প্রশিক্ষণ শিবির
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-১
চাহিদা মতো প্রশিক্ষণ শিবির চালু না হওয়াতে যুব শিবির নামে কিছু ট্রানজিট ক্যাম্প চালু হয়েছে। তাছাড়া পরিবারের সাথে ক্ষুদ্র কুড়েঘর শেয়ার করে থাকার চাইতে প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেয়া উত্তম। কেউ দেশের গ্রামে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আবার কেউ শহরে ঘরের কোনে লুকিয়ে আছে। ছাত্র শিক্ষক, শ্রমিক বিভিন্ন পেশার লোক, এমনকি জেল ভেঙে পালিয়ে যাওয়া দাগি আসামিরাও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে শুরু করেছে। বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিরোধ করা সেনা বাহিনী, ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ, পুলিশ সদস্যরা ক্লান্ত। যুদ্ধ করার সাপোর্ট পাচ্ছে না। অগত্যা তারাও ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে যোগ দেয়া শুরু করলো। যুদ্ধে যেতে হবে কি হবে না তা কাউকে বলে দিতে হচ্ছে না। দেশের এই ক্রান্তিকালে কেউ বসে নেই আদেশ-নির্দেশের অপেক্ষায়।
কাঠালিয়া ক্যাম্পে জনস্ফীতি, অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার কারণে এখান থেকে ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানানো হলো। শত্রুর কামানের গোলার রেঞ্জের মধ্যে এরূপ ক্যাম্প থাকা বিপদজনক। গোলাগুলির শুরুতেই অনেক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হবে। ক্যাম্প কোথায় যাবে জল্পনা কল্পনা চলল। হাবিলদার মেজর নির্দেশ দিল সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে সকাল সকাল তৈরি হয়ে নিতে। কে কি গোছাবে। আছেইবা কি? কারো পকেটে টাকা পয়সা নেই। একজন সেনা সদস্য জানালেন সরকার গঠন করা হয়েছে। এখন টাকশাল বসে যাবে। টাকা ছাপানো শুরু হলেই বেতন ও পকেট খরচ দেয়া হবে। সহজেই বিশ্বাস করলাম। তখন এত বুদ্ধি হয়নি যে সরকার কিভাবে কাজ করে আর টাকা ছাপাতে কি কি লাগে। মনোবল উঁচু রাখার জন্য যেভাবে বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে আছেন আর নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে টাকা ছাপানোর গল্পটাও তাই।
তবু রেশন ও অন্যান্য সামগ্রী ট্রাকে তুলে দিয়ে আমরা হেটে রওনা দিলাম সোনামুড়া অভিমুখে। ত্রিপুরার জেলা শহর সোনামুড়া গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত। সীমান্তের এক দিকে কুমিল্লা বিবির বাজার অপরদিকে সোনামুড়া। পূর্বে সবাই ত্রিপুরার অধিবাসী ছিল।
ঘাটে মালপত্র নামিয়ে সারা রাত ফেরিতে করে মালামাল পারাপার করা হলো। ক্লান্ত নির্ঘুম জনযোদ্ধারা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। বিএসএফ এর নন কমিশন অফিসাররা পারাপার তদারকি করছেন। ফেরি বলতে দুটি কাঠের নৌকা জোড়া দিয়ে লাগানো, খরস্রোতা গোমতীর সাথে তামাশায় লিপ্ত।
আমাদের ক্যাম্প ত্রিপুরা রাজ্যের অম্পিনগরে স্থানান্তরিত হল বিএসএফ এর তত্ত্বাবধানে ট্রেনিং পরিচালনার জন্য। মাঝে বিশালগরে একদিনের যাত্রা বিরতি হয়েছিল। সেই মিলিটারি ক্যান্টিনের গরম পাকুরা ও জিলাপি পেয়ে সবাই আত্মহারা। কত যুগ পর এরকম খাবারের দেখা মিললো।
অম্পিনগরে আমাদের প্রশিক্ষণ শুরু হলো। অম্পিনগর ছিল ত্রিপুরায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সুসংগঠিত প্রশিক্ষণ ক্যাম্প।
কাঠালিয়ার প্রকৃত অবস্থান
কুমিল্লা থেকে ফেনী যাওয়ার পথে মিয়াবাজার নামে একটা ছোট বাজার কাঁকড়ি নদীর পাড়ে অবস্থিত। মিয়াবাজার এর পূর্ব দিকে কাঁকড়ি নদীর ধারে বিএসএফ ক্যাম্প। এর পাশেই কাঠালিয়া বাজার। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে কাঠালিয়া থেকে আরেকটু ভেতরে নির্ভয় পুর এ মুক্তিযোদ্ধাদের নুতন ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন মেহবুব বীর উত্তম (প্রয়াত)।
লেখক: কলামিস্ট কর্নেল (অব.) মো. শাহ জাহান মোল্লা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
আরও পড়ুন: সমীরুদ্দী ও মুনিয়ারা-একই সমতলে
বীরের খেতাব হরণ
বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দারের বিদায়
২ বছর আগে