ডায়রিয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়েছে ডায়রিয়া, হাসপাতালে স্যালাইন সংকট
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ৩০-৪০ জন রোগী।
হাসপাতালে স্যালাইন ও পর্যাপ্ত বেড না থাকায় শীতে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীর স্বজনরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বলছে, বেডের অভাব ও কলেরা স্যালাইন সরবরাহ না থাকায় কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা।
সরেজমিনে শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯৬।
আরও পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
সারি সারি চট-চাদর বিছিয়ে মাটিতে শুয়ে আছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। সেখানেই চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আব্দুল্লাহ নামে এক শিশুর মা বলেন, গত দুদিন থেকে ছেলের পাতলা পায়খানা। শুক্রবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করেছি ছেলেকে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু শীতের দিনে বেড না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছি। হাসপাতাল থেকে কলেরা স্যালাইন দিচ্ছে না।
মানিক মিয়া নামে আরও এক শিশুর বাবা বলেন, শুক্রবার সকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু বেড না থাকায় মেঝেতে কম্বল বিছিয়ে শুয়ে আছে আমার ছেলে ও স্ত্রী।
চেষ্টা করেও শীতের তীব্রতা ও ঠান্ডা বাতাস থেকে রক্ষা পাচ্ছি না।
শহরের পৈরতলার এলাকার জহিরের ছেলে ভর্তি আছে হাসপাতালে। তিনি বলেন, রাতে হাসপাতালে ভর্তি করেছি ছেলেকে। কিন্তু বেড নাই।
বারান্দাতেও কম্বল বিছিয়ে থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে। এতে শিশুদের ডায়রিয়া ভালো করতে এসে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শিশুদের জন্য ২০টি বেড মজুদ আছে। কিন্তু এবছর বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। আর ডায়রিয়া ওয়ার্ডে যে বেড রয়েছে, তা মোট ২০-২৫ জনকে দেওয়া সম্ভব। তাই রোগীদের মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাইজুর রহমান ফয়েজ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার শীতে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে এবার বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা যাদের বয়স মাত্র ৬ মাস থেকে এক বছর। আগামী দু'একদিনের মধ্যে কলেরা স্যালাইন রোগীদের দিতে পারব।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ৯৬ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি রয়েছে। শুধু শুক্রবার ৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ রোগীই শিশু।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, শীতে প্রতি বছর শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, এবারও বেড়েছে। তবে এবার শিশুর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। হাসপাতালে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধ সরবরাহ আছে। সবাই চিকিৎসা পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ
রাজধানীতে ২৩ লাখ মানুষ পাবেন ডায়রিয়ার টিকা
বন্যা: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২১
দেশের অধিকাংশ জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলেও শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট জেলায় আরও দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বন্যায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা ১২১ জনে দাঁড়িয়েছে।
নিহত দুজনই বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১৭ মে থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।
মোট মৃতদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ৯৪ জন, বজ্রপাতে ১৫ জন, সাপের কামড়ে দুজন, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে নয়জন মারা গেছেন।
নিহতদের মধ্যে সিলেটে ৬৭ জন, ময়মনসিংহে ৪১ জন, রংপুরে ১২ জন এবং ঢাকা বিভাগে একজন মারা গেছেন।
বন্যা কবলিত ৭০টি উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগে ৩৩টি, রংপুর বিভাগে ১৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে একটি উপজেলা রয়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কুড়িগ্রাম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা যেখানে যথাক্রমে ১৩, ১১, ১০ ও ৯টি উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: আগামী মাসে আরেকটি বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
সুনামগঞ্জে নামছে বন্যার পানি
বন্যায় আরও ২ জনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ১১২
দেশের অধিকাংশ জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলেও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হত ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজারে আরও দুজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২ জনে।
নিহতদের সবাই বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১৭ মে থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যুর এ সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।
মোট মৃতদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে ৮৫ জন, বজ্রপাতে ১৫ জন, সাপের কামড়ে দুজন, ডায়রিয়ায় একজন এবং অন্যান্য কারণে ৯ জন মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে বন্যায় ১৪০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
নিহতদের মধ্যে সিলেটে ৫৯ জন, ময়মনসিংহে ৪০ জন, রংপুরে ১২ জন এবং ঢাকা বিভাগে একজন মারা গেছেন।
বন্যা কবলিত ৭০টি উপজেলার মধ্যে সিলেট বিভাগের ৩৩টি, রংপুর বিভাগের ১৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের একটি উপজেলা রয়েছে।
সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কুড়িগ্রাম সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা যেখানে যথাক্রমে ১৩, ১১, ১০ ও ৯টি উপজেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
গাইবান্ধায় বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে রোগব্যাধি
একটু সাহায্যের আশায় বাড়ির সামনে কলাগাছের ভেলায় বসে থাকলেও গাইবান্ধার বন্যা কবলিত খরজানির চরের করিমন বেগমসহ অনেকের মিলছে না কোনো সহায়তা।
করিমন বেগম ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা কীভাবে বেঁচে আছি, আমরা কী খাচ্ছি তা দেখতে এখনও কেউ আসেনি।’
গাইবান্ধার চর উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে বন্যার পানির কারণে সৃষ্ট চর্মরোগ। ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগও উদ্বেগের বিষয়।
আর কোনো সমাধান না পেয়ে ওই এলাকার করিমন ও তার প্রতিবেশী হালিমা, মতিন কোবাজ্জামান, মিঠু মিয়াসহ আরও অনেকে জানান, ক্রমাগত চুলকানি থেকে কিছুটা উপশমের জন্য কেরোসিন তেলের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে লাগাচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন: বন্যা: আরও ২ জনের মৃত্যু, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৪
করিমন বলেন, রাত দিন চুলকায়। পায়ে কেরোসিন তেলে হলুদ মেখে কষ্ট নিবারনের চেষ্টা করেন। রাতে ঘুম নেই, কখন সাত বছরের ছোট ছেলেটা পানিতে ভেসে যায় সেই ভয়ে। যেমনটা অন্য অনেক পরিবারের ক্ষেত্রে ঘটেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যা কবলিত অঞ্চলে পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে কিন্তু করিমনরা এখনও সেই সহায়তা পান নি।
করিমন আরও বলেন, এ অঞ্চলে পানীয় জলের সংকট প্রকট। এমনকি এই পরিস্থিতিতেও দিনের বেলা নদীর ওপার থেকে পানীয় জল আনতে আমাদের নৌকা ভাড়া দিতে হয়।
গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার কিছুটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রবিবার কিছুটা কমছে।
কামারজানীর চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, সুন্দরগঞ্জ,সাঘাটা,ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার বেশ কয়েকদিন যাবৎ পানি বন্দি কামারজানি, মোল্লারচর, কাপাসিয়া, হরিপুর, ফজলুপুর, উড়িয়া, রতনপুর, ফুলছড়ি,গজারিয়া, এ্যাড়েন্ডাবাড়ি, কঞ্জিপাড়া, শ্রীপুর, তারাপুর, বেলকা সহ ২৫টি চর ইউনিয়নের বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্যার পানিতে আটকা পড়েছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে পানি নামায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান
তিনি বলেন, অনেকের ঘরে খাবার আছে। কিন্তু রান্না করার মতো জায়গা নাই। তাই পানিতে নেমে কলার ভেলায় চুলা রেখে তাতে রান্না করছেন। এক বেলার রান্না খাচ্ছেন তিন বেলায়। খাবার পানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি কোনো টয়লেটও নেই।
কর্তৃপক্ষের মতে, জেলায় মোট ৬০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে তবে মাত্র ১২টিতে আশ্রয় নিতে পেরেছে মানুষ। কারণ অধিকাংশ কেন্দ্রই পানির নিচে অথবা নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, অনেক লোক তাদের একমাত্র আয়ের উৎস, গবাদি পশু নিয়ে লড়াই করছে যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রাখা যাচ্ছে না।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসএম ফয়েজ উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত পুরুষ, নারী এবং শিশু সহ মাত্র ১৩৫ জন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ১২৫ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ টাকা ও শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় কনসার্ট সোমবার
রাঙামাটিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ
রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলায় গত দুই দিনে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং আরও প্রায় ৭০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
রবিবার জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অনন্যা চাকমা জানান, শুক্রবার আমতলা গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাঙাবী চাকমার ডায়রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
তিনি জানান, জুরাছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে পাঁচটি মেডিকেল টিম পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ২৩ লাখ মানুষ পাবেন ডায়রিয়ার টিকা
শুক্রবার উপজেলার মৈদং ইউনিয়নের পাহাড়ি আমতলা গ্রামের ডায়রিয়া আক্রান্ত ১০ রোগীকে রাঙামাটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আমতলা বাদলহাটছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মঙ্গল চাকমা জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টির পর পানিবাহিত রোগের খবর পাওয়া গেছে।
সরজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
দুই বছরের শিশু অমর শান্তি চাকমার মা সঞ্জারিকা চাকমা জানান, গত দুই দিন ধরে তার ছেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অমর সুস্থ হয়ে উঠছে তবে তার শ্বশুর-শাশুড়ি ও আক্রান্ত হয়েছেন।
জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা জানান, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত মেডিকেল টিম ওই এলাকায় থাকবে।
আরও পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
রাজধানীতে ২৩ লাখ মানুষ পাবেন ডায়রিয়ার টিকা
দেশে চলমান ডায়রিয়া প্রকোপ মোকাবিলায় রাজধানীর ২৩ লাখ মানুষকে মুখে খাওয়ার কলেরা টিকা দেবে সরকার। গর্ভবতী মহিলা ব্যতীত এক বছরের ঊর্ধ্বে সকল বয়সের মানুষকে এই টিকা দেয়া হবে।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, দুই ডোজের এই টিকা কর্মসূচির প্রথম ডোজ দেয়া হবে মে মাসে। সব মিলিয়ে ২৩ লাখ ডোজ টিকা দেয়া হবে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে জুন মাসে।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে
তিনি বলেন, প্রথম ধাপে রাজধানীর পাঁচটি এলাকায় এই টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সেগুলো হলো- যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সবুজবাগ।
নাজমুল ইসলাম বলেন, টিকা কার্যক্রমটি নিয়ে আমরা এখনও কাজ করছি। এই টিকা নিতে আলাদা কোন নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট তারিখ ও কেন্দ্র বাছাই হলে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে। নিকটস্থ কেন্দ্র থেকেই টিকা নেয়া যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের সুস্থ ব্যবস্থাপনায় এবং ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬০ জনের অধিক চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
হাসপাতালের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ, আইভি স্যালাইন, মুখে খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদি চাহিদা মোতাবেক দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ: সচেতন থাকার পরামর্শ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ডায়রিয়া রোগের ভয়াবহ রূপ নতুন নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডায়রিয়া সংক্রমণ দেশজুড়ে শঙ্কার সৃষ্টি করছে। আইসিডিডিআরবি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ)-এর তথ্যানুসারে, বিগত নয় দিনে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ১৬১ জন। কর্মকর্তাদের দাবি-প্রতিষ্ঠানটির ৬০ বছরের ইতিহাসে রোগীর এমন চাপ নজিরবিহীন। এমনকি হাসপাতালের বাইরেও তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসা চলছে। বিশুদ্ধ পানির যথেষ্ট যোগান না থাকায় এবং অতি ব্যস্ততার ফলে বাসি খাবারের উপর নির্ভরশীলতা ডায়রিয়ার সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। এমন সংকটাপন্ন সময়ে সতর্ক থাকতে চলুন, ডায়রিয়া রোগের ব্যাপারে বিশদ জেনে নেয়া যাক।
কী কী কারণে ডায়রিয়া হয়
ভাইরাস
ডায়রিয়া সংক্রমণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখা ভাইরাসগুলোর মধ্যে রয়েছে নরোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস, এন্টারিক অ্যাডেনোভাইরাস, ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং সাইটোমেগালোভাইরাস। রোটাভাইরাস বাচ্চাদের ডায়রিয়ার তীব্রতার জন্য দায়ী। কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসও ডায়রিয়া সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টির পেছনে কাজ করে।
দূষিত পানি নরোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস, হেপাটাইটিস এ ভাইরাস, এবং স্যাপোভাইরাসের একটি বড় উৎস। হিমায়িত সবজি হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের বড় উৎস। নোরোভাইরাস থাকে পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি এবং তাজা ফলের মধ্যে। হেপাটাইটিস এ এবং নোরোভাইরাস সংক্রমণ অনুপযুক্ত খাদ্য পরিচালনার মাধ্যমেও হয়ে থাকে।
ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী
দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ই কোলাইয়ের মত প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীর সংস্পর্শে আসার ফলে ডায়রিয়া হয়। দূষিত পানি ছাড়াও ই কোলাই কাঁচা বা কম রান্না করা গরুর মাংস, কাঁচা শাকসবজি এবং পাস্তুরিত দুধে থাকে।
পড়ুন: খুলনায় শিশুরোগ ও ডায়রিয়া বেড়েছে
ওষুধ সেবন
কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো দেহের খারাপ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার পাশাপাশি ভালো ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে। ফলে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে, যা পুরো শারীরিক অবস্থাকে ডায়রিয়ার দিকে ধাবিত করে। এছাড়াও অ্যান্টি-ক্যান্সার ওষুধ এবং ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড ডায়রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী।
ল্যাকটোজ সমস্যা
ল্যাকটোজ হল দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যে পাওয়া এক ধরনের চিনি। যাদের ল্যাকটোজ হজম করতে অসুবিধা হয় তাদের দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পর ডায়রিয়া হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যাটি বাড়তে পারে, কারণ যে এনজাইমটি ল্যাকটোজ হজম করতে সাহায্য করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার মাত্রা কমতে থাকে।
ডায়রিয়ার লক্ষণসমূহ
ডায়রিয়ার প্রধান উপসর্গগুলো হল মলত্যাগের জন্য প্রচন্ড চাপ অনুভূত হওয়া, এবং ঘন ঘন পাতলা পায়খানা। এছাড়াও বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, পেটে চাপ অনুভূত হওয়া, পেট ফোলা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত অবস্থায় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হয়।
ডায়রিয়ার গুরুতর জটিলতা হল পানিশূন্যতা। ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনী তরলের একটি বিশাল অংশ বেরিয়ে যায়। আর এর ফলেই পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ে। পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো হলো প্রচন্ড ক্লান্তি, শুকনো শ্লেষ্মা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, মাথাব্যথা, তৃষ্ণা বৃদ্ধি, প্রস্রাব হ্রাস এবং শুষ্ক মুখ।
বাচ্চারা ডায়রিয়া এবং পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে বেশ সংবেদনশীল। এ সময় বাচ্চাদের প্রস্রাব কমে যায়, মুখ শুকিয়ে যায়, মাথাব্যথা হয়, ক্লান্ত দেখায়, কান্নার সময় চোখে পানি থাকে না, চোখ আধবোজা- আধখোলা অবস্থায় থাকে, তন্দ্রাতুর দেখায় এবং সবসময় বিরক্ত থাকে।
পড়ুন: ফরিদপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে
ডায়রিয়া হলে করণীয়
সাধারণ অবস্থায় ডায়রিয়া কয়েক দিনের মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যেতে পারে। শরীর খারাপের সময়টুকু বিশ্রামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানীয় পান করতে হয় এবং অন্যান্য খাবারের সময় সতর্ক থাকতে হয়।
শরীরকে পানিপূর্ণ রাখার জন্য পরিষ্কার তরল পান ও ফলের রস খেতে হবে। এ সময় দিনে প্রায় ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। একবারে টান দিয়ে পুরো গলধঃকরণের পরিবর্তে অল্প পরিমাণে চুমুক দিয়ে পান করা যেতে পারে।
ডায়রিয়া হলে দেহকে পানিপূর্ণ রাখতে ডাক্তার লবণ, পটাসিয়াম এবং ক্লোরাইড-এর মত স্পোর্টস পানীয়গুলো পানের পরামর্শ দিতে পারে। ঘন ঘন বমি বমি ভাব হলে ধীরে ধীরে তরলে চুমুক দিয়ে পান করা ভালো। এ সময়ের জন্য উপযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে আলু, চিনাবাদামের মাখন, টার্কির মাংস এবং দই।
যে খাবারগুলো ডায়রিয়া বা শরীরে গ্যাসের অবস্থা আরও খারাপ করে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে চর্বিযুক্ত বা ভাজা খাবার, কাঁচা ফল এবং শাকসবজি, মশলাদার খাবার, মটরশুটি এবং বাঁধাকপি এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন কফি ও সোডা।
যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই শরীর উন্নতির দিকে যায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায়। যদি উপসর্গ ২ দিনের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তখন ডাক্তারের সরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ গুরুত্বের সাথে নিতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি অবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এগুলো হলো- অবিরাম বমি, ক্রমাগত ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, উল্লেখযোগ্য হারে ওজন হ্রাস, মলের মধ্যে পুঁজ ও রক্ত, কালো মল বের হওয়া ইত্যাদি।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যে উপসর্গগুলো অবিলম্বে চিকিৎসার দাবি রাখে সেগুলো হলো- ২৪ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া, জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি, রক্ত ও পুঁজ মল এবং কালো মল।
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে ডায়রিয়া হলে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কথা বলতে পারেন। অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পূর্বে ডাক্তার রোগীর কিছু শারীরিক অবস্থা নিরীক্ষা করবেন। সেগুলো হলো- ডায়রিয়া তীব্রতা, পানিশূন্যতার তীব্রতা, রোগীর স্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থা, চিকিৎসা ইতিহাস, বয়স, এবং রোগীর বিভিন্ন পদ্ধতি বা ওষুধ সহ্য করার ক্ষমতা।
পড়ুন: চট্টগ্রামে বেড়েছে ডায়রিয়া: চাপ সামলাতে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশ
ডায়রিয়া প্রতিরোধের উপায়
নিয়মিত হাত ধোয়া
যে কোন ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচার মোক্ষম উপায় হলো খাবার তৈরি ও খাওয়া আগে এবং পরে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেয়া। রান্না করা, টয়লেট ব্যবহার, বাচ্চার ডায়াপার পরিবর্তন, হাঁচি, কাশি এবং নাক ফুঁকানোর পরে হাত ধুয়ে নেয়া জরুরি। হাতে সাবান লাগানোর পরে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য দুই হাত একসাথে ঘষতে হবে। হাত ধোয়ার বিকল্প হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত। এ সময় হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এমনভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন তা উভয় হাতের সামনে এবং পিঠে ভালোভাবে লাগে। একটি ভালো হ্যান্ড-স্যানিটাইজারে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা
ডায়রিয়া বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের সময় সংক্রমণ হতে পারে। যেখানে ভ্রমণ করা হচ্ছে সেখানকার অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং দূষিত খাবার নিমেষেই শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে নিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমাতে করণীয়গুলো হলোঃ
নতুন জায়গায় খাবারের ব্যাপারে সতর্কতা
গরম ও ভালোভাবে রান্না করা খাবার খান। কাঁচা ফল এবং শাকসবজি এড়িয়ে চলতে হবে। অবশ্য সেগুলো রান্নার জন্য প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ নিজেই করলে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও কাঁচা বা কম রান্না করা মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি।
পড়ুন: রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক
নতুন জায়গার পানীয়র ব্যাপারে সতর্কতা
বোতলজাত পানি বা সোডা বোতল থেকেই পান করা উচিত। কলের পানি এবং বরফের টুকরো এড়িয়ে চলতে হবে। এমনকি দাঁত ব্রাশ করার জন্যও বোতলজাত পানি ব্যবহার করা জরুরি। গোসল করার সময় বোতলের মুখ বন্ধ রাখতে হবে। সিদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি কফি এবং চা নিরাপদ। এক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত যে অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন ডায়রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে যা পানিশূন্যতাকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দেয়।
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ
দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণের জন্য আগে থেকেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়া যেতে পারে। এ সময় ডাক্তার শরীরের যাবতীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এবং রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দিবেন।
পরিশিষ্ট
কোভিডের চাপটা কমতে না কমতেই শুরু হয়ে গেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। মুলত এরকম সংক্রমণ আকস্মিক নয়। বরং সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার অস্থিতিশীলতা এ ধরণের রোগবালাইয়ের কারণকে সুসঙ্গত করে। জীবন ও জীবিকা সামলানোর অনিয়ন্ত্রিত দৌড়ে আশেপাশের পরিবেশ ও শরীর-স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। আর এর সাথে যখন উদাসীনতা যোগ হয় তখনই চাপের ভয়াবহতা বাড়তে থাকে।
পড়ুন: ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার
নিজের বাসার পানিতেও গন্ধ পান ওয়াসার এমডি
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান নিজের বাসার পানিতেও গন্ধ পান। তিনি বলেছেন, আমাদের পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ জায়গার মধ্যে পাইপ ফাটা থাকে। যখনই অভিযোগ পাই সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা ঠিক করে দেই। তারপরও কিছু জায়গায় সমস্যা হয়। নয়াপল্টনে আমার নিজের বাসার পানিতেও গন্ধ আছে।’
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত 'নগরবাসীর চাহিদা-ঢাকা ওয়াসার সক্ষমতা' শীর্ষক ‘ডুরা সংলাপে’ তিনি এসব কথা বলেন।
এমডি আরও বলেন, ওয়াসা যেই পরিমাণ পানি উৎপাদন করে, সেই পরিমাণ পানি গ্রাহকের কাছে যায়। আমাদের পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ সিস্টেম লস আছে, যা খুবই নগণ্য। কিন্তু রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি দেখলেই সাধারণ মানুষ মনে করেন, এটা ওয়াসার লাইন। এ কারণে অনেক সময় লাইনে ময়লা পানি ঢুকে পড়ে।
আরও পড়ুন: খুলনায় শিশুরোগ ও ডায়রিয়া বেড়েছে
পানি ফুটিয়ে পান করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তাকসিম এ খান বলেন, ওয়াসার পানি নিরাপদে ট্যাংকি পর্যন্ত দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। বাসার লাইন পর্যন্ত নেয়ার দায়িত্ব আমাদের না। সেজন্য আমরা বলব আপনারা পানি ফুটিয়ে খান। এছাড়া পানিতে কোনো সমস্যা হলে- আমরা তিন স্থান থেকে পানি নিয়ে পরীক্ষা করি। একটা হচ্ছে আমাদের পাম্প, দ্বিতীয় হচ্ছে যে এলাকায় সমস্যা ওই এলাকার লাইন, আর তৃতীয় হচ্ছে বাসার লাইন থেকে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এ অবস্থায় অনেকেই ওয়াসার লাইনের পানিকে দোষারোপ করছে।
এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে এমডি বলেন, আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে আমাদের ঘনঘন যোগাযোগ আছে। তারা যখনই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া ১০টি এলাকার ঠিকানা আমাদের দেয়, সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওইসব এলাকার পানি ল্যাবে টেস্ট করাই। সেই ল্যাব টেস্টে আমরা কোনও ব্যাকটেরিয়া পাইনি। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে আইসিডিডিআর,বিকে জানিয়েছি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বেড়েছে ডায়রিয়া: চাপ সামলাতে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশ
তিনি বলেন, পানিতে যদিওবা কোনও জীবাণু থাকে, সেটি যাতে মরে যায় বা ধ্বংস হয়ে যায় সেজন্য ক্লোরিন দিয়ে থাকি। অনেক সময় ক্লোরিন পাইপের শেষ মাথা পর্যন্ত যায় না। কিন্তু আমরা ওই বিশেষ স্থানগুলোতে ক্লোরিন বাড়িয়ে দিয়েছি। এই ডায়রিয়ার সঙ্গে আমাদের ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে যা পেয়েছি, তাতে কোনও সম্পৃক্ততা সরাসরি নেই। আর ক্লোরিন মেশানোর কারণে পানিতেও গন্ধ পাওয়া যায় না। এই গন্ধ দূর করতে আমরা আন্ডারগ্রাউন্ড পানি ও আমাদের শোধন করা পানির মিশ্রণ করে সরবরাহ করি।
পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে সবকিছু আমরা জানিয়েছি, এখন সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া নিয়ে রোগী ভর্তি অব্যাহত রয়েছে।
আইসিডিডিআ,বির জনসংযোগ কর্মকর্তা একেএম তারিফুল ইসলাম খান ইউএনবিকে বলেছেন, সাধারণত প্রাক-বর্ষা বা শীতের আগে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ে, তবে এ বছর গ্রীষ্মকালে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
গত ১৫ দিনে মোট ১৬ হাজার ১৭৭ জন ডায়রিয়া রোগী আইসিডিডিআর,বিতে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ৭৬৯ জন রোগী পানিবাহিত এই রোগে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ২৮ মার্চ (সোমবার) এক হাজার ৩৩৪ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, যা গত ১৫ দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যা।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক
তিনি বলেন, ২৭ মার্চ প্রায় এক হাজার ২৩০ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
ইউএনবি বাগেরহাট প্রতিনিধির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলার ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানান, বর্তমানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মোট ১৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।
মোট রোগীদের মধ্যে দশজন শিশু এবং আটজন প্রাপ্তবয়স্ক।
তবে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ডায়রিয়ার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করেছেন। তারা খাবার গ্রহণের আগে সঠিকভাবে হাত ধুতে ও বিশুদ্ধ পানি পান করার আহ্বান জানান।
ইউএনবির চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, গত তিন দিনে মোট ৯৭ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
প্রতিদিন ২৫-৩৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য।
স্থানের অভাবে লোকজনকে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক
রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আট ঘণ্টার মধ্যে ২৬৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রবিবার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এ তথ্য জানিয়েছে।
আইসিডিডিআর,বি এর তথ্য অনুসারে, ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তিদের অধিকাংশই প্রাপ্তবয়স্ক।
আইসিডিডিআর,বি আরও জানিয়েছে, শনিবার এক হাজার ২৫০ জন রোগী এই রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন এবং শুক্রবার এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৩৮।
নগরীর যাত্রাবাড়ী,দক্ষিণখান,বাড্ডা ও শনির আখড়া এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: প্রণোদনার দাবিতে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করলেন নার্সরা
চলতি বছর এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এই রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় পাঁচ শতাংশ শিশু বলে জানা গেছে।
সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম তারিফুল ইসলাম খান বলেন,সাধারণত বর্ষা বা শীতকাল শুরুর আগে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে ডায়রিয়ায় গুরুতর আক্রান্ত অনেক রোগীকে প্রতিদিন আইসিডিডিআর,বি-তে ভর্তি করা হচ্ছে এবং তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি এক পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এর আগে বাংলাদেশে ২০১৮ ও ২০০৭ সালে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের ঘটনা ঘটেছে এবং তখন এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর কারণের মধ্যে ডায়রিয়া জনিত রোগ দ্বিতীয়। প্রতি বছর রোগটিতে প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: হাসপাতালের ওষুধ পাচারের অভিযোগে নারী আটক