সস্তা শহর
বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ১০ শহর
২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রা খরচের সূচক। জরিপের পরিচালনা এবং প্রতিবেদন প্রকাশনায় ছিল যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য মিডিয়া কোম্পানি ইকোনমিস্ট-এর গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ (ইআইইউ)। এই সূচকের মাধ্যমে পৃথিবীর ব্যয়বহুল শহরগুলোর পাশাপাশি সস্তা শহরগুলোর নাম প্রকাশিত হয়েছে। গত বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ছিল শতকরা ১.৯ ভাগ, যেটি এ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ৩.৫ শতাংশ। ফলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে সামগ্রিক জীবনযাত্রার খরচের সূচকে। চলুন দেখে নেই সে সকল সস্তা শহরগুলোর নাম আর তার সাথে জেনে নেই জীবনযাত্রা খরচের এমন আকস্মিক পরিবর্তনের কারণগুলো।
২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ১০ টি শহর
১। দামেস্ক (সিরিয়া)
২। ত্রিপলি (লিবিয়া)
৩। তাশখন্দ (উজবেকিস্তান)
৪। তিউনিস (তিউনিসিয়া)
৫। আলমাটি (কাজাখিস্তান)
৬। করাচী (পাকিস্তান)
৭। আহমেদাবাদ (ভারত)
৮। আলজিয়ার্স (আলজেরিয়া)
৯-১০। বুয়েনস আয়ার্স (আর্জেন্টিনা) এবং লুসাকা (জাম্বিয়া) (যুগ্মভাবে)
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০ শহর
দামেস্ক: ২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা শহর
২০২০ এর চিত্র অপরিবর্তিত রেখে এবারও গৃহযুদ্ধ তাড়িত মধ্য এশিয়ার দেশ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা শহর। দীর্ঘ দশ বছরের যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবস্থাই সিরিয়ান পাউন্ডের মুদ্রাসংকোচনের পেছনে দায়ী।
বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার খরচের জরিপ পদ্ধতি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোকে তাদের অর্থনীতি ও বাণিজ্য ভিত্তিক গবেষণালব্ধ পরিসংখ্যান প্রকাশের মাধ্যমে যথোপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করা ইকোনমিস্ট-এর গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ (ইআইইউ)-এর মূল লক্ষ। যেমন, পাঁচ বছর পর দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অবস্থা, দেশের মাসিক প্রতিবেদন, শিল্প-কারখানা ভিত্তিক প্রতিবেদন এবং দেশের ঝুঁকি বিশ্লেষণ।
মার্চ এবং সেপ্টেম্বর; বছরের এই দুটি সময়ে করা হয়ে থাকে বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার খরচ (ডব্লিউসিওএল) সমীক্ষাটি। ২০২১ এর সর্বশেষ জরিপটিতে সারা বিশ্বের ১৭৩ টি শহরের মোট ২০০ টি পণ্য এবং পরিষেবার ৪০০ টিরও বেশি পৃথক পৃথক মূল্য যাচাই করা হয়েছে। বিভিন্ন স্টোর এবং পরিষেবা দানকারীর প্রতিষ্ঠানগুলোর জরিপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে এই দামগুলো। এই দামগুলো হলো সরাসরি ভোক্তার কাছ থেকে পণ্য বা সেবার বিনিময়ে নেয়া বিক্রয়মূল্য।
ডব্লিউসিওএলের অর্থনীতিবিদরা সূচক নির্ধারণের জন্য সর্বশেষ মার্কিন ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী সব মূল্যগুলোকে একটি আদর্শ মুদ্রার আওতায় নিয়ে আনেন। অতঃপর প্রতিটি আইটেমকে তাদের স্ব স্ব শ্রেণীতে বিভক্ত করে সেগুলোর একটা প্রতিমান দেয়া হয়। এই প্রতিমানযুক্ত আইটেমের আপেক্ষিক পার্থক্য প্রয়োগ করেই তৈরি করা হয় তুলনামূলক সূচক। এখানে সূচক নির্ণয়ের আদর্শ শহর ধরা হয় নিউইয়র্ক সিটিকে। নিউইয়র্ক সিটির সূচকের প্রতিমাণ থাকে ১০০।
আরও পড়ুন: ‘পিস রানার অ্যাওয়ার্ড' পেলেন বিশ্বজয়ী বাংলাদেশি পর্যটক নাজমুন নাহার
২০২১ এর বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার খরচের সূচকের বিশ্লেষণ
সূচকটির নির্ণয়ের নিমিত্তে নিউ ইয়র্ক সিটির জীবনযাত্রার খরচকে মানদণ্ড ধরায় মার্কিন ডলার অপেক্ষা নিম্ন মূল্যের মুদ্রার শহরগুলোকে নিচের সারিতে স্থান দেয়া হয়েছে।
সস্তা দেশগুলোর এমন মুদ্রাসংকোচনের প্রধান কারণ দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক মন্দা। সবচেয়ে সস্তা শহরগুলোর মধ্যে র্যাঙ্কিং-এ স্থান পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা বা এশিয়ার দরিদ্র এলাকাগুলো।
ত্রিপোলি ২০২১ এর ডব্লিউসিওএলের ৪০টি নতুন সংযোজিত শহরের মধ্যে একটি। এই ৪০টি শহরের অন্তর্ভুক্তির কারণে গত বছরের ১৩৩ শহর থেকে বাড়িয়ে এ বছর মোট ১৭৩টি শহরের উপর জরিপ হয়েছে।
দামেস্কের মত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে থাকার দরূণ ত্রিপোলি ডব্লিউসিওএল সূচকের নীচের সারিতে পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা শহরগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শহরটিতে দ্রব্যমূল্যের ধস পরিলক্ষিত হয়েছে বিশেষভাবে খাদ্য, পোশাক এবং পরিবহন খাতে।
এছাড়া করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে বিভিন্ন বাণিজ্যিক লেনদেনের উপর আরোপিত বিধিনিষেধগুলো পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। যা ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধাবিত করেছে ব্যাপক ক্ষতির দিকে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
খাদ্যাভাবের নিষ্পেশনের ফলে বদলেছে ভোক্তাদের জীবনযাত্রা। মানবেতর জীবন যাপনের ভেতর দিয়ে সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে বেড়েছে দেশত্যাগের প্রবণতা। ফলশ্রুতিতে অর্থনীতির চড়াই-উৎরাই উপেক্ষা করে অনির্দিষ্টকালের অস্থিতিশীলতাই মূখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে দেশগুলোর সব শ্রেণীর ভোক্তাদের।
আরও পড়ুন: ফ্লাই ডাইনিং: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বাংলাদেশের প্রথম ঝুলন্ত রেস্টুরেন্ট
শেষাংশ
ক্রমাগত লাগাম ছাড়া মুদ্রাস্ফীতির নির্মম শিকারে পরিণত হচ্ছে বিশ্বের এই সস্তা শহরগুলো। আসন্ন বছরে এ অবস্থার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে পারে জ্বালানির মূল্যের উপর, যা ছাপিয়ে যেতে পারে মজুরি বৃদ্ধির পরিমাণকে। ইআইইউয়ের অবশ্য ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের আশ্বাস দিচ্ছে, কিন্তু তা সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। কোভিড-১৯ জটিলতা কমে গেলে বাণিজ্যিক রুটগুলো বিধিনিষেধমুক্ত হলে অধিকাংশ রাজধানীগুলোতে জীবনযাত্রার খরচের কিছুটা স্থিতিশীলতা আশা করা যেতে পারে।
২ বছর আগে