মানসিক ভারসাম্য
দেড় দশক শিকলে বাঁধা কোরআনে হাফেজ খালেকের জীবন
দীর্ঘ দেড় দশক ধরে শিকলে বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবন পার করছেন পবিত্র কোরআনের হাফেজ আবদুল খালেক। কারও সাথে কথাও বলেন না তিনি। মাথা নিচু করে সারাক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন। অসুস্থতার কাছে কাবু হয়ে দিন দিন নিথর হয়ে পড়ছেন খালেক।
হাফেজ আবদুল খালেক (৩৮) চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টী পূবর ইউনিয়নের ভোটাল গ্রামের মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে।
বাবা-মার মৃত্যুর পর জানাজার নামাজে ইমামতি করবে সন্তান, এমন লক্ষ্য মাথায় রেখে নিজের মেধাবী সন্তানকে পড়িয়েছেন হাফেজি মাদরাসায়। আল্লাহর রহমত ও নিজের আপ্রাণ চেষ্টায় পুরো ৩০ পাড়া পবিত্র কোরআনের ৬ হাজার ৬৬৬টি আয়াত মুখস্থ করে নিজের বুকে ধারণও করেছেন আবদুল খালেক। তবে হাফেজি শেষ করলেও স্বপ্ন পূরণ হয়নি তার বাবা-মায়ের। হাফেজি শেষ করার কয়েক মাস পরই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ১৫ বছর শিকলে বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবনযাবন করছেন খালেক।
আরও পড়ুন: করোনার ছুটি শেষে শাবিপ্রবিতে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা: মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে থাকছে নজরদারি
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জয়শ্রেরী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করেছেন খালেক। পড়াশোনায় খুব মনোযোগী ছিলেন। ১৫ বছর পূর্বে তিনি হাফেজি পড়া শেষ করার কয়েক মাসের মধ্যে অসুস্থ হয়ে হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য।
পরিবারের সামর্থ অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা করানো হলেও বর্তমানে আর্থিক অভাব অনটনের কারণে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে দিন দিন তার মানসিক ভারসাম্যের অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারছেন না বিধবা মা। তার চিকিৎসায় সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তার পরিবার।
অসুস্থ আবুদল খালেকের মা শামছুন্নাহার দুঃখ করে বলেন, আবদুল খালেক বিভিন্ন সময় ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে। বিভিন্ন সময় এদিক-সেদিকও চলে যায়। পরিবারের পক্ষে সারাক্ষণ তাকে দেখে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এ জন্য তাকে ঘরে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মন মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান রাষ্ট্রপতির
তিনি বলেন, রাতে ছেলের পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় ঘরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু ছেলের এমন অবস্থায় মা হয়ে আমি নিজেও সারারাত ঘুমাতে পারি না মানসিক যন্ত্রনায়। কারণ কখন সে কী করে বসে এই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।
শামছুন্নাহার বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার স্বামী শ্রমিকের কাজ করতেন। ছেলে অসুস্থ হওয়া পর সম্পত্তি বিক্রি করেও তার চিকিৎসা করানো হয়েছে। আবদুল খালেক সুস্থ না হওয়াতে তার বাবাও কয়েক বছর আগে মারা যায়। বর্তমানে ঠিক মতো সংসার চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ছেলের চিকিৎসা করবো কীভাবে? তাকে উন্নত চিকিৎসা করার সামর্থ আমাদের নেই।
কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা শামছুন্নাহার। তিনি আবেগজড়িত কণ্ঠে ছেলের চিকিৎসায় সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
জয়শ্রেরী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার মুহ্তামিম হাফেজ মহসিন মিয়া ইউএনবিকে জানান, আবদুল খালেক খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। সে অসুস্থ হওয়ার পর আমরা মাদরাসায় আমাদের সামর্থ অনুযায়ী দোয়ার আয়োজন করছি যেন সে সুস্থ হয়ে যায়। বর্তমানে সে শিকল বাঁধা অবস্থায় আছে, বিষয়টি অনেক দুঃখজনক। তাকে সুস্থ করার জন্য আল্লাহর রহমতের পাশাপাশি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গনি বাবুল পাটওয়ারী এবং উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মানসিক ভারসাম্যহীন আবুদল খালেকের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান জানান, পরিবারের লোকজন আমাদের কাছে আসলে আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি কি না।
আরও পড়ুন: মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে বাংলাদেশি সংস্থার পাশে ফেসবুক
৩ বছর আগে