শিল্পী সুলতান
মেরামতের পর উন্মুক্ত হলো সুলতানের ৩ ছবি
প্রায় এক বছর পর শিল্পী সুলতানের ৩টি ছবি সুলতান কমপ্লেক্সে ফিরে এসেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে ঢাকায় মেরামত ও সংস্কার করতে নেয়া দুটি ড্রইং ও একটি পেইন্টিং ছবি ছবি ‘ফসল সংগ্রহ’, ‘মাছ শিকার ও ‘জমি তৈরি’ সুলতান কমপ্লেক্সে প্রতিস্থাপন করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শিল্পকলা একাডেমির একটি টিম ছবিগুলো উন্মুক্ত করে।এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম, এনডিসি জাহিদুল ইসলাম, জেলা কালচারাল অফিসার ও সুলতান কমপ্লেক্সের কিউরেটর হায়দার আলী, জেলা শিল্পকলা একাডেমির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মলয় কুন্ডু, জেলা শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা শেখ হানিফ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: অন্ধত্ব নিয়ে প্রাণে বেঁচে আছেন সুলতানের পালিত কন্যা নিহার বালা
এদিকে শিল্পীর জীবনের শেষ মুহূর্তে আঁকা অসমাপ্ত দু’টি ছবি ‘স্নানরত কলসি কাঁখে নারী’ ও ‘কাজিয়া (কাইজ্যা)’ ছবি মেরামতের জন্য জরুরি হলেও এখনও তা মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না জানা গেছে।
সৈয়দা মাহবুবা করিম জানান, শিল্পীর নষ্ট হওয়া ‘স্নানরত কলসি কাঁখে নারী’ও ‘কাজিয়া (কাইজ্যা)’ দু’টি ছবি এ মুহূর্তে নেয়া হচ্ছে না। তবে শিল্পকলা একাডেমির নিদের্শনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এসব ছবি সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
সুলতান কমপ্লেক্সের জন্য একটি আধুনিক পরিবেশসম্মত গ্যালারির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বর্তমানে যে গ্যালারিতে শিল্পীর ছবি রাখা হয়েছে এখানে অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে ছোট ছোট সমস্যা যাতে ঠিক করা যায় সে জন্য জেলা প্রশাসন এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমিকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: এস এম সুলতানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইলে আর্ট ক্যাম
এসএম সুলতান কমপ্লেক্সের কিউরেটর ও জেলা কালচারাল অফিসার হায়দার আলী জানান, নষ্ট হয়ে যাওয়া বাকি ছবিগুলো রিপিয়ারের জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমি একটি প্রস্তাবনা দিবে। তার ভিত্তিতে পরবর্তীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পর্যায়ক্রমে ছবি সংস্কারের ব্যবস্থা করবে।
২ বছর আগে
অন্ধত্ব নিয়ে প্রাণে বেঁচে আছেন সুলতানের পালিত কন্যা নিহার বালা
বরেণ্য চিত্রশিল্পী সুলতানকে দীর্ঘ দুই দশক আগলে রেখেছিলেন নিহার বালা। শিল্পী সুতলতানও তাকে মেয়ে পরিচয় দিতেন। পরিবারের রান্না-বান্না থেকে শুরু করে শিল্পীর চিড়িয়াখানায় পশু পাখিদের খাওয়ানো ও দেখভাল করেছেন নিহার। অথচ গত আট বছর ধরে অন্ধত্ব বরণ করে কোন রকম প্রাণে বেঁচে আছেন তিনি।
জানা গেছে, ৮৪ বছর বয়সের এই নারী অর্থভাবে ছানি অপারেশন করতে না পারায় দীর্ঘ আট বছর অন্ধ হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। সরকারিভাবে যে ভাতা পান তার চেয়ে ওষুধ কিনতে খরচ হয় বেশি।
আনুমানিক ১৯৬৮ সাল থেকে শিল্পী সুলতান শহরের কুরিগ্রামস্থ জমিদারদের একটি পরিত্যক্ত দ্বিতল জরাজীর্ণ বাড়িতে (বর্তমান সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার শিশুস্বর্গ ভবন) থাকতেন। প্রতিবেশী হিসেবে নিহার বালার স্বামী হরিপদ সাহার সাথে শিল্পীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। এই সুবাদে নীহার শিল্পী সুলতানকে কাকু বলে সম্বোধন করতেন। ১৯৭৫ সালের দিকে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর ছোট ছোট দু’মেয়ে নিয়ে আর্থিক অনিশ্চতার জীবন-যাপন করছিলেন নীহার বালা। এদিকে শিল্পী সুলতান রোগে আক্রান্ত, তাকে দেখাশুনা করার কেউ ছিলেন না। এই সময় শিল্পীর সেবায় এগিয়ে আসেন নিহার বালা। সেই থেকে নিহার বালা ছোট ভাই দুলাল সাহা ও দুই সন্তানকে নিয়ে শিল্পীর বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।
আরও পড়ুন: সুলতানের শিল্পকর্ম গবেষণায় অর্থায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র
১৯৯৪ সালে সুলতানের মৃত্যর পর শহরের কুরিগ্রামে শিল্পীর বাড়িতে গড়ে ওঠা ছোট চিড়িয়াখানাটির পশু পাখি নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা চিড়িয়াখানায়। ২০০৪ সালে শিল্পীর বাড়িতে তৈরি হয় সংগ্রহশালা। এ সময় সংগ্রহশালা এলাকা সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে সরকারিভাবে একটি টিনের ঘর করে দেয়া হয়। সেখানেই জীবন যাপন করছেন শিল্পীর পালিত কন্যা।
নিহার বালার নাতি সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার কর্মকর্তার সহায়ক নয়ন সাহা বলেন, ‘ দিদা সরকার থেকে ভাতা পান পাঁচ হাজার টাকা। আমি সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা থেকে পাই চার হাজার টাকা। স্ত্রী,সন্তান ও দিদাকে নিয়ে চার জনের সংসার। প্রতি মাসে দিদার ওষুধের পেছনে সাড়ে ছয় হাজার টাকার মতো খরচ হয়। অনেক সময় টাকার অভাবে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না। তাই দিদার জন্য আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানো জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছেন তিনি।
আরও পড়ুন: চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের বসতঘরের করুণ দশা
সুলতানের শিষ্য নড়াইল সরকারি বালক বিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষক সমির বৈরাগী বলেন, চিরকুমার শিল্পী সুলতানের পারিবারিক জীবন বলতে ছিল নিহার বালা ও তার দু’কন্যাকে নিয়ে। নিহার বালা পিতৃতূল্যে শিল্পীর সেবা করেছেন। তিনিও তাকে মেয়ে বলে পরিচয় দিতেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, তার অসুস্থতার বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ডিজি মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে।
বরেণ্য এই শিল্পী ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট শহরের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়।
৩ বছর আগে