ফসলের মাঠ
টানা চারদিনের বৃষ্টিপাতে মেহেরপুরে ফসলের মাঠ পানির নিচে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ
মেহেরপুরে টানা চারদিনের বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজিসহ নানা ধরনের ফসল। ভেসে গেছে এলাকার অর্ধশত পুকুরের মাছও।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, গত চারদিনের অতিবৃষ্টির কারণে খাল-বিল-সড়ক তলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
সদ্য রোপণ করা আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল ও সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়লে ধানের খেত টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।
দীর্ঘ সময় পানিতে তলিয়ে থাকায় সবজি খেতের গাছ মরতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধ চট্টগ্রাম নগরী, বিপাকে কর্মজীবীরা
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আউশ,২ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান, ৪ হাজার ৫৪৫ হেক্টর মরিচ এবং ৪ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন সবজির আবাদ হয়েছে।
শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান, ১ হাজার ৫০০ হেক্টর আউশ ধান, ৪৫০ হেক্টর জমির মরিচ আবাদ এবং ৮০০ হেক্টর জমির সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।
বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে দেখা গেছে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় জমিতে থাকা ধানের বীজতলা, মাসকলাই, করল্লা, মরিচ, পটল, কলা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পেঁপে, ঝিঙি, বেগুন, শিম, পুঁইশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, চিচিংগা ও ঢেঁড়স এবং তুলার ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের কাষ্টদহ গ্রামের কৃষক সামসুল হক বলেন, গত চারদিন ধরেই কখনো ভারী, কখনো মাঝারি, আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছেই।
তিনি বলেন, কাষ্টদহের বিলের মাঠে আমার এক বিঘা জমির কলাক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু কলাগাছ হেলে গেছে আর কিছু কলাগাছে ভেঙে পড়েছে। একই গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদের ১ বিঘা, জালাল উদ্দিনের ১ বিঘা, মিন্টু আলীর ১ বিঘা, রবিউল ইসলামের ১ বিঘা, সাহাজুল মাস্টারের দেড় বিঘাসহ বেশ কয়েকজন কলাচাষীর কলাক্ষেত নষ্ট হয়েছে।
ভ্রমরদহ গ্রামের কৃষক লিটন মাহমুদ জানান, এই এলাকায় বছরে দুইবার ধান চাষ হয়। অতিবৃষ্টিতে এলাকার নিচু জমির সব ধানগাছ পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া ভেসে গেছে কাষ্টদহ, ষোলটাকা, মহেষপুর, জুগিরগোফা, সহড়াবাড়িয়া, মালশাদহসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক শত মাছের পুকুর।
গাংনী উপজেলার মহেষপুর গ্রামের কৃষক সামিউল হোসেন বলেন, পানিতে খাল-বিল সব ডুবে গেছে। আমন ধানের ক্ষেতও ডুবে গেছে। যদি দু-তিন দিন এভাবে পানির নিচে ধানগাছ তলিয়ে থাকে, তাহলে তা বাঁচানো যাবে না।
কাজিপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়া গ্রামের কৃষক নকিম উদ্দিন বলেন, আমার সাড়ে তিন বিঘা জমির মাসকলাই ক্ষেত পানির নিচে চলে গেছে। এতে আমার লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হবে।
এছাড়া একই গ্রামের কৃষক মোয়াজ্জেম হোসেনের ২ বিঘা, আব্দুল ওহাবের ৩ বিঘা, আক্কাস আলীর ৪ বিঘা, ইন্তাজ আলীর ২ বিঘাসহ শতাধিক কৃষকের মাসকলাই পানির নিচে রয়েছে।
আরও পড়ুন: সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
নওদাপাড়া গ্রামের কৃষক সিদ্দিকুর রহমান জানান, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মরিচের। আমার ১ বিঘা, হোসেন আলীর ১৫ কাঠা, টেঙ্গর আলীর ১ বিঘাসহ গ্রামের কয়েকশ কৃষকের মরিচ ক্ষেতের সব মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে।
রামনগর গ্রামের কলাচাষী জিয়াউর রহমান জানান, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে আমার ৪ বিঘা জমির কলাক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া কাষ্টদহ গ্রামের কৃষক সাহাজুল মাস্টার, সামসুল হক, আব্দুর রশিদ, জালাল উদ্দিন , মিন্টু আলী ও আশরাফুল ইসলামের কলাক্ষেত নষ্ট হয়েছে বলে জানান তারা।
মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের কৃষক মতলেব হোসেন বলেন, দুই বিঘা ৫ কাঠা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। এখন গাছে ফুল ধরেছে। কিছু গাছে মরিচ ধরেছে। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে মরিচ গাছ নেতিয়ে পড়েছে। অনেক মরিচ গাছ মরতে শুরু করেছে।
সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক ছাইদুল ইসলাম বলেন, আমি দেড়বিঘা জমিতে লাউ আবাদ করেছি। চারদিনের বৃষ্টিতে লাউয়ের মাচা পর্যন্ত পানি উঠেছে। এভাবে পানিতে জমি থাকলে লাউগাছ মরে যাবে।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, গাংনী উপজেলার পশ্চিম মালশাদহ গ্রামের অর্ধ শতাধিক পুকুর ভেসে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মাছ চাষীরা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ জামিনুর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয় মূলত গত শুক্রবার বিকাল থেকে। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০৮ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩০-৩৫ কি.মি.। এর আগের দিন সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৭৩.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
মেহেরপুর কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, গত শুক্রবার থেকে একটানা বর্ষণে সদ্য রোপণ করা ও উঠতি ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
সবজির জমি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা এবং পচনরোধক স্প্রে করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টিপাতে ঢাকায় জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
২ মাস আগে
এবার খুলনার মাঠে শোভা পাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ জাতের ধান
স্বল্প সময়ে ফসল পাওয়ার লক্ষ্যে এবার খুলনার আট উপজেলায় বোরো খেতে বঙ্গবন্ধু জাতের ধান শোভা পাবে। পাঁচ বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এ জাত আবিস্কার করেছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
ইতোমধ্যেই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন জাত দিয়ে বীজতলা তৈরি হয়েছে। অন্য জাতের তুলনায় গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন জাতের ধানের ফলন হেক্টর প্রতি এক টন বৃদ্ধি পাবে। চালের আকার হবে মিনিকেট সাইজের।
আরও পড়ুন: ধান-চাল সংগ্রহ কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোচ্ছে না: খাদ্যমন্ত্রী
জেলায় এখন বোরোর ভরা মৌসুম। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাষিরা হাইব্রিড জাতের বীজতলা বেশি তৈরি করেছে। গত দুই বছর যাবৎ হাইব্রিডে উৎপাদন বেশি এবং খাদ্যের সংকট মেটাচ্ছে। এসিআই, ব্রাক ও সরকারি হাইব্রিড জাতের পাশাপাশি ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানির বীজ দিয়ে বোরো বীজতলা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা মহানগর, রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও কয়রায় বঙ্গবন্ধু জাতের বোরো ধানের বীজ পরীক্ষামূলকভাবে পাঠানো হয়েছে। প্রতি উপজেলায় বিনামূল্যে পাঁচ কেজি করে বীজ সরবরাহ হয়েছে। বীজতলায় ৩৫ দিন বয়স থেকে এ জাতের চারা রোপন করা যাবে। ১৪৮ দিনের মধ্যেই ফসল কাটার মত উপযুক্ত হয়ে উঠবে। ‘বিআর-৭৪ ও বিআর-৮৪’র চেয়ে এর ফলন বেশি। ক্ষেত্র বিশেষে হেক্টর প্রতি সাড়ে সাত টন থেকে সাড়ে আট টন পর্যন্ত উৎপাদন হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মহাদেব চন্দ্র সাহা জানান, এ জাতের ধানকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে এই প্রথম বারের মত আবাদ শুরু করা হলো। এতে রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় আক্রমনের পরিমান কম হবে। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। নাজিরশাইল ও জিরা ধানের মতই বঙ্গবন্ধু জাতের ধানের আকৃতি।
আরও পড়ুন: চলতি বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের তথ্য মতে, বীজ দেরিতে পাওয়ায় বিতরণে বিলম্ব হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই বিতরণ করা হবে। নতুন জাতের জন্য উঁচু স্থানে বীজতলা তৈরি করা হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, গুটুদিয়া ও বলাবুনিয়ায় চারজন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এ জাতের ধান ১৪৮ দিনের মধ্যে খামারে তোলা সম্ভব হবে। অন্য জাতের তুলনায় হেক্টর প্রতি এক টন বেশি উৎপাদন হবে। সে কারণেই দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে।
২ বছর আগে