বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন
২৮তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে দেশের অর্জন নিয়ে আলোচনা
দুবাইয়ে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ এ দেশের অর্জন নিয়ে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আলোচনা করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এসময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কপ-২৮ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত ছিলেন, তিনি সেখানে যেতে পারেননি, তার পক্ষ থেকে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে বাংলাদেশ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি সেগুলো সেখানে প্রশংসিত হয়েছে। সে কারণে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি (জিসিসিএম) যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও আইওএমের ডিরেক্টর জেনারেল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশকে স্থানীয় অভিযোজনে সাফল্যের জন্য ‘গ্লোবাল সেন্টার অন এডাপটেশন এওয়ার্ড’ দেওয়া হয়েছে।’’
ড. হাছান বলেন, ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার হলেও যেভাবে এই জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করে এসেছে সেগুলো বিশ্বব্যাপী সবসময় প্রশংসিত হয়েছে। সে কারণে প্রধানমন্ত্রীকে ২০১৫ সালে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কপ-২৮ সম্মেলনের অন্যতম প্রধান অগ্রগতি হচ্ছে ‘লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড’ গঠন করা, যেটি আগে ছিলো না। এবং এই সম্মেলনে সবাই জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে ধীরে ধীরে সরে আসার বিষয়ে একযোগে একমত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: সাইকেল শোভাযাত্রা করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করলেন তথ্যমন্ত্রী
এ সময় নগর পরিকল্পনায় প্রকৃতির সাথে মানুষের সংযোগ নিয়ে প্রশ্নে পরিবেশবিদ তথ্যমন্ত্রী হাছান বলেন, আমাদের দেশে বেশিরভাগ নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ ঘটিয়ে তোলা হয়নি। সে কারণে নগরগুলো ইট-পাথরের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো উদ্যোগ একা গ্রহণ করেছেন। সে উদ্যোগের প্রেক্ষিতে অনেকগুলো খাল পুনঃখনন করা হচ্ছে কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, খাল খননের সঙ্গে যুক্তদের চেয়েও অনেক শক্তিশালী হচ্ছে খাল দখলকারীরা। এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। অবশ্যই প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ ঘটিয়েই নগর পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। শুধু নগর পরিকল্পনা নয়, যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনাই প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ ঘটিয়ে করা প্রয়োজন।
প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া, ফোরামের সভাপতি কাউসার রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রমুখ এ সময় বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন: রাজনীতির নামে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে তথ্যমন্ত্রী
ধ্বংসাত্মক রাজনীতি নির্মূল করে মানবিক রাষ্ট্র গঠনই বিজয় দিবসের প্রত্যয়: তথ্যমন্ত্রী
১ বছর আগে
কার্বন নিঃসরণ কমাতে ঐক্যমতে পৌঁছেছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩৪ দেশ
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ঐক্যমতে পৌঁছেছে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ১৩৪ দেশ। গতকাল পর্যন্ত জাতিসংঘরে সহযোগী সংস্থা ইউএনএফসিসির সাইটে বাংলাদেশসহ ১৩৪ টি দেশের নাম প্রকাশ হয়েছে।
বাংলদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সচিব বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমি রক্ষা, নতুন বনায়ন, বনাচ্ছাদন, বনসম্প্রসারণে বদ্ধপরিকর জানিয়ে গত ২৬ আগস্ট আমাদের এনডিসি জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউএনএফসিসিতে আপলোড করে দিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের এই তথ্য ইউএনএফসিসি’র ওয়েব সাইটে যথাসময়ে আপলোড না হওয়ায় গত বৃহষ্পতিবার গণমাধ্যমে বিভ্রান্ত তথ্য পরিবেশন করে বলা হয়, বাংলাদেশ বনভূমি রক্ষা, বন সৃজন প্রক্রিয়ার বৈশ্বিক উদ্যোগের সাথে নেই।
আরও পড়ুন: কপ-২৬ সম্মেলনে ‘লস ও ড্যামেজ’ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি
মোস্তফা কামাল আরও বলেন, তথ্যটি সঠিক ছিল না। এ বিষয়ে কোনো দেশ চুক্তি করে নি। এসব দেশ ঐক্যমত পোষণ করেছেন, তেমনি বাংলাদেশও এই ঐক্যমতের সাথে একত্মতা প্রকাশ করেছে। কিন্তু সিস্টেমের কারণে ইউএনএফসিসির ওয়েব সাইটে প্রথমে বাংলাদেশের নাম তালিকায় ছিল না। পরে গতকাল বাংলাদেশের নাম যুক্ত করে প্রকাশ করা হয়েছে। এরকম ভাবে আরও দেশের নাম সংযুক্ত হয়ে পর্য়ায়ক্রমে তালিকা প্রকাশ হতে পারে।
সচিব বলেন, মূলত কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে বনভূমি রক্ষা,বন বৃদ্ধির বৈশ্বিক উদ্যোগে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।ঐক্যমতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নিজ নিজ দেশে বিদ্যমান বনভূমি রক্ষার পাশাপাশি নতুন বন সৃজন করবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু প্রাকৃতিক বনভূমি রক্ষা নয়, জলবায়ু মোকাবিলায় শহরগুলোতে সামাজিক বনায়ন বাড়ানোর প্রস্তাবও এসেছে সম্মেলনে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও প্রধান বন সংরক্ষ মো.আমির হোসাইন চৌধুরী ইউএনবিকে জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমি ১৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ এবং বনায়ন ২২ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একই সাথে বন রক্ষা, নতুন নতুন বনসৃজনে স্থানীয় জনগনকে সাথে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কপ-২৬: তাপমাত্রা হ্রাস ও ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে আশাবাদী বাংলাদেশ
তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বন রক্ষা করে চলছি। বরং বিভিন্ন এলাকায় বনের সংখ্যা আরও বাড়ছে। উপকূলীয় বনসহ সামাজিক বনায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে (এসডিজি- ১৫) বনভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনা, বন উজাড়রোধ, বনভূমি পুনরুদ্ধারসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ বন ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণে বিবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, বনভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের সুনির্দিষ্ট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। ২০০৪ সালে সামাজিক বনায়ন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় এবং সর্বশেষ 'জাতীয় বন নীতি ২০১৬’থ তে বনভূমির সংরক্ষণ ও বনজ এলাকা সম্প্রসারণ, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা এবং বাস্তুতন্ত্রের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে কপ-২৬ শুরু
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য ড.কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ জানান, দেশের সংবিধানেই বন রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা আছে। সেই আলোকে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। সে লক্ষ্যে বন রক্ষায় সবার ঐক্যের সাথে বাংলাদেশও একমত। ২৬ তম কপ সম্মেলনে বিশ্বের বনভূমি রক্ষা করা এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় পৃথিবীর বন রক্ষায় ঐক্যমতে আসে বাংলাদেশ সহ ১৩৪ টি দেশ। এই সংখা পর্যায়ক্রমে আরও বাড়বে।
৩ বছর আগে