দূষণমুক্ত শহর
২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষণমুক্ত ১০ শহর
যে কণাগুলো বাতাসে ভেসে বায়ু দূষণ করে, সেগুলো এতটাই ক্ষুদ্র থাকে যে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। এই কণাগুলোর নাম পার্টিকুলেট ম্যাটার(পিএম)। এর একটি ক্যাটাগরি পিএম২.৫ এমন একটি কণা, যার ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম, অর্থাৎ মানুষের চুলের চেয়ে ১০০ গুণের বেশি পাতলা। আইকিউএয়ার বিশ্বব্যাপী এই পিএম২.৫ দ্বারা দূষিত বায়ুর শহরগুলোর র্যাঙ্কিং নিয়মিত সরাসরি আপডেট করে। সেই লাইভ থেকে ২০২১ এর ৬ ডিসেম্বর দুপুর দেড়টার আপডেট অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দূষণমুক্ত দশটি শহরের বিস্তারিত নিয়ে আজকের ফিচার।
২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষণমুক্ত ১০ টি শহর
১। সল্টলেক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
২। ডেনভার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৩। সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
৪। নাগোয়া, জাপান
৫। মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
৬। অসলো, নরওয়ে
৭। লিয়ন, ফ্রান্স
৮। ভ্যানকুভার, কানাডা
৯। ক্যানবেরা, অস্ট্রেলিয়া
১০ হেলসিঙ্কি, ফিনল্যান্ড
দেশগুলোর বাতাসের গুণাগুণ সূচক নির্ণয় পদ্ধতি
শহরের বাতাসে বায়ু দূষণকারী পদার্থের ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে বাতাসের গুণাগুণ সূচক বা একিউআই নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
সূচকটি বাতাসের প্রতি ঘন মিটারে থাকা বায়ু দূষণকারী পদার্থের সংখ্যা নির্দেশ করে। এখানে সূচকের নির্ধারক হিসাবে পিএম২.৫ পরিমাপ ব্যবহার করে একিউআই নিরীক্ষণ করা হয়। কারণ এই পদ্ধতিটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এবং পিএম২.৫ মানবদেহের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক বায়ু দূষণকারী পদার্থ। বাতাসের গুণগত মানকে ছয়টি আলাদা বিভাগে ভাগ করা হয়, যেখানে সেই সূচক এবং বায়ু দূষণকারী পিএম২.৫ এর ঘনত্বের সীমা নির্দেশ করা থাকে। এক কথায় কোন শহরের ক্ষেত্রে এই সূচক ও পিএম২.৫ এর ঘনত্ব যত বাড়বে, সেই শহর তত বেশি দূষিত বলে বিবেচিত হবে।
শূন্য থেকে ৫০০ পর্যন্ত বায়ুর গুণাগুণ সূচককে ছয়টি বিভাগে আলাদা সীমায় ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে শূন্য থেকে ৫০ এর সীমা সবচেয়ে ভাল সূচক নির্দেশ করে। সূচকের মান ৩০০ ছাড়ালে বাতাসের অবস্থা সবচেয়ে বিপজ্জনক বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণ: ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’
পিএম২.৫ প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম দ্বারা পরিমাপ করা হয় (মাইক্রোগ্রাম/মিটার৩)। ইউএস-এর পরিবেশ রক্ষা এজেন্সি ন্যাশনাল অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, ১২.০ মাইক্রোগ্রাম/মিটার৩ এর বেশি যে কোনো ঘনত্বের পিএম ২.৫ মানবদেহের জন্য বিপজ্জনক।
এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুসারে, পিএম২.৫ এর মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রাম/মিটার৩ এর বেশি হওয়া উচিত নয়। বছরে তিন চার দিনের বেশি সময়ের ক্ষেত্রে গড় ঘনত্ব ১৫ মাইক্রোগ্রাম/মিটার৩ এর বেশি হওয়া উচিত নয়।
শীর্ষস্থানীয় দূষণমুক্ত দেশগুলোতে বাতাসের গুণাগুণ
উপরোল্লিখিত দূষণমুক্ত দেশের সবগুলোরই পিএম২.৫ ঘনত্ব ১২-এর কম এবং একিউআই পঞ্চাশের নিচে। দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিএম২.৫ ঘনত্বের শহর জাপানের নাগোয়া, যার বাতাসে পিএম২.৫ এর ঘনত্ব ১০ মাইক্রোগ্রাম/মিটার৩। আর ইউএসএ’র সল্টলেক সিটিতে পিএম২.৫ এর ঘনত্ব সবচেয়ে কম; ০.৪ মাইক্রোগ্রাম/মিটার৩।
একিউআইয়ের দিক থেকে সর্বোচ্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার ও জাপানের নাগোয়া; ৪১। আর একিউআই ২ নিয়ে শীর্ষস্থানীয় দূষণমুক্ত অবস্থানে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সল্টলেক সিটি।
একিউআই অনুযায়ী বায়ু দূষণ সূচকে ঢাকার অবস্থান
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বায়ু গুণাগুণ সূচক ৫৯ এবং বাতাসে পিএম২.৫ এর ঘনত্ব ১৫.৯ মাইক্রোগ্রাম/মিটার৩। অর্থাৎ এখন ঢাকার বায়ূ দূষণ সহনীয় পর্যায়ে আছে। বিগত তিন দিন একিউআইয়ের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের তালিকায় ছিলো ঢাকা। এমনকি আগামী দিনগুলোর আবহাওয়া যাচাই করে অবস্থার আরও অবনতির পরিসংখ্যান দেখিয়েছে আইকিউএয়ার। এছাড়া গত ২১ থেকে ২৩ নভেম্বর যথাক্রমে ২০৪, ২৪৭ ও ২৪৮ একিউআই সূচক নিয়ে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ক্যাটাগরিতে ছিলো।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা ১০ শহর
পরিশিষ্ট
শ্বাস নেবার সময় মানুষ সাধারণত প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার গ্যালন বাতাস গ্রহণ করে। তাই যখন বায়ু দূষণের কথা আসে, তখন সবাই অসহায় হয়ে যায়। বায়ু দূষণের জন্য বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে ৪২ লক্ষ মানুষ। পিএম২.৫ শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসের গভীরে এমনকি রক্তে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। এই কণাগুলি বায়ুমণ্ডলে সঞ্চালিত জ্বালানী পোড়ানো, রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে গঠিত হয় যার সবগুলোই মানুষ সৃষ্ট কারণ। এই পিএম২.৫ কে কেন্দ্র করেই নিত্যদিন সর্বশেষ বায়ু দূষণ অবস্থার আপডেট জানিয়ে বছর শেষে বিশ্ব জুড়ে দুষিত শহরগুলোর চূড়ান্ত একটি তালিকা প্রকাশ করে আইকিউএয়ার। ২০২০ এর সবচেয়ে দূষণমুক্ত শহর ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ান শহর ওয়েইমিয়া।
৩ বছর আগে