রফিক শেখ
খুলনায় স্ত্রী হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
খুলনায় স্ত্রীকে হত্যার পর পুড়িয়ে মরদেহ গুমের মামলায় বিচার শুরুর মাত্র নয় কার্যদিবসের মধ্যে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে ৫০ হাজার টাকা জারমানা এবং অপর একটি ধারায় তাকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত রফিক শেখ জেলার রূপসা উপজেলার বাসিন্দা। নিহত মরিয়ম বেগম (২৫) দণ্ডপ্রাপ্ত রফিক শেখের স্ত্রী।
রবিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনামুল হক রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে আসামি রফিক শেখের সাথে ফকিরহাট উপজেলার হালিমা বেগমের ছোট মেয়ে মরিয়মের বিয়ে হয় ২০১৭ সালে। মোবাইলে কথা বলাকে সন্দেহ করত নিহতের স্বামী। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ বিবাদ লেগেই থাকতো। এক পর্যায়ে তারা উভয় নেহালপুর থেকে ফকিরহাট উপজেলার খাজুরা এলাকায় রকি শেখের ভাড়া বাড়িতে এসে ওঠে। সেখানে এসেও তার ওপর একই অভিযোগে নির্মম অত্যাচার করা হয়।
২০২০ সালের ১২ আগস্ট দুপুর ১২ টায় বাড়ি এসে রফিক তার স্ত্রীকে না পেয়ে সন্দেহের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বাইরে থাকার কারণ জানতে চান তিনি। উত্তর দিতে না পারায় স্ত্রীকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিন সকালে রফিক রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের দীপক দাসের পানের বরজের মধ্যে পেট্রোল ও একটি বস্তার মধ্যে কয়েকটি ইট রেখে আসে। রাতে বেড়ানোর কথা বলে দু’জন রূপসা ব্রীজসহ বিভিন্ন জায়াগায় ঘুরতে থাকে। রাত ১০ টায় উভয় ঘটনাস্থলে পৌঁছলে রফিক পানের বরজের সামনে এনে ছলনার আশ্রায় নিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই ভুক্তভোগীকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে মরিয়মের শরীরে বস্তা পেচিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: নেশার টাকা না পেয়ে মাকে পিটিয়ে হত্যা, ছেলের মৃত্যুদণ্ড
এরপর আসামি রফিক শেখ বাড়ি ফিরে গিয়ে মরিয়মের মাকে প্রতিবেশি রঞ্জন বৈরাগীর মাধ্যমে জানায়, মরিয়মকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মরিয়মের মা সম্ভাব্য আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিতে থাকে। এর দু’দিন পর তার অর্ধগলিত ও পোড়া মরদেহ পাওয়া যায় রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামে দীপকের পানের বরজের মধ্যে।
এ ব্যাপরে নিহতের মা রূপসা থানায় বাদী হয়ে রফিক শেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. শাহাবুদ্দিন গাজী রফিক শেখকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে আসামি দোষী সাব্যস্ত হয়। বিচার শুরুর নয় কার্য দিবসের মধ্যেই এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করলেন খুলনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
পড়ুন: স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার দায়ে ফরিদপুরে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড, দেবরের যাবজ্জীবন
কৃষক হত্যা মামলা: কিশোরগঞ্জে একজনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জন খালাস
৩ বছর আগে