স্মৃতি
এই সিনেমার জার্নিটা আমার সারা জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে: পরীমণি
ঢালিউড ‘নায়ক’ নির্ভরতায় এগিয়ে যাচ্ছে এখনও। কিন্তু সেই নিয়মিত হিসেবকে খানিকটা হলেও পাল্টে দিয়েছে পরীমণি। পর্দায় বা পোস্টারে তার উপস্থিতিই প্রযোজকের ভরসা বলা যায়।
তবে অনেকদিন কাজের বাইরে ছিলেন ঢাকাই সিনেমার এই পরী। সংসার ও সন্তানের কারণে এই বিরতির পর আবারও ফিরছেন চিত্রনায়িকা।
আরও পড়ুন: পরীমণির অভিমান কি ঘুচল?
শনিবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর এক রেস্তোরাঁয় বেশ ঘটা করে ছবিটি মুক্তির তারিখ ঘোষণা করেন নির্মাতা অরণ্য আনোয়ার। এসময় হাজির ছিলেন পরীমণি।
তারা জানান, মা দিবস (১৪ মে) উপলক্ষে ‘মা’ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ১৯ মে।
গল্পটা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের। মৃত ঘোষিত সাত মাস বয়সী এক সন্তানকে নিয়ে তার অসহায় মায়ের আবেগের গল্প। সাজিয়ে-গুছিয়ে তা সিনেমা আকারে পর্দায় তুলে আনছেন নির্মাতা অরণ্য আনোয়ার। নাম দিয়েছেন ‘মা’।
আর সেই মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরীমণি।
গত বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয় ‘মা’ সিনেমার কাজ। এর মধ্যে মাতৃত্বের কারণে সাময়িক অবসর নেন পরী। তবে তার আগে শেষ সিনেমা হিসেবে ‘মা’র কাজ সম্পন্ন করেন।
সিনেমাটি প্রসঙ্গে পরী গণমাধ্যমে পরী বলেন, ‘এই সিনেমার জার্নিটা আমার সারা জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে। ‘মা’ যখন শুটিং করি, তখন চার মাসের রাজ্য (পরীর পুত্র) আমার পেটে ছিলো। ওকে পেটে নিয়ে আমি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি।
১ বছর আগে
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি: স্মৃতিকে জামিন দিলেন আপিল বিভাগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় রাজবাড়ী মহিলা দলনেত্রী সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে (৩৫) হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
রবিবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আরও পড়ুন: বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যক্তির চলাফেরায় বাধা দেয়া যাবে: আপিল বিভাগ
আদালতে স্মৃতির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ।
পরে আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, আপিল বিভাগ রাজবাড়ীর স্মৃতির হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখেছেন। তার জামিনের ওপর চেম্বার আদালতের দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর ফলে স্মৃতির মুক্তিতে বাধা নেই।
গত ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগে স্মৃতির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। রাজবাড়ীর ১নং আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কায়ছুন নাহার সুরমা এ আদেশ দেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর স্মৃতিকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি সাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে এই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনে গত ২ নভেম্বর স্মৃতিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সে অনুযায়ী আজ এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হয়।
গত বছরের ৪ অক্টোবর মধ্যরাতে শহরের ৩নং বেড়াডাঙ্গা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বামীর নাম মো. খোকন মিয়া। তিনি প্রবাসী। সোনিয়া আক্তার স্মৃতি শহরের ৩ নম্বর বেড়াডাঙ্গা এলাকায় বসবাস করেন।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ বিচারপতির নিয়োগ
ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলমের মামলার তদন্ত চলবে: আপিল বিভাগ
১ বছর আগে
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি: রাজবাড়ীর স্মৃতির জামিন স্থগিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় রাজবাড়ী মহিলা দলনেত্রী সোনিয়া আক্তার স্মৃতিকে (৩৫) হাইকোর্টের দেয়া জামিন সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এক নম্বর ক্রমিকে থাকবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনে বুধবার (২ নভেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ।
৪ অক্টোবর মধ্যরাতে শহরের ৩ নম্বর বেড়াডাঙ্গা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বামীর নাম মো. খোকন মিয়া। তিনি একজন প্রবাসী। সোনিয়া আক্তার স্মৃতি শহরের ৩নম্বর বেড়াডাঙ্গা এলাকায় বসবাস করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি: রাজবাড়ী জেলা মহিলা দলের সদস্য গ্রেপ্তার
৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগে স্মৃতির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
রাজবাড়ীর ১নং আমলি আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কায়ছুন নাহার সুরমা এ আদেশ দেন।
পরে রবিবার স্মৃতিকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি সাহেদ নুরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সেদিন আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। পরে এই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি: হাইকোর্টে জামিন পেলেন রাজবাড়ীর স্মৃতি
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার নিয়ে ‘কটূক্তি’র অভিযোগ, ব্যবসায়ী আটক
২ বছর আগে
বাঘিনীদের অতুলনীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে ভক্তদের অনুরাগ
কাঠমান্ডু থেকে ফ্লাইটটি যখন ঢাকায় অবতরণ করে, তখন বিমানে থাকা বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বিমানবন্দরের বাইরে তার ও দলের জন্য কী অপেক্ষা করছে তা কল্পানাও করতে পারেনি।
সাবিনা জানতেন যে তার দলের শিরোপা তুলে নেয়ার ও দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতার ক্ষমতা রয়েছে। তবুও, রাজধানী শহরটি তার জন্য কী পরিকল্পনা করেছে সে সম্পর্কে তার কোনও ধারণা ছিল না।
যখন তারা বিমানবন্দরের প্রক্রিয়া শেষে মিডিয়া কর্নারে বেরিয়ে আসে, তখন সাবিনা জানতে পারলেন সেখানে শত শত মিডিয়াকর্মী ক্যামেরা নিয়ে তাদের ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করছেন। হাজার হাজার ভক্ত তাদের শুভেচ্ছা জানাতে অপেক্ষা করছেন।
ভক্তদের পাশাপাশি ব্যান্ড পার্টিও দেশাত্মবোধক গানের তালে তালে তাদের অপেক্ষায় ছিল। তারা সাবিনা ও তার দলের ছবি দিয়ে সজ্জিত ট্রাকে বাঁশি, ড্রাম এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ছিল।
আরও পড়ুন: বাঘিনীদের রাজসিক বরণ
বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনের কথা ছিল। কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে তা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ভিড় সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শত শত পুলিশ সদস্য থাকলেও তারা ব্যর্থ হয়। সেখানে শতাধিক আনসার সদস্যও ছিল। তারাও অনুরাগী ভক্তদের সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে।
সেখানে সংবাদ সম্মেলন করতে না পারায় কর্তৃপক্ষ তা বাতিল করতে বাধ্য হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে এবং
শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তাদের প্রায় এক ঘন্টা সময় লেগেছিল।
পরিস্থিতি দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন সাবিনা ও তার সতীর্থরা।
বিদেশের মাটিতে ফুটবল খেলার পর বাংলাদেশ নারী দল ঢাকায় ফিরে আসার এটাই প্রথম ঘটনা নয়। কিন্তু আজকের প্রত্যাবর্তন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটিই প্রথম যে শিরোপা ট্রফি জিতে দেশে ফিরলো বাঘিনীরা।
শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিমানবন্দরে একটি সংক্ষিপ্ত এবং আকস্মিক সংবাদ ব্রিফিং সাবিনা বলেন যে তারা অবিচ্ছিন্ন সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ।
আরও আধঘণ্টা পর, সাবিনা এবং তার দল ওপেন-ডেক বাসে ওঠেন— এবং সাম্প্রতিক স্মৃতিতে এইভাবে অভ্যর্থনা পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি দল হয়ে ওঠেন।
শত শত গণমাধ্যমকর্মী এবং হাজার হাজার ভক্তকে দূরে ঠেলে সাবিনা ও তার দলকে খোলা ডেক বাসে হাঁটার পথ তৈরি করতে পুলিশকে লড়তে হয়েছিল।
যখন সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণা এবং সহযোদ্ধা বাঘিনীদের জন্য একটি ওপেন-ডেক চ্যাম্পিয়নের বাসের স্বপ্ন সত্যি হলো, তখন তারা উল্লাসিত জনতার কাছে তাদের অভ্যর্থনা জানানো মালা ছুড়ে দেয়। তারা একই সঙ্গে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছিল। তারা সম্ভবত, একটি
দুর্দান্ত সংবর্ধনার স্বপ্ন দেখেছিল, তবে সম্ভবত এটি তাদের প্রত্যাশার বাইরে ছিল।
খোলা ডেক বাস তাদের বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সদর দপ্তরে নিয়ে যায়। পথে হাজার হাজার সমর্থক তাদের বরণ করে নেন।
সাবিনা ও তার দল ভবিষ্যতে আরও অনেক ট্রফি জিতবে। তবে এই দিনটি তাদের এবং বাংলাদেশি ফুটবল ভক্তদের স্মৃতিতে অতুলনীয় হয়ে থাকবে।
তারা শুধু প্রথম বাংলাদেশি নারী দল হিসেবে সাফ শিরোপা জিতেছে তাই নয়, তারাই প্রথম বাংলাদেশি দল যারা এমন গৌরবময় সংবর্ধনা পেয়েছে!
আরও পড়ুন: বাঘিনী রূপনাকে বাড়ি উপহার দেয়ার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর
স্বপ্নার স্বপ্ন পূরণ, গর্বিত এলাকাবাসী
২ বছর আগে
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি- ২
কাঁঠালিয়া প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে অম্পিনগর
২৪ এপ্রিল ১৯৭১। কাঁকড়ি নদীর পশ্চিম তীরে বাজার সংলগ্ন বি এস এফ ক্যাম্প। পূর্ব তীরের জঙ্গলে আমাদের ক্যাম্প। উঁচু পাহাড়ের উপরিভাগ সমতল। এখানেই তাবু ফেলে থাকার জায়গা করা হয়েছে। থাকা বলতে একটা তাবুতে গাদাগাদি করে কোনোমতে শোয়ার ব্যবস্থা। অনেকে এক কাপড়ে এসেছে। বেশিরভাগ যুবকদের হাতে টাকা পয়সা নেই। সহায় সম্বলহীন ভাবে ঘর বাড়ি ছেড়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ক্যাম্পে উঠে এসেছে। পরিবার পরিজনরা হয়তো শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে।
ক্যাম্পটি পরিচালিত হয় বিএসএফ এর তত্ত্বাবধানে। তদারকি করেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যরা। ক্যাম্পে রিপোর্ট করার পর আমাদের নাম ঠিকানা লেখা হল। যেহেতু আমার কিছুটা লেফট রাইট জানা ছিল, সেহেতু আমাকেই আমাদের দলনেতা বানিয়ে দেয়া হল। মোস্তফা ভাই এবং অন্য বড় ভাইরা থাকতে আমাকে দল নেতা হতে হল। আগা মাথা কিছু বুঝি না। কেউ আমার কথাও শোনে না। নাম ঠিকানার তালিকা বানিয়ে নিয়ে বিএসএফ ক্যাম্পে গিয়ে অফিসারকে দিতে হবে।
কাঁকড়ি নদীর হাটু পানি ডিঙ্গিয়ে বিএসএফ ক্যাম্পে গিয়ে অপেক্ষা করছি। এই নদীর পানি আমাদের খাওয়া গোসল এবং সকল কাজের সাথী। পরিস্কার পানি। কিছুক্ষণ পর অফিসার মেসে ডেকে নেয়া হল। মেসের বাইরে নদীর পার ঘেঁষে লনে ইজি চেয়ারে অফিসার বসে আছে। সাদা হাফ প্যান্ট জঙ্গল বুট সাদা টি শার্ট পরা স্মার্ট অফিসারকে সালাম দিলাম। মনে মনে ভাবছি হিন্দুকে নাকি মুসলমানের সালাম দেয়া যায় না। গুনাহ হলো না তো? ভদ্র লোকের মার্জিত ব্যবহার। আমার সমস্যা হলো হিন্দি ও ইংরেজি বুঝি। কিন্তু বলতে গেলে আটকে যায়। ভালো বলতে পারি না। অফিসার তার সুন্দর কথা বার্তায় মুগ্ধ করলো। জড়তা কেটে গেলো।
ক্যাম্পে ফেরত এলাম। একশটা অভিযোগ। এটা নেই, ওটা নেই, কিছু পাইনি, খাবার পাইনি। সকলের কিছু নাইয়ের মাঝেও এটা ওটা হারানোর অভিযোগ। সামাল দিতে পারছি না। আমাদের দেশে একটা কথা আছে, ‘পাগল ধরে বউ বানানো’। আমার মত জুনিয়র গোবেচারাকে টিম লিডার বানিয়ে শাস্তি দেয়া হচ্ছে কেন বুঝলাম না।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-১
বিকেলে আমাদের বাঙালি অফিসাররা ক্যাম্প পরিদর্শনে এলেন। তিনজন। একজনের হাতে ব্যান্ডেজ । আমাদের দলে ফিসফিসানি শব্দ। ব্যান্ডেজ হাতে অফিসার হলেন ক্যাপ্টেন হায়দার। পাকিস্তান সেনা বাহিনীর চৌকশ কমান্ডো। অত্যন্ত উঁচু মানের পেশাগত সৈনিক। কমান্ডোরা এত দুর্ধর্ষ যে তারা আকাশে ওড়া থেকে পাতাল ফুড়ে নিচে নামতে পারে। ভীষণ ব্যাপার। সবাই কমান্ডো হতে পারে না। এই কমান্ডোর নেতৃত্বে আমরা গেরিলা ট্রেনিং নেবো ভাবতে ভালো লাগছিল। এই মুহূর্তে আমাদের গেরিলা ট্রেনিং দরকার। অপর একজন অফিসারের কথা মনে পড়ে যায়। ফরসা চেহারা, গাল দুটো গোলাপি আপেলের মত। দেখলে পাঞ্জাবি পাঞ্জাবি মনে হয়। তিনি ক্যাপ্টেন আকবর। ( প্রয়াত কর্নেল আকবর, এক সময়ের মন্ত্রি) কুমিল্লার লোক। নানুয়ার দিঘির পারে বাসা। নাম শুনেছি এবার দেখলাম। ক্যাপ্টেন হায়দারসহ অন্যরা হাবিলদার সুবেদারদের কিছু আদেশ নির্দেশ দিয়ে পাহাড়ের চুড়ায় আরও উঁচুতে তাদের ক্যাম্পে চলে গেলেন। তবে তারা যখন আদেশ নির্দেশ দিচ্ছিলেন তখন তা বাংলা ও উর্দুতেই বলছিলেন। হতাশ হলাম, উর্দু এখনও আমাদের ছাড়তে পারেনি।
খাবারের সমস্যা প্রকট। তিন বেলা তো দুরের কথা এক বেলাও পূর্ণ আহার জোটে না। যদিও পাওয়া যায় তা হলো জাউ ভাত। রিফুজি ক্যাম্প থেকে আনা আতপ চাউল ও ডাল। ডাল বলতে হলুদ রঙের পানি। লবণ কখনই হয়না। থালা বাসন নেই। কিভাবে খাবে? গ্রেনেডের গোলাকার কন্টেইনার কেটে কি এক অদ্ভুত প্লেট বানানো হল। সারা ক্যাম্পে নাই নাই দাও দাও রব। কেউ কারো কথা শুনতে চাচ্ছে না। হাবিলদার সুবেদার সাহেবরা উর্দুতে গালাগাল দিয়েই যাচ্ছেন ‘শালা, আমরা তো আর্মিতে ভালই ছিলাম। বেতন রেশন কাপড় চোপড় সবই পেতাম। তোমরা শালারা আন্দোলন করে সমস্যা লাগিয়ে রেখেছ বলেই আজ আমরা জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরছি’।
ক্যাম্পের অযুত সমস্যা সমাধানের রাস্তা কই? একদল ছাত্র যুবক স্লোগান দিচ্ছে ‘ভাত কাপড় চাইনা, অস্ত্র চাই, গ্রেনেড চাই, আমরা থাকতে খেতে আসিনি, আমরা যুদ্ধ করতে এসেছি’।
এটা কে দেবে? ভারত? কেন দেবে। কোন চুক্তি আছে? দিলেও দেয়ার একটা পদ্ধতি তো থাকবে। মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছে। সরকারে সরকারে কোন সমঝোতা হয়েছে? এখানে সরকারের প্রতিনিধি কে? সেনা ইউনিট থেকে পালিয়ে আসা সেনা অফিসার ও সদস্যরা কোথা থেকে অস্ত্র ও অর্থ দেবে। সম্পদ কোথায়? দিক নির্দেশনা কি? নেতারা এখনও দেখা দেননি। শুনেছি ছাত্র জনতার রোষ এড়াতে তারা এদিকে আসছেন না। ব্যাংক লুটের টাকাগুলো কি এখন খরচ করা যায় না? ছাত্র জনতা কোন কোথা শুনতে রাজি নয়। শুধু চাই, আর চাই।
হাবিলদার সুবেদাররা উত্তেজিত ছাত্র জনতাকে শান্ত করতে পারলেন না। ফেইল। ক্যাপ্টেন হায়দারসহ অফিসাররা উপর থেকে নেমে এলেন। ফরসা গোলাপি গায়ের রঙয়ের ক্যাপ্টেন সাহেব সবাইকে শান্ত হতে বললেন। না কোন কোথা কেউ শুনছে না। এক পর্যায়ে ক্যাপ্টেন সাহেব এমন গালি দিয়ে বকা শুরু করলেন যা আমরা জীবনেও শুনিনি। কল্পনায়ও না। বাংলা উর্দু ইংরেজির সব গালি মেশিন গানের গুলির মত বর্ষিত হল। ক্যাপ্টেন আকবরের মুখ আরও লাল হয়ে গেছে। ছাত্র যুবকরা বুঝতে পারল চাওয়ারও তো একটা সীমা আছে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক স্থাপত্য ও ভাস্কর্য
সবাই তাবুতে ঢুকে গেলো। বড় ভাইয়েরা রসিয়ে রসিয়ে অন্যদের বোঝালেন, ‘বুঝেছ? এটা হল মিলিটারি গালি। কেমন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে সবাই। ডান্ডা না হলে বাঙালি ঠাণ্ডা হয় না’।
প্রশিক্ষণ শুরু হল। এটেনশন, স্ট্যান্ড অ্যাট ইজি, রাইফেলের লোডিং আনলোডিং ইত্যাদি। হায়দার ভাই কালো সানগ্লাস লাগিয়ে দূর থেকে দেখে যান।
প্রশাসন ব্যবস্থার কিছু উন্নতি হল। একদিন জানিয়ে দেয়া হল কাল গরু জবাই হবে। অন্তত একদিন হলেও গোশত খাওয়া যাবে। হায় খোদা। গরু জবাই হলো। কিন্তু মাংসের টিকিটি ও পাওয়া গেল না। শুধু আঁশ পাওয়া গেলো। বলতে গেলে এটা হয়েছে মাংসের ডাল। জাউ ভাতের সঙ্গে মাংসের মিলন হলো না।
ভরসা থাকলো ত্রিপুরার অফুরন্ত কাঁঠাল ও আনারস। দাম খুবই কম। বেশির ভাগ ছেলেদের পকেটেই টাকা নেই। দু একজনের টাকা আছে। ওরা বাজারে গিয়ে ভারতীয় আর্মির মত অলিভ গ্রিন কাপড় দিয়ে প্যান্ট বানাচ্ছে, জঙ্গল বুট কিনছে আর শিখদের মত হাতে খাড়ু পড়ে ‘রাম রামজি’ খেলছে। (ভারতীয় সৈনিকরা একের সঙ্গে অন্যের সঙ্গে দেখা হলে রাম রামজি বলে)।
ক্যাম্পে প্রতিদিনই ছাত্র যুবকরা আসছে। প্রশিক্ষণ চাই, অস্ত্র চাই। ক্যাম্পে ঠাঁই নেই। এত লোক কোথায় জায়গা দেয়া হবে। এরই মধ্যে সবার বিশ্বাস জমে গেলো যে এ যুদ্ধ দু’ এক মাসে শেষ হবে না। পাক বাহিনী শহর ছেড়ে গ্রামে গঞ্জে হামলা শুরু করেছে। যুবকদের ধরে নিয়ে হত্যা করে মাটি চাপা দিচ্ছে। এখন কিছু কিছু পাকিস্তানি সাপোর্টার টুপি লাগিয়ে পাকিস্তান জিন্দাবাদে মাতোয়ারা।
অসহযোগ আন্দোলনের সময় অনেক বিহারিকে হত্যা করা হয়েছে। আজ বিহারিরা উঁচু গলায় কথা বলছে। স্কুল কলেজ বন্ধ। তাই যুবকদের ভারতমুখী হওয়ার বিকল্প নেই। ভারতে যাদের আত্মীয় স্বজন আছে তাদের আশ্রয় জুটেছে। অন্যরা কোথায় যাবে? শরণার্থী শিবির এখনও তৈরি হয়নি। থাকা, রান্না বাড়া, খাওয়া সব কিছু খোলা আকাশের নিচে চলছে। ট্রাকে করে আতপ চাউল, ডাল তেল এনে বিতরণ করা হচ্ছে।
লেখক: কলামিস্ট কর্নেল (অব.) মো. শাহ জাহান মোল্লা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
রও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
২ বছর আগে