্তব্য যখন শরতের শ্বেতশুভ্র স্বর্গ
৩ বছর আগে