বাংলাদেশি পরিব্রাজক
নাজমুন নাহার: পৃথিবীর ১৫০তম দেশ ভ্রমণ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশি পরিব্রাজক
২০২১ এর ৬ অক্টোবর মধ্য আফ্রিকার সাওটোমে ও প্রিন্সিপে নামক দ্বীপদেশে পদচিহ্ন রাখার মাধ্যমে নিজের ভ্রমণ তালিকায় ১৫০টি দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করলেন বাংলাদেশের মেয়ে নাজমুন নাহার। এই বিশ্ব রেকর্ডটি করতে তার সময় লেগেছে ২১ বছর। বাংলাদেশের বয়স অর্ধশত বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই এমন একটি অবিস্মরণীয় গৌরব উপহার দিলেন এই পরিব্রাজক। এক কথায় তার ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয়, সেই ছোট্টবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়া বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সংকল্প’ কবিতার জীবন্ত রূপ নাজমুন নাহার।
তার ভ্রমণের গল্পকে কেন্দ্র করেই এই ফিচার।
বাংলাদেশি পরিব্রাজক নাজমুন নাহার-এর ব্যক্তিগত জীবন
চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নাজমুন নাহার। বাবা মোহাম্মদ আমিন পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা তাহেরা আমিন ১৪টি দেশে মেয়ের ভ্রমণসঙ্গী হয়েছেন। আট ভাইবোনদের মধ্যে নাজমুন সর্বকনিষ্ঠ। পরিবারের লোকদের নিকট তিনি সোহাগী নামে পরিচিত।
মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক শেষ করেন লক্ষ্মীপুর জেলা সদরেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পর্ব শেষ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর কিছুদিন একটি বিনোদন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। ২০০৬ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে পাড়ি জমান সুইডেনে। সেখানে লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এশিয়ান স্টাডিজের উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়া তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার ও এশিয়া বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ঢল
কর্মজীবনে তিনি সুইডেনের সুইডওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রকল্পগুলোতে গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া শিক্ষাজীবনে ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ গার্ল্স গাইড এ্যাসোসিয়েশনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিলেন।
অবিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী পরিদর্শনের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে একাই এগিয়ে যাচ্ছেন নিজ গন্তব্যে। এরই সুবাদে সঞ্চিত অভিজ্ঞতার আলোকে বই লেখার মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মকে দীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।
নাজমুন নাহার-এর বিশ্ব পরিব্রাজক হয়ে ওঠা
দাদা ইসলামী পন্ডিত আলহাজ্ব আহমেদ উল্লাহ একজন পরিব্রাজকও ছিলেন। তার মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণের গল্প অবাক হয়ে শুনতেন নাজমুন নাহার। স্কুলে পড়ার সময় সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রমণবিষয়ক লেখাগুলো সহ দেশ-বিদেশের ভ্রমণের বইগুলো থেকে তার মনে বিশ্ব ঘুরে দেখার স্বপ্ন দানা বাধতে শুরু করে।
এর পাশাপাশি অনুপ্রেরণা এসেছে বাবা ও ভাইবোনদের কাছ থেকে। ফলে কৈশোর থেকেই নিজের মেধা বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন তিনি। আর এই মেধাই তাকে সুযোগ করে দিয়েছিল দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘোরার।
আরও পড়ুন: দেশে অবকাশে থাকার শীর্ষ ৩ জায়গা
দেশের বাইরে প্রথম পা রাখার সুযোগটি আসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন। বাংলাদেশ গার্ল্স গাইড এ্যাসোসিয়েশন থেকে তারই নেতৃত্বে একটি টিম পাঠানো হয় ভারতে একটি আন্তর্জাতিক অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে। মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বের ৮০টি গার্ল্স গাইড এ্যাসোসিয়েশন ও স্কাউটদের এই সম্মেলনটি।
পার্ট-টাইম চাকরি থেকে প্রয়োজনীয় খরচ বাদে যা সঞ্চয় হোতো তা নিয়েই বেরিয়ে পড়তেন নতুন কোন দেশ ভ্রমণে। এই সঞ্চয়ের সময়টাতেও তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কোন কোন দিনে ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা টানা কাজ করেছেন। সব সময় নখদর্পণে রাখতেন স্বল্প খরচে বিদেশ যাত্রা ও সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যাপারগুলো।
সুইডেনে উচ্চশিক্ষার সময় এভাবেই কয়েক মাসের জমানো টাকা নিয়ে জাহাজে করে চলে গিয়েছিলেন ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ড। আর এরপর থেকেই শুরু হয়ে যায় তার নিয়মিত দেশ ভ্রমণ।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছে কাশফুলের খোঁজে: গন্তব্য যখন শরতের শ্বেতশুভ্র স্বর্গ
৩ বছর আগে