কোপেনহেগেন
ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষা: উপায়, খরচ ও সুযোগ-সুবিধা
৫৭ লাখেরও বেশি মানুষের নর্ডিক দেশ ডেনমার্ক মূলত ৪৪৩টি দ্বীপের এক দ্বীপপুঞ্জ। নিম্নভূমির এই দেশটির আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। বিশ্বের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ডেনমার্ক অন্যতম। শিক্ষাক্ষেত্রে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় কোনো অংশেই কম নয়। বরং দেশটির উচ্চমানের জীবনযাত্রার কারণে হাজারো শিক্ষার্থী ডেনমার্ক অভিমুখী হন উচ্চশিক্ষার জন্য। এই ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার নানা দিক নিয়েই আজকের আয়োজন।
ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার যোগ্যতা
শিক্ষাগত যোগ্যতা
বাংলাদেশ থেকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরের জন্য ডেনমার্ক গেলেও, সেখানে স্নাতক করারও বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে। এইচএসসি পাস বা মাধ্যমিক ডিপ্লোমাধারীরা তাদের সনদ দিয়ে ডেনমার্কে ব্যাচেলরের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এই সনদ ডেনমার্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমমূল্য কি না তা যাচাই করা হয়। এখানে মূলত একাডেমিক মার্কশীটের প্রতিটি বিষয়ের প্রাপ্ত গ্রেড ও জিপিএ (গ্রেড পয়েন্টের গড়) ডেনমার্কের পরীক্ষার নম্বর ব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।
ডেনিশ এজেন্সি ফর সায়েন্স অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন তাদের আন্তর্জাতিক পরীক্ষার হ্যান্ডবুকের নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি গ্রেডগুলোকে ড্যানিশ গ্রেডিং স্কেলে রূপান্তর করে।
আরো পড়ুন: যে ১০টি দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অল্প খরচে পড়তে পারবেন
তাই এই যোগ্যতা পূরণ হয়েছে কি না তা জানতে শিক্ষার্থীদের তাদের পছন্দের বিষয়ের জন্য পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ভালো ভাবে অধ্যায়ন করে নেয়া উচিত।
এছাড়া ডেনমার্কের স্নাতক শিক্ষার জন্য এখানে নিবন্ধন করে যোগ্যতা যাচাই করে নেয়া যেতে পারে। অথবা এই ফর্মটি পূরণ করে সরাসরি ইউনিভার্সিটিতে পাঠালে তারা ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই করে দেয়।
মাস্টার্স ও পিএইচডিসহ যে কোনো স্নাতকোত্তর অধ্যায়নের জন্য যোগ্যতা ন্যূনতম ৪ বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রী। তবে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। এক্ষেত্রে ডেনিশ ডিগ্রীগুলোর সমতূল্য বাংলাদেশের ব্যাচেলর ডিগ্রীগুলো একটা স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারে।
আরো পড়ুন: দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার আগে যে অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা জরুরি
ভাষাগত যোগ্যতা
ইংরেজি ভাষার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের আবেদনকারীদের ইংরেজি ভাষা দক্ষতা ন্যূনতম ইংরেজি-বি ক্যাটাগরির হতে হবে। এটি মূলত ডেনিশ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রণীত ইংরেজি ভাষা দক্ষতা যাচাই ব্যবস্থা। কোনো কোনো প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ইংরেজি-এ প্রয়োজন হয়।
ইংরেজি-বি এর সমতূল্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ পয়েন্ট, যেটা ইংরেজি-এ এর ক্ষেত্রে ৭ পয়েন্ট।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ডেনমার্কের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ডেনমার্ক বোলোগনা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। তাই শিক্ষার্থীরা ডেনিশ প্রতিষ্ঠানে যে ডিগ্রি অর্জন করেন তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ২০২৩-এর কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়ের ৮২-তম অবস্থানে আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ডেনমার্কের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-
- আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়
- ডেনমার্কের কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়
- ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ডেনমার্ক
- আলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়
- কোপেনহেগেন বিজনেস স্কুল
- রসকিল্ড ইউনিভার্সিটি
এছাড়াও ডেনমার্কের আন্তর্জাতিক ভাবে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদেরকে তাদের পছন্দ অনুসারে বিভিন্ন বিষয় বেছে নেয়ার জন্য স্বাগত জানায়।
আরো পড়ুন: নরওয়েতে বিনামূল্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের উপায়
ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি
ডেনমার্কে পড়াশোনার জন্য যাবতীয় যোগ্যতা নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃত হওয়ার পর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। এক্ষেত্রে আগে থেকেই যোগ্যতা প্রমাণের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি যোগাড় করে রাখা আবশ্যক।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- স্নাতকের জন্য শুধু এইচএসসি/ডিপ্লোমার মূল প্রশংসাপত্র
- আইইএলটিএস/টোফেল স্কোরের সনদ
- যদি কোনো নথিতে নামের পরিবর্তন থাকে তাহলে নাম পরিবর্তনের নথি প্রয়োজন হবে; যেমন: বিবাহের সনদপত্র
- যোগ্যতা মূল্যায়নের জন্য দ্বিতীয়বার আবেদন করা হয়ে থাকলে পূর্বের মূল্যায়ন এবং স্বীকৃতির সিদ্ধান্তের নথি সংযুক্ত করতে হবে
- স্নাতকোত্তরের জন্য উপরোক্ত নথিপত্রের সাথে স্নাতক ডিগ্রি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সংযুক্ত করতে হবে|
আরো পড়ুন: জার্মানিতে বিনামূল্যে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য কিভাবে আবেদন করবেন?
এছাড়াও বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ডেনিশ এজেন্সি ফর হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড সায়েন্স শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাইয়ের নিমিত্তে আরও কাগজপত্র চাইতে পারে।
ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনের উপায়
ডেনমার্কে স্নাতক উচ্চশিক্ষার আবেদনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদেরকে সরাসরি একক কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন না করে জাতীয় ভর্তির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এই অনলাইন আবেদন চলাকালে কাগজপত্র আপলোড করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।
- মূল নথিগুলোর প্রতিটি আলাদা ভাবে উভয় পিঠ স্ক্যান করতে হবে।
- স্ক্যান করা নথির ছবি অবশ্যই রঙিন হতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে যেন, নথির তথ্যগুলো স্পষ্ট পড়া যায়।
- শুধুমাত্র পিডিএফ ফাইল গ্রহণযোগ্য
- স্ক্যানের পর প্রতিটি নথির ফাইলের তার স্ব-স্ব নাম দিয়ে কম্পিউটারে রাখতে হবে। তারপর আবেদনের সময় প্রয়োজন অনুসারে আপলোড করতে হবে|
আরো পড়ুন: জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
প্রতিটি প্রোগ্রামে আবেদনের বেলায় শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পৃথক পৃথক স্বাক্ষর করা পৃষ্ঠা পাঠাতে হবে। ডিজিটাল আবেদন সম্পন্ন করার পর সেই জাতীয় ভর্তির ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে স্বাক্ষর করার পৃষ্ঠা। সেটি প্রিন্ট করে স্বহস্তে স্বাক্ষর করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায় পাঠাতে হবে।
তবে মাস্টার্স বা পিএইচডির বেলায় শিক্ষার্থীকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এখানেও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর করার নথি পাবেন। এখানেও একই ভাবে প্রিন্ট করে স্বহস্তে স্বাক্ষর করে পাঠিয়ে দিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায়।
সাধারণত স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য আবেদনগুলো স্নাতক ডিগ্রির আবেদনের তুলনায় সহজ।
আরো পড়ুন: নরওয়েতে উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
অনলাইন আবেদনের পর কাগজপত্র পাঠানোর উপায়
স্নাতকের ক্ষেত্রে সমস্ত নথি পাঠানোর ঠিকানা হলো- Danish Agency for Higher Education and Science, Haraldsgade 53, 2100 Copenhagen
কুরিয়ারের সময় খামের ওপর শিক্ষার্থীর পুরো নাম এবং জন্ম তারিখ উল্লেখ করতে হবে। স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে সব একই শুধু ঠিকানার জায়গায় থাকবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা। শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে মূল নথিগুলো ডাকযোগে আবেদনে উল্লেখিত শিক্ষার্থীর ঠিকানায় ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।
আরো পড়ুন: সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
ডেনমার্কে পড়াশোনার খরচ
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোগ্রামের উপর নির্ভর করে পড়াশোনার খরচ প্রতি বছরে প্রায় ৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার ইউরো হয়ে থাকে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার থেকে ১৮ লাখ ২৪ হাজার।
সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতি বছর ৬ হাজার থেকে ৯ হাজার ইউরোর (প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার থেকে ৯ লাখ ১২ হাজার বাংলাদেশি টাকা) মধ্যে চার্জ করে থাকে। স্বভাবতই স্নাতক ডিগ্রীগুলো স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর চেয়ে কম খরচের হয়ে থাকে।
ডেনমার্কে জীবনযাত্রার জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা
শুধু ডেনমার্কেই নয়; জীবনযাত্রার খরচ সাধারণত মানুষের জীবনধারণের পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। ডেনমার্কে বাসা ভাড়া, খাবার, যাতায়াত এবং কেনাকাটা সব মিলিয়ে মাসে খরচ পড়তে পারে প্রায় ৭৫০ থেকে ৯০০ ইউরোর মত, যা বাংলাদেশি টাকায় ৭৫ হাজার ৯৭০ থেকে ৯১ হাজার ১৬৪ টাকা। কোপেনহেগেনের মত উচ্চ খরচের শহরে যা সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ ইউরোর (এক লাখ ২১ হাজার ৫৫২ বাংলাদেশি টাকা) মতো উঠতে পারে।
আরো পড়ুন: অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
ডেনমার্কে পড়াশোনার পাশাপাশি খন্ডকালীন চাকরির সুযোগ
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরা ডেনমার্কে পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করতে পারেন। তবে জুন, জুলাই এবং আগস্ট মাসে এরকম কোনো বিধি নিষেধ নেই; পুরোটা সময়ই কাজ করা যায়।
ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপের সুবিধা
ডেনমার্কের ব্যয়বহুল উচ্চশিক্ষার খরচ চালানোর জন্য সেরা উপায় হচ্ছে স্কলারশিপ। আর ডেনমার্ক তার আন্তর্জাতিক মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ ভালো স্কলারশিপের ব্যবস্থা রেখেছে। স্থানীয় শিক্ষার্থী ও স্কলারদের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকার মাধ্যমে এই স্কলারশিপগুলোতে সহজেই আবেদন করা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কলারশিপ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ইরাসমাস মুন্ডাস/জয়েন্ট মাস্টার ডিগ্রি এবং ডেনিশ সরকারি বৃত্তি অন্যতম।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ পুষিয়ে নেয়ার জন্য ডেনমার্কের বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ আছে।
আরো পড়ুন: শাবিপ্রবিতে পিটার হোর-মোস্তাক রহমান স্কলারশিপ পেলেন ৬ শিক্ষার্থী
ডেনমার্কে পড়াশোনা শেষে চাকরির সুযোগ
স্নাতক হওয়ার পরে চাকরি খুঁজে পেতে ছয় মাস সময় পাওয়া যায়। আর এর মধ্যেই রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। উত্তম উপায় হলো ডেনমার্কে পড়াশোনা করার জন্য রেসিডেন্স পারমিটের আবেদন করার সময়েই ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করা। এছাড়া পরবর্তীতে ডেনমার্ক ইমিগ্রেশন সার্ভিস নেয়ার সময়েও ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করা যায়।
পরিশিষ্ট
আমাদের উপরোক্ত আলোচনায় ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনের পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপের ধারণা এবং উচ্চশিক্ষা শেষে কি করতে পারেন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় ডেনমার্কে পড়াশোনার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নেবার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশটিতে পদার্পনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর সামনে খুলে যাবে পুরো ইউরোপে দরজা। তাই মনোরম প্রকৃতির সান্নিধ্যে জীবন ধারণের স্বাদ পাবার তৃপ্তি তো আছেই। তার পাশাপাশি এক কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের জন্য দারুণ গন্তব্যের অন্বেষণে অনায়াসেই ভাবা যেতে পারে ডেনমার্কের কথা।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটি
২ বছর আগে
নারীর একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ শহর
নানান ধরনের সামাজিক টানাপোড়েন ও সমাজে নারীদের অবস্থান, এগুলোকে উপেক্ষা করে নারীরা আজকে বিস্ময়করভাবে শত শত দেশ জয়ের রেকর্ড গড়ছেন। একজন বিচক্ষণ নারী পরিব্রাজক সব সময় বিশ্ব ভ্রমণে যাত্রার পূর্বে গন্তব্যের নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে ভালোভাবে অবগত হয়ে নেন। এই আর্টিকেলটি নারীদের একাকী ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ১০টি শহর নিয়ে আলোচনা করবে।
যে ১০টি শহর নারীদের একাকী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ
ভ্যানকুভার, কানাডা
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূল পর্বতমালা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত এই শহরটি তার উপকূলীয় সৌন্দর্য্যের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। স্ট্যানলি পার্কে হাটাহাটি করার সময় পশ্চিম কানাডার এই বৃহত্তম মেট্রোপলিটন এলাকাটিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যাবে। ওয়েস্ট এন্ড এলাকার কফিতে চুমুক দেয়ার সময় টের পাওয়া যাবে কানাডিয়ানদের আতিথেয়তা এবং বন্ধুত্বটা।
ভ্যানকুভার আর্ট গ্যালারি, লুকআউট টাওয়ার বা ভ্যানকুভার অ্যাকোয়ারিয়ামে মগ্ন থাকার সময় অন্য শহরের সাথে এর তুলনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে। সেখানে একা ভ্রমণের কথা মনেই থাকবে না। তাছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য কোলাহলপূর্ণ জায়গা থেকে সবাই পালিয়ে এই ভ্যানকুভারেই আসতে চায়।
আরো পড়ুন: কাতার ভ্রমণ: বিভিন্ন শহরের শীর্ষস্থানীয় ১০ দর্শনীয় স্থান
বার্গেন, নরওয়ে
সাতটি পর্বত এবং উত্তর সাগরের উপকূলের পার্শ্ববর্তী নরওয়ের সবচেয়ে সুন্দর এই শহরটি যেন প্রকৃতির এক টুকরো আশীর্বাদ। এর রাস্তা ধরে হাটার সময় মৃদুমন্দ হাওয়া শীষ দিয়ে জানান দেবে যে, ঠান্ডা ফিওর্ড পথচারিকে আরো আপন করে নিতে চাইছে। ভেগান বন্দর দিয়ে ব্রিগেন বরাবর সঙ্গ দেবে পুরনো স্থাপত্য এবং ইতিহাস।
ফ্লোয়েন-এর তাজা খাবারগুলো স্বাদ দিবে অমৃতের। ছোট মাছের বাজার পরিদর্শন শেষে শহরের সীমান্ত আলিঙ্গন করলেও ভ্রমণ পিপাসাটা রয়েই যাবে। তখন সবেমাত্র নতুন আসা পর্যটক ঘুরে আবার ফিরে চলেন অন্তরঙ্গ বার্গেনের উদ্দেশ্যে। এ যেন খেয়াল-খুশীমত অবাধে বিচরণের এক অপূর্ব নগরী, যার অধিবাসীরা নবাগতকে অভিভূত করতে অভ্যস্ত।
ভেনিস, ইতালি
স্বপ্নময় ভেনিস শুধুমাত্র নব দম্পতিদের মধুচন্দ্রিমার জন্য নয়। ৬০০ বছর পুরনো এই নগরী একাকী ভ্রমণকারিনীদের জন্যও একটি নস্টালজিক জায়গা। এর ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভগুলো ঘুরে দেখার সময় অবলীলায় মনে হতে পারে, যে ঠিক এরকমি একটা জায়গা হয়ত বহুদিন ধরে স্বপ্নে লালণ করে আসছেন।
আরো পড়ুন: সমুদ্রে স্নানের সময় সতর্ক থাকতে করণীয়
শিল্পকলায় ভরা দ্য ডোজ প্যালেস এবং সেন্ট মার্কস ব্যাসিলিকা ঘুরে দেখার সময় টের পাওয়া যায় যে, ভেনিস তার মানুষকে কাঙ্ক্ষিত প্রাইভেসিটি দিতে পারে। তাই এখানে নিরাপত্তা নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। আর সূর্য অস্ত যাওয়ার লগ্নটি উপভোগের জন্য একটি বারের জন্য হলেও এ সময়টি একা কাটানো উচিত।
আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ড্স
কিছুক্ষন পরপর লেক দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে যে, কেন আমস্টারডামকে উত্তরের ভেনিস নাম দেওয়া হয়েছে। শহরটি প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ ভ্রমণকারীর পদচারণায় ধূলিধুসরিত হয়। এত মানুষের ভিড়ে নিঃস্বঙ্গতা নিয়ে ভাবার অবকাশ থাকে না। কারণ প্রায় ১৫০০ টিরও বেশি সেতু দেখে শেষ করতে হবে। ভেনিসের মতোই এই শহরটি মন্ত্রমুগ্ধতা সৃষ্টি করবে, কিন্তু তাতে নিরাপত্তাহীনতার ভয় নেই। বরং আছে আদিম ও অকৃত্রিম প্লেটোনিক ভালবাসার রোমান্টিক অনুভূতি।
আমস্টারডাম বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে একটি। ওল্ড সেন্টারের লেক, কেনাকাটা এবং কফিশপ এবং প্লান্টেজের যাদুঘর শহরে যে কোন নতুন মুখের সান্নিধ্য পেতে সদা প্রস্তুত।
আরো পড়ুন: ২০২২ আইসিসি পুরুষ টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজক ৭ শহর ভ্রমণ
কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
একা একা কোথাও হারিয়ে যাবার জন্য এই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলটি সেরা হতে পারে। ছোট শহরটি জুড়ে নর্ডিক মিথের গা ছমছমে আবহ নবাগতদের অবাক হওয়ার খোরাক যোগায়। কিন্তু এই চমকে যাওয়াটা নেতিবাচক নয়; বরং এর জন্যই কোপেনহেগেনে বেড়াতে আসেন পর্যটকরা।
নাইহ্যাভেনের লেক আর ভেস্টারব্রোতে কেনাকাটার জন্য হাল্কা পদব্রজে ভ্রমণই যথেষ্ট। তবে ক্লান্ত হয়ে গেলেও ভয় নেই। বড় বড় শহরের জমকালো আলো না থাকলেও নিঝুম সড়ণীয় আড্ডাপ্রিয় প্রতিবেশীরা অকুন্ঠচিত্ত্বে বুঝিয়ে দেবে যে, পথচারিণী নিরাপদ আশ্রয়েই আছেন।
ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
শ্বাসরুদ্ধকর স্থাপত্য এবং ইউরোপের অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক কেন্দ্রে পরিপূর্ণ ভিয়েনা নগরী। বারোক দুর্গ এবং ইম্পেরিয়াল প্রাসাদের মধ্যে আসা ভ্রমণ গ্রুপগুলো দর্শনীয় স্থান গুনতে গুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের প্রাচীন এই রাজধানী ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় রয়েছে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ৩০০০ ফুটের অধিক উচ্চতার ১৪ পাহাড়
এখানকার গথিক গীর্জা এবং স্মারক ভাস্কর্যগুলো দেখার সময় পরিচয় হবে প্রায় শখানেক নিঃস্বঙ্গ পর্যটকদের সাথে। কারো হয়ত ক্যামেরার শাটারে আঙ্গুল, কারো বা চোখে সৌন্দর্য্যের নেশায় মোহগ্রস্ত দৃষ্টি। কিন্তু পর্যটকদের স্রোতের অনুকূলে অবচেতনেই একই সাথে বয়ে চলছে গন্তব্যের দিকে।
এই নিরাপদ নগরীর সংস্কৃতির স্বাদ পেতে হলে হাজার পুলকিত দৃষ্টির সাথে এক হয়ে চোখ রাখতে হবে স্টেট অপেরায়। যোগ দিতে হবে ফিলহারমোনিকের কনসার্টে।
সিঙ্গাপুর সিটি
এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বের এই দ্বীপ নগরীটি জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছে ১৮১৯ সালের ব্রিটিশ বাণিজ্য উপনিবেশের। বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণ কেন্দ্রে থাকা অত্যাধুনিক হয়ে ওঠা শহরটি প্রায় ৫৫ লাখ লোকের আবাসস্থল। এই কোলাহলপূর্ণ শহর জুড়ে অনেক বছর ধরেই নিজেদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করছেন হাজারো নারী পর্যটক। ঘনবসতিপূর্ণ হলেও এর ৫০-এরও বেশি সবুজ উদ্যান একে রীতিমত উদ্যানের শহর বানিয়ে ফেলেছে।
আরো পড়ুন: ভারতের টুরিস্ট ভিসা কীভাবে পাবেন: আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রসেসিং ফি
এমনকি এগুলোতে ঘুরতে পায়ের চাপে পিষ্ঠ হওয়ার ভয় নেই। বরং এখানকার বাহারি খাবারে এশিয়ান ফিউশন এবং আমেরিকান খাবারের মিশ্রণ বহু জাতির মেলবন্ধনের সংকেত দেবে। এখানকার মরিচ কাঁকড়া খাওয়ার সময় অপরিচিতরা বৈঠকি ভঙ্গিতে নিজেদের মধ্যে এর অদ্ভূত স্বাদের অনুভূতি শেয়ার করতে পারেন।
লিসবন, পর্তুগাল
লিসবন আটলান্টিক মহাসাগরের ধারে অবস্থিত এটি ইউরোপীয় শহরটি সগর্বে প্রকাশ করে এর সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতিকে। শহরটি সাতটি পাহাড়ের উপর গড়ে ওঠা এই অঞ্চলটিতে স্বভাবতই পাহাড় বেয়ে উঠতে আসেন হাজারো হাইকার। খাড়া ঢাল বেয়ে একা একা ওপরে ওঠার সময় সবাই সতর্ক থাকেন রহস্যময় পাথরযুক্ত রাস্তাগুলোর ব্যাপারে।
অ্যালফামা, কিয়াডো এবং বাইরো অ্যাল্টোর আশেপাশের এলাকাগুলোর প্রাণবন্ত দৃশ্য মন কেড়ে নেয়ার মত। আর সেখানের কোন খাবারের দোকানে খেতে যেয়ে দোকানীদের অপূর্ব ব্যবহার সেই ভূবন ভোলানো দৃশ্যকে যেন আরো ন্যায্যতা দেয়। এই জায়গাতে মুলত সবাই নতুন খাবারের স্বাদ পরখ করতে যেতে চায়।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম ভ্রমণ গাইড: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী
হংকং, হংকং
তিয়ান তান বুদ্ধের শহর হংকং নারীদের ভ্রমণের জন্য পৃথিবীর নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর অবিশ্বাস্য শান্ত পরিবেশের সাথে আধ্যাত্মিক ভাবগাম্ভীর্যের মিথস্ক্রিয়া এক পরম প্রাপ্তি। পো লিন মনাস্ট্রি পর্যন্ত ২৬৮টি ধাপ পেরনোর সময় হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় বুদ্ধে প্রতি তীর্থযাত্রীদের টানটা।
উন্নত অর্থনীতির শহর হওয়ায় এখানে অপরাধের হার খুবই কম। এমনকি প্রতি বছর তা আরো কমের দিকে যাচ্ছে। তবে ১ শতাংশ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য হলেও পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো গভীর রাত পর্যন্ত সক্রিয় থাকায় রাত ১২টার পর আলোকসজ্জাটা এখানে অদ্ভূত কোন ব্যাপার নয়। সে অনুসারে স্থানীয়রা অনায়াসেই রাতে চলাফেরা করতে পারেন। পরিবহন ব্যবস্থাও অনেক রাত পর্যন্ত চালু থাকে।
লন্ডন, ইংল্যান্ড
লন্ডনের সদা বিকশিত এবং বহুজাতিক সংস্কৃতির বিপজ্জনক গতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় স্থানীয়দের মনযোগ নিজেদের জীবন নিয়েই। তাই অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও পারস্পরিক বাক বিনিময় ও সৌজন্যতার ক্ষেত্রে এরা বেশ ভদ্র এবং সহানুভূতিশীল প্রকৃতির হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার: বাংলার ভেনিস বরিশালের সৌন্দর্য্যে সেরা সংযোজন
তবে এর গতিশীল লোকালয়ে একা ভ্রমণকারি নারী প্রায় সময় স্বাগত বোধ নাও করতে পারেন। তবে একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাধীন ভ্রমণকারির জন্য লন্ডন দারুণ একটি জায়গা। শোরেডিচ, ব্রিক লেন বা ক্যামডেন টাউনের বাজারে একা একাই ঘুরে বেড়িয়ে লন্ডনের খাবার খ্যাতির সাথে পরিচিত হয়ে নেয়া যায়। থিয়েটার আর নাইট লাইফের জন্য হারিয়ে যাওয়া যাওয়া যেতে পারে গুঞ্জনপূর্ণ ওয়েস্ট এন্ডে।
শেষ কথা
অবাধে প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের জন্য বহু ভ্রমণপিপাসু নারী প্রতি বছর পারি জমাতে চান দেশের বাইরে। উপরোল্লিখিত ১০টি শহর নারীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য হতে পারে দারুণ সুযোগ। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির এখানে কোন স্থান নেই। জনজীবন এখানে নিজেদের জীবনধারণ নিয়েই বরং বেশি ব্যস্ত। এমনকি দিকভ্রান্ত কোন পথিক এখানে সাহায্য চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন না। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, নিঃস্বঙ্গ ভ্রমণকারী নির্দ্বিধায় এই জায়গাগুলোতে খুঁজে পাবেন নিজের ঘরের মত আরামদায়ক অনুভূতিটি।
২ বছর আগে
আগামী মার্চের মধ্যে ইউরোপে করোনায় আরও ৭ লাখ মানুষ মারা যাবে: ডব্লিউএইচও
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইউরোপ অফিস এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ইউরোপের ৫৩টি দেশে আরও কমপক্ষে সাত লাখ মানুষ মারা যাবে।
ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অবস্থিত সংস্থাটির ইউরোপ অফিস এক বিবৃতিতে করোনার তীব্র ও মৃদু সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা ক্রমে হ্রাস পাওয়ার একাধিক উদাহরণ দিয়েছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের জনগণকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ‘বুস্টার ডোজ’ দেয়া, ষাটোর্ধ্ব, দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে টিকাকরণ করতেও বলা হয়েছে এই বিবৃতিতে।
ডব্লিউিইচও’র পক্ষ থেকে এতদিন ধনী দেশগুলোকে বুস্টার ডোজ না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর বদলে দরিদ্র দেশ, যারা টিকা কেনার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে, সেসব দেশের নাগরিকদের টিকা পাওয়ার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্যাপক ভ্যাকসিনেশনের হার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকি কমাতে পারে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
এর বদলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইউরোপের অধিবাসীদের পূর্ণ ডোজ টিকা নিতে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং ভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
ডব্লিউএইচও’র ইউরোপের আঞ্চলিক পরিচালক ডা. ক্লুজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, বর্তমানে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে এগুচ্ছে। সামনে আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের আশা ছাড়া উচিত না, এর বদলে সরকার, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, এবং সাধারণ নাগরিক- সবাই মিলে মহামারি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংস্থাটির এক রিপোর্টে জানা যায়, গত সপ্তাহে করোনায় ইউরোপে প্রতিদিন কমপক্ষে চার হাজার ২০০ জন মানুষ মারা গেছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ।
আরও পড়ুন: কোভ্যাক্সের সাথে করা চুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
এই বৃদ্ধির তিনটি কারণ হল- ভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা রূপ, মাস্ক পরা এবং শারীরিক দূরত্বের মতো বিধিনিষেধ মানায় শিথিলতা এবং ইউরোপীয় জনসংখ্যার বিশাল অংশের টিকা নেয়ায় অনীহা।
ডব্লিউএইচ’র ইউরোপ শাখার প্রকাশিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা আশঙ্কা করছি ইউরোপের ২৫টি দেশের হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়বে এবং ২০২২ সালের ১ মার্চের মধ্যে ৫৩টি দেশের মধ্যে ৪৯টি দেশের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) মারাত্মক চাপে পড়বে।
আরও পড়ুন: পরবর্তী মহামারি আরও ভয়াবহ হতে পারে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
৩ বছর আগে