প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল
কুড়িগ্রামে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল
বন্যাকবলিত কুড়িগ্রামে পানির স্তর কমে আসলেও সেখানে বসবাসরত লাখো মানুষ হারিয়েছে স্বাভাবিক জীবন যাপনের নূন্যতম সম্বল। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও রয়ে গেছে সংকট, তৈরি হচ্ছে নিত্য নানা সমস্যা।
এই পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে সবার আগে জরুরি সহায়তা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার জোসনা নামের এক নারী জানান, ‘আমাদের প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবন হঠাৎ উল্টে গেছে এই এক বন্যায়। আমার ঘর পানির নিচে চলে গেছে। যেদিকেই তাকাই, শুধু বন্যার পানি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। আমার পুরা পরিবারই খাবারের সংকটে ভুগছে। কিন্তু আমার যেন বাড়তি সংকট। এইরকম পরিস্থিতিতে মাসিক ব্যবস্থাপনা কীভাবে করব? কাপড় কীভাবে পালটাবো? আমি কিছুই জানিনা।’
আরও পড়ুন: প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন ৯ সাংবাদিক
জোসনার মত নাগেশ্বরীর কচাকাটা এবং বল্লভেরখাস ইউনিয়নের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর পাশে খাদ্য ও অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে জরুরি সাড়াপ্রদানের (ইমার্জেন্সি রেস্পন্সের) কাজ করে চলেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। আর এই সাড়াপ্রদানের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মেয়ে ও যুব নারীদের মৌলিক চাহিদা।
জরুরি সাড়া প্রদানের প্রথম ধাপে পাঁচ হাজার ৫৬০ প্যাকেট শুষ্ক খাবার, এক লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, এক হাজার ৮৪০টি খাদ্য-ভিন্ন অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং এক হাজার ৮২০ টি মাসিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বন্যাকবলিত মানুষের কাছে।
নাগেশ্বরীর মর্জিনা নামের এক নারী জানান, ‘বন্যার এই ভয়াবহ আঘাতের পর আমাদের আর খাবার রান্না করে খাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এমন সংকটের সময়ে এই শুকনা খাবারের সহায়তা পাওয়াটা আমাদের জন্য তাই এক বিরাট স্বস্তি। তাছাড়া মাসিক ব্যবস্থাপনার জন্য যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম- এটা জরুরি ছিল ভীষণ। কারণ এই সমস্যার কথা তো আমরা কাউকে গিয়ে বলতে পারি না।’
স্বল্পকালীন জরুরি এই সাড়াপ্রদান প্রকল্প বাস্তবায়নে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-কে সহায়তা করছে মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি।
কমিউনিটির কাছে জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেয়ার এই কার্যক্রমের সময় উপস্থিত ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর সেন্ট্রাল এবং নর্দান রিজিওনের প্রধান আশিক বিল্লাহ, কচাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ও বল্লভেরখাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আব্দুর রাজ্জাক।
আরও পড়ুন: পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি
সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী একসঙ্গে যুবদের কার্যক্রম
সহিংসতার ভয়কে রুখে দিতে তরুণদের মধ্যে নেতৃত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী কার্যক্রম এবং প্রচারণা অভিযান। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশি উন্নয়ন সংস্থা জাগো ফাউন্ডেশন একসঙ্গে যুবদের একত্রিত করছে ‘সহিংসতার ভয় আর নয়’ শীর্ষক এই অভিযানে।
সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আওয়াজ তুললেও সহিংসতার ভয় এবং এই ভয়ের প্রভাব নিয়ে কথা বলা হয় সামান্যই। অথচ যুবদের, বিশেষ করে যুব নারীদের জীবনে এই ভয়ের রয়েছে ভয়াবহ প্রভাব। আর তাই প্রথমবারের মত সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে একত্রিত হবে সারাদেশের যুবরা, নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে।
সোমবার প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর ঢাকাস্থ কান্ট্রি অফিসে দুই সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এই প্রচারণা অভিযানের।
আরও পড়ুন: তরুণরাই রূপকল্প ২০৪১ এর নেতৃত্ব দেবে: প্রধানমন্ত্রী
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন- প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর গার্লস রাইটস ডিরেক্টর কাশফিয়া ফিরোজ, ক্যাম্পেইন ম্যানেজার সেমন্তি মঞ্জরী, জাগো ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা করভি রাখসান্দ, সহকারী পরিচালক এশা ফারুকী।
আলোচনায় কাশফিয়া ফিরোজ জানান, ‘সহিংসতার এই ভয় শুধু কিশোর-কিশোরীদের জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়। আর তাই, সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরুর প্রাক্কালে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ দেশের সকল বিভাগ থেকে পারিবারিক বলয়ে, রাস্তায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অনলাইনে-সহ বিভিন্ন পরিমণ্ডলে ‘সহিংসতার ভয়’ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। প্রায় ১২ হাজার অংশগ্রহণকারীর উপর জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী গণপরিসরে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হয়। ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী ও কিশোরী জানান তারা নিজ পরিবারেই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক, সিনিয়র স্টুডেন্ট দ্বারা বিভিন্ন বিরূপ ও অশালীন মন্তব্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হওয়ার কথা জানান অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ, আর কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের ৫৬ শতাংশ। যা তাদের মনে দীর্ঘমেয়াদি ভয় সঞ্চার করে। জরিপ হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি, ভয়ের কারণে অনেক সময় বাবা-মায়েরা মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, খেলাধুলা, পিকনিকে অংশগ্রহণ করতে দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। সহিংসতার ভয়ের এই বলয়কেই আমরা আমাদের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ভাংতে চাই।
করভি রাখসান্দ বলেন, আগ্রাসন কিংবা জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ভয় নারীর জীবনকে সীমাবদ্ধ করে তোলে। আমরা চাই সমাজের প্রতিটা জায়গা, প্রতিটা স্তর হবে সকল মানুষের জন্য নিরাপদ।
শুরুতেই ঢাকা, রংপুর, বরিশাল এবং কক্সবাজার থেকে নির্বাচিত ২০ জন যুব গ্রহণ করবেন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, যেন তারা নিজ নিজ কমিউনিটিতে গিয়ে তাদের কমিউনিটির তরুণদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে গণপ্রচারণা অভিযান।
পুরো ক্যাম্পেইনটি শেষ হবে একটি জাতীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে- যেখানে যুবদের মধ্য থেকেই উঠে আসবে সহিংসতার ভয় বিষয়ক চ্যালেঞ্জের গল্প এবং তা মোকাবিলার পথ।
এক ঘণ্টার ইউএনও সাদিয়া!
সাদিয়া বিনতে আওলাদ নামে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী হলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
সোমবার (১১ অক্টোবর) পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে কন্যা শিশুর ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে এক ঘণ্টার জন্য প্রতীকী ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ওই শিক্ষার্থী।
নারী শক্তির ক্ষমতায়ন বাস্তবায়ন, নারী ও শিশুর ক্ষমতা অধিকার সম্পর্কে অবগত করা ও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও ন্যাশনাল চিল্ড্রেন টান্সফোর্স (এনসিটিএফ) এই উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এক ঘন্টার জন্য ইউএনও’র পদ টেক অভার করা সাদিয়া বিনতে আওলাদ অহনা পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেনের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। একই সাথে এক ঘন্টার জন্য তার অধীন হয় পুরো সদর উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ সময় অহনা বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন ও নিপীড়নসহ নারী সহিংসতা রোধে আলোচনা, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কার্য সম্পাদনসহ তদারকি করেন এবং উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাকে নারী বান্ধব করতে ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সুপারিশমালা তুলে ধরেন। প্রতীকি দায়িত্ব পাওয়া ইউএনও’র সুপারিশগুলো আমলে নেয়ার আশ্বাস দেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন।
জানা যায়, প্রতিকী নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়া স্কুল ছাত্রী সাদিয়া বিনতে আওলাদ অহনা পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যায়লের নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং সে চাইল্ড পার্লামেন্ট পঞ্চগড় জেলা শাখার সদস্য।
আরও পড়ুন: একদিনের সুইডিশ রাষ্ট্রদূত রুনা !
এক ঘন্টার প্রতিকী অনুষ্ঠানে পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, সদর উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন, ন্যাশনাল চিল্ড্রেন টান্সফোর্স (এনসিটিএফ) এর ডিস্ট্রিক্ট ভলান্টিয়ার মারুফ হাসান আবির, ওমেন্স ভলেন্টিয়ার নিশাত পারভিন নিশিসহ উপজেলার বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিকী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া বিনতে আওলাদ অহনা জানান, আমি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে এবং নারী বান্ধব উপজেলা গড়ে তোলা, নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও অধিকার নিয়ে কাজ করতে চাই। কন্যা শিশুর গুরুত্ব দিয়ে অহনা জানান, নারীরা সকল কাজে পারদর্শী তা প্রমাণ হয়ে গেছে। নারীরা সমঅধিকার পেলে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন জানান, ‘নারীর অবদান এখন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। আজকের তরুণ প্রজন্ম ও নারীরাই একদিন দেশের উন্নয়নে কাজ করবে। আমরা নারী বান্ধব উপজেলা ও নারীর সংহিংসতা রোধে কাজ করবো এবং স্কুল ছাত্রীর সকল সুপারিশ আমরা বাস্তববায়ন করার চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুন: একদিনের মেয়র বৈশাখী!
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের গুরুত্বারোপ