খুলনা-মোংলা
উদ্বোধনের এক মাস পরও খুলনা-মোংলা রুটে শুরু হয়নি ট্রেন চলাচল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যৌথ উদ্বোধনের এক মাস পরেও খুলনা-মোংলা রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।
চলাচল শুরু হলে খুলনা থেকে বাগেরহাটের মোংলা বন্দর পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার এই পথ দিয়ে পণ্য পরিবহন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রেলপথটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মোংলা বন্দর থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পরিবহন সহজতর করবে এবং প্রতিবেশি দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজ করবে। এতে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
উচ্চ প্রত্যাশা সত্ত্বেও, এই নবনির্মিত ট্র্যাকে ট্রেন পরিষেবা এখনও শুরু হয়নি। ট্রেন চলাচল শুরুর সঠিক তারিখ এখনও অনিশ্চিত, কারণ কর্তৃপক্ষ এখনও বিস্তারিত বিষয়গুলো চূড়ান্ত করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এই লাইনে আটটি নবনির্মিত স্টেশন রয়েছে, যেখানে বর্তমানে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অভাব রয়েছে। উপরন্তু, এই স্টেশন এবং রেলক্রসিংগুলোর জন্য কর্মীদের কাজ শেষ হয়নি।
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলা রেললাইন উদ্বোধন ১ নভেম্বর
টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের কাজও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। এ ছাড়া মোট কতটি ট্রেন চলবে, ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়া এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ হোসেন মাসুম জানান, ‘খুলনা-মোংলা রেললাইনে ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়েছে। কিছু ফিনিশিং কাজ বাকি ছিল, এখন সেগুলো করা হচ্ছে। এই রুটে পণ্য পরিবহনকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, সেই সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনও চলবে। তবে ট্রেন চলাচল শুরুর তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।’
প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর। এই রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টুবরো এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। ভারতের ঋণ সহায়তায় এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
এই রেলপথে রূপসা নদীর উপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণকাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। ৯টি স্থানে আন্ডারপাস (রেললাইনের নিচ দিয়ে যাওয়ার রাস্তা) নির্মাণ করা হয়েছে। আন্ডারপাসের কারণে ট্রেনগুলোকে ক্রসিংয়ে থামতে হবে না। দুর্ঘটনারও ঝুঁকি থাকবে না।
এই রেলপথের আটটি স্টেশন হলো– ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, দিগরাজ, কাটাখালী, চুলকাঠি, বাঘা ও মোংলা।
খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, ‘সবার দাবি দ্রুত ট্রেন চলাচল শুরু হোক। ট্রেন চালু হলে মোংলার সঙ্গে রেলপথে যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি আরও গতিশীল হবে মোংলা বন্দর। পর্যটকরাও খুলনা থেকে ট্রেনে সুন্দরবন যেতে পারবেন।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, পদ্মা সেতুর পর রেল সংযোগ মোংলা বন্দরের জন্য একটা আশীর্বাদ। এই রেলপথে মোংলার সঙ্গে ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলের কনটেইনার পরিবহন সহজ হবে।
তিনি আরও বলেন, কমলাপুর আইসিডি ও ঢাকা থেকে আমদানি-রপ্তানি পণ্য বন্দরে আনা-নেওয়ায় গতি আসবে। বন্দরে আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক জাহাজ ভিড়বে।
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলা রেলপথের উদ্বোধন ৯ নভেম্বর: রেলপথমন্ত্রী
১ বছর আগে
খুলনা-মোংলা রেললাইন উদ্বোধন ১ নভেম্বর
বুধবার (১ নভেম্বর) থেকে চালু হচ্ছে খুলনা-মোংলা রেলপথ। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি ট্রেন চলাচলের জন্য রেললাইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।
এর আগে সোমবার (৩০ অক্টোবর) খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত নির্মিত নতুন রেললাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করবে। এদিন দুপুরের পর ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত যাবে একটি ট্রেন।
খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ হোসাইন মাসুম বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, খুলনা-মোংলা রেললাইন এখন পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়েছে। সোমবার দুপুরের পর ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত একটি ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। কিছু ফিনিশিং কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্প: মেয়াদ বাড়ছে ৬ মাস
তিনি আরও জানান, আগামী ১ নভেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল হক জানান, রবিবার মোটর ট্রলিতে করে মাইকিং করে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচলের বিষয়টি রেল লাইনের ২ পাশের এলাকাবাসীকে অবহিত করা হয়। যাতে লোকজন সচেতন হতে পারে এবং দুর্ঘটনা না ঘটে।
প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। ওই রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলা রেললাইন ডিসেম্বরে উদ্বোধন
১ বছর আগে
খুলনা-মোংলা রেললাইনে ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ হচ্ছে
খুলনা-মোংলা রেললাইন স্থাপনের পর বেশ কিছু এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্তমান সড়ক থেকে প্রায় ১০-১২ ফুট উঁচু দিয়ে রেললাইন যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে সড়কগুলো দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এজন্য খুলনা ও বাগেরহাটের নয়টি স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে প্রকল্প সংশোধন করে আন্ডারপাস নির্মাণের অংশটি সংযোজন করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে আন্ডারপাস নির্মাণ শুরু হবে।
খুলনার ভেতরের আন্ডারপাসের স্থানগুলো হচ্ছে-খুলনার বিল ডাকাতিয়ার লতাপাহাড় সড়কে, আড়ংঘাটা পুরাতন সাতক্ষীরা সড়কের ওপর, লবণচরা থানার পেছনে প্রস্তাবিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এবং রূপসার জাবুসা বাজার মোড়ে।
বাগেরহাটের ভেতরে কাটাখালি স্টেশনের আগে বালিয়া ভট্টখামার এলাকা, চুলকাঠি বাজারের পাশে পিলজঙ্গ এলাকায়, মহিষ খামারের পাশে, বাঘার কবিরাজ বাড়ি এলাকায় এবং দিগরাজ বাজার থেকে কিছুটা সামনে অন্য পাঁচটি আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প থেকে জানা গেছে, খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইনের দৈর্ঘ্য হবে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। রেললাইন রূপসা নদীর ওপর দিয়ে যাবে। এ জন্য রূপসা সড়ক সেতুর অদূরে রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লোকবল সংকট : বন্ধ হলো নাটোরের আজিমনগর রেলস্টেশন
সূত্রটি জানায়, খুলনা থেকে মোংলার সড়ক পথের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার। জাতীয় মহাসড়ক (এন-৭) এর পাশ দিয়েই সমান্তরালভাবেই রেললাইন যাচ্ছে। নতুন রেললাইন যেই এলাকায় বসছে, এর মাঝে অসংখ্য গ্রামীণ সড়ক, বাজার এবং মহাসড়ক রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভূমি থেকে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় রেললাইন বসছে। এ জন্য রেললাইন এলাকায় ১০৬টি কালভার্ট ও ৩১টি মাঝারি আকৃতির সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে কিছু এলাকায় রেললাইন থেকে আগের সড়কগুলো ৪-৫ ফুট নিচু থেকে গেছে। কয়েকটি জায়গায় সড়ক থেকে রেললাইনের উচ্চতা ১০ থেকে ১৪ ফুট পর্যন্ত। এতে রেললাইন অতিক্রম করতে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রা। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আন্ডারপাসগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, রেললাইন থেকে সড়ক ১০-১২ ফুট নিচে হওয়া এবং ভারী যানবাহন চলাচল করায় এই নয়টি স্থানে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। সংশোধিত প্রকল্পে বিষয়টি অনুমোদনের পর মাটি পরীক্ষা হয়েছে। নকশা তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী বছরের শুরুতেই আন্ডারপাসের কাজ শুরু হবে। আপাতত ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নকশা তৈরির কাজ শেষ হলে পুরো ব্যয় জানা যাবে।
তিনি বলেন, কয়েকটি এলাকায় আন্ডারপাস বা ওভারপাসের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু প্রকৌশলীরা স্থানগুলো পরিদর্শন করে ওই সব এলাকায় ওভারপাস বা আন্ডারপাস সম্ভব নয় বলে মতামত দিয়েছেন। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যূনতম ৮-১০ ফুট উচ্চতা না থাকলে রেললাইন মেলানো যাবে না। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়বে। প্রস্তাবিত এলাকায় উচ্চতা কম।
আরও পড়ুন: রেল খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী তুরস্ক
কেমন হবে আমাদের মেট্রোরেল?
উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর খুলনা-মোংলা রেল (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদন পাওয়া খুলনা-মোংলা ৬৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রথম ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। প্রথম দফা প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় বর্তমান ব্যয় ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
৩ বছর আগে