শাবিপ্রবির গবেষণা
শাবিপ্রবির গবেষণা: হাওরের ইকোসিস্টেম সার্ভিসে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণ
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) গবেষণায় দেশের প্রথমবারের মত হাওরের ইকোসিস্টেম সার্ভিস এবং মাছের জিনগত সম্পদের ওপর চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণ করার বিষয়টি উঠে এসেছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত টেকসই মৎস্যখাত শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গবেষণাটি উপস্থাপন করা হলে তা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বেস্ট প্রেজেন্টেশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক প্রধান ও ড. মো. আশরাফুজ্জামানের তত্ত্বাধানে পিএইচডি গবেষক আতিকুর রহমান সানী গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করেন। ২০১৯ সাল থেকে ‘ফ্যাক্টর্স অ্যাফেক্টিং এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জেস এন্ড ইটস ইমপ্যাক্ট অন ওয়েটল্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস, একুয়াটিকে বায়োডাইভার্সিটি এন্ড হিউম্যান ওয়েলবিং’ শিরোনামে গবেষণা কার্যক্রমের কাজ পরিচালনা করা হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’: একিউআই
গবেষণাপত্র সূত্রে জানা যায়, হাওরের ইকোসিস্টেম (বাস্তুতন্ত্র) পরিসেবার মোট ২২টি উপ-শ্রেণী চিহ্নিত করা হয়েছে। ইকোসিস্টেম পরিসেবা (সার্ভিস) হল সেই সুবিধাগুলি যা মানব জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা থেকে পায়। প্রাপ্ত ইকোসিস্টেম পরিসেবার মধ্যে ধান, মাছ, পাখি, জলজ প্রাণী, জীববৈচিত্র্য, মাটি গঠন, পুষ্টি চক্র চালানো, পলল ধারণ, প্রাথমিক উৎপাদন, পানি প্রবাহ, পানি পরিশোধন, শিক্ষা, গবেষণা, পর্যটন, কালোমাটি, জ্বালানি কাঠ, বালি, পাথর ইত্যাদি অন্যতম।
পিএইচডি গবেষক আতিকুর রহমান সানী বলেন, ‘বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) বিভিন্ন পরিবেশগত পরামিতিগুলির উপর ৩৬ বছরের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে গবেষণাটি হাওর অঞ্চলের পরিবেশগত পরিবর্তনগুলি ট্র্যাক করে। এছাড়াও অক্টোবর ২০১৯ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত হাওর-নির্ভর জনসংখ্যার মতামত ও পানির গুণাগুণ পরীক্ষার মাধ্যমে এই অঞ্চলের পরিবেশগত পরিবর্তনগুলি আরও গভীরভাবে যাচাই করা হয়েছে। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা ইত্যাদির মতো পরিবেশগত পরিবর্তনের ডাটা বিশ্লেষণ বছরের পর বছর ধরে যথেষ্ট ওঠানামা দেখায় যা হাওরের উৎপাদনশীলতা এবং পরবর্তীতে হাওর ইকোসিস্টেম সার্ভিস সরবরাহকে প্রভাবিত করতে পারে।’
তিনি আরও জানান, পরিবেশগত কারণগুলো ছাড়াও বিভিন্ন মানবসৃষ্ট কারণ যেমন অবৈধ মাছ ধরা এবং সম্পদের অতিরিক্ত আহরণ, লিজ ব্যবস্থাপনা ইকোসিস্টেম সার্ভিসের গুণগতমান এবং পরিমাণকে আরও খারাপ করতে পারে বলে গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এই অঞ্চলে জনগোষ্ঠী ও জীববৈচিত্রের উন্নয়নের জন্য ইকোসিস্টেম সার্ভিসের প্রবাহ বজায় রেখে এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য নীতি নির্ধারকদের প্রয়োজনীয়তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
সার্বিক বিষয়ে অধ্যাপক ড. শামসুল হক প্রধান বলেন, বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পেছনে হাওরের অনন্য অবদান রয়েছে। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও হাওর এতদিন ছিল দৃষ্টির আড়ালে। টাংগুয়ার হাওর অববাহিকার পরিবেশগত পরিবর্তনের অবস্থা, ইকোসিস্টেম পরিসেবা, জলজ জীববৈচিত্র এবং নির্ভরশীল জীবিকার উপর এর পরবর্তী প্রভাবগুলি ভালোভাবে অধ্যয়ন করা হয়নি, এটি এখনও প্রায় অনাবিষ্কৃত এবং সঠিকভাবে পরিচালিত করা যাচ্ছে না। তাই হাওরের বাস্তুতন্ত্রের সেবা, জলজ জীববৈচিত্র্য এবং এই অববাহিকায় আশ্রিত জনগোষ্ঠীর মানুষের জীবনের উপর পরিবেশগত পরিবর্তন, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রবণতা মূল্যায়নের জন্য এই গবেষণার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস
ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর
২ বছর আগে
করোনায় কর্মজীবন নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিষন্নতা-মানসিক চাপ বেড়েছে: শাবিপ্রবির গবেষণা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নিয়ে বিষন্নতা এবং মানসিক চাপ তাদেরকে ভয়ানক স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কোভিড-১৯ চলাকালীন এই বিষন্নতা ও মানসিক চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই মানসিক চাপ এবং হতাশার পেছনে অন্যতম কারণ কোভিড-১৯ মহামারিতে কর্মসংস্থানের নিরাপত্তাহীনতা।
সম্প্রতি শাবিপ্রবির পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে তিন জন শিক্ষার্থী উপমা চৌধুরী, মো. আহসান হাবিব শুভ্র ও সৈয়দ মো. ফারহানের একটি গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
তাদের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের করোনা মহামারিতে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নিয়ে মানসিক অবস্থা এবং হতাশা বৃদ্ধি পায় কিনা তা যাচাই করা। গবেষণাটি পরিচালিত হয় ২০২০-২১ সালে এবং সম্প্রতি এর ওপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নাল এ প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবিতে ঈদুল ফিতরের ছুটি ঘোষণা
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৬২ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৩য়, ৪র্থ বর্ষ ও মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে অধিকাংশ (৮০ শতাংশ) শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষন্নতা রয়েছে এবং ৭০ শতাংশ মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে।
ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও মানসিক চাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরাই দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বিষন্নতা এবং মানসিক চাপের শিকার। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের ধারণা কোভিড ১৯ মহামারির কারণে তাদের ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান অনিশ্চিত তাদের বিষন্নতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, উপযুক্ত চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা এবং স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার সময়ের সঙ্গে নেতিবাচকভাবে সম্পর্কিত ছিল। আজকাল বেশির ভাগ প্রাইভেট কোম্পানি ভালো উদ্ভাবনী এবং সহজেই মানিয়ে নিতে পারে এমন যুবকদের পছন্দ করে। তাই শিক্ষার্থীদের স্নাতক বিলম্ব হওয়ায় তাদের এই সুযোগও বিলম্ব হচ্ছে যা তাদের অধিক হতাশা ও মানসিক চাপে রাখছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিভাগ ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে অথবা ইন্টার্নশিপ তাদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত সেসব শিক্ষার্থীরা বাকি শিক্ষার্থীদের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম বিষন্নতা এবং মানসিক চাপে ভোগে। যেসব শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিভাগ কোনো ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোনো কার্যক্রম বা কোর্সের ব্যবস্থা করে অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন মাঠ পর্যায়ের যেসব কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তা দেয়ার সুযোগ করে দেয় সেসব শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নিয়ে বিষন্নতা কম পাওয়া গেছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ ধরনের কার্যক্রমের সুযোগ করে দেয় সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিষন্নতা ৪৬ শতাংশ কম পাওয়া যায়।
গ্র্যাজুয়েশন বিলম্বিত হওয়া, উপযুক্ত চাকরি পাওয়ার জন্য দক্ষতার অভাব, স্টার্টআপ প্ল্যান এবং তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টার্নশিপ সুবিধা না পাওয়া হতাশা ও মানসিক চাপে বড় অবদান রাখছে। গ্রাজুয়েশনের পর অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রোগ্রাম এবং ইন্টার্নশিপ প্রদানের মাধ্যমে পরিস্থিতি রোধ করতে সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতা করা উচিত যাতে তারা তাদের মানসিক চাপ মুছে ফেলতে পারে এবং হতাশা ও চাপ কাটিয়ে উঠতে পারে।
বর্তমানে এই মানসিক চাপ এবং হতাশা থেকে শিক্ষার্থীদের কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রোগ্রাম আয়োজন করা উচিৎ।
মূলত এই মানসিক চাপ, হতাশা বা বিষন্নতার পেছনে যে কারণগুলো যেমন তাদের দক্ষতার অভাব এবং তাদের ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেয়া হয় না এইসব ব্যাপারগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সরকার এবং নীতি নির্ধারক সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন: সভাপতি আখতার, সা. সম্পাদক জহির
নারী গ্রাজুয়েটরা অধিক বিষন্নতার স্বীকার পুরুষদের তুলনায় কারণ বেশিরভাগ নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাদের কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা কম থাকে এবং তাদের বিভিন্ন পেশার মানুষ যারা কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে অধিক যোগাযোগ স্থাপন হয় না। যেসকল শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যক্রম ভিত্তিক পড়াশোনা করে থাকে তাদের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে না সেক্ষেত্রে এসব শিক্ষার্থীদের হতাশা এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। তাই শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ইন্টার্নশিপের সুযোগ প্রদান করার মাধ্যমে তাদের মানসিক হতাশা ও চাপ কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করা সম্ভব।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিৎ তারা যেন এসকল শিক্ষার্থীদের শিল্প সফর এবং ইন্টার্নশিপের আওতায় এনে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেয়।
২ বছর আগে
কাউনের চালের তৈরি নুডলস নিয়ন্ত্রণ করবে ডায়াবেটিস: শাবিপ্রবির গবেষণা
ইনস্ট্যান্ট নুডলস এখন পুরো বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাদের দেশে এই নুডলস উৎপাদনের সাধারণত গম, চাল, আলু, মিষ্টি আলুকেই প্রধান কাঁচামাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে উপাদানগুলোতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকায় ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিসসহ নানারকম জটিল রোগের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এজন্য এর বিকল্প হিসেবে এসকল রোগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম এবং একই সঙ্গে জলবায়ু অভিযোজন সম্পন্ন শস্যকে কাচাঁমাল হিসেবে ব্যবহার করে সম্প্রতি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একটি পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে।
এই গবেষণার গবেষক ছিলেন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি (এফইটি) বিভাগের পিএইচডি ফেলো মোছা.মেহেরুন্নাহার। তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক। এছাড়া সহ-তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) ইন্সটিটিউট অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (আইএফএসটি) সিএসও ড. মো. আব্দুস সাত্তার মিয়া।
আরও পড়ুন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ পেলেন শাবিপ্রবির ২২ শিক্ষক
শরীরে ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস সহ নানারকম জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সময়ের চাহিদায় শস্য বৈচিত্র আনা এবং অল্প খরচে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের কাঁচামাল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে এই গবেষণা।
২ বছর আগে