চরে শুঁটকি তৈরি
সুন্দরবনের ১৪ চরে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত জেলেরা
গত ১ নভেম্বর থেকে মৌসুম শুরু হওয়ায় সুন্দরবন উপকূলের দুবলারচরসহ ১৪টি চরে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই মৌসুম চলবে।
প্রায় চার মাস ধরে চলা শুটকি সংগ্রহকে ঘিরে গত ২৬ অক্টোরব (মঙ্গলবার) বনবিভাগের পাস নিয়েই অনেক জেলে আগে ভাগে সাগর পাড়ের দুবলার চরে পৌঁছে মাছ ধরতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, রূপচাঁদা, খলিসা, ইছা, ভেদা, পোঁয়াসহ নানা প্রজাতি মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি শুরু করে দিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুটকি সংগ্রহ মৌসুমে বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারিকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিক খালী, কবরখালী, চাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালীর চরে অস্থায়ী পল্লী তৈরি করে প্রায় ১৫ হাজার জেলে-মহাজন শুটকি সংগ্রহ করে থাকে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জে এ চরগুলো অবস্থিত।
অঅরও পড়ুন: করতোয়া নদী দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ!
টানা পাঁচ মাস সেখানে থাকতে হবে জেলেদের। সাগর মোহনায় মাছ শিকার করে সেই মাছ ট্রলারে করে চরে নিয়ে আসেন জেলেরা। চর মারিয়ে কাঁধে বাঁশ চাপিয়ে মাছ ভর্তি ঝুঁড়ি নিয়ে আসেন শুঁটকি পল্লীতে। এরপর তা রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন তারা।
জেলেরা জানান, ২৬ অক্টোবর নৌকা ও ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনের দুবলারচরের শুটকি পল্লীর উদ্দেশে রওনা দিয়ে ২৭ অক্টোবর পৌঁছে যান। সেখানে নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম ও শুটরি তৈরির জন্য অস্থায়ী ঘর ও মাচা তৈরি করেছে। খুলনা, দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, রূপসা, বাগেরহাটের মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, সাতক্ষীরার তালা, শ্যামনগর, আশাশুনি, পিরোজপুর, বরগুনার বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলেরা শুটকি পল্লীতে এসে অস্থায়ী বসতি গড়েছেন।
রামপালের সুন্দরপুর গ্রামের জেলে মো. আফতাব উদ্দিন মীর বলেন, ‘শুটকি পল্লীতে পুরো দমে কাজ শুরু হয়েছে। মরা গোনের মধ্যেও রূপচাঁদা, লইট্টা, তেলো পাইস্সা, ছুরিসহ নানা রকমের ভালো মাছ পেয়েছি। গোন যদি এসে ধরতে পারতাম তাহলে আরও বেশি মাছ পাওয়া যেত। চরে আসা অধিকাংশ জেলেরা লোন নিয়ে এখানে এসেছেন। মাছ না পেলে তাদের লোকসান গুনতে হবে।’
আরও পড়ুন: প্রাণহীন জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি!
জেলেদের দাবি, পাস পারমিট অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে দেয়া হোক। তাহলে তারা গোন ধরতে পারবে এবং মাছও বেশি পাবে।
পাইকগাছার সোলাদানার বেতবুনিয়ার বাসিন্দা শুটকি ব্যবসায়ী কবির হোসেন মিন্টু বলেন, ‘১১ জন জেলে নিয়ে আমি আলোর কোলে এসেছি। জেলেরা সাগরে মাছ ধরাও শুরু করেছে। ২০১২ সাল থেকে আমরা সুন্দরবনের কিছু ব্যবহার করছি না। ঘর-মাচা তৈরির সব খুঁটি-বাঁশ-চটা, কাঠপাট-বেড়া নিয়েই এখানে আসি। পাঁচ মাস থাকতে যা যা প্রয়োজন সবই নিয়ে এসেছি।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, শুটকি মৌসুমে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের এর মধ্যে পাস পার্মিট দেয়া হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও হাজার পনের জেলে বহদ্দার সুন্দরবনের দুবলাসহ বিভিন্ন চরে অবস্থান করবেন। তবে জেলেরা যাতে চরগুলোতে তাদের মাচা তৈরি ও ঘর নির্মাণে অবৈধভাবে সুন্দরবনের কোনো গাছ কর্তন না করে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে মুরাদনগরের ‘মৃৎশিল্প’
তিনি জানান, জেলেদের সার্বিক সুবিধা দিতে বন বিভাগের কর্মীরা নিয়োজিত থাকবেন। এ বছর জেলে মহাজনদের থাকার জন্য ৯৮৫ ঘর ও ৬৬ ডিপোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব ঘর ও ডিপুতে জেলে ব্যবসায়ী ও ফরিয়াসহ ১৫ হাজার লোক অবস্থান করবেন।
২ বছর আগে