শহীদজায়া
চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় মর্যদায় শহীদজায়া মুশতারী শফির দাফন সম্পন্ন
৭১’র স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারীনেত্রী ও সাহিত্যিক এবং উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি বেগম মুশতারী শফীর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর চৈতন্যগলিতে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।এর আগে বাদ জোহর নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ অসংখ্য মানুষ অংশ নেয়।জানাজার আগে বেলা সাড়ে ১১টায় শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফীর মরদেহ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আনা হলে সেখানে তাকে শেষবারের মত এক নজর দেখতে এবং তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজারো মানুষের ঢল নামে। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেই এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)র একটি চৌকস দল।
এ সময় ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবসার, নারীনেত্রী নূরজাহান খান, প্রফেসর রীতা দত্ত,নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, লেখিকা আনোয়ারা আলম, আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার,ডা.চন্দন দাশ,শীলা দাশগুপ্ত,কবি আশীষ সেন, রাশেদ হাসান।
আরও পড়ুন: শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী আর নেই
এসময় বেগম মুশতারী শফীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন কবি আবুল মোমেন, চবি উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার, অধ্যাপক বেণু কুমার চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা বালাগাত উল্লাহ, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, প্রমার সভাপতি রাশেদ হাসান।এছাড়াও উদীচী, কমিউনিস্ট পার্টি, সনাক, বোধন, প্রমা, খেলাঘর, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মহিলা কলেজ, বাসদ, জেলা শিল্পকলা, সিআরবি রক্ষা মঞ্চ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, নারী যোগাযোগ কেন্দ্র, ফুলকি, বিটা, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, যুব ইউনিয়ন, বিজয় মেলা পরিষদ, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, অগ্নিবীণা পাঠাগার, গণজাগরণ মঞ্চ, ব্লাস্ট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, নারী শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বিপ্লবী তারেকশ্বর স্মৃতি পরিষদ শ্রদ্ধা জানায়।
২ বছর আগে
শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী আর নেই
৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বামী-ভাই হারানো বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফী আর নেই। ইন্না লিল্লাহি…..রাজিউন। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান তিনি।
উদীচী চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা বেগম মুশতারী শফীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফী লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। আজ বিকেল চারটার দিকে তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়।
৮৩ বছর বয়সী বেগম মুশতারী শফী দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। রক্তে হিমগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট আরও বেড়েছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১ ডিসেম্বর ভোরে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
একাত্তরের ঘাতক-দালাল বিরোধী আন্দোলন, চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক-নাগরিক আন্দোলনে সামনের সারির সংগঠক এবং মুক্তিযুদ্ধে স্বামী-ভাই হারানো বেগম মুশতারী শফীর নগরীর এনায়েতবাজারের ডাক্তার শফীর ‘মুশতারী লজ’ নামের বাড়িটি ছিল ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূতিকাগার।’ এই বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তা বেলাল মোহাম্মদ তার কতিপয় সহকর্মীসহ এ বাড়িতে থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রণাঙ্গন চট্টগ্রামের কালুরঘাট ট্রান্সমিটার ভবন থেকে প্রচার কাজ চালিয়েছিলেন ২৯ মার্চ পর্যন্ত।
মুশতারী শফীর জন্ম ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। জন্মস্থান ভারতের মালদহ জেলার কালিয়াচকে। বাবার বাড়ি ফরিদপুরের গেরদায়। খন্দকার নাজমুল হক আনসারী অবিভক্ত ভারতবর্ষের পুলিশের ডিএসপি ছিলেন। মা আরেফা খাতুন।
বেগম মুশতারী শফীর মৃত্যুতে উদীচী চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কমরেড আব্দুল নবী ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড অধ্যাপক অশোক সাহা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ গড়তে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম: শিক্ষামন্ত্রী
শোকবার্তায় নেতারা বলেছেন,বেগম মুশতারী শফীর পরিবার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর স্বামী ডা.শফী মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র-গোলাবারুদ নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন। এ কারণে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে এবং মুশতারী শফীর ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। স্বামী-ভাই হারিয়েও মুশতারী শফী মনোবল অক্ষুন্ন রেখে চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসাবে কার্যক্রম চালিয়ে যান। স্বাধীন দেশে প্রগতিশীল সংস্কৃতির সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন, নারীমুক্তির আন্দোলন, নাগরিক আন্দোলন-সবক্ষেত্রে রাজপথে সোচ্চার থেকেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ছিল তাঁর স্বপ্ন।
নেতারা আরও বলেন, বেগম মুশতারী শফীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বেগম মুশতারী শফীর অবদান অবশ্যই স্মরণে রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সিপিবির পক্ষ থেকে গভীর শোক জ্ঞাপন করছি। একইসঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।
আরও পড়ুন: ‘মুক্তিযুদ্ধ পদক' প্রবর্তন
২ বছর আগে