জাওয়াদ
গোয়ালন্দে বৃষ্টির পানিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরিষা, মসুর, খেসারী, গম, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটোসহ রোপন করা বিভিন্ন ধরনের কৃষি ফসলের খেতে হাঁটুপানি জমে আছে। একই সাথে ৬০ ভাগ আমন ধান ঘরে তুললেও অনেকে ধান কেটে মাঠে শুকানোর জন্য রাখলে সেগুলো এখন পানির মধ্যে।
প্রাথমিকভাবে প্রায় ২ হাজার ৩৯ হেক্টর জমির কৃষি ফসল ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে জেলা কৃষি বিভাগ বলছে। এ অবস্থায় কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পরবর্তী করণীয় নিয়ে সরকারি নির্দেশনা এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সরেজমিন, গতকাল বুধবার এবং আগের দিন মঙ্গলবার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।
বুধবার উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নতুন পাড়ায় দেখা যায়, কৃষক সিদ্দিক সরদার, জাহিদ সরদার, আব্দুল বিশ্বাস নিজ নিজ সবজি ও ফসলি খেত থেকে পানি বের করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আশপাশের খেতগুলোতেও পানি থাকায় চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এই পানি কোথায় গড়াবেন।
কৃষক জাহিদ সরদার জানান, তিনি এবছর প্রায় দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। সেই সাথে তিনি সরিষা, বেগুনসহ অন্যান্য সবিজর আবাদও করেছেন। কিন্তু পুরো এক বিঘা জমির বাঁধাকপি খেতে পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এই পানি বের করারও কোন উপায় নেই।
কৃষক সিদ্দিক সরদার জানান, তিনি নিজেও কয়েক বিঘা জমিতে বেগুন ও বাঁধাকপির আবাদ করেছেন। মুষলধারে বৃষ্টিতে তারও অনেক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে থাকায় বাঁধাকপি খেত ও সরিষার খেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে ফরিদপুরে ২০ হাজার হেক্টর ফসলের খেত
২ বছর আগে
বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে ফরিদপুরে ২০ হাজার হেক্টর ফসলের খেত
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ফরিদপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজের খেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত। পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় সর্বোচ্চ জেলা ফরিদপুরে চাষিরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দুদিনের টানা বৃষ্টিতে ফরিদপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চলতি মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজারের অধিক জমিতে। পেঁয়াজ তোলার প্রস্তুতিকালে হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে এখন মাথায় হাত চাষিদের।
সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ও অম্বিকাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে সরেজমিনে দেখা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজের খেত এখন বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় ২ দিনের টানা বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত
চাষিরা বলেছেন, এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার বেশি। জেলার অধিকাংশ খেত থেকে চাষিরা আগামী সাত দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার কাজ শুরু করবে। কিন্তু বৃষ্টির পানি খেতে জমে তারা ফসলের মাঠে নামতে পারছেন না।
শুধু মুড়িকাটা পেঁয়াজ ছাড়াও রসুন,আলু ও সরিষা খেত তলিয়েছে। আকস্মিক বৃষ্টিতে সরিষার ফুল ঝড়ে গেছে। আলু খেত ডুবে যাওয়ায় গাছে পচন শুরু দিকে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন,‘দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে টানা বৃষ্টিতে জেলার ২০ হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব কৃষকদের অন্য ফসলের প্রণোদনা দিয়ে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার।’
তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে তুলনামূলকভাবে ব্যয় বেশি। হঠাৎ এই বৃষ্টিপাতে চাষিদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হবে। প্রতিটি মাঠে গিয়ে পরিস্থিতি দেখার জন্য আমাদের কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের চাষি সুরত খান, সালাউদ্দিন মোল্ল্যাসহ অনেকেই বলেন, ‘খেতে পানি জমে গেছে। চলতি মৌসুমে মাঠে যে ফসল আছে সবই ক্ষতির মধ্যে। কীভাবে চলব, আর পুঁজিও বা কীভাবে উঠবে সেই চিন্তায় আমরা দিশেহারা।’
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ৭৩৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত
নগরকান্দা উপজেলার আশফরদী গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রোকন উদ্দীন মাতুব্বর বলেন,‘আমি প্রতি বছর ১২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করি। তাই এবছর সেই জমিতে পেঁয়াজের চাষ করতে ১৪ কেজি দানা কিনে বীজতলা তৈরি করেছিলাম। বৃষ্টিতে সব শেষ। যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতি হয়েছে তাই সরকারের কাছে আমাদের বীজ কিনে দেয়ার দাবি জানাই।
নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন ইয়ামিন বলেন, ‘নগরকান্দা উপজেলায় পেঁয়াজের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করতে আমাদের উপ সহকারীরা মাঠে আছেন। আমরা চাষিদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। আশা করছি সরকার এই চাষিদের বিষয়ে আন্তরিক হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন, কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা চুড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ জানার পর তাদের আর্থিক সহয়তাসহ সরকারি অন্যান্য সহযোগিতা করব।’
২ বছর আগে
বাগেরহাটে ৭৩৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় পাকা আমন ধান ও বোরো ধানের বীজতলাসহ ৭৩৯ হেক্টর জমির ফসল বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে।
এছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে দুবলার চরে জেলেদের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের শুটকি মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে চন্দ্রমহল ইকোপার্ক থেকে ৪৩টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার
কৃষি বিভাগ জানায়, সোমবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বাগেরহাটে গড়ে ২২ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। গত তিনদিন ধরে মাঠে ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। আরও দুই তিন দিন পানিতে থাকলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
এদিকে, চার দিন ধরে বৃষ্টিপাত ও হিমেল বাতাসের কারণে বিশেষ করে বাগেরহাটের নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে ‘হত্যা’, স্বামী পলাতক
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. আজিজুর রহমান জানান, জেলায় ৭৩৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে বোরো ধানের বীজতলা ২০৭ হেক্টর, রোপা আমন ধান ১৫০ হেক্টর, সরিষা ১৩৭ হেক্টর, ডাল ১৯৩ হেক্টর, শীতকালিন সবজি ৩৫ হেক্টর ও ১৭ হেক্টর জমির গম রয়েছে।
২ বছর আগে
লঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টি, দুর্ভোগ
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ কেটে গেলেও লঘুচাপের প্রভাবে সকাল থেকে চট্টগ্রামে সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী ও স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। সামান্য বৃষ্টিতেও নগরীর কয়েকটি এলাকার সড়কে পানি জমেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে আগামীকাল মঙ্গলবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম আবহওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপ ‘জাওয়াদ’ আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। লঘুচাপটি বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলী এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ (সোমবার) সন্ধ্যা নাগাদ আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে যাবে।
সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘জাওয়াদ’ আরও দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে মঙ্গলবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টি হতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি, জনদুর্ভোগ
২ বছর আগে